somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহ সাহেবের ডায়রীী এশিয়ার কিছু অংশে ঝড়-বন্যা-ভূমিধস কেন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[img|https://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/shahaziz1957/shahaziz1957-1764773681-8dadbf8_xlarge.jpg


দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বড় একটি অংশজুড়ে ঘূর্ণিঝড় ও ভারী বৃষ্টিতে গত কয়েক দিনে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। সরকারি তথ্যমতে, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডেই ১ হাজার ২৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। অনেকে এখনো নিখোঁজ।

পরপর দুটি ঘূর্ণিঝড় ও একটি টাইফুন এই বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় শহর ও গ্রাম কাদায় তলিয়ে গেছে। উদ্ধার তৎপরতায় কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শ্রীলঙ্কায় বন্যা ও ভূমিধসে ১১ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর দেশটির প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের মহাপরিচালক সম্পথ কোটুওয়েগোডা বলেন, দেশটি নজিরবিহীন এক মানবিক সংকট মোকাবিলা করছে।

তবে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। আল-জাজিরার প্রতিবেদক জেসিকা ওয়াশিংটন জানিয়েছেন, তিনি উত্তর সুমাত্রা প্রদেশজুড়ে সর্বত্র ভূমিধস দেখেছেন। উত্তর সুমাত্রার ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি তাপানুলি। ওই এলাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি আগেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর সংগ্রহ করেছি। সাধারণত নির্দিষ্ট একটি জায়গায় ভূমিধস সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু এবার আমরা যেসব গ্রাম পেরিয়ে এসেছি, সব জায়গায় ভূমিধস হয়েছে।’কেন এমন বন্যা ও ভূমিধস

ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির খবর ছড়িয়ে পড়তেই অনলাইনে এর কারণ খুঁজতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। দেখা যায়, লোকজন জানতে চাইছেন ঠিক কোন কারণে এতগুলো দেশে একসঙ্গে এমন চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া দেখা দিয়েছে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ভারী বৃষ্টি এবং মারাত্মক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জনগোষ্ঠী সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বন্যার কবলে পড়েছে।

কয়েকটি দেশে সর্বশেষ বন্যা পরিস্থিতি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আরও খারাপ আকার ধারণ করেছিল। এর মধ্যে রয়েছে টাইফুন ‘কোটো’ যা ফিলিপাইনে তীব্র আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের সৃষ্টি করে। ঘূর্ণিঝড় ‘সেনিয়ার’ ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রায় মারাত্মকভাবে আঘাত হানে। আর ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়া’ শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায়।

অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির এনভায়রনমেন্টাল জিওগ্রাফি বিভাগের অস্থায়ী অধ্যাপক স্টিভ টারটন বলেন, এই অঞ্চলে সাধারণ যে চিত্রটি দেখা গেছে, প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টির পানি মোকাবিলা করতে গিয়ে জনগোষ্ঠীগুলো হিমশিম খাচ্ছিল। এই বৃষ্টি ভূমিধসসহ আরও নানা সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

টারটন বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে যেখানে এ ধরনের ক্রান্তীয় ঝড়প্রবণ আবহাওয়া রয়েছে, সেগুলোকে আপনি টাইফুন, হারিকেন বা ঘূর্ণিঝড় যা-ই বলুন না কেন, এগুলো আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। আর এটা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।’

টারটন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘সেনিয়ার’ ও ‘ডিটওয়া’ এবং টাইফুন ‘কোটো’ বাতাসের গতির কারণে তীব্র ঝড় হিসেবে শ্রেণিভুক্ত না হলেও এগুলো অনেক বেশি বৃষ্টি ঝরিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ও সাগরের উষ্ণতা এ ধরনের বৃষ্টি ঝরানো ঝড়কে আরও শক্তিশালী করছে।’

ভারতের ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি ইনস্টিটিউটের জলবায়ুবিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিউ কোল এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তুলনামূলক উষ্ণ মহাসাগর ঘূর্ণিঝড়ের চারপাশে শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় তৈরি করে। আর তুলনামূলক উষ্ণ বায়ুমণ্ডল বেশি আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং তা আরও তীব্রভাবে ঝরায়।’

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘লা নিনা’ নামের একটি স্বাভাবিক আবহাওয়া চক্র। এই চক্রে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাংশ স্বাভাবিকের চেয়ে ঠান্ডা আর পশ্চিমাংশ উষ্ণ থাকে। এর ফলে বাতাস শক্তিশালী হয়ে এশিয়ার দিকে আরও বেশি উষ্ণ পানি ও আর্দ্রতা ঠেলে দেয়। কোল বলেন, ‘এই ধরন এশিয়ার বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত আর্দ্রতা সঞ্চার করে, যা ভারী বৃষ্টি ও প্রবল বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়।’বৃষ্টি বৃদ্ধির প্রভাবটি ভালোভাবে বোঝা গেলেও টারটন উল্লেখ করেছেন, গত সপ্তাহের ঘূর্ণিঝড়গুলোর অন্যান্য অস্বাভাবিক দিকগুলো—যেমন ঘূর্ণিঝড় ‘সেনিয়ার’ ও টাইফুন ‘কোটো’ কীভাবে একে অপর থেকে শক্তি সঞ্চার করল, সেই বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট গবেষণার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

গ্রান্থাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট সম্প্রতি ইম্পিরিয়াল কলেজ স্টর্ম মডেল (আইআরআইএস) ব্যবহার করে এ ধরনের এক গবেষণায় ইতিমধ্যে খুঁজে পেয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে টাইফুন ‘ফাং-ওং’-এর কেন্দ্র ঘিরে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় ১০ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই টাইফুন গত মাসে ফিলিপাইনে আঘাত হেনেছিল।

মোকাবিলায় করণীয় কী

গত সোমবার উত্তর সুমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এমন এক সমস্যা, যা ইন্দোনেশীয়দের মোকাবিলা করতেই হবে। তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক প্রশাসনগুলোকেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’

গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অ্যালায়েন্সের প্রচার-প্রধান শ্বেতা নারায়ণ বলেন, সরকার ও শহর কর্তৃপক্ষগুলো চরমভাবাপন্ন এসব আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর পরিণতি সামলানোর ক্ষেত্রে প্রস্তুতি নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাস্তবতার সঙ্গে নীতিনির্ধারকদের ইচ্ছাকৃত অবহেলার বিশাল ফারাক রয়েছে আর এর মূল্য চুকাচ্ছে সাধারণ মানুষ।’সতত সম্পদ ক্লাইমেট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা হরজিৎ সিং বলেন, একেকটি দুর্যোগের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক এখন স্পষ্ট। এখন এটি মোকাবিলার দিকে এগোনোর সময়। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষ এখন একধরনের তথ্য-উপাত্তই বলা চলে। এখন এসব তথ্য-প্রমাণ (যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী, তাদের) জবাবদিহি নিশ্চিতে কাজে লাগানো উচিত।’

জলবায়ু অধিকারকর্মী হরজিৎ সিং বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন দুর্যোগের মাত্রা ও দুর্যোগের আঘাত হানার পরিমাণ যে বাড়াচ্ছে, এটা বোঝার জন্য প্রতিটি ঘটনা নিয়ে আলাদা গবেষণার জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। তিনি আরও বলেন, যেসব দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে ধনী হয়েছে, তাদের আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব হলো এখনই অনুদানভিত্তিক অর্থসহায়তা দেওয়া, যাতে আক্রান্ত দেশগুলো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে।’

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×