বর্তমান বিশ্বে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাই উত্তম বলে স্বীকৃত। আবরাহাম লিংকন বলেছিলেন যে সরকার জনগনের মধ্য থেকে, জনগনের জন্য এবং জনগনের দ্বারা গঠিত তাকে গনতন্ত্র বলে। কারণ এই পদ্ধতিতে সকল নাগরিকের সমঅধিকার থাকে। ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতার ব্যাপারে গণতন্ত্র উদার। গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছাকেই মান্য করা হয়। আর সংখ্যা লঘিষ্ঠের দাবি-দাওয়াকেও আমলে আনার রীতি আছে যদি তা যুক্তিযুক্ত হয়। জনস্বার্থের পরিপন্থী না হয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশের সকল নাগরিকের দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্যবোধ সমান, কি শাসকের কি শাসিতের। এখানে দেশের উন্নয়নে এবং জাতির উন্নয়নে যেমন শাসককে ভাবিত করে পাশাপাশি প্রতিটি বিবেকসম্পন্ন নাগরিক তার সহযোগিতার হাতকে প্রশস্ত করে, উন্নয়নকে উজ্জীবিত করে। বলতে দ্বিধা নেই আমরাও একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক। অন্ততপক্ষে কাগজে কলমে তো অবশ্যই। বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, বিশ্বাসকে বিভাষিত করার অধিকার প্রায় প্রতিনিয়তই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যদিও। ভিন্ন মতের নাগরিকের সভায় হামলা হচ্ছে, মামলা হচ্ছে, খুন হচ্ছে, সম্পদ বিনাশের মতো ঘটনাও ঘটানো হচ্ছে। এসব বাধা আসছে শাসকশ্রেণীর তরফ থেকে বেশির ভাগ সময়। এটা গণতান্ত্রিক মনোভঙ্গির খেলাপ।
স্বাধীনতার এত দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার পরও আমরা এখনো একটা অস্থির অবস্থাকেই অবলোকন করছি। ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসাবে বাহুকে শক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছি। শুধু বিভাজনের বাদ্য, বিবেকহীনতার বনায়ন। ঊনচল্লিশ বছর কি খুব অল্প সময়। যৌবন পার করে পৌঢ়ত্বে পা রেখেছি। এরপরও আমাদের বালকসুলভ আচরণ বিশ্ববাসীকে বিব্রত করে হাসায়। কোন কোন সময় লজ্জিত করে। আমাদের লজ্জা না থাকতে পারে কিন্তু ওদের তো আছে। এতো বয়সে একটা দেশ অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়। বুদ্ধি মগজ পোক্ত হয়। বিশ্বের দিকে চোখ ঘোরালে তো এমন দৃশ্যই উঠে আসে। আর এত বছরের ব্যবধানে আমাদের অর্জন একজন আর একজনের ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ততা, অপলাপে চোয়ালের হাড়পুষ্টি প্রাপ্তির দিকে অগ্রসর হওয়া।
অধিকাংশের বিশ্বাসকে গ্রাহ্যতায় আনার অর্থই হলো গণতন্ত্র। যথার্থ গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে তো এমন পরিবেশই বিরাজমান। সব মত সব পথকে সমান দৃষ্টিতে মাপা হয়। অতিদূরে কেন, পাশের দেশ ভারত তো এই গণতন্ত্রের উপরই তাকে স্থিত করেছে। নানা পথ নানা মত সে দেশে স্বাচ্ছন্দে হাঁটাচলা করছে, যদি তা দেশবিরোধী না হয়। তারা জাতীয় স্বার্থে এক এবং অভিন্ন। সারা বিশ্বে আমরাই বুঝি ব্যতিক্রম। শুধু বিভাজন, শুধু বিভাজন। কথায় আছে নিজের স্বার্থ নাকি পাগলেও বুঝে। আমরা কি পাগলের চেয়েও অধম?
জাতির সামনে একটি মহাসংকট যেন অপেক্ষা করছে। ক'দিন আগে আমাদের আইনমন্ত্রী ঘোষণা করলেন ধর্মীয় রাজনীতি অর্থাৎ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ হবে সহসা। অবশ্য তিনি আদালতের একটি রায়ের বরাত দিয়ে এমন ‘দৃপ্ত ঘোষণা' দিয়েছিলেন। যদিও তারাই বলেন, আদালতের রায়ের বদৌলতে আমরা স্বাধীনতা পাইনি, রীতিমত যুদ্ধ-লড়াই করে আনতে হয়েছিল। এটাই ছিল বাস্তবতা। তাই বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করা নির্বোধের কর্ম।
তিনি বলেছেন, বিসমিল্লাহ থাকবে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামও থাকবে। কেবল থাকবে না আল্লাহর আদেশকে প্রচার করার মুখপাত্র। এ এক উদ্ভট চিন্তা। ধর্ম মানবো কিন্তু ধর্মের আদেশকে মানবো না এমন ভাবনা শিশুরাই ভাবতে পারে। ধর্মমন্ত্রী, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভাগ্যে কি জুটবে সে কথা তিনি খোলাসা করেননি অবশ্য। অন্য কোন ধর্মের রাজনৈতিক দল নাই বাংলাদেশে, একমাত্র ইসলাম ছাড়া। এখানে কৌশল করে বলা হচ্ছে ধর্মীয় রাজনৈতিক দল। জনগন তাদের কুটচাল ভালো করে জানে।অতীতে যেভাবে প্রতিহত করেছে, ভবিষ্যতেও করার জন্য প্রস্তুত।