somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট বেলার ঈদ।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের ছোট বেলার ঈদই ভাল ছিলো। যখন ক্লাস থ্রি ফোরে পড়তাম তখনকার দিনে আমার ঈদ সেলামী ছিলো সর্বোচ্চ ১০টাকা। সেই ১০ টাকা দিয়ে সারাদিন হই হই করার পরেও বাসায় ফিরে পকেটের মধ্যে খানিকটা অর্থ আবিস্কার করতাম। শখের মধ্যে ছিলো পেপসি খাওয়া। মনেপড়ে একই রিকশায় আমি, সাঈদ(জনি), রনি, রাসেল, রাজেশ উঠতাম। সাইজে এতই টুনিপ্যাক ছিলাম যে এক রিকশাতে সাত আটজন ধরে যেত। আমরা যেতাম পার্কে। সেই আমলে পার্ক মানে মাদকের আস্তানা নয়। এরপড়ে যেতাম পুলিশ লাইনের সামনে জনির এক দাদীর বাড়িতে। সেখানে খাওয়া দাওয়া হইচই। সারাদিন পরে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতাম।

ঈদ মানেই আমাদের কাছে একটা উত্তেজনার মত বিষয়। এই উত্তেজনার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিলেন মেজ ভাইজান। আমি বাঘ দেখলেও এত ভয় পাইনা যতটানা এই মানুষটাকে দেখলে পাই। ঈদের সকাল হলেই সুজন ভাই আর আমার আলসেমি শুরু হয়ে যেত। মেজভাইজান একবার হাঁক দিয়ে আবার শুয়ে পড়তেন। শেষে দেখা যেত আমরা তৈরি অথচ ভাইজান বাথরুমে। আমরা ছোট দুইজন জায়নামাজ হাতে মেজ ভাইয়ের পেছন পেছন হাঁটতাম। খুব ভদ্র তখন আমরা; ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানিনা! পারার বান্দরগুলা আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসত। তারা বুঝত এই সময়ে ইয়ার্কি করা যাবেনা...সামনে এসপি সাহেব! কোন এক ঈদে সব ঈদগাহ্‌র জামাত শুরু হয়ে গেছে। আমরা দৌড়ালাম বড় ঈদগাহ্‌র দিকে। যেতেই দেখি নামাজ শেষে সবাই বের হয়ে আসছে। মেজভাইজানের চেহারা হয়েছিলো দেখার মত। আমরা একটু অপেক্ষা করে মিছিলে মিশে গেলাম।

নামাজ শেষে আব্বার কবর জিয়ারতে যেতাম। একটা নিয়ম যার জন্যে প্রায় বছর জুড়ে অপেক্ষা। সেই সময়টা আমাদের তিনভাইয়ের কাছেই চরম আবেগি মুহুর্ত ছিলো। যথারীতি মেজভাইজানই নেতৃত্বে। পরিবারের কিছু ঐতিহ্য থাকতে হয়...কিছু ঐতিহ্য ধরে রাখতে হয়। বড় আপার বিয়ের পরে আমাদের কার্যতালিকায় থাকতো আপার বাসায় যাওয়া। বড় আপার শ্বশুর বাড়িতে আমরা তিন ভাই; আপা ঘাম মুছতে মুছতে সেই বিখ্যাত হাসি নিয়ে আসতেন। খুব সাধারন জীবনে সেটাই ছিলো অসাধারণ মুহুর্ত।

আমাদের তিন ভাইই অপেক্ষা করতাম কখন বাসায় ফিরবো। আম্মা বা দিনার আপা সারাজীবনে কম খিচূরী রান্না করেননি অথচ ঈদের দিনের খিচুরী, গরুর মাংস কিভাবে যেন ওয়ার্ল্ড ফেমাস হয়ে যেত। সেই গরম গরম খিচুরী আর গরুর মাংস পেটে না পড়লে দিনটাই মাটি। দিনার আপা পা লুকানোর চেষ্টা করলেও আমি কিভাবে যেন ঠিকই খুঁজে পেতাম। আমাদের সেই অসাধারোন মুহুর্ত অনেকদিন ছিলো।

বলার মত অর্থবিত্তের অধিকারিণী আমার মা ছিলেন না। আব্বা মারা যাবার সময়ে আমরা ছয় ভাই-বোন সবাই পড়ছি। কেউই আয়ের পথে নেই। সেই একমাত্র উৎস থেকে আসা টাকা দিয়ে কিভাবে আম্মা যেন ম্যাজিক করতেন। আমাদের ঈদ হতো। কোন এক ঈদে মায়ের ম্যাজিকে কাজ করেনি। বড়রা খুব একটা জামা কাপড়ের কথা বলতেন না। তবে আমাদের সর্বশেষ দুইজনের দিকে আম্মার নজর থাকত। পলেষ্টারের শার্ট অথবা গুলিস্থানের ফুটপাথ থেকে কেনা কেডস... আমি উড়ে বেড়াতাম আকাশে বাতাসে। আমার জন্যে নতুন জামা? নতুন জুতো? যাইহোক, এই ঈদে মায়ের হাতে ম্যাজিক কাজ করলো না। হয়ত দেনা জমে গেছে। আম্মা কায়দা করে মেজ ভাইয়ের দুইটা পুরাতন প্যান্ট উলটে দুইটা প্যান্ট বানিয়ে দিলেন। সেই ঈদটা আমার আর সুজন ভাইয়ের জন্যে সবচেয়ে আনন্দের ছিলো।

আমরা সবাই বড় হয়ে গেলাম। মায়ের ম্যাজিক আর প্রয়োজন পরেনা। দুরত্ব বাড়তে লাগল। মেজ ভাইজান কর্মব্যস্ততায় আর কুষ্টিয়া আসতে পারেন না। ঢাকার বাসা রেখে আসা যায়না তাই সুজন ভাইও আসেন না। ঈদের নামাজ ভুলে গেলাম। আসলে ভাল লাগত না। এখনও যাইনা। আমার কাছে সেই সময়গুলো ফিরে আসা খুব জরুরী। মেজ ভাইজানের হাঁকডাক...জায়নামাজ হাতে আমরা ছোট দুইজন...সামনে মেজভাইজান আর পারার বান্দরগুলা আমাদের দেখে মিটমিট করে হাসছে।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×