মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে সবকিছুতে জোট সৃষ্টি করে ফেলেছে।ফলে ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে টেন্ডারবাজী । দিনে দিনে বেপরোয়া হয়েছে টেন্ডারবাজরা। আর টেন্ডারীদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা।টেন্ডার সন্ত্রাসের কারণে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রাগে-ক্ষোভে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ ছেড়ে দিয়েছেন। তারপরও বন্ধ হয়নি টেন্ডারবাজি। টেন্ডারকে কেন্দ্র করে সরকারদলীয় ক্যাডারদের পেশিশক্তির মহড়া চলেছে। সারাদেশের টেন্ডার প্রক্রিয়া তাদেরই দখলে। তাদের প্রভাবে অসহায় হয়ে পড়েছেন অভিজ্ঞ পেশাদার সাধারণ ঠিকাদাররা। রাজনৈতিক কারনে টেন্ডার সন্ত্রাসীর কাছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও অসহায়। শত চেষ্টার পরও এদের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে টেন্ডার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা থামানো যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, টেন্ডার সন্ত্রাসীর সঙ্গে যুক্ত থাকেন এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালী রাজনীতিক। সরকারদলীয় অনেক সাংসদও অনেক সময় টেন্ডারবাজির কারসাজি চালাচ্ছেন।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রাজধানীতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে টেন্ডারবাজিতে সক্রিয় রয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রুপ। তারা অফিসগুলোতে রাত-দিন অহেতুক ঘোরাফেরা করলেও অফিসের কর্তাব্যক্তিরা উচ্চবাচ্য করার সাহস পান না। যাচাই-বাছাই করে টেন্ডার বা কাজ কখন কোন কোম্পানিকে দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করে দিচ্ছে তারা। তাদের ভয়ে নির্দিষ্ট স্থানে টেন্ডার বাক্স বসানো যায় না।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট বেনাপোল বন্দরে আটটি কাজের জন্য দরপত্র ডাকা হয়। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ৭ ও ১৬ সেপ্টেম্বর। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা এ কাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করবে, এ খবর আগে থেকে জানার পর স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কার্যালয় ছাড়াও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বাক্স স্থাপন করে। ফলে টেন্ডারবাজরা কারওয়ান বাজারের বাক্স পাহারা দিলেও কমিশনার কার্যালয়ে রাখা বাক্সে দরপত্র জমা পড়ে। তারা পরে এটা জানতে পেরে শেষ পর্যন্ত ফোন করে হুমকি দিতে শুরু করে। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এবারের দরপত্র আহ্বানের পর সরকারি দলের নাম-পরিচয় নিয়ে ৩০-৩৫ জন যুবক এসে দিনভর কার্যালয়ে অবস্থান করে।
খাদ্য অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, ঢাকা বিভাগের ১১টি খাদ্য গুদামের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চার কোটি ৯৬ লাখ টাকার একটি কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৪ আগস্ট ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ১১টি কাজের জন্য ১১০টি দরপত্র জমা পড়ে। সকাল থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা সেদিন খাদ্য ভবনে অবস্থান নেয়। তাদের ভয়ে সাধারণ ঠিকাদাররা এলাকায় ভিড়তে পারেননি। একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি লিখিতভাবে জানায় বলে জানা গেছে।
সূত্রগুলো আরও বলছে, সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোকে অনেক সময় ভাড়া করেও এক অফিস থেকে অন্য অফিসে আনা হচ্ছে নিজেদের অবস্থান জাহির বা সাধারণ ঠিকাদারদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্য।সরকারের সাফল্যের উর্ধ্বে টেন্ডারবাজির সাফল্য প্রতিয়মান হয়েছ।