somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞান, ধর্ম, পি মুন্সীর আলোচনা, আমার চিন্তা

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোরআন আর বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনায় আস্তিক নাস্তিক উভয়ের ই ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। একপক্ষ বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে খারিজ করে দিতে চায় আর একপক্ষ এখন বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে সত্য প্রমান করতে চায়।সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগে টিপু সুলতানের একটি লেখা এবং পি মুন্সীর আরেক টি লেখা বেশ আগ্রহ সহকারে পড়েছি।টিপু সুলতানের লেখাটি খুব সহজ ভাবে বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে সত্য প্রমান করতে চাওয়ার প্রচেস্টা আর পি মুন্সীর লেখাটি সার্বিক ভাবে একটি সুন্দর জ়টিল পর্যালোচনা।পি মুন্সীর লেখা আমি বেশ মণোযোগ দিয়ে পড়ি। তার বিশ্লেষন করার স্টাইল এবং একাডেমিক অবস্থান বেশ ভালো লাগে।এ বিষয়ে আমার চিন্তাভাবনা তুলে ধরার জন্যই এই পোস্ট।
প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা যে জ্ঞান লাভ করে থাকি তা প্রমানিত সত্য হিশাবে স্বীকৃ্ত।প্রকৃতি বিজ্ঞানের ল্যাবরেটরী আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে ভাল হত।অনেক মতভেদই কমে যেত। কিন্তু প্রকৃতি বিজ্ঞান জীবন এবং জগত সম্পর্কে আমাদের অনেক অনুসন্ধিতসারই জবাব দিতে সক্ষম নয়।বিজ্ঞানের এই সীমাবদ্ধতা যেমন আজকে থেকে কয়েক হাজার বজর আগে ও সত্য ছিল, তেমনি এই আধুনিক যুগের জন্য ও সমান সত্য।
জীবন এবং জগত সম্পর্কে আমাদের এই অনুসন্ধিতসার জবাব দেয় ধর্ম আর দর্শন।ধর্ম কিছু মৌলিক বিষয়ে জটিল কিছু দার্শনিক প্রশ্নের উত্তর দেয় ঈশ্বরের বয়ানে প্রেরিত পুরুষের মাধ্যমে। এই উত্তরগুলো জ্ঞানের অগ্রগতির স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে দর্শনের একটি শাখা হিশাবে আসে না বরং ধর্মের দাবী মতে সরাসরি ঈশ্বর, গড বা আল্লাহ এর পক্ষ থেকে আসে, আমদের স্বাভাবিক বোধগম্যতার বাইরে থেকে। ফলে বিশ্বাসই হয়ে উঠে এই বিশেষ অলৌকিক জ্ঞানের একমাত্র প্রত্যায়নকারি।
এখন সত্য তো একটিই। এর ভিন্ন ভিন্ন আপেক্ষিকতা থাকতে পারে, থাকতে পারে ভিন্ন ভিন্ন চেহারা, রুপ। কিন্তু মৌলিক ভাবে একই হওয়ার কথা। যেমন করে পদার্থ বিজ্ঞানের ভিন্ন ভিন্ন বল(force)শেষ পর্যন্ত একই বলের ভিন্ন ভিন্ন রুপ।ধর্ম যেহেতু শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস, কাজেই ধর্মের postulates যদি প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রমানিত Fact এর সাথে মিলে যায় তাহলে বিশ্বাসের একধরনের বৈজ্ঞানিক জাস্টিফিকেশন তৈরি হয়।ইসলামে বিশ্বাসী মানুষের জন্য এই জাস্টিফিকেশন তৈরি করতে পারাটা সত্যিকার অর্থেই ফ্যান্টাস্টিক। বিশেষ করে বিগত দুই শতাব্দী ধরে তাদেরকে শুনতে হয়েছে বিজ্ঞান কিভাবে কিভাবে ধর্মকে নাকচ করেছে তার বিস্তারিত ফিরিস্তি। যদি ও এই জাস্টিফিকেশন তৈরি না হলেও ধর্ম টিকে থাকবে তার মত করেই যেটা পি মুন্সীর বয়ানে ‘দর্শন ধর্মকে পরাস্ত করতে পারলেও দুনিয়ায় আরও বহু যুগ ধর্ম বহাল তবিয়তে থেকে যাবে’।আধুনিক বিজ্ঞানের বিকাশের পুরো সময়টা জুড়ে ইউরোপের মুক্তচিন্তাবাদিরা আর ডারউইনিজমকে বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্টস হিশাবে উপস্থাপনকারী মার্ক্সবাদীরা বিজ্ঞান দিয়েই ধর্মকে নাকচ করার কোশেশ করেছেন।প্রকৃতি বিজ্ঞান ধর্মকে নাকচ করে দিয়েছে , কাজেই ধর্ম এখন কিছু অজ্ঞ, অশিক্ষিত মানুশের কারবার, এমনকি এর সমাজ বিজ্ঞান সম্পর্কিত অধ্যায়গুলো ও কোনো সিরিয়াস আলোচোনা বাদেই বাতিলের খাতায় চলে গেছে আধুনিক কালের জ্ঞানপিপাসুদের কাছে।
এর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিশাবেই এখন ধর্ম্পন্থীরা বিজ্ঞানের পদ্ধতিগত প্রমানিত Fact কেই তাদের ধর্ম এর জাস্টিফিকেশন এ ব্যবহার করছেন।যারা একসময় বিজ্ঞান দিয়েই ধর্মকে নাকচ করার কোশেশ করেছেন, তাদের মনোপলী এখন ধর্ম্পন্থীরা ব্যবহার করায় এই খেলাটা বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠছে।আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের পদ্ধতিগত প্রমানিত Fact এর এই মিলে যাওয়াটা যথেস্ট অর্থবহ, শেষ ধর্ম ইসলামের নির্ভুলতার প্রমান এবং বিজ্ঞানের আরো অগ্রগতির সাথে ইসলামের নির্ভুলতা প্রমানএর ও অগ্রগতি হবে।ধর্ম বা বিজ্ঞান উভয়ের ক্ষেত্রেই যথেস্ট জ্ঞানের অভাব একধরনের অসহিষনু উগ্রবাদিদার জন্ম দেয়। এক পক্ষ পৃথিবীর তাবত বিজ্ঞানের জন্মদাতা বলে দাবী করে বসে ধর্মগ্রন্থকে(যদিও ধর্মগ্রন্থ মুখ্যত বিজ্ঞানের জন্ম দিতে বা বিকাশ সাধন করতে নাজিল হয় নাই)আর এক পক্ষ বিজ্ঞানের শনৈ শনৈ উন্নতির সাথে ধর্মকে অজ্ঞানতা আর মানুশের অলীক কল্পনার কাতারে ফেলে তার বিলুপ্তি প্রমানের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হাজির করে।
মজার বিষয় হল, ধর্মগ্রন্থকে ভালভাবে বুঝতে হলে বা সমকালিন সময়ের উপযোগী করে তার বয়ান হাজির করতে হলে তাকে জ্ঞান বিজ্ঞান আর দর্শনের আলোচনায় আসতেই হবে,খোদ ইসলাম ই একে ইজতিহাদ বা গবেষনা টার্মিনোলজীর মাধ্যমে ধর্মতত্বের অংশ করে দিয়েছে। এ কারনেই একজন অল্প শিক্ষিত আলেম আর একজন দার্শনিক ইকবালের বয়ানে পার্থক্য তৈরি হয়।
আবার, ক্ষুধার্ত মানুষের পৃথিবীতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মারনাস্ত্র বানানো বন্দী বিজ্ঞান কে মুক্ত করে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে বস্তুবাদীদের ও ফিরতে হবে ধর্ম আর দর্শনের কাছে।



সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:০৮
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×