somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার জ্যোৎস্নাবেলা

২৩ শে জুন, ২০১০ সকাল ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেবেলায় আকাশে সুন্দর জ্যোৎস্না হলে আমরা ছেলেমেয়েরা অনেক আনন্দ করতাম।গ্রাম্য মায়েরা,বুবুরাও জ্যোৎস্নাপ্রেমী ছিল।একথা নিশ্চিত।তারা হয়ত আজকের কবিদের মত,সাহিত্যিকদের মত করে বলতে পারত না।কিন্ত্ত জ্যোৎস্না তাদের হৃদয়ে ঠিকই আলোড়ন সৃষ্টি করে যেত।আমি যখন পড়া শুরু করিনি তখনকার কথা।আকাশে সুন্দর জ্যোৎস্না হলে শীতলপাটি আর বালিশ নিয়ে উঠানে জমা হতাম আমরা সবাই।আম্মা কিংবা বুবু কিংবা ছোট ফুফু আমাদের জ্যোৎস্নাময় আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকতেন।যেদিন আম্মা বলিয়ে হতেন সেদিন আমরা একরকম আর অন্য কেউ হলে অন্যরকম স্বাদ পেতাম।আম্মা যেদিন থাকতেন প্রায় সময়ই আম্মা আমদের গীত শুনাতেন।আচ্ছা গান আর গীতের মধ্যে পার্থক্য কী?
যাইহোক আমার মায়ের গীত শুনে গীত বলতে আমার কাছে মনে হয় বিলাপ।বিরহী বিলাপ।এটার অন্য মিনিং থাকতে পারে আমি স্বীকার করি।
আম্মা যখন গীত করতেন আমার কেনো যেন একটু কষ্ট হতো।আম্মা করুণ সুরে গীত গেয়েই যেতেন।আমি আম্মার কোলে মাথা রেখে গীত শুনতাম।আজকে এত বছর পরে আম্মার সেই গীতের চরণ একটাও মনে করতে পারছিনা।পারলে হয়ত বুঝতে পারতাম মায়ের কিসের ব্যথা ছিল,কোথায় ব্যথা ছিল।আম্মার চোখ জলে ছলছল করতো।আমার কষ্ট হতো।আমি কিংবা আর কেউই জিজ্ঞেস করতাম না কেনো মায়ের চোখে জল আসে ।ভাবতাম এমনই বুঝি হয়।জনমদুঃখী মায়ের কোথায় ব্যথা ছিল আজ আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়।কিন্ত্ত..সময় ।আমি সময়ের কাছে হেরে গেছি।মায়ের সেই করুণ সুর আমার এখনো মাঝেমাঝে মনে পড়ে।
অনেকরাতেই ঘুমাতে পারিনা।তখন খুব মনে পড়ে।জ্যোৎস্না হলে মনে পড়ে।আমার খুব ভয় হয়।ইচ্ছে হয় মাযের কোলে মুখ লুকাই।মা আমার ভয় দূর করে দিক।মায়ের বিলাপ শুনতে শুনতে মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়তাম।সকালবেলা নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করতাম।আমার একটা অভ্যাস ছিল ঘুম থেকে উঠেই একটা চিৎকার দিতাম।আম্মা সেই চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে আমাকে কোলে নিতেন।আপনারা হাসতে পারেন।আমার এখনো মনে হয় মা এসে আমকে কোলে নিক।কোলে উঠেই জীবনটা শেষ হয়ে যাক। কার একটা কবিতায় যেন পড়েছিলাম 'আমায় তুই আনলি কেনে ফিরিয়ে নে'ঠিক এই কথাটাই বলতে ইচ্ছে করে ।

বুবু কিংবা ছোট ফুফু যেদিন গল্প শুনাতো সেদিন আমাদের জন্য থাকতো কিচ্ছা।কিছু কিছুর নাম মনে আছে।যেমন দুই নাতনি ডাইনি বুড়ির কিচ্ছা,পানপাতার কিচ্ছা।কিচ্ছা শুনার সময় একটু বলার পড়েই বলতে হত 'হু'।এটা বলতে বলিয়ে অনেকটা বাধ্য করতেন।না বললে তিনি মাথায় টাস করে একটা লাগাতেন।আমরাও বলতাম।আর হু শব্দটা না করলে কিচ্ছা শুনার মজাই থাকতনা।আর আমরা জেগে আছি কিনা তারও একটা পরীক্ষা হত এই 'হু' শব্দের মাধ্যমে।কিচ্ছার একটা ডায়ালগ ছিল 'কি কমু কিচ্ছা মেজাজ রইছে খিচ্চা'
না ঘুমানো পর্যন্ত আমাদেরকে কিচ্ছা শুনাতেই হত।আসলে এগুলোই হচ্ছে রূপকথা।আজকাল এগুলোর দেখা পাইনা।এসব তারা যে কোথ্থেকে জেনেছিলেন তাও জানিনা।
যাক কিচ্ছাময় রাত,কিচ্ছাময় ঘুম আজ আর নেই।ফুরফুরে বাতাস নেই।ছাদের নিচে চাঁদ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।সবকিছুতে চলে আসছে ডিজিট।সুইস টিপে ঘুম সুইস টিপে জাগা।ডিজিটাল মানুষে ছেয়ে যাচ্ছে নির্মল পৃথিবী।
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×