আপনি হয়তো কখনোই সুখকে কিনতে পারবেন না, কিন্তু, দিলখুশ করা কিছু সুখী মূহুর্ত আপনাকে এমন কিছু কিনতে সাহায্য করবে যা অভাবীদের স্বপ্ন পুরণে সাহায্য করতে পারে। কখনো কোন দামী বিপনীবিতান, রেস্টুরেন্ট বা মার্কেটের আশেপাশে লক্ষ্য করেছেন কি? খেয়াল করে দেখেছেন কি কিছু পথশিশু বেলুন বিক্রি করছে? এমন হরহামেশাই দেখা যায়।
আমি বেশ কয়েক দিন এই পথকলিদের দিকে লক্ষ্য করে দেখেছি, এরা কখনোই দোকান হতে বের হবার পরে আমাদের হাতে ধরা ১০টা প্যাকেটের দিকে তাকায় না। বরং, কেন যেন, তাকিয়ে থাকে আমাদের মুখের দিকে। কেন? তাদের কি ইচ্ছা করে না ঐ ব্যাগে কি আছে তার দিকে একটু লোভাতুর নয়নে চেয়ে দেখতে? তাদের কি ঐ মূল্যবান কাপড়ের দোকান একবার ঘুরে আসতে সাধ জাগে না?
এমনই এক ভাবনা থেকে, গত ঈদের আগে, হঠাৎ করেই মনে হলো, পথশিশুদের এমন কোন দামী কাপড়ের দোকানে একসাথে দলবেঁধে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের পছন্দমতো জামাকাপড় কিনে দেওয়া যাক! যেই ভাবা, সেই কাজ!
আমার স্ত্রীকে পরিকল্পনাটা বলাতেই, লাফিয়ে উঠলেন। খুব পছন্দ হলো তাঁর আমার এই ইচ্ছা। ঠিক করলাম, লালমাটিয়ার আড়ং-এ নিয়ে যাবো পথশিশুদের। তারপরে, কিনে দিবো বোনাসের টাকা দিয়ে তাদের নিজেদের পছন্দ করা কাপড়!
নির্দিষ্ট দিনে, আমি আর আমার সহধর্মীনী চলে এলাম আড়ং-এ। কিন্তু, হায়! ঐদিন একটা পিচ্চুসকেও পেলাম না! ধানমণ্ডি সাতাশ ঘুরে রাপা প্লাজার সামনে দিয়ে চক্কর দিলাম। নেই তো নেই! কেউ নেই!
কোথায় গেলো! খুঁজতে খুঁজতে বের করলাম, আসাদগেট নিউকলোনীর মাঠের বাজারে সব কয়টা ভিড় করে আছে! গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- ''তোরা কয়জন এখানে?" সাথে সাথে ৩০-৩৫ জনের একটা দল দাঁড়িয়ে গেলো! সবাই পথশিশু। লাইন ধরিয়ে তাদেরকে হাঁটিয়ে নিয়ে গেলাম আড়ং-এ। যাওয়ার সময়ে সব্বাইকে মাস্ক পরান আমার স্ত্রী।
আড়ং-এর গেইট দিয়ে ঢোকার মূহুর্তে গার্ডকে ঘিরে হুড়োহুড়ি পড়ে গেলো। সবার হ্যান্ড স্যানিটাইজার চাইই চাই! বিশেষ করে সবচেয়ে ছোটগুলা 'আমারে দেন, আমারে দেন' বলে চিৎকার দিতে লাগলো! 'এঁদের নিয়ে কি যে করি' - সেটাই ভাবছিলাম। শেষে আমাকেই গিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হলো।
পিচ্চি-পাচ্চাগুলোকে নিয়ে কাপড় চয়েসের সময়ে খুব ঝামেলা হবে ভেবেছিলাম। কিসের কি! আড়ং-এঁর সেলস গার্লস আর ম্যানরা খুব সাহায্য করলেন। আড়ং-এ সেদিন বেশ ভিড় ছিলো। অথচ, একজন কাস্টমারকেও পথশিশুদের দেখে নাক সিটকাতে দেখলাম না। বরং, অনেকে ফোটো তুললেন তাদের সাথে! সঙ্গে আড়ং-এর কর্মীরাও!
সত্যিই, অভূতপূর্ব একটি দিন গিয়েছে সেদিন!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:২৯