প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে পৌঁছেছেন। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে একটি বিশেষ বিমানযোগে ১১৯ জন সফরসঙ্গী নিয়ে তিনি যান। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর সঙ্গী বহরে এবার স্থান পেয়েছেন মাত্র দুইজন মন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন ।এছাড়াও থাকছেন প্রধানমন্ত্রীর তিন উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, গওহর রিজভী ও ড. মশিউর রহমান। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে হতে যাওয়া চুক্তি সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা থাকছেন এ সফরে। তবে পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা দিন কয়েক আগে দিল্লী পৌঁছেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে আরো থাকছেন তার বোন শেখ রেহেনা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ পরিবারের সাত সদস্য, স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার, বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ, বিশেষ দূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, যোগাযোগ সচিব মোজাম্মেল হক খানসহ ৪১ সদস্যের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে আমি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও দলীয় স্বার্থে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। কেননা, তিনি যদি দেশ ও জাতির স্বার্থে উক্ত সফর এবং চুক্তি করেন তবে স্বাক্ষরিতব্য চুক্তির বিষয়সমূহ, আলোচ্য বিষয়সমূহ পূর্বাহ্নেই জাতিকে অবহিত করতেন, চুক্তির খুঁটিনাটি দিক ও লাভ-ক্ষতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতেন এবং প্রতিপক্ষের ঝানু আমলা ও রাজনীতিকদের থেকে দেশ ও জাতির স্বার্থ আদায়ে নিজ দেশের ঝানু আমলা ও রাজনীতিকদের সহযোগিতা নিতেন, সফরসঙ্গী করতেন। অথচ আমরা বাস্তবে দেখছি তিনি এদেশের ঝানু আমলাদেরকে ও নিজ দলের প্রবীণ, বর্ষীয়ান ও অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে মাইনাস করে দিয়েছেন। ফলে দেশ ইতোমধ্যে দুর্বল ও শক্তিহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিপক্ষের সাথে খেলায় দুর্বল টিম মাঠে নামালে পরিণতি যা হয় প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান সফরের পরিণতি ও ফলাফল অনুরূপ হবে। শক্তিশালী টিম থাকা সত্ত্বেও দুর্বল টিম মাঠে নামালে ‘পাতানো খেলা' বলা হয়- যাতে কেবল প্রধান ষড়যন্ত্রকারীর লাভ হয়, দেশ ও জাতির স্বার্থ ও মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়।
আমাদের Aim in life আছে Aim of Nation নাই। আমাদের বড় বড় নেতা-নেত্রীরা শুধু বড় গলায় ভাষণ দিতে পারেন কিন্তু জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণের কোন চিন্তা-ভাবনা করার সময় এখনো পান নাই। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে Aim in life-এর রচনা আছে Aim of Nation সম্পর্কে কোথাও লেখা নেই। ফলে ব্যক্তিগতভাবে আমরা ডাক্তার-কবিরাজ-ইঞ্জিনিয়ার-ধনকুবের হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে জীবন শুরু করি, দলীয়ভাবে মারি-অরি-পারি যে কৌশলে পদ দখল ও ক্ষমতা দখলে লিপ্ত থাকি যাতে নিজের ও নিজের পরিবারের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য-সমৃদ্ধি আসে। আজীবন ক্ষমতায় থাকার লোভ এতো বেশি যে, আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য আমাদের দেশের শত্রু, জাতীয় শত্রুদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হই। অর্থ ও ক্ষমতাই যেন আমাদের প্রধান দুই দলের প্রধান লক্ষ্য। দেশ ও জাতি, দেশ ও জাতীয় স্বার্থ, দেশের স্বাধীনতা-নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের চিন্তা আমাদের ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের যুপকাষ্ঠে বলি হলো কিনা তা চিন্তা করার সময় নেই!
মাছের পচন ধরে মাথা থেকে, দেশের পচন ধরে নেতা থেকে। আমাদের বেশিরভাগ নেতৃবৃন্দের পচন এতো ভয়াবহ যে, এর থেকে আরোগ্যের কোন পথ আর খোলা নেই। ধ্বংসই যার অনিবার্য পরিণতি। এরূপ নেতৃবৃন্দের ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তার কারণে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা দলীয় আদর্শ-উদ্দেশ্য (যা গঠনতন্ত্রে লেখা আছে) সম্পর্কে সম্পূর্ণ বেখবর। নেতাদের দেখাদেখি প্রত্যেকেই স্বার্থচিন্তায় নিজেদেরকে নিমজ্জিত করেছে। এরূপ পরিস্থিতি দর্শনে সুস্থ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ দল ও দলীয় কার্যক্রম থেকে দূরে থাকেন। ফলে দেশ ও জাতি উপযুক্ত নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে পতনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে।