দয়া করে একটু সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন আশা করি কোন সময় নষ্ট হবে না বা কোন ক্ষতি হবে না।আপনার লাভের আসঙ্কাই সবটুকু ১০০% গ্যারান্টি।মৃত্যুর পর আগত অবস্থার উপর ঈমানঃ হাদিস-১৪০
হযরত বারা ইবনে আ’যেব রদিয়াল্লহু আ’নহু ( ﺍﻟْﺒﺮﺍﺀِ ﺑْﻦ ﻋﺎﺯﺏٍ ﺭﺿﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨْﻪ ) বর্ণনা করেন যে, আমরা নবী করীম সল্লাল্লহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে এক আনসারী সাহাবীর
জানাযায় (কবরস্থানে) গেলাম। যখন আমরা কবরের নিকট
পৌঁছলাম তখনও কবর খনন শেষ হইয়া ছিল না। নবী করীম
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম (কবর তৈয়ার হওয়ার
অপেক্ষায়) বসিলেন। আর আমরাও তাঁহার
চারিপাশে এমনভাবে মনযোগ সহকারে বসিয়া গেলাম যেন
আমাদের মাথার উপর পাখী বসিয়া আছে। তাঁহার
হাতে একটি কাঠি ছিল
যাহা দ্বারা তিনি মাটি খোঁচাইতে ছিলেন। (কোন গভীর
চিন্তামগ্ন অবস্থায় এইরূপ হইয়া থাকে।) অতঃপর
তিনি তাঁহার মাথা উঠাইলেন এবং দুই অথবা তিনবার
বলিলেন, কবরের আযাব হইতে আল্লহ তায়া’লার নিকট আশ্রয়
প্রার্থনা কর। অতঃপর বলিলেন, (আল্লহ তায়া’লার মুমিন
বান্দা এই দুনিয়া হইতে স্থান পরিবর্তন করিয়া যখন বরযখের
জগতে পৌঁছে অর্থাৎ তাহাকে কবরে দাফন করিয়া দেওয়া হয়
তখন) তাহার নিকট দুইজন ফিরিশতা আসেন।
তাহারা তাহাকে বসান। অতঃপর তাহাকে প্রশ্ন করেন,
তোমার রব কে? সে বলে আল্লহ আমার রব। পুনরায় প্রশ্ন
করেন, তোমার দ্বীন কি? সে বলে ইসলাম আমার দ্বীন।
আবার প্রশ্ন করেন, এই ব্যক্তি যাঁহাকে তোমাদের
মধ্যে (নবী বানাইয়া) পাঠানো হইয়াছিল অর্থাৎ মুহা’ম্মাদ
সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁহার ব্যাপারে তোমার
কি ধারণা? সে বলে তিনি আল্লহ তায়া’লার রসুল।
ফেরেশতারা বলেন, তোমাকে ইহা কে বলিয়াছে? অর্থাৎ
তাঁহার রসুল হওয়া সম্পর্কে কিরূপে জানিয়াছ?
সে বলে আমি আল্লহ তায়া’লার কিতাব পড়িয়াছি, উহার
উপর ঈমান আনিয়াছি এবং উহাকে সত্য বলিয়া মানিয়াছি।
অতঃপর রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ
করিলেন, (মুমিন বান্দা যখন ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসাবাদের
উত্তর ঠিক ঠিক দিয়া দেয় তখন) একজন ঘোষণাকারী আসমান
হইতে ঘোষণা করেন অর্থাৎ আল্লহ তায়া’লার পক্ষ
হইতে আসমান হইতে ঘোষণা করা হয় যে, আমার বান্দা সত্য
বলিয়াছে, সুতরাং তাহার জন্য জান্নাতের
বিছানা বিছাইয়া দাও, তাহাকে জান্নাতের পোষাক
পড়াইয়া দাও এবং তাহার জন্য জান্নাতের
দিকে একটা দরজা খুলিয়া দাও।
(সুতরাং দরজা খুলিয়া দেওয়া হয়) এবং ঐ
দরজা দিয়া জান্নাতের মিষ্টি বাতাস এবং সুগন্ধ
আসিতে থাকে। আর কবর তাহার জন্য দৃষ্টি সীমা পর্যন্ত
প্রশস্ত করিয়া দেওয়া হয়। (রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুবরণকারী মুমিনের এইরূপ
অবস্থা বর্ণনা করিলেন।)
অতঃপর তিনি কাফেরের মৃত্যুর আলোচনা করিলেন
এবং এরশাদ করিলেন, মৃত্যুর পর তাহার রূহ তাহার
শরীরে ফিরাইয়া দেওয়া হয় এবং তাহার নিকট(ও) দুইজন
ফেরেশতা আসেন, তাহারা তাহাকে বসান এবং প্রশ্ন করেন
তোমার রব কে? সে বলে হায় আফসোস, আমি কিছু জানি না।
অতঃপর ফেরেশতারা তাহাকে জিজ্ঞাসা করেন তোমার
দ্বীন কি ছিল? সে বলে হায় আফসোস, আমি কিছু জানি না।
অতঃপর ফেরেশতারা তাহাকে বলেন, এই
ব্যক্তি যাঁহাকে তোমাদের মধ্যে (নবী বানাইয়া)
পাঠানো হইয়াছিল তাঁহার ব্যাপারে তোমার ধারণা ছিল?
সে তখনও ইহাই বলে, হায় আফসোস, আমি কিছু জানি না।
(এই প্রশ্ন উত্তরের পর) আসমান হইতে একজন
ঘোষণাকারী আল্লহ তায়া’লার পক্ষ হইতে ঘোষণা করেন, এই
ব্যক্তি মিথ্যা বলিয়াছে। অতঃপর (আল্লহ তায়া’লার পক্ষ
হইতে) এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন যে, তাহার জন্য
আগুনের বিছানা বিছাইয়া দাও, তাহাকে আগুনের পোষাক
পড়াইয়া দাও এবং তাহার জন্য দোযখের
একটি দরজা খুলিয়া দাও। (সুতরাং এই সবকিছু
করিয়া দেওয়া হয়।) রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (দোযখের ঐ দরজা দিয়া)
দোযখের উত্তাপ ও ঝলসানো বাতাস তাহার নিকট
পৌঁছিতে থাকে। আর তাহার উপর কবর এত সংকীর্ণ
করিয়া দেওয়া হয় যে, উহার কারণে তাহার
পাঁজরগুলি একটি অন্যটির মধ্যে ঢুকিয়া যায়। ( আবু দাউদ )
ফায়দাঃ কাফেরদের ব্যাপারে ইহা বলা যে,
সে মিথ্যা বলিয়াছে ইহার অর্থ হইল, ফেরেশতাদের প্রশ্নের
উত্তরে কাফেরদের অজ্ঞতা প্রকাশ করা মিথ্যা।
কেননা প্রকৃতপক্ষে যে আল্লহ তায়া’লার একত্ববাদ তাঁহার
রসুল এবং দ্বীন ইসলামের অস্বীকারকারী ছিল।
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব, জানুয়ারী ২০০২)
পৃষ্ঠা ১১৯-১২১
মৃত্যুর পর আগত অবস্থার উপর ঈমানঃ হাদিস-১৩৯
হযরত আবু সাঈ’দ রদিয়াল্লহু আ’নহু ( ﺃﺑﻰْ ﺳﻌﻴْﺪ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨْﻪ ) বলেন,
একবার রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের
জন্য মাসজিদে আসিলেন। দেখিলেন যে, হাসির কারণে কিছু
লোকের দাঁত দেখা যাইতেছে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিলেন,
যদি তোমরা স্বাদবিনষ্টকারী মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ
করিতে তবে তোমাদের এই অবস্থা হইত
না যা আমি দেখিতেছি।
সুতরাং স্বাদবিনষ্টকারী মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ কর।
কেননা কবরের উপর এমন কোনদিন যায় না যেদিন সে এই
আওয়াজ দেয় না যে, আমি অপরিচিতের ঘর,
আমি একাকিত্বের ঘর, আমি মাটির ঘর, আমি পোকামাকড়ের
ঘর। যখন মুমিন বান্দা কে দাফন করা হয় তখন কবর
তাহাকে বলে, তোমার আগমন বরকতময় হউক। খুব ভাল করিয়াছ
যে তুমি আসিয়া গিয়াছ। যত লোক আমার উপর
চলাফেরা করিত তাহাদের সকলের মধ্যে তুমিই আমার নিকট
সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয় ছিলে। আজ যখন তোমাকে আমার
সোপর্দ করা হইয়াছে এবং আমার নিকট আসিয়াছ তখন আমার
উত্তম ব্যবহারও দেখিতে পাইবে। অতঃপর যতদূর পর্যন্ত মৃত
ব্যক্তির দৃষ্টি পৌঁছিতে পারে কবর তাহার জন্য প্রশস্ত
হইয়া যায়। এবং তাহার জন্য একটা দরজা জান্নাতের
দিকে খুলিয়া দেওয়া হয়।
আর যখন কোন গুনাহগার অথবা কাফেরকে কবরে রাখা হয় তখন
কবর বলে, তোমার আগমন বরকতময় না হউক, তুমি আসিয়াছ খুব
মন্দ করিয়াছ, যত লোক আমার উপর
চলাফেরা করিতে তাহাদের সকলের মধ্যে তোমার প্রতিই
আমার বেশী ঘৃণা ছিল। আজ যখন তুমি আমার সোপর্দ হইয়াছ,
তখন আমার দুর্বাব্যহারও দেখিতে পাইবে। অতঃপর কবর
তাহাকে এমনভাবে চাপ দেয় যে, একদিকের পাঁজর অন্য
দিকের পাঁজরে ঢুকিয়া যায়। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম একহাতের আঙ্গুলসমূহ অন্য হাতের
আঙ্গুলসমূহের মধ্যে ঢুকাইয়া বলিলেন যে, এইভাবে একদিকের
পাঁজর অন্যদিকে ঢুকিয়া যায়। আর আল্লহ তায়া’লা তাহার
উপর এমন সত্তরটি অজগর সাপ নিযুক্ত করিয়া দেন যাহার মধ্য
হইতে একটিও যদি জমিনের উপর শ্বাস ফেলে তবে উহার
(বিষের) প্রভাবে কিয়ামাত পর্যন্ত জমিনে ঘাস উৎপন্ন
হওয়া বন্ধ হইয়া যাইবে। উহারা তাহাকে কিয়ামাত পর্যন্ত
কামড়াইতে ও দংশন করিতে থাকিবে। নবী করীম সল্লাল্লহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, কবর জান্নাতের
একটি বাগান হইবে অথবা জাহান্নামের একটি গর্ত।
( তিরমিযী )
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব, জানুয়ারী ২০০২)
পৃষ্ঠা ১১৭-১১৮
মৃত্যুর পর আগত অবস্থার উপর ঈমানঃ হাদিস-১৩৮
হযরত উ’সমান ইবনে আ’ফফান রদিয়াল্লহু আ’নহু ( ﻋﺜْﻤﺎﻥ ﺑْﻦ ﻋﻔّﺎﻥ
ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨْﻪ ) হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন মৃত ব্যক্তিকে দাফন
করিয়া অবসর হইতেন, তখন কবরের পাশে দাঁড়াইতেন
এবং এরশাদ করিতেন, তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লহ
তায়া’লার নিকট মাগফিরাতের দোয়া কর এবং এই দোয়া কর
যে, আল্লহ তায়া’লা তাহাকে (প্রশ্নের উত্তরে) অটল
রাখেন, কেননা এখন তাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হইতেছে।
( আবু দাউদ )
মুন্তাখাব হাদিস (দারুল কিতাব, জানুয়ারী ২০০২)
পৃষ্ঠা ১১৬-১১৭
মৃত্যুর পর আগত অবস্থার উপর ঈমানঃ হাদিস-১৩৭
হযরত উ’সমান রদিয়াল্লহু আ’নহু ( ﻋﺜْﻤﺎﻥ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨْﻪ ) এর আযাদকৃত
গোলাম হযরত হানী রহমাতুল্লহ আ’লাইহি বলেন যে, হযরত
উ’সমান রদিয়াল্লহু আ’নহু ( ﻋﺜْﻤﺎﻥ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨْﻪ ) যখন কোন কবরের
পাশে দাঁড়াইতেন তখন খুব কাঁদিতেন। এমন কি চোখের
পানিতে দাড়ি ভিজাইয়া ফেলিতেন। তাঁহার নিকট আরজ
করা হইল, (কি ব্যাপার) আপনি জান্নাত জাহান্নামের
আলোচনায় কাঁদেন না, আর কবর দেখিয়া এত কাঁদেন?
তিনি বলিলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
এরশাদ করিয়াছেন, কবর আখেরাতের ঘাঁটি সমূহের মধ্যে প্রথম
ঘাঁটি, যদি বান্দা ইহা হইতে নাজাত পাইয়া যায়
তবে পরবর্তী ঘাঁটিসমুহ উহা হইতে সহজ হইবে, আর যদি এই
ঘাঁটি হইতে নাযাত না পায়, তবে পরবর্তী ঘাঁটিসমূহ
উহা হইতে বেশী কঠিন হইবে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম (ইহাও) এরশাদ করিয়াছেন,
আমি কবরের দৃশ্য হইতে ভয়ানক কোন দৃশ্য দেখি নাই।
( তিরমিযী
পূর্বে এখানে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১১:৫২