somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিবার তন্ত্রের যাঁতাকলে গনতন্ত্র অসহায়

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২২ এবং ২৩ অক্টোবর ০২ দিনব্যাপী জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ২০ তম কাউন্সিল অধিবেশন। নবনির্বাচিত কমিটিকে আমি অভিনন্দন জানাই এবং আশা করি যে, তারা যেন এদেশের গনতন্ত্র রক্ষা ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। কামিটি ঘোষনা করার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সদ্যপ্রাপ্ত ব্রেকিং নিউজ, পত্র পত্রিকার অনলাইন ভার্সন, সোস্যাল মিডিয়া এবং পরদিন প্রকাশিত দৈনিক প্রত্রিকার বেশিরভাগ অংশ জুড়েই ছিল বর্নাঢ্য এ কাউন্সিল অধিবেশনের খবর। তবে কোন প্রার্থী কত ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হলেন, তার খবর কোন মিডিয়াতেই প্রকাশিত হল না। কিন্তু কেন? এদেশের গনতন্ত্র রক্ষায় এ দলটির অবদান কি কম? স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন স্বৈরশাসকদের এবং গত তত্তাবধায়ক সরকারের আমলেও এ দলটি গনতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করেছেন। আমরা যদি আরেকটি পিছনে যাই, ১৯৭০ সালের সাধারন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে ব্যাপকভাবে আওয়ামীলীগের পতাকাতলে সুসংগঠিত করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন এবং এ দলটি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে জয়লাভ করে। গনতন্ত্রের বিধি অনুসারে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা। কিন্তু পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে অপ্রত্যাশিত জটিলতা সৃষ্টি করে। জনগনের রায় অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা এবং পরবর্তী গণহত্যার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে বাঙ্গালী জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধের সুচনা করে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে আজকের এ স্বাধীন বাংলাদেশ। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেওয়ার পিছনে অন্যান্য যত কারন-ই থাকুক না কেন, পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি তথা আওয়ামীলীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গনতন্ত্রকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোই ছিল একটি অন্যতম কারন। ইতিহাস ঘাটলে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক গনতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনের ইতিহাস অত্যান্ত সু-প্রাচীন। এমন একটি দলের কাউন্সিল অধিবেশনে সঠিক গনতন্ত্র চর্চার অভাব অত্যান্ত দুঃখজনক। পা-চাটা নেতৃবৃন্দের কেউ-ই আমার এ মতের সাথে একমত হতে পারবেন না । তারা বলবেন- প্রতিদন্ধী প্রার্থী ছিল না, তাছাড়া জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের আগে থেকে এবং সম্মেলন চলাকালেও বারবার নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার কথা বলেছেন। একথা সত্য কিন্তু কেউ কি জননেত্রীর কথার প্রেক্ষিতে সাহস করে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার পক্ষে অভিমত দেওয়ার মত দুঃসাহস দেখাতে পারতেন! পারতেন না, কারন সবাই এ ধরনের দুঃসাহসের পরিনতিটা জানেন এবং এ পরিনতি মানার মত সৎ সাহসও কারো নেই। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার বদৌলতে জানতে পারি যে, কাউন্সিল অধিবেশনের পূর্বে সদ্য বিদায়ী সাধারন সম্পাদক বলেছিলেন- নেতৃত্বে কে আসবে, তা শুধু জননেত্রী শেখ হাসিনা-ই জানেন। আমার প্রশ্ন হল- নেতৃত্বে কে আসবে, তা তিনি কিভাবে জানবেন? তিনি কি জোতিষ নাকি? গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচিত হলে তিনি যে সভাপাতি হিসাবে পুনর্নির্বাচত হবেন, এমন নিশ্চয়তাইতো তিনি দিতে পারার কথা নয়। জননেত্রী শেখ হাসিনা বারবার নেতা কর্মীদের নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন-এটা কি আইওয়াশ নয়? স্বদিচ্ছা থাকলে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা কি খুব কষ্টকর? হাক ডাক বাজিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনার কথা বলার কোন প্রয়োজন ছিল না। তিনি যদি অন্য কাউকে দলের সভাপতি করতে চাইতেন, তবে তা সহজেই সম্ভব হত। সঠিক গনতন্ত্র চর্চা করলে তিনি তাইবা কেন চাইবেন। গনতান্ত্রিকভাবে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচিত হবে এবং তা হতে হবে অত্যান্ত গোপনীয়তার সাথে। পরিবার তন্ত্রের এদেশে পরিবারের মতামত ছাড়া প্রকাশ্যে কেউ প্রার্থী হলেও বিপদ অবশ্যম্ভাবী। তার স্বদিচ্ছা থাকলে বারবার নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার কথা না বলে স্ব-উদ্যোগে দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে নতুন নেতৃত্ব আনার ব্যবস্থা করতে পারতেন। এমনভবে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতেন যে, গঠনতন্ত্রই বলে দিবে কে কোন পদের প্রার্থী হবে, আর কে কে কোন পদের পার্থী হতে পারবেন না। দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী দল এবং দলের কর্ণধার জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে এমনটি-ই হয়ত আশা করেছিলেন দেশের সচেতন জনগন। এরকম একটি কঠিন, আত্মত্যাগপুর্ন এবং নিঃস্বার্থ সিদ্ধান্ত কেবল বঙ্গবন্ধু কন্যার নিকট থেকেই জাতি আশা করতে পারেন। একবার তিনি শুরু করলে ধীরে ধীরে অন্য দলগুলোও তা অনুকরণ করতে বাধ্য হত বা বাধ্য করা যেত, যা দেশের গনতন্ত্র রক্ষায় অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন। দলেই যেখানে গনতন্ত্রের চর্চা নেই, তাদের কাছ থেকে দেশ পরিচালনায় গনতন্ত্রের চর্চা আসলে মুখে মুখে বুলি আওড়ানো ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচারিত টক শো’গুলোতে গনতন্ত্রের জন্য মায়া কান্না লোকের অভাব ছিল না। আসলে-ই কি আমাদের দেশে দেশ পরিচালনায় সঠিক গনতন্ত্রের চর্চা বিদ্যমান? দু’টো পরিবারের হাতে জিম্মি আমাদের গনতন্ত্র । গনতন্ত্রের আড়ালে পরিবারতন্ত্র দেখার জন্য জনগন এদেশ স্বাধীন করেনি। জনগন সত্যিকারের গনতন্ত্র দেখতে চায় এবং এ গনতন্ত্রের শুরুটা বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছ থেকেই জাতী আশা করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×