somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চীনের অর্থনীতি কি টিকে থাকতে পারবে ট্রাম্পের শুল্ক চাপের মুখে?

১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের অভিযোগ—বিশেষ করে চীনের বিরুদ্ধে—যে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্যে ঠকিয়েছে। তার মতে, অভ্যন্তরীণ শিল্পকে বাঁচাতে এবং কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনতে এই ‘সুরক্ষাবাদী নীতিই’ একমাত্র পথ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি অধিকাংশ দেশের ওপর আরোপিত পরাস্পরিক শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করছেন। তবে চীনের ওপর শুল্ক বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (৯ এপ্রিল) রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি চীনের ওপর শুল্কহার বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত করছেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।

ট্রাম্প অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন, তবে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্কের কারণে এখন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি। এর জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে।

গত সপ্তাহে ট্রাম্পের ট্যারিফ ঘোষণার পর থেকেই বিশ্ববাজার ধসে পড়ে। বিনিয়োগকারীরা এই নতুন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের অভিযোগ—বিশেষ করে চীনের বিরুদ্ধে—যে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্যে ঠকিয়েছে। তার মতে, অভ্যন্তরীণ শিল্পকে বাঁচাতে এবং কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনতে এই 'সুরক্ষাবাদী নীতিই' একমাত্র পথ।

চীনের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ বাড়াচ্ছেন ট্রাম্প। ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি চীনের সব পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যেটি ৫ মার্চে দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ২০ শতাংশে। এরপর ২ এপ্রিল আরও ৩৪ শতাংশ যোগ করে মোট হার দাঁড়ায় ৫৪ শতাংশ। এর জবাবে ৪ এপ্রিল চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে।

ট্রাম্প এরপর ৮ এপ্রিল হুমকি দেন, চীন যদি তাদের ট্যারিফ না সরায়, তাহলে ৯ এপ্রিল থেকে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এরপরই মোট শুল্কের হার দাঁড়ায় ১০৪ শতাংশ। চীন পাল্টা জবাবে ১০ এপ্রিল তাদের ট্যারিফ বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ করে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্প আবারও পাল্টা চাল দেন—এইবার চীনের পণ্যে শুল্ক ১২৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকে।

বুধবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির কঠোর জবাব দেবে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অতীত অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পদক্ষেপে নিজেদের সমস্যার সমাধান হয় না। বরং এর ফলে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা বাড়বে, মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে, শিল্প খাত দুর্বল হবে এবং শেষ পর্যন্ত এতে যুক্তরাষ্ট্রই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ 'ভিত্তিহীন' এবং এক ধরনের 'অর্থনৈতিক দাদাগিরি'। তারা জানিয়েছে, চীনের পক্ষ থেকে আরোপিত পাল্টা শুল্ক দেশটির সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন সংরক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য জরুরি।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, 'আমরা চীনারা সমস্যা তৈরি করি না, কিন্তু সমস্যার মুখোমুখি হলে আমরা পিছু হটি না।'

যদিও উত্তেজনা বাড়ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখনও পরস্পরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে প্রায় ৪৩৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা চীনের মোট জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ।

গোল্ডম্যান স্যাচস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ট্রাম্পের নতুন ট্যারিফ চীনের মোট দেশজ উৎপাদন ২ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, যা সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ৫ শতাংশের চেয়ে কম।

বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ইউবিএস আরও বেশি শঙ্কা প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, চীন সরকার ব্যাপকভাবে সরকারি ব্যয় না বাড়ালে প্রবৃদ্ধি আরও কমে ৪ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

এরই মধ্যে চীনের অর্থনীতি আগের চেয়ে অনেক ধীরগতির হয়ে পড়েছে। ট্রাম্প প্রথমবার চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন ২০১৮ সালে, তখন দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এখন দেশটি মূল্যস্ফীতির ঘাটতি, সম্পত্তি খাতে সঙ্কট এবং ঋণের চাপে ভুগছে।

তবে ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জয়তী ঘোষ মনে করেন, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন চীন এই চাপ মোকাবিলায় অনেক বেশি প্রস্তুত এবং অন্য অনেক দেশের তুলনায় তাদের সামলানোর ক্ষমতা বেশি।

আল জাজিরার বেইজিং প্রতিনিধি ক্যাটরিনা ইউ জানিয়েছেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাবে বাজারে অস্থিরতা রুখতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে চীনা কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, 'চীনা সরকার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের হস্তক্ষেপের সক্ষমতা রাখে, এবং তারা সেটাই করছে।'

মঙ্গলবার চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং এক বিবৃতিতে বলেন, সরকার 'বহিরাগত বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সম্পূর্ণ সক্ষম'। একই দিনে চীনের কয়েকটি সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান—যেমন চেংটং ও হুইজিন—পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, যাতে শেয়ারবাজারে ধস রোধ করা যায়।

ক্যাটরিনা ইউ বলেন, চীনের স্টক মার্কেট এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় তুলনামূলকভাবে ভালো পারফর্ম করছে। বুধবার সাংহাইয়ের এসএসই কম্পোজিট সূচক ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে, শেনজেন সূচক ২ দশমিক ২ শতাংশ। এর বিপরীতে, জাপানের নিক্কেই সূচক ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, 'চীনা সরকার শেয়ারবাজার স্থিতিশীল রাখতে খুব মনোযোগী। এখন পর্যন্ত তারা সফল বলেই মনে হচ্ছে, তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ পুরোপুরি কেটেছে বলা যাবে না।'

এরপর কী করতে পারে চীন?

শুল্কের ধাক্কা কমাতে বেইজিং এখন ঘরোয়া প্রণোদনা ও বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগ দেবে বলে মনে করেন ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জয়তী ঘোষ। তার মতে, চীন সরকার 'প্রায় ৫ শতাংশ' প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সুদহার আরও কমাতে পারে এবং স্থানীয় সরকারগুলোকে ঋণ নিয়ে ব্যয় বাড়াতে উৎসাহ দেবে।

ঘোষ বলেন, চীন 'নীরবে' গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর সঙ্গে রপ্তানি বাড়াতে কাজ করবে, যার মধ্যে ঋণ সহায়তা এবং ঋণ মওকুফের মতো উদ্যোগ থাকতে পারে।

এছাড়াও, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার মূল্য হ্রাস (ইউয়ানের অবমূল্যায়ন) ঘটাতে পারে, যাতে রপ্তানি আরও প্রতিযোগিতামূলক হয় এবং শুল্কজনিত ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যায়।

যদিও তিনি মনে করেন, চীনের ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এই চাপ সামাল দিতে পারবে, তবুও কিছু অর্থনীতিবিদ চীনের আর্থিক অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর প্রেক্ষিতে, ৩ এপ্রিল আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা ফিচ চীনের সার্বভৌম ঋণমান কমিয়ে দেয়। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—দ্রুত বাড়তে থাকা সরকারি ঋণ এবং শুল্কের ধাক্কা সামাল দিতে অর্থনৈতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা।

তবে জয়তী ঘোষ বলেন, 'পশ্চিমা দুনিয়ার একটা প্রবণতা আছে—চীনের অর্থনীতি যে কোনো সময় ভেঙে পড়বে, এটা ভাবার। কিন্তু আমি বরং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।'





বাংলা
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:০৮
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশে এমপি হওয়ার মতো ১ জন মানুষও নেই

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৪



দলগুলোতে মানুষই নেই, আছে হনুমান।

আমেরিকায় যদি ট্রাম্প ক্ষমতায় না'আসতো, বাংলাদেশে হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে ইউনুসকে দেশের প্রেসিডেন্ট করে, দেশ চালাতো প্রাক্তন মিলিটারী অফিসারেরা ও বর্তমান জামাতী অফিসারা মিলে। দুতাবাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মজনু নামাজ পড়ার পর মোনাজাত ধরল তো ধরলই, আর ছাড়তে চাইল না | পাক আর্মির বর্বরতা!!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭



১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মি পুরো বাঙালী জাতির উপর যে নৃশংস হত্যাংজ্ঞ, বর্বরতা চালিয়েছে যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। সত্যি বলতে ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতির উপর পাকিস্তানী আর্মি কর্তৃক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সব দোষ শেখ হাসিনার !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৬


অনেকদিন পর zahid takes এর ডা. জাহেদুর রহমানের এনালাইসিস ভিডিও দেখলাম। জুলাই আন্দোলনের পূর্বে বিশেষত যখন র‍্যাব স্যাংশন খায় তখন থেকেই উনার ভিডিও দেখা আরম্ভ করি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মাঈনউদ্দিন মইনুলকে ১৩ বছর পুর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭



সামুর সুসময়ের আদর্শ ব্লগারদের মাঝে মাঈনউদ্দিন মইনুল হচ্ছেন একজন খুবই আধুনিক মনের ব্লগার; তিনি এখনো ব্লগে আছেন, পড়েন, কমেন্ট করেন, কম লেখেন। গত সপ্তাহে উনার ব্লগিং;এর ১৩ বছর পুর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪



২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×