ভিন্ন বেতন কাঠামোর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে রেখেছেন। দাবি অবশ্যই যৌক্তিক। তবে তাদের দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে পুঁজি করা কোনমতেই যৌক্তিক হতে পারে না। দাবি আাদায়ের আরো অনেক পথ আছে। আপনারা ক্লাস ঠিক রেখে আন্দোলন করুন। তাতে আশাকরি আপনারা আপনাদের শিক্ষার্থীদেরও পাশে পাবেন। অন্যথায় শিক্ষার্থীদেরকে পাশে চাওয়া বাড়াবাড়ি। কারন আপনারা তাদেরকেই পুঁজি করছেন। বিষয়টা অনেকটা শিক্ষার্থীদের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাওয়ার মত।
এ গেল দাবির প্রক্রিয়ার কথা। এখন আসি দাবির কথায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক পুরাতন বেতন কাঠামোতেই মূল বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি মিলিয়ে ৮০-৯০ হাজার টাকা পর্যন্তও বেতন তুলে থাকেন। যেখানে একজন সচিবের বেতন এখন করা হয়েছে ৮৬ হাজার টাকা। এরসাথে আছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, ভর্তি পরীক্ষা, বিভিন্ন সিলেকশন বোর্ডের ভাতা ইত্যাদি । কেউ কি কখনো দেখেছেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অসচ্ছল দিন কাটাচ্ছেন?
কিন্তু আমি দেখেছি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শুধুই অসচ্ছল নয় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। আজ যে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকে পুঁজি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনরত সেই সব শিক্ষার্থীর আজকের যোগ্যতার বীজ বপন করেছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তার নার্সিং করেছেন উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কিন্তু যখন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাত্র ১০-১২ হাজার টাকা বেতনভুক্ত হয়ে সংসার চালাতে এমনকি নিজের সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোরগোরায় নিয়ে যেতে হিমশীম খেয়েছেন/খাচ্ছেন তাদের জন্য এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকরা কতখানি সোচ্চার ছিলেন? বছরখানেক আগেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতনের দাবিতে শহীদমিনারে অনশন করেছেন। সেদিন কজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষত তাদের পাশে উপস্থিত ছিলেন?
তারাতো আপনাদের স্বজাতিই, হয়তো আপনাদের তুলনায় জ্ঞানে ছোট। তবুও মানুষ গড়ার কারিগরের তালিকায়তো তারাও আছেন। আজ যখন আপনাদের ভাগে কম পড়েছে তখন আপনারা সরব। এখন আপনারা জাতির সামনে শিক্ষকের মহিমা তুলে ধরে বক্তৃতা করছেন। আপনারা ছাড়াও শিক্ষক আছেন। এবং শিক্ষার্থী হিসাবে আমরা তাদেরও সমপরিমাণই সম্মান করি। একটি কাক বিপদে পড়লে শতকাক একত্রিত হয়। আপনারাতো তবু মানুষ। বিদ্বান বিশেষণটি নাহয় নাই উল্লেখ করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৭