ছেলেটার নাম জিশান। স্কুল বন্ধ, তাই, বাবার সাথে চা বেঁচতো। আমাদের বাসার পাশের এলাকাতেই তাকে বেশি পাওয়া যায়। চা খাওয়ার পরে খদ্দেরদের রেখে যাওয়া কাপ পরিষ্কারে বাবাকে সাহায্য করে। আমি একদিন তাদের ভ্রাম্যমান চা-এর দোকানটার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ, ফর্সা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। কি সুন্দর ছেলে! এই চা-ওয়ালার সাথে কি করছে!
চা-ওয়ালার সাথে আলাপ জুড়ে দিয়ে জানতে পারলাম যে এটা তার ছেলে। কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো লোকটা। জানতে পারলাম- এই করোনাকালে ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে। ছেলেটার স্কুল বন্ধ। তাই, কাজে নিয়ে এসেছে। ছেলেটার জন্যে আমার খুব মায়া হলো।
আমার বিশুদ্ধ পানি'র প্রোগ্রামে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করলাম। চা-ওয়ালা রাজি হয়ে গেলো। আমার Water Project-এ নিয়ে এসেছি। ছেলেটিকে সারা দিন বসে থাকতে হয়। কাজ বলতে পানির জারটা দেখে রাখা। আর কোন কাজ নেই। ছেলেটিকে বেঞ্চে বসে থাকতে হয়। তৃতীয় দিন। ছেলেটির হাতে জাফর ইকবাল স্যারের টুকুনজিল বইটি তুলে দিয়ে বলেছিলাম- রোজ ২ পৃষ্ঠা করে পড়বে। এটা তোমার ডিউটি।
জিশান বেশি দিন থাকলো না। ইদের পরে আর কাজে আসেনি। হয়তো চা বেচাটাই তার কাছে বেশি আকর্ষণীয়। বাবার হাত ধরে সারা দিন এলাকায় এলাকায় ঘুরে বেড়ানো, হরেক রকম মানুষের দেখা পাওয়া, মাঝে মাঝে বাবা-র চা-এর জারের সাথে ঝোলানো প্যাকেট থেকে ১-২টা বিস্কিট চেয়ে খাওয়া- সারা দিন এক জায়গায় বসে থাকার চেয়ে অনেক আনন্দের।
সে যেখানেই থাক, ভালো থাকুক- বাবার সাথে।
ছবিঃ টুকুনজিল পড়ছে জিশান
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৫:৪১