বতর্মান মহাজোট সরকারের একবর্ষপূর্তি হচ্ছে। যদি ও পূর্তির চেয়ে জনগনের দূর্গতি হয়েছে বেশী। যেমন তারা বলেছিল দশ টাকায় চাল খাবাবে। ঘরে ঘরে চাকুরী দেবে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ এমন সব অসম্ভব ও অবাস্তব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তাতে মনে হয়েছিল যে, জনগণের মন জয় করার জন্য আসমানের চাঁদ চাইলে আওয়ামী লীগ তাও এনে দেবে।
দ্বিতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকারের এক বছর পূর্ণ হল। অভিনন্দন শেখ হাসিনা। যদিও এ অভিনন্দন আওয়ামী লীগের একার প্রাপ্য নয় এখানে বাম-ডান আছে। যে জাতীয় পার্টিকে হটিয়ে এদেশে গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই এরশাদ আছেন। আর ছিলেন মইন উদ্দীন, ফখরুদ্দীন। আর আছেন নির্বাচন কমিশনের মহামান্য কমিশনারবৃন্দ। এদের সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করে এক বছর পার করে দিল। এদের সবাইকে অভিনন্দন। এর পেছনে আরো যেসব বিদেশী প্রভু ছিলেন তাদের অভিনন্দন জানাবার উপায় নেই।
কেননা দেশ আমাদের, এদেশের জনগণের। ইংরেজের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় বসেছিল মীর জাফর আলী খান নবাব সিরাজ উদ্দৌলাকে হত্যা করে। ইতিহাস মীর জাফরকে যতো দোষারোপ করেছে, ক্লাইভকে ততো দোষারোপ করেনি। সেই বিবেচনায় লর্ড ক্লাইভদের বাদ দেয়াই ভাল। আমরা এক বছর পার করেছি। কিন্তু আমাদের আকাঙ্ক্ষা কি পূর্ণতার পথে যেতে পেরেছে?
আওয়ামী লীগের এই এক বছরের শাসনকে দুঃশাসন-অপশাসন বললে সম্ভবত খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হয় না। ১০ টাকা কেজি চাল, বিনামূল্যে সার, ঘরে ঘরে চাকরির এক অলীক স্বপ্নে নিয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ। প্রশাসন সম্পর্কে বলা হয়েছিল যোগ্যতা ও দক্ষতাই হবে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতির মাপকাঠি। আইন-শৃক্মখলায় বাংলাদেশ হবে ইউটোপিয়ার মত এক অলীক স্বপ্নের দেশ। কিন্তু ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সেই ওয়াদার বরখেলাপ করতে এক মুহূর্তও দেরি করেনি। চালের দাম ১০ টাকা তো দূরের কথা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিএনপি আমলে যেখানে মোটা চাল ১৪ টাকা থেকে ১৬ টাকা ছিল এখন তা ২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিএনপি আমলের ৪৮ টাকার সয়াবিন তেল এখন ১৩০ টাকায় উঠেছে। ৬ টাকার আলু ২৫ টাকা। ২০ টাকার রসুন ১১০ টাকা। আর ১২ টাকা হালি ডিমের দাম উঠেছে ২৪ টাকায়। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের হোমরা চোমরারা প্রতিদিন গলা ফাটিয়ে বলছেন, বিএনপি আমল থেকে তারা দ্রব্যমূল্য কমিয়ে এনেছেন। এতে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ এখন একটি হাস্যকর সংগঠনে পরিণত হতে বসেছে।
বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড তথা র্যা ব-পুলিশের ক্রসফায়ারে আওয়ামী লীগ ও তথাকথিত সুশীল সমাজ একেবারে হামলে পড়েছিল। সে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্রসফায়ারের রেকর্ড গড়েছে। আওয়ামী লীগের এক বছরে ২২৯ জন আদম সন্তান বিনা বিচারে ক্রসফায়ারে খুন হয়েছেন। এছাড়া চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব এ এক বছরে মোটামুটি প্রাতিষ্ঠানিকরূপ লাভ করেছে। আওয়ামী লীগের অপশাসন এতোই বিষাদ যে, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশী-বিনিয়োগকারীরা চাঁদাবাজি মাস্তানির ভয়ে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সরকারকে আস্থায় নিতে পারছে না। ফলে তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সরকার হামলা মামলায় যতো দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে আর কোন ক্ষেত্রেই এদের সেরকম দক্ষ দেখা যায়নি। ফলে কর্মসংস্থানের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের শ্রমবাজারে আরো ২০ লাখ নতুন বেকার কর্মী হাজির হয়েছেন।
এদিকে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের অত্যধিক তোষামোদের ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই অনেকখানি একঘরে হয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে গেছে। সে বাজার এখন ভারতের দখলে। মালয়েশিয়াও তাই। সরকারের ভারত তোষণনীতির ফলে চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এখন চারদিকে কেবল প্রভু, বন্ধু নেই।