somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুঁক্কার টানে ব্যস্ত নগরীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভন্ন শ্রেণী-পেশার তরুণ ও যুবসমাজ।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নতুন মাদক সিসা। প্রাচীনকালের হুঁক্কার নগর-সংস্করণ। নিকোটিনের প্রভাব থেকে রেহাই পেতে হুঁক্কার উদ্ভব হয়েছিল। এখন সেই হুঁক্কাকে ব্যবহার করা হচ্ছে সিসার নিকোটিনকে ভিন্নভাবে উপভোগের কাজে। সিসায় আসক্ত শহরের ধনিক শ্রেণীর সন্তানরা। প্রথমে এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার থেকে সিসা গ্রহণ করলেও পরবর্তী সময়ে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনে আসক্ত হয়ে পড়েছে।

পান সালসা, লিমোরা ডিলাইট, অরেঞ্জ কাউন্টি, ওয়াইল্ড মিন্ট, কিউই, ট্রিপল আপেল, চকোলাভা, ক্রেজিকেয়ারি, ব্লুবেরিসহ বিভিন্ন ফ্লেভারের সিসা পাওয়া যাচ্ছে।

দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই মিষ্টি গন্ধ যেন ঘিরে ধরল। চারদিকে জ্বলছে লাল-নীল রঙের ডিমলাইট। চারপাশ ধোঁয়ায় ভরা। মিউজিক প্লেয়ারে হালকা ভলিউমে বাজছে ইংরেজি গান। পরিপাটি টেবিল ঘিরে সোফায় বসে আড্ডায় মশগুল কয়েকজন তরুণ-তরুণী। তাদের সামনে একটি করে বিশেষ ধরনের হুঁকো। তামাক গ্রহণের পুরনো ধাঁচের এই যন্ত্রটি এখন বেশ জনপ্রিয় তরুণ প্রজন্মের কাছে। খোলা জায়গায় টেবিলে এমন দুটি গ্রুপ বসেছে। আরো একাধিক গ্রুপ আছে কাচের রিজার্ভ কক্ষগুলোতে। জানা গেল, এসব কক্ষ ভাড়া হয় ঘণ্টা হিসেবে। নিচ থেকে অর্ধেক কাচে ঢাকা কক্ষের ভাড়া কম। পুরো ঢাকা কক্ষের ভাড়া বেশি। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সিসার আড্ডার চিত্রটি রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে। এমন রেস্টুরেন্টগুলোকে অনেকেই বলছেন সিসাবার। সিসা নামের এক ধরনের ধূমপান উপকরণ বিক্রি হয় এখানে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার তরুণ ও যুবসমাজ এখন এই সিসায় বুঁদ হচ্ছে। সিসায় আসক্তি বাড়লেও এতে কোনো মাদকের উপাদান নেই বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। সিসাকে মাদক বলে প্রমাণও করতে পারেনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এই বিতর্ক আর অভিযোগে পোয়াবারো অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের। কৌতহলী মাদকসেবী, ধূমপায়ীসহ অনেকেই দেখতে গিয়ে সিসায় আসক্ত হচ্ছেন। রাজধানীতে প্রায় ২শ রেস্টুরেন্টে সিসা বিক্রি হলেও অর্ধশতাধিক রেস্টুরেন্ট খাবার বিক্রির চেয়ে সিসা বিক্রিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। অভিভাবকদের কাছে এ রকম আতঙ্কে পরিণত হওয়া সিসার ব্যাপারে প্রশাসনের নেই কার্যকর নজরদারি।

গত ৪ বছর ধরে দেশে সিসা ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। রাজধানীর রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি বার ও বাসাবাড়িতে তৈরি হচ্ছে আলাদা সিসার লাউঞ্জ। রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ অভিজাত এলাকায় রয়েছে বেশিরভাগ সিসাবার। সরেজমিনে গিয়ে ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সিসা লাউঞ্জগুলোর মধ্যে মোহাম্মদপুরে অ্যারাবিয়ান নাইটস, ফুড কিং, ধানমন্ডির সেভেন টুয়েলভ লাউঞ্জ, এইচ টু ও লাউঞ্জ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, ঝাল লাউঞ্জ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, গুলশানের এডিট লাউঞ্জ, জোন জিরো লাউঞ্জ, মাউন্ট আল্ট্রা লাউঞ্জ, জাবেদ বাড লাউঞ্জ, ক্লাব অ্যারাবিয়ান, হাবুল-বাবুল, বনানীর মিলাউন্স, ডকসিন, কফি হাউস (বেইজিং লাউঞ্জ), মিট লাউঞ্জ, সিন্থ ফ্লোর, বেইলি রোডের থার্টি থ্রি ও খিলক্ষেত্রের হোটেল রিজেন্সি অন্যতম। এসব লাউঞ্জের ছোট ছোট কেবিনে দুজন বা তার বেশি তরুণ-তরুণী বসে সিসার পাইপ মুখে নিয়ে ধোঁয়া টানতে থাকে। আধো আলোতে চারপাশে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। হালকা মিউজিক তৈরি করে স্বপ্নময় মাদকতাপূর্ণ পরিবেশ।অভিযোগ আছে, এমন পরিবেশে অসামাজিক কার্যকলাপও চলছে।

চার বছর আগে রাজধানীতে সিসাসেবীর সংখ্যা ছিল ১৫ থেকে ২০ হাজার। বর্তমানে এ সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। সিসাসেবীদের মধ্যে ১৫ হাজার ইয়াবা ব্যবসায়ী জড়িত। শুরুতে উচ্চবিত্ত ঘরের কিছু বিপথগামী তরুণ-তরুণীর মধ্যে সিসা সেবনের প্রবণতা লক্ষ করা গেলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বস্তরে। তরুণ-তরুণীরা সিসা সেবনকে নিজেদের আভিজাত্য ও স্মার্টনেসের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছে। শীতের সময় সিসাবারগুলোতে বেশি ভিড় থাকে।

উল্লেখ্য, সিসার কলকিতে ইয়াবা ও হেরোইনের ব্যবহারের খবর পাওয়া গেলেও অভিযানে পাওয়া যায় না। নিজ নিরাপত্তাবলয়ে গড়ে তোলা এসব লাউঞ্জে অভিযানের আগেই খবর চলে যায়।

সিসায় আসক্ত হয়ে অনেকেই ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকসেবী হয়ে উঠছে। ইয়াবার আড্ডা জমে উঠছে এসব সিসাবারে। সিসায় ব্যবহার করা টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল হাসিসের নির্যাস থেকে রাসায়নিক মিশ্রণে তৈরি হয়। ১২০ কেজি হাসিস থেকে হয় ১ কেজি টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল। জাফরান, আঙুরের রস, কস্তুরী, চেরিফলসহ সুগন্ধির ফ্লেভারে মিশে যায় এ উপাদান। মাদক না হলেও আছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সিসায় মাদকের উপাদান না পাওয়া গেলেও এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একটি সিসায় প্রতি সেশনে বের হওয়া ধোঁয়ার পরিমাণ ১০০টি সিগারেটের সমান। এর মধ্যে উচ্চমাত্রার টক্সিন, কার্বন মনো-অক্সাইড, হেভি মেটালসহ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান থাকে। এতে নিকোটিনের পরিমাণও সিগারেটের দ্বিগুণ।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×