তসলিমা নাসরিনের সবগুলো বই আমি পরিনি।এটা আমার সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য আমি জানি না। তবে যে কয়টা পড়েছি তাতে এটুকু ক্লিয়ার হয়েছি যে, সে যে বিষয় নিয়েই আলোচনা বা তার লেখা শুরু করুক সেটা এসে বাংলাদেশের নারীর পরাধীনতা আর ধর্ম(ইসলাম) এর দোষ ত্রুটি তে এসে শেষ হবে। বাংলাদেশের কোন নারী যদি তসলিমার পায়ে মাথা কুটে কুটেও বলে যে সে সামী-সন্তান নিয়ে সুখে আছে তার কোন সমস্যা নেই আমি শিওর তসলিমা ম্যাডাম সেটা বিশ্বাস করবে না।আমার মনে হয় সে ভাল স্বামী-সংসার-সন্তান, একটা ভাল পরিবার এর মাঝে যে ভাললাগা-ভালোবাসা তা কখনও পায়নি বলেই চারপাশটাকে তার মত করে ভাবতে ভালবাসে।
একজন গরীব স্বামী সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তার বউ এর জন্য যখন মোটা কাপড়ের একটা শাড়ি নিয়ে যায় আর তাই পেয়ে অশীক্ষিত,গ্রাম্য (আমাদের দৃষ্টিতে) আটপৌরে বউ এর মুখে যে লাজুক হাসি ফোটে, তাতে তার মনের ভিতরে সুখের বান বয়ে যায় তা দেখার বা বোঝার দৃষ্টি তসলিমার কি আছে? অথবা ঢাকার রাস্তাতেই যখন দেখি
কাঠফাটা রোদ হোক,ঝড় হোক,তুফান হোক ট্রাফিক পুলিশ যখন ঠাই দাড়িয়ে ডিউটি করছে তার সবটাই কি নিজের জন্য? একজন পুরুষের পেটের খিদা বা জৈবিক চাহিদা মিটানোর জন্য যে টাকার দরকার তা কামাই করতে এত খাটাখাটনি না করলেও চলে।কিন্তু পুরুষটির তা করে কেবল ঘরে রেখে আসা বউ আর বাচ্ছার জন্য। ইসলাম তো নারীর পক্ষে কত ভাল ভাল কথাও বলেছে কিন্তু কই এখন পর্যন্ত তো তসলিমার মুখে একবারো বলতে শুনলাম না যে এটা ইসলামের ভাল দিক।
বাংলাদেশের কিছু কাঠমউলভী দের কথা বা কাজ দিয়ে ইসলাম কে মুল্যায়ন করা কি ঠিক? মেয়েদের ফাইভ এর পর না পড়লেও চলবে...... এটা শফি হুযুর(!) এর কথা... আমাদের নবীজি বা ইসলামের কথা না। এখন এই কথা শুনে ইসলামের পিছে উঠেপড়ে লাগা কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ আমি জানিনা। আমি জানি এবং নিজেও দেখছি এত আধুনিকতার যুগেও আমাদের খোদ ঢাকা শহরেও ইসলামের নামে ব্যাবসা চলছে, এটা ইসলাম সমর্থন করে না। কারন পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট বলা আছে যে এক শ্রেণীর লোক থাকবে যারা লোক দেখান ধর্ম পালন করবে আর ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা করবে এবং এদের স্থান অবশ্যই জাহান্নামেই হবে।
কিছুদিন আগে নাকি তসলিমা, আসিফ মহিউদ্দিন আর আরিফ রাহমান এনারা অক্সফোর্ড এর একটা সেমিনারে নিজেদের আলাপচারিতায় তসলিমা বলেছে অচেনা পুরুষের সাথে বাসর ঘরে যাওয়ার চেয়ে লিভটুগেদার করে পছন্দ হলে তাকে বিয়ে করা ভাল।ইসলাম ধর্ম বুঝলাম খারাপ (তার মতে), দুনিয়ার এমন কোন ধর্ম আছে যে লিভ টুগেদার সমর্থন করে?গাড়ী না কিনে যদি টেস্ট ড্রাইভ করে জীবন পার করা যায় তবে কোন আহাম্মক গাড়ী কিনতে যাবে?
আমার অনুরোধ তেতুল হুজুর আর তসলিমা এদের কারো কথা শুনেই সমাজ বা ধর্মকে বিচার করবেন না। আপনার বিবেক,জ্ঞান,চিন্তা কে কাজে লাগান, কোন পরিস্থিতিতে আপনি নিজে হলে কি ডিসিশান নিতেন,আপনার পরিবার এর সদস্য হলে কিভাবে দেখতেন এগুলো ভাবেন অনেক উত্তর নিজেই পেয়ে যাবেন।
পরিশেষে ঘর-সংসারহীন তসলিমা’র উদ্দেশ্যে ঃ
সব পুরুস-ই খারাপ না(যেমন সব মেয়েই খারাপ হয় না),সব পুরুস-ই মেয়েদের কামনার চোখে দেখে না,সব সামী-ই বউ কে পেটায়না । এমন অনেক স্বামী-ই আছে বউ এর জ্বর হলে রাত জেগে সেবা করে,ছুটির দিনে রান্না করে,ছুটির অলস দুপুর সোহাগে আদরে ভরিয়ে দেয়,জন্মদিন বিবাহ বার্ষিকীতে সারপ্রাইজ গিফটে মুখে হাসি ফোটায়।
হয়ত আপনি এমন কারো দেখা পাননি, হয়তবা পেলেও ধরে রাখতে পারেন নি কারন আপনি স্যাক্রিফাইস করতে জানেন না। যেটা একে অপরের ভালবাসার জন্য ছেলে মেয়ে দুজনকেই করতে হয়। হতে পারে এ থেকেই আপনার অবচেতন মনে চরম হিংসার জন্ম হয়েছে যা কারনে সুখী কোন গৃহিণীর মনে অযাচিত অপ্রয়োজনীয় বিদ্রোহের আগুন জ্বালাতে চান আপনার প্রতিটা কথা দিয়ে লেখা দিয়ে।