HSC রেজাল্ট দিয়েছে গত ১৮ তারিখ। দেওয়ার পরপর টিভি-পত্রিকা-ফেসবুকে বেশকিছু টকশো-সমালোচনা হতে দেখলাম। বড় বড় বোদ্ধারা মনে হলো শিক্ষা ব্যবস্থা, নীতি ও শিক্ষার মান নিয়ে বেশ উদ্বীগ্ন। তারা নানান সংস্কারের কথা বললেন, বর্তমান শিক্ষার ভবিষ্যৎ কি-সে নিয়ে কথা বললেন, শিক্ষাকে সময়োপযোগী এবং আন্তর্জাতিক মানের করার কথাও বললেন অনেকে। সব মিলিয়ে তারা এটাই বোঝাতে চাইলেন যে, এখন শিক্ষার মান খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং এখনকার তুলনায় তখনকার (এই বোদ্ধারা যখন শিক্ষা অর্জন করেছেন) শিক্ষার মান অনেক ভাল ছিল। তাই তারা এখন বোদ্ধা হতে পেরেছেন। আমার প্রশ্ন হলো্, তারা এতো বোদ্ধা হয়েও কেন জাতীকে উপযুক্ত শিক্ষিত একটি জেনারেশন উপহার দিতে পারছেন না?!
এখন আসি মূল প্রসঙ্গে। SSC-HSC ‘র মত প্রতিটি জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফলের পরই এরকম টকশো টকশো খেলা শুরু হয়। সপ্তাহখানেক চলে, তারপর ঠান্ডা হয়ে যায়। এরপর আবার নেক্সট ফলাফলের অপেক্ষা। মাঝের সময়টুকুতে ‘শিক্ষা is not a matter of concern’. কারন এখানে রাজনৈতিক ফায়দা নেই, ব্যক্তিস্বার্থ নেই। এর সাথে কোনো নেতার ভোট বা কোন আমলার বেতন বাড়ার যোগাযোগ নেই। অথচ শিক্ষা তথা জ্ঞানচর্চা is a continuous process. বছরের তিনটি সাময়িকী পরিক্ষা বা সেখানে প্রাপ্ত ফলাফলে কিছু জড় সংখ্যার সমাবেশ কখনোই শিক্ষার মান নির্দেশক হতে পারে না। বরং আমি মনে করি পরিক্ষা ব্যতিত বাকি সময়গুলোতেই শিক্ষার ধারাপাত নিয়ে বেশি চিন্তিত হওয়া উচিৎ।
শিক্ষার টোটাল প্রসেসটাকে যদি আমরা শুধুই ক্লাসরুমে বন্দি রাখতে চাই তবে শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত গুণগত মান বা প্রকৃত শিক্ষিত জাতি গঠন সম্ভব নয়। একজন মানুষকে তার শৈশব থেকে শুরু করে যৌবন পর্যন্ত (প্রখমত যে সময়টুকু তার নিজেকে গড়ার বয়স) এমন একটি সিস্টেমের মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে হবে যেন সে নিজের অজান্তেই প্রতিটি পদে পদে শিক্ষিত হয়। বিষয়টা একটু জটিল শোনা যাচ্ছে। ভেঙে বলি। যৌবন পর্যন্ত মানুষের মিডিয়াগুলো হচ্ছে: ফ্যামিলি, স্কুল, খেলার মাঠ, টেলিভিশন, পত্রিকা ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের প্রচলিত সিস্টেমে স্কুল ব্যতিত অন্য সকল মিডিয়াই শিশুদের শিক্ষা উপকরন হিসেবে উপেক্ষিত।
খুব কম ফ্যামিলিই তাদের বাচ্চাদেরকে বাচ্চাদের মত করে সময় দেয়। স্কুলের খেলার মাঠ এখন খুবই বাড়তি জিনিস। বরং নামি দামি স্কুলগুলো বিজ্ঞাপন দেয় তাদের ইন্ডোর প্লেইং রুমে এয়ার কন্ডিশন আছে। পত্রিকাগুলোতে শিশুদের জন্যে জায়গা খুবই কম। অনেক আগে এক কোনা দিয়ে কার্টুন থাকতো। এখন তা থাকলেও বড়দের কার্টুন হয়ে গেছে (বেসিক আলি)। অনেক পত্রিকা দুই তিন পৃষ্ঠার সাপ্তাহিক বের করে ঠিকই তবে সেটা সাপ্তাহিক কেন? সাময়িকিতো আমার চোখেই পড়ে না। বাংলা একাডেমী একটা বের করে যা খবই অনিয়মিত। শিশুর মনন কি এতই ওকেশনাল জিনিস! ’ওমোক নায়কের শুটিং এর সময় পা মচকে গেছে’ এই খবরে জন্য যদি পত্রিকায় জায়গা থাকতে পারে তবে একটা শিশুতোষ গল্পের জন্যে কেন পারবে না?? কয়টা চ্যানেল নিয়মিত কার্টুন দেখায়?? ডোরেমনের দোষ পরে দিন। আগে শিশুর চাহিদা পূরণ করুন। দিনের মধ্যে অন্তত ৩০মিনিটের একটা প্রোগ্রাম রাখুন যেটা শুধুই শিশু কিশোরদের জন্য। তাদের জানা ও চেনার পরিধি বাড়ানোর জন্য।
কথা অনেক লম্বা হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে কন্ডেন্সডভাবে যেটা বলতে চাই- শিক্ষা নিয়ে প্রতিমূহুর্ত ভাবতে হবে। এটা ওকেশনাল কোন বিষয় নয় যে একদিন বসে চা খেতে খেতে সব মিটিয়ে ফেললাম। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং বিস্তৃত পরিসরের ব্যবস্থাপনা। নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা ডিপার্টমেন্টের পক্ষে একা এর ভার নেয়া সম্ভব না। এখানে প্রয়োজন সকল কনসার্ন এর সমন্ময়। একটি জাতীয় সমন্মিত প্রচেষ্টাই পারে একটি পটেনশিয়াল, সৃজনশীল এবং বিবেকবান জেনারেশন উপহার দিতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৭