ছেলেটি এখনো প্রতি রবিবার বিকেলে সিগনালের ফুলওয়ালী মেয়েটির কাছ থেকে ফুল কেনে।দশটি লাল গোলাপ আর একটি হলুদ।মেয়েটিকে বলতে হয়না। রবিবার বিকেল হতেই সে এই এগাটি ফুলের সুন্দর একটি তোরা করে রাখে। ছেলেটি ফুটপাথ দিয়ে হেটে যেতেই দোড়ে এসে হাতে দেয়।আর সুন্দর একটা হাসি দিযে বলে, ‘ভাইজান, এই নেন আফনের দশটা লাল গোলাপ আর হলুদটা আমার পক্ষ থিকা আফার জন্য।’ বহুদিনের নিয়ম। ভুল করেও ভুল হবার নয়।
এখনো প্রতি রবিবার বিকেলে ছেলেটি ফুল হাতে পার্কের লেকের সেই বাধানো ঘাটটাতে অপেক্ষা করে। লেকের পাড়ের সাত নম্বর গাছ বরাবর নিচ থেকে তিন নম্বর সিড়িটাতে। এখানে যে ঝালমুড়িওয়ালা মুড়ি বানায় সে ছেলেটি আসামাত্রই দুই ঠোঙ্গা ঝালমুড়ি দিয়ে যায়।একটাতে ঝাল বেশি।হাতে তুলে দেবার সময় বলে যায়, ‘এইডায় ঝাল বেশি, আফায়তো ঝাল খুব পছন্দ করে। তা আফায় আহেনাই এহনো?’ এই বলে সে আর উত্তরের অপেক্ষা করে না।দোকান মাথায় নিয়ে চলে যায় অন্য কোন খদ্দেরের কাছে। বহুদিনের নিয়ম। ভুল করেও ভুল হবার নয়।
বিকেল গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা কাছায় তখন চা ওয়ালা আসে, প্রতি রবিবার সন্ধ্যায় যার রুটিন এখানে দুকাপ চা করে দেয়া। কাছে এসে ছেলেটির পাশে পড়ে থাকা আশাহত গোলাপ আর মলিন হয়ে যাওয়া দুই ঠোঙ্গা মুড়ির দিকে তাকিয়ে করুন মুখ করে বলে, ‘আফায় আইজো আসেনাই?’ বলে সে মাথা নিচু করে ছেলেটার পাসে কিছুক্ষণ বসে থাকে। তারপর চলে যায় অন্যকোথাও। বহুদিনের নিয়ম, ভুল করেও ভুল হবার নয়।
এমন করেই রবিবারের বিকেলগুলো কাটে ছেলেটির।সেই গোলাপ, লেক, ঝালমুড়ি, চা। নিয়মের ব্যতিক্রম হয়না কোথাওই। শুধু নিয়ম মানেনা মেয়েটি। নিয়মকরা রবিবারগুলোর মত করে খোপায় বেলিফুলের মালা পেচিয়ে আসেনা মেয়েটি। তার হাসিতে ফেটে পড়েনা চারপাশ। সন্ধ্যা নামেনা তার কাজলে। ছেলেটি জানে, আর কোনদিনও আসবেনা মেয়েটি। তবু সে অপেক্ষায় থাকে। বহুদিনের নিয়ম, ভুল করেও যদি কোনদিন ভুল ভেঙে যায়।