somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ ডুয়ার্সের পথে পথে ’ পর্ব- ১

১৯ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বপ্নমাখা নীল আকাশের নিচে পাহাড়ের গায়ে একরাশ সবুজ। যেখানে হাজারও প্রজাপতির চঞ্চল ডানায় ছলকে ওঠে একরাশ রং। স্বপ্ন ও বাস্তবতার এক অপূর্বৃ স্বাদ গ্রহন করতে আমরা ছুটে চলেছি ডুয়ার্সের পথে। বেশ অনেক দিন ধরেই ভারতের ডুয়ার্সে যাওয়ার ইচ্ছা। নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, সুনিল গঙ্গোপাধ্যায় এর মতো সাহিত্যিকের বিভিন্ন লেখায় ডুয়ার্সের সৌন্দর্যের যে বর্ণৃনা পেয়েছি, তাতে ডুযার্সে একবার ঘুরে আসার ইচ্ছা একজন প্রকৃতি প্রেমিকের না জেগে পারে না। ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে আমরা তিন জন রওনা হলাম ডুয়ার্সের উদ্দেশ্যে।

১। বুড়িমারি-চেংড়াবান্ধা বর্ডার


বুড়িমারি-চেংড়াবান্ধা বর্ডার পার করে ডুয়ার্সে যাওয়ার রাস্তা মূলত দু’টি। প্রথমটি শিলিগুড়ি হয়ে আর দ্বিতীয়টি ময়নাগুড়ি হয়ে। বেশ কয়েকটি ম্যাপ ঘেটে মনে হল ময়নাগুড়ি হয়ে ডুয়ার্সে যাওয়া সুবিধাজনক এবং এতে সময়ও বেশ কয়েক ঘন্টা কম লাগবে। বর্ডার পার হয়ে একটা ভ্যান নিয়ে আমরা চলে এলাম চেংড়াবান্ধা বাস স্ট্যান্ডে। সেখান থেকে বাসের ছাদে চড়ে বসলাম ময়নাগুড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। বাসের সিট খালি থাকা স্বত্তেও ছাদে চড়ার উদ্দেশ্য হলো আশপাশটা ভালোভাবে দেখা। তবে আমাদের বাসের ছাদে চড়তে দেখে বাস ড্রাইভারের মুচকি হাসির রহস্য টের পেলাম একটু পরেই। কিছুটা পথ যাওয়ার পরই শুরু হলো এবড়ো থেবড়ো বালুময় রাস্তা। এ রাস্তায় পাথরের বড় বড় লরি চলাচল করায় প্রচুর ধুলা আমদের মাখিয়ে দিচ্ছিল একটু পর পরই। এ যেন সিনেমার সু্টিং এ তিন নায়ককে বিনা পয়সায় মেকাপ করানো হচ্ছে! প্রায় ঘন্টা খানেক ধুলার ঝড় ঠেলে আমরা পৌঁছে গেলাম ময়নাগুড়ি।
২। ধুলার রাজ্যে পৃথিবী পদ্য-ময়


ছোট্ট শান্ত এক শহর। শান্ত-সবুজ প্রকৃতির কোলে সদ্য আধুনিকতার ছোঁয়া পাওয়া অপূর্বৃ শহর ময়নাগুড়ি। তবে শহুরে সৌন্দর্যৃ উপভোগ করার চেয়ে আমাদের মনোয়োগ এখন চালসাগামী বাসের দিকে। প্রায় আধ ঘন্টা খোজাখুজি করে আমরা অবশেষে পেয়ে গেলাম চলসার বাস। বাস চলতে শুরু করলো। আমিও কেমন জানি ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। এ যেন এক নেশা। সৌন্দর্যৃকে উপভোগ করার, প্রকৃতির মাঝে নিজেকে সোপে দেবার। পাশে তাকিয়ে দেখি শুভ আর কাওছার দু’জনই ঘুমিয়ে পড়েছে। এতো সুন্দর প্রকৃতির মাঝে মানুষ ঘুমায় কি করে ! জঙ্গলের ভেতর দিয়ে একে একে লাটাগুড়ি, গরুমারা ন্যাশনাল পার্কৃ, মূতি পার হয়ে আমরা চলে এলাম ডুয়ার্সের রাজধানী চলসাতে। চালসা মূলত ডুয়ার্সের প্রনকেন্দ্র।
৩। চালসা


তাই চালসাকে কেন্দ্র করেই আমাদের ট্যুর প্লান তৈরি করা হয়েছে। আমরা যখন চালসা এসে পৌঁছেছি তখন প্রায় দু’টা বেজে গেছে।বেশ খুধাও লেগেছে। তাই সবার আগে দুপুরের খাবার শেষ করে আমরা রওনা হলাম আমাদের প্রথম দিনের গন্তব্য সুনতালেখোলার উদ্দেশ্যে। মাঝে অবশ্য সামসিং এ কিছুটা সময় কাটাবো। যথারীতি আমাদের দেশের চান্দের গাড়ির মতো গাড়িতে আমাদের অবস্থান ছাদে। জাতীয় সড়ক ফেলে চালসার চৌমাথা থেকে পথ হঠাৎই উঠে গিয়েছে অনেকটা। এই হিলটপেই রয়েছে চমৎকার একটি রিসোর্টৃ। রিসোর্টৃকে বামে রেখে পথ চলে গেছে সোজা উপরে। কালো পিচঢালা রাস্তার দু’পাশে যত দূর চোখ যায় চা-বাগানের সবুজ ঢেউ।
৪। চা বাগান



আইভিল, উংডং, থার্বো, চালসা, মেটেলি নামের অপূর্র্ব সব চা-বাগান। মেটেলি নিজেই ছোট্ট এক জনপদ। ঘরবাড়ি দোকারপাট নিয়ে বেশ জমজমাট। মেটেলির পরেই সামসিং চা-বাগানের কর্মীদের বাড়ি, বনদফতর আর বনবাংলো নিয়েই গড়ে উঠেছে সামসিং এর পাহাড়তলি। প্রায় চারটা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম সামসিং এ। জীপ ড্রাইভার আমাদের প্রশ্ন করলো আমরা কোথায় যাবো। বললাম সুনতালেখোলা। অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে সে আমাদের সেখানে পৌঁছে দিতে চাইলো। কিন্তু আমাদের ইচ্ছা বাকি ৪ কি.মি. পথ হেটে যাওয়ার। সুনতালেখোলার রাস্তা দেখিয়ে সে বিদায় নিল। আমরা সামসিং এ কিছুটা সময় কাটিয়ে রওনা হলাম সুনতালেখোলার উদ্দেশ্যে। বনের মধ্যে দিয়ে পিচঢালা পথে, পাখি আর প্রজাপতির গান শুনতে শুনতে আমাদের এগিয়ে চলা। রাস্তায় স্থানীয় কিছু স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের সাথে দেখা হয়ে গেল।কথায় কথায় জানলাম তারাও সুনতালেখোলা যাচ্ছে। তাদের সাথে গল্প করতে করতে এগিয়ে চললাম।
৫। পথ চলা সুন্তালেখলার দিকে-


মাঝে চোখে পড়লো ‘গোখালি’ উপজাতিদের ছোট্ট গ্রাম ‘ভারিয়া’।ছবির মতো সুন্দর সুন্দর সব কাঠের বাড়ি। বাড়ি-বাগান-উঠান রঙ্গিন ফুলে উজ্জল। গ্রামটা আমাদের খুব পছন্দ হলো। এখানে থাকার জায়গার খোঁজ করতেই জানতে পারলাম সামনেই একটা ছোট বাংলো আছে। চলে গেলাম সেখানে। ’লিছা হোম স্টে’,


সান্তোস নামের এক প্রাক্তন আর্মি ভদ্রলোক এটি চালান। সেখানে ব্যাগপত্র রেখে ফ্রেশ হয়ে আমরা বের হলাম। তখন সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে। আলো আধারে কিছু সময় কাটিয়ে আমরা চলে এলাম বাংলোতে। সন্ধা ৭টা নাগাদ সান্তোস দা জানালেন খাবার রেডি। মেনু হলো ভাত, আন্ডা (ডিম) কারি, সবজি, সালাদ আর ডাল। সাথে অবশ্য চিলি পেষ্ট(মরিচ ভর্তা)।দেখতে অত্যন্ত আকর্ষৃনীয় এই চিলি পেষ্ট মুখে দিয়েই কাওছার লাফালাফি শুরু করে দিল। একবার সাদা ভাত মুখে দেয় তো আরেকবার বেসিনে গিয়ে মুখ হা করে থাকে। বেচারার অবস্থা দেখে আমাদের একটু খারাপই লাগলো। তবে বলতেই হবে বৌদির হাতে যাদু আছে। অসাধারন রান্নার হাত মহিলার। খাবর শেষ করে রুমে গিয়ে শুভ মূয়ে পড়লো। আমি আর কাওছার আবার বের হলাম। বাইরে বেশ ঠান্ডা তবে কুয়াশা নেই। বিশ-পচিশ মিনিট আমরা চাঁদের আলোয় হাটাহাটি করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। কাল খুব সকালে উঠতে হবে। সকালে ভারিয়া গ্রাম পর হয়ে সামান্য এগোতেই পথ ঢালু হয়ে নেমে গিয়েছে এক পাহাড়ি নদীর বুকে। পথের শেষে আরেক স্বপ্নের শুরু। চার দিকে গভীর জঙ্গল ভরা পাহাড় আর পাহাড়। সেই সবুজ জঙ্গলমহলকে দু’পাশে ঠেলে তিরতির করে বয়ে চলেছে সুনতালেখোলা নদী। নদীর উপর মানানসই একটা ঝুলন্ত ব্রিজ।


ব্রিজে দোল খেতে খেতে পৌঁছে গেলাম ‘পশ্চিমবঙ্গ উন্নয়ন নিগন’ এর প্রকৃতি দর্শৃন কেন্দ্রে। ছোট ছোট কটেজ দেখতে খুবই সুন্দর। চারদিকে অফুরন্ত সবুজ। নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে অনুভব করা যায় জঙ্গলের সবটুকু, সাথে বরফ ঠান্ডা পানির শীতল অনুভূতি। ফিরে এলাম আমাদের বাংলোতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:০৫
১৭টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×