somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাইয়ার কুম টু মৈনট

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লোকমুখে যখন থেকে শুনতে শুরু করি মিনি কক্সবাজার খ্যাত অপরূপ মৈনটের সৌন্দর্যের কথা তখন থেকেই মৈনটের প্রতি গভীর ভালবাসা আর নির্মল প্রেম অন্তরে জাগ্রত হতে শুরু করে। মনে প্রবল স্বাদ জাগে একটিবার হলেও মৈনটের অপার সৌন্দর্য অবলোকন করতে যাব।
তবে, এইবার শীতে আমার একটা শখ জাগলো, আমি একা গ্রামের ভিতর দিয়ে গ্রামের অপরূপ বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে হেঁটে মৈনট দেখতে যাব।

যেই কথা সেই কাজ, মুয়াজ্জিনের সুমধুর কন্ঠে আযানের সুরে ঘুম ভাঙ্গে, নামাজ পড়ে দিলাম রওনা।
আমাদের গ্রাম ডাইয়ার কুম গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তার ভিতর দিয়ে হাঁটছি, চারদিকে সবুজের সমারোহ, পাখি কিচিরমিচির গান করছে।পথের দুইপাড়ে নাম না জানা বাহারি ফুল। কোনটা লাল, কোনটা সাদা, আবার কোনটা নানা রংয়ের। কুয়াশার ফাঁক ভেদ করে কেবল সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে। মিষ্টি শীতল বাতাস এক অপূর্ব মাদকতা। গাছি গাছ থেকে খেজুরের রস নামাচ্ছে। আরেকটু আগাতেই দূর থেকে ঢেঁকির আওয়াজ পেলাম, মনে হলো কেউ যেন চাউল কাটছে পিঠা বানাবে। খেজুরের রসে ভিজানো পিঠা খেতে জবর মজা।

গ্রামের ভিতর দিয়ে হাঁটছি তো হাঁটছি, অনেক দূর। উঠানে বোনেরা নকশা আঁকা কাঁথা সেলাই করছে, আবার কেউ রোদ পোহাচ্ছে আর খেজুর পাটি বুনাচ্ছে, মনোরম সুন্দর এক দৃশ্য। দোহার খাল পাড় আসতেই দেখি একদল পোলাপানে হাত দিয়ে খালের নিশ্চল পানিতে মলা মাছ ধরছে। মলা মাছের চড়চড়ি খেতে দারুণ মজা এই কথা মনে হতেই যেন ক্ষুদায় পেট চোঁ চোঁ করতে শুরু করছে । দেখি এক চাচা কটকটি বিক্রি করছে, তার কাছথেকে কটকটি খেলাম। তাদের গ্রামে আসছি তাই দাম নিলেন না, খুশি হয়ে আরো কতখানি বেশি করে দিলেন।

আকাশে প্রচন্ড রোদ, কিন্তু বাতাস বেশ ঠান্ডা মনে হচ্ছিল।
হাঁটতে হাঁটতে যখন মৈনটের কাছাকাছি এসে পরি তখন দেখি পথে বালু আর বালু, পা যেন আর চলতে চায়না। নিচ থেকে পা কে যেন টেনে ধরে রাখছে। বালি কয়- কই যাও, এতদিন পরে আইছাও আমার এইহানেই থাহো। বালু দিয়ে পোলাপান ঘর বানাচ্ছে আর ঝিনুক দিয়ে মালা গাঁথছে। আমিও কতগুলো ঝিনুক টুকিয়ে কোছরে গুঁজে নিলাম।
নৌকায় চড়ে পদ্মার অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে পদ্মার মাঝবুকে যাই। জেলেরা জাল দিয়ে রুপালী ইলিশ মাছ ধরছে। এই প্রথম আমি জীবিত ইলিশ মাছ দেখলাম, দারুণ এক শিহরন। সারি সারি নাম না জানা পাখি ভেসে বেড়াচ্ছে পদ্মার নির্মল জলে। শীতের নানা অতিথি পাখির কিচিরমিচির গানে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিলাম প্রকৃতির মাঝে। আমার কাছে এরচেয়ে আর রোমাঞ্চকর কি হতে পারে। যতদূর চোখ যায় অপলক চেয়ে থাকি। আহ্ কি রূপ, কি সৌন্দর্য! পৃথিবীর সমস্ত সুখ আর সৌন্দর্য যেন এসে ধরা দিল একসাথে, যেন পৃথিবীর বুকে একটুকরো জান্নাত।
ঠান্ডা বাতাস, শীত শীত অনুভব হচ্ছিল, গরম কাপড় পড়ে নিলাম। মৈনটের রাস্তায় রয়েছে সারি সারি টংঘর ও ফাস্টফুডের দোকান। সেখানে থেকে পদ্মার ইলিশ ভাজার সাথে পান্তাভাত খেলাম। দারুণ এক মজা, না খেলে বুঝা যায়না এর অপার স্বাদ। মৈনটের চারপাশ বেশ পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন, মনে হল এখানকার সবাই পরিবেশ সচেতন। আমিও ময়লা, আবর্জনা এখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেল্লাম।
সারাদিন পদ্মার পাড়ে ঘুরে বেড়ালাম, দারুণ মজা। যেদিকে তাকাই কেবল প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের সমারোহ। সৃষ্টি কর্তার এক নিখুঁত সৃষ্টি এই মৈনট। প্রায় পাঁচ ঘন্টা হেঁটে এসে মৈনটের সকল সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে পথের ধকল ভুলে মনটা সতেজ হয়ে উঠলো।
মৈনটের অপার সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গেলে দিনশেষ হয়ে যাবে। আবার পরে কমু, সূর্য্য ক্রমশ পশ্চিম দিকে হেলে পরছে, সাঁঝ নামতাছে, বাইত্তে যামু। ঝিঁঝি পোকা ঝিঁ ঝিঁ করতাছে, মায়েরা তই তই কইয়া য়াঁস টুকাইয়া খোঁয়াড়ে ঢুকাইতাছে। মিনি কক্সবাজার খ্যাত অপরূপ মৈনটের অপার সব সৌন্দর্য দেখে তৃপ্তি মিটেনা মনের। বাইত্তে যাইতে দিলে টানে না, ইচ্ছা হয় আরো থাহি। মৈনটের কানে কানে বলি আবার আসব এই বলে মনকে শান্তনা দিয়ে বাড়ির পথে রওনা করি।

বাইত্তে আইয়া দেহি মায় খুন্তি হাতে নিয়া খাঁড়াইয়া রইছে। মায় চিল্লাইয়া কয়- হারাদিন না খাইয়া কই আছিলা? আইজক্যা বাইত্তে আহো দিমুনে ঠ্যালা।
মায়ের হাতের বাড়াভাত খাইয়া ঝিনুক দেখতে দেখতে কহন ঘুমাইয়া পড়ছি জানিনা। স্বপ্নে দেখি আমি পদ্মা নদীতে দুইহাত ওপরে দিয়া হাঁতরাইতাছি।
সকালে ঘুমে থেকে উঠে দেখি গতর আর পা বিষ্যে বিছানা থেকে ওঠতে পারিছিনা।
এই বিষ যেন আনন্দের কাছে কিছুই না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১:১৪
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×