somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশ তুমি কার

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখেছিল টগবগে যুবক তূর্য (ছদ্ম নাম)।দেশ গড়ার স্বপ্ন। একমাত্র উচচ শিক্ষা ছাড়া বিদেশ যাবে না, দেশেই ক্যারিয়ার গড়বে। দেশে কি মানুষ থাকে না? বিসিএস-র গাইড কিনছে সে। অন্য দুই ভাই দেশের বাইরে থাকায় পরিবার দেখভালের অভাবটুকু সে একাই পূরণ করবে। বাবা মাকে আগলে রাখবে, আরো কত তাজা স্বপ্ন ও প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলছিল তূর্য!

নামকরা একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির বিবিএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র সে। মায়ের সাথে ক’টা দিন কাটাবে বলে গ্রামীন টেলিকমে ইন্টার্ণশীপ শেষ করে থিসিস জমা দিয়েই গ্রামের বাড়ীতে ছুটে গেছে ছেলেটি ।সাথে নিয়েছে এক বন্ধুকে, যাকে সে নিজেদের ছায়াঘেরা সুনিবিড় গ্রাম দেখাবে। এরপর ঢাকা ফিরেই পূর্নোদ্যমে শুরু করবে নতুন ও উদ্দীপ্ত জীবন গড়ার পথ চলা। স্নেহময়ী মা তার নানান ব্যধিতে আক্রান্ত । কি নেই? ডায়াবেটিক, হাই ব্লাড প্রেসার, হার্টের রোগ সবই আছে। ছেলেমেয়েরা কাছে না থাকার বাড়তি শোকের কথা না হয় বাদই দিলাম। ঔষধপথ্য নিয়মিত সেবন করলেও মাঝে মাঝেই অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে যান । বাড়ীতে এসে তূর্য শোনে ক’দিন আগেও তার মায়ের এমনটি হয়েছিল। তখন ওকে জানায়নি। লেখাপড়ায় ক্ষতি হবে যে! তূর্য তাই বন্ধুসহ মাকে শহরে বড় বোনের বাড়ীতে নিয়ে যায় ডাক্তার দিয়ে আরেকবার চেক আপ করাতে। কিন্তু কে জানে এখানেই তূর্যের জন্য অপেক্ষা করছিল ভীতিকর ও দুঃসহ জীবনের নতুন এক অধ্যায়!

পরদিন সবাই বোনের বাড়িতে দুপুরে খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল । এমন সময় টুং টাং কড়া নাড়ার শব্দে দরজা খুলে হতভম্ব হয়ে যায় তূর্য। দুজন পুলিশ দাড়িয়ে, সাথে তাদের এক আত্মীয়ের আত্মীয় (যাকে সে নানা ডাকে এবং যিনিও কিনা প্রাক্তণ পুলিশের এস আই)। লোকটি ওকে দেখিয়ে দিয়ে পুলিশকে বলে, এরই নাম তূর্য। কিছু বুঝে উঠার আগেই পুলিশের হুকুম, ‘প্যান্টটা পড়ে নিন, আমাদের সাথে একটু যেতে হবে।‘ ভয় পেয়ে পাছে মায়ের কোন অঘটন ঘটে বসে ভেবে দ্রুত পুলিশের সাথে সে পথ চলে। পুলিশ ওকে তাদের গাড়ীতে বসায়। আর ওই লোকটি কাজ সমাধা হয়েছে বিধায় সটকে যাওয়ার পথ খোজে।তূর্যের ভাবলেশহীন নীরিহ চেহারা দেখে পুলিশ হয়তো খানিকটা বুঝতে পারে লোকটি ওকে অযথা ফাসাতে যাচ্ছে।তাই তাকেও ধমকিয়ে গাড়ীতে উঠায়।

এদিকে অন্য একজন পুলিশ তূর্যকে একের পর এক হুমকি দেয়। হাত-পা ভেঙ্গে গুড়া করে দিব, তোর সাথে আর কে কে আছে বল ইত্যাদি । প্রাথমিক তদন্তেরও তোয়াক্কা না করে এস আই আব্দুর রাজ্জাক মাথা, কান ও বুক বরাবর প্রচন্ড বেগে তিন চারটি ঘুষি মারে। প্রচন্ড ব্যাথায় কুকড়ে উঠে তূর্য। আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ে তার। কি বলবে সে? ভদ্রবেশী ওই অমানুষটাকে সে জিজ্ঞেস করে, নানা আমি কি করেছি? নানা উত্তরে জানায় গত রাতে সে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। অবাক হয়ে তূর্য জানতে চায় টাকা নিব কেন, সে টাকাই বা কোথায় রেখেছি, কোথা থেকে নিলাম, আমার বাবার কি সামান্য এই টাকা নাই, এসব কি বলছেন? লোকটি এবার এলোমেলো ভাবে পুলিশকে জানায়, রাতে নিয়েছিল, আজ সকালে ফেরৎও দিয়েছে।পুলিশ লোকটিকে হুমকি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, টাকা যদি ফেরৎ পেয়েই থাকেন তবে আসছেন কেন, আপনাকেও ছাড়ছি না, ইত্যাদি। কিন্তু থানায় আসার পর অজানা অথবা জানা কারনে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় আর তূর্যকে ভরা হয় লক আপে ।

মামলা সাজানো হয় সম্পূর্ণ উল্টাভাবে। জেলা পুলিশ লাইন থেকে তূর্যকে ধরা হয়েছে, টাকা সহ! মানে ‘পুলিশে সে লোক নিয়োগ দিবে’ কথা বলে মানুষজনের কাছ থেকে টাকা নিতে সে ঢাকা থেকে এসেছে বন্ধুবান্ধবসহ। আর আমাদের চৌকষ পুলিশবাহিনী তাকে ধরে ফেলেছে টাকা লেনদেনরত অবস্থায়! কি অদ্ভূত, পৃথিবী!

ওদিকে উৎকন্ঠিত অসুস্থা মা, ছেলে এখনো ফেরে না কেন? ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ায়ে তাকে রাখতে হয় দিনের পর দিন।বাবা স্কুল শিক্ষক, সজ্জন ও নীরিহ হিসেবে এলাকায় সমধিক পরিচিত। কয়েকমাস পরেই রিটায়ার্ড হবেন। পাগলের মত এদিক ওদিক ফোন করেন। খবর চলে যায় তূর্যের পারিবারিক বন্ধু এক এএসপির কাছে। তিনি ফোন করেন সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি বরাবর। ভাল মানুষ হিসাবে জেলায় এসপির নামডাক আছে। তিনি তূর্যের পারিবারিক খবর নিতে শুরু করেন। কোন খারাপ রিপোর্ট পান না। কষ্টেসৃষ্টে তূর্যের বাবা-মা দেখাও করেন এসপির সাথে। জানতে চান তাদের ছেলে কি অপরাধ করেছে? ইউনিভার্সিটিতে কি সে কোন আইনবিরোধী কাজের সাথে জড়িত? পুলিশ সব কিছু এবার বুঝতে পারে। সম্পূর্ন ঈর্ষাপরায়ন বশত সম্ভাবনাময় তরুন ছেলেটাকে ফাসিয়ে দিয়েছে আত্মীয়রুপী ওই অমানুষটি। এসপি, এএসপি সহমর্মিতা দেখালেও থানার ওসি তূর্যকে ছাড়ে না। থানার ব্যাপার স্যাপার যারা বোঝে তাদের সাথে যোগাযোগ করে তূর্যের আত্মীয় সজন। ওসিকে বখশিস দেয়া হয়। ইতিমধ্যে ওসি বেচারা নাকি বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন ওসিগিরী করে রাজশাহীতে সম্পদের পাহাড় গড়ে।

দেশের মাটিতে কামড়ে পড়ে থাকবে বলে যে প্রতিজ্ঞা করেছিল, সম্পূর্ন বিনা কারনে শুরু হল তার নতুন জীবন। এই কচি বয়সে সমাজের প্রভাবশালি ও উচচ শিক্ষিত তথাকথিত ভদ্রমানুষদের সুফী চেহারার আড়ালে ঘৃন্যরুপের কিয়দংশ এক এক করে দেখতে শুরু করল সে। তার বাবার ছাত্র ও পারিবারিকভাবে শুভাকাংখী যাকে কিনা সারাজীবন আপনজন বলে জেনেছে, ফোনে পুলিশকে বলছে, পিটিয়ে কথা বের করতে। এত কড়াকড়ি অবস্থার মধ্যেও চোখের সামনে সে দেখল সামান্য একশো টাকার বিনিময়ে এক খুনীকে কিভাবে পুলিশ ছেড়ে দিল।এক এস আই এসে ওকে বলল, আপনার আপাকে আমার সাথে দেখা করতে বলুন, তবে এটি ভাববেন না যে আমি ঘুষ চাচ্ছি। আকাশের দিকে চেয়ে থাকে তূর্য, বোঝে না কি করবে সে। যে ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা সাজানো হচ্ছে, তাতে নাকি তার সাত বছরের জেল হবে। তার মত অনেক নিরপরাধ ছাত্র, কিশোর, যুবার সাথে পরিচয় হয় জেলের ভিতর। নিজের ভবিষ্যৎ ভেবে আৎকে উঠে তূর্য। বাইরের পরিচিত মানুষজন তাকে নিয়ে কি ভাবছে? তারা তাকে ভুল বুঝছেনা তো? কিভাবে তাদের সামনে সে মুখ দেখাবে? ছাড়া পেয়ে কয়জনকে সে বুঝাবে?

যাহোক, এসপি ও এএসপির বদান্যতায় শেষমেশ জেল খেটে তূর্য ছাড়া পেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ভয় ও অজানা আশংকা তার পিছু ছাড়েনি। আগেরমত তার প্রত্যয় নেই, দেশের থাকার অদম্য বাসনাও নেই। প্রতিশোধের স্পৃহা সারাক্ষন তাকে তাড়া করে বেড়ায়। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে বলছিল আমাকে কোন কিছু না লিখতে। না জানি কখন আবার পুলিশ এসে তাকে কোন ধারার সীমাহীন ক্ষমতা বলে ধরে নিয়ে যায়!

তূর্যের সম্ভাবনাময় জীবনে আর নতুন কোন অঘটনা ঘটুক, তা অবশ্যই চাইনা বরং তার চলার পথ আবার শুভ হোক, আশা ভঙ্গের আর কোন অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সম্মুখীন না হোক, তাই-ই কামনা করি। কিন্তু একদম নিরবতাকে নিজের বিবেকের কাছে কোনমতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। পত্র পত্রিকায় টুকটাক লেখালেখির সুবাদে অনেকেই
ই-মেইল করে, ফোন করে তাদের জীবন ঘনিষ্ঠ অনেক সমস্যার কথা বলেন। মানুষের কাছে তাদের মনের আকুতি তুলে ধরতে বলেন। ভাবলাম এসব নিয়ে আমি কিভাবে কলাম লিখব? আমার প্রিয় যেদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীরা সরাসরি আন্ডারওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসীদের সাথে জড়িত কিংবা বিচারপতিদের শায়েস্তা করতে লাঠি মিছিলের নেতৃত্ব দেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী যেদেশে এক লাশের বদলে দশ লাশ ফেলে দেয়ার হুকুম দেন, ওসির নির্দেশে প্রতিবেশীর জমি-বাড়ী ভোগ দখলের খায়েশে কলেজ ছাত্রকে হত্যা করা হয় কিংবা দিন দুপুরে পুলিশের সামনে সাপের মত পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়, যৌতুকলোভী শয়তান স্বামীদের নির্যাতনের শিকার হয়েও নারীরা পুলিশকে কাছে পায় না, যেদেশে ইয়াসমীন, রাহেলা, নূরজাহান আর কত নাম না জানা কৈশোরী, তরুনীর অকাল জীবনের করুন পরিসমাপ্তি ঘটে সেদেশে আমি কত জনের কথা লিখব? সর্ষের মধ্যেই যদি ভুত থাকে, সে ভুত তাড়াবে কে? তাও আবার পুলিশের বিরুদ্ধে যে বিভাগে কিনা আমার আত্মীয় সজনদের বিরাট অংশই বিভিন্ন পদে কর্মরত? তবুও অজস্র মজলুম হতভাগাদের মধ্য থেকে তূর্যের কথা লিখছি, কারন তার কান্না আমাকে সরাসরি শুনতে হয়েছে। প্রায় সপ্তাহ খানিক ধরে ভেবেছি আমি কি সত্যি কিছু লিখব না? কেমন করে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকি যেখানে আমার কিনা মুক্ত অস্ত্র (কলম)কে কেউ লাগাম টেনে ধরতে পারবেনা। যে লেখায় প্রানের স্পন্দন থাকে না, মাটি ও মানুষের চাপা কান্না থাকে না, জীবনবোধের দোলা থাকে না, হৃদয়ের স্খরন থাকে না, তা আবার কিসের লেখা?

মুঞ্জুরুল করিমের ক্রাইম ওয়াচে কয়দিন আগে দেখলাম দক্ষিনাঞ্চলের এক জেলার গোটা পরিবারের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার করুন কাহিনী। শুরু হয় কলেজ পড়ুয়া মেয়ের মুখের উপর এসিড নিক্ষেপের মাধ্যমে। তারপর একে একে হত্যা করা হয় পরিবারের কয়জন সদস্যকে। এবার তাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে জমি জমার উপর। সাথে রয়েছে পুলিশের উপরি চাহিদা। সইতে না পেরে পরিবারের জীবিত একমাত্র পুরুষ সদস্য বাবা (যিনিও সারা শরীরে জখমের চিহ্ন বয়ে বেরাচ্ছেন) মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে উঠেছেন। বেদনাদায়ক ব্যাপার হল, সেখানেও বেপরোয়া সন্ত্রাসীদের হুমকি ধমকি থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না নিঃস্ব ওই পরিবারটি। পুলিশের চেয়েও বহুগুন উন্নত ও আধুনিক অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসীদের নিকট আমাদের পুলিশবাহিনী যেন নির্জীব এক অপদার্থের নাম।

অথচ, অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পুলিশ ঠিকই লিখে রেখেছে তাদের ভিশন হল, প্রতিটি নাগরিককে সেবা প্রদান করে বসবাস ও কাজের জন্য সুন্দর ও নিরাপদ বাংলাদেশ বাস গড়ে তোলা (To provide service to all citizens and make Bangladesh a better and safer place to live and work) এবং তাদের মিশন হল, আইনের শাসন সমুন্নত রাখা, নাগরিকদের সেফটি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করা, অপরাধ দমন ও তা নির্ণয় করা, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, এবং শান্তি ও শৃংখলা বজায় রাখা (To ensure safety and security of citizens, To prevent and detect crime, To bring offenders to justice, To maintain peace and public order) ।

একটা সুস্থ ,সুন্দর ও সভ্য সমাজ বিনির্মানের প্রধান সোপান হল আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও সবার প্রতি মানসম্মত আচরন। কোন সমাজ থেকেই মিথ্যার বেসাতি ও অপরাধ সমূলে নির্বংশ করা আকাশ কুসুম কল্পনা বৈ কিছু নয়। কিন্তু সেসব নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে নিয়ন্ত্রকরাই যদি সমান বা তার চেয়েও বেশী অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে অসহায় মানুষরা যাবে কোথায়? পুলিশের কোন্ আইজি যেন একদিন বলেছিলেন, যদি সামগ্রিকভাবে এই বাহিনীর সব সদস্য কোন অপরাধের সাথেই জড়িত না হতেন, তবে সারাদেশের অপরাধ আপনা আপনিই কমে যেত।

এনটিভিতে এই তো কিছুদিন আগে কয়েকটা এনজিও প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময়কালে পুলিশের আইজির বক্তব্য মনযোগের সাথে দেখছিলাম। তিনি পুলিশদের একটু ধাক্কা দিতে অনুরোধ করছিলেন যাতে করে তারা অল্প বেশী নড়ে চড়ে ওঠে, অচলায়তনের শক্ত খুঠি ভেঙ্গে একটু হলেও সচল হয়। বৃটিশদের পৌণে দুইশো বছর শাসনের ধারাবাহিকতার ফসল পুলিশের এই সেবাহীন মনোভাবের বর্তমান ধারা আগামী একশো বছরেও পরিবর্তন হবে কিনা তা নিয়ে খোদ পুলিশের আইজিই সন্দেহ প্রকাশ করছিলেন। একথা বলতে আজ দ্বিধা নেই যে, উপমহাদেশে বৃটিশদের দীর্ঘদিনের দস্যুপনার শিকার হতে হয়েছে সরকারী ,বেসরকারী সহ প্রতিটা বিভাগ ও ক্ষেত্র। জনগনকে সরকার ও তাদের বিভাগসমূহ থেকে দূরে রাখার প্রবণতা নিয়েই তাদের মত করে গড়ে তুলেছিল বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন। তৈরি করেছিলে একদল এলিট শাসক শ্রেনী যারা কিনা আম জনতার ধরাছোয়ার বাইরে থাকবে। আদালতকে ‘লর্ড’ বলা তারাই শিখেয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘একান্ত ও বাধ্য অনুগত ছাত্র’ তৈরির কারিকুলাম তারাই সাজিয়েছে। পাকিস্তানীরা ২৩ বছরের শাসনের জন্য যদি একবার ক্ষমা চায় তবে বৃটিশদের ভদ্রবেশী দস্যুবৃত্তির জন্য আমাদের নিকট কমপক্ষে সাতবার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। প্রথম স্বাধীনতা প্রাপ্তিরও তো ষাট বছর পার হতে চলল, আমরা কি ওই গোলামী মনোবৃত্তির জিঞ্জিরতা থেকে আমাদেরকে টেনে বের করতে পারব না?

সাধারন মানুষের মনের ভিতর থেকে না বলা কথা টেনে এনে পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদ বলেছিলেন, ‘এই বিভাগটি মূলত রক্ষক না হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায়ই বেশী পরিমানে চালিত হয়। তা পরিবর্তন করতে হবে।‘ সত্যিকার সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে এটিকে পরিনত করার কঠিন চ্যালেঞ্জ তিনি হাতে নিয়েছেন। কতটুকু সফল হবেন জানিনা, তবে একথা সত্যি যে মুষ্টিমেয় কিছু অসৎ পুলিশ সদস্যদের কারনে আজ গুরুত্বপূর্ন ও অপরাধ দমনে প্রথম পদক্ষেপ নেয়া এই আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর পচন কেউ ঠেকাতে পারছেনা। এরশাদের বেপরোয়া পুলিশ, খালেদা ও হাসিনার গনতান্ত্রিক পুলিশ, ফখরুদ্দীনের জরুরী অবস্থার পুলিশ-জনগন সবই দেখেছে। কিন্তু মানুষ ভালবাসার পুলিশ বাহিনী কোথায়?

এক একজন বঞ্চিত মানুষের বিন্দু বিন্দু ক্ষোভ জমা হতে হতে আগ্নেয়গিরির লাভা হয়ে যখন পুরা বাহিনীকে খেয়ে ফেলবে তখন আর করার কিছুই থাকবেনা। গুরুত্বপূর্ণ এই বাহিনীর অকর্মন্যতার ফলে দেশটার রসাতলে যাওয়া থেকে কেউ বাচাতে পারবেনা। আমেরিকা ও কানাডায় পুলিশ বিভাগে রিক্রটিং শুরুই হয় পদের নাম ‘পুলিশ অফিসার’ এবং অন্যান্য চাকরির সমান্তরালে সম্মানজনক বেতন ভাতাসহ উন্নত সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে। অবৈধ পথে টাকা রোজগার না করলেও তাদের সংসার সুন্দরভাবে চালাতে কোন কষ্ট করতে হয় না। যদিও উন্নত দেশসমূহের সাথে তৃতীয় বিশ্বের কোন দেশের তুলনা করা বাস্তবসম্মত নয়, তবুও মনে হয় খুব জরুরী ভিত্তিতে পেটোয়া বাহিনী থেকে মানুষের কল্যানের বাহিনীতে রুপান্তরিত করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ‘ত্রি টি (ট্রেনিং, টেকনোলজি ও টাকা বা উন্নত পারিতোষিক)’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ দ্রুত নেয়া উচিৎ। দেশ বিদেশ থেকে উন্নত প্রশিক্ষক এনে বছরব্যাপী সেবামূলক নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, বিশ্বমানের উন্নত প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ রপ্ত ও সর্বোপরি উন্নত বেতন ভাতার পাশাপাশি কড়া জবাবদিহী মূলক সিস্টেমের ব্যবস্থা থাকা উচিৎ। উচচপদে সঠিক অফিসার বাছাইয়ের জন্য পুলিশের আইজি ম্যানেজমেন্টের জনপ্রিয় PAQ থিউরি বাস্তবায়ন করতে পারেন, যার অর্থ পারফরমেন্স, এক্সেপ্টেন্স ও কোয়ালিফিকেশন। অর্থাৎ কর্মদক্ষতার মাধ্যমে যেসব পুলিশ অফিসারেরা সর্বক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে সবার মাঝে গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করেছেন শুধু তাদেরকেই সঠিকভাবে প্রশাসন তদারকীর জন্য লোভনীয় ও অধিক দায়িত্বশীল পদে বসানো হবে। যাতে করে পুলিশকে দেখে সাধারন মানুষ ভয়ে আতকে উঠবেনা, ‘ঘুষ ও পুলিশ একই সমান্তরালে চলে’ এই অপবাদকে উল্টিয়ে দিয়ে মানুষের মনে গেথে যাবে ‘সেবাদানই হল পুলিশের একমাত্র ব্রত’।
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×