somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ, সাধুবাদ জানাই…………

২৭ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবিশ্বাস্য সংখ্যাগরিস্টতা পেয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকার যুদ্ধপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। বিচারক, তদন্তকারী এবং আইনজীবী প্যানেল চুড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
যুদ্ধপরাধী হিশাবে অভিযুক্তদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত।জামাত-শিবিরের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে পরিচিত মহল যে দৃস্টিভঙ্গী পোষন করেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমার নিজের দৃস্টিভঙ্গী তার চাইতে অনেকটাই আলাদা। আবার জামাত-শিবিরের রাজনৈতিক দর্শনের যে প্রায়োগিক দিক, তার অনেক জায়গায় আমার আপত্তিও আছে।কিন্তু আমার ব্যক্তিগত রাজনোইতিক দৃস্টিভঙ্গী যাই হোক, গনতান্ত্রিক চেতনা মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা সংরক্ষন করে, তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এই ইস্যুতে কিছু আলোচনা করব।
আমার ব্যক্তিগতভাবে এতে কোনো সন্দেহ নাই যে, যুদ্ধপরাধীদের বিচারের প্রসংগটি আওয়ামীলীগ ও তার শুভাকাঙ্খিদের যতটা না মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি দায়বদ্ধতা তার চাইতেও অনেক বেশী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এক ধরনের ধুর্ত ও কৌশলী পলিটিক্স। বিগত সময়ে জামাতের সাথে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক মৈত্রি, আওয়ামীলীগের এবং মহাজোটের মদ্ধ্যেই অভিযুক্ত যুদ্ধপরাধীদের অবস্থান এবং অভিযুক্ত যুদ্ধপরাধীদের সাথে তাদের আত্বিয়তা, ব্যবসা বানিজ্য এই পলিটিক্স এর চেহারাকে খুব সহজেই নগ্ন করে দেয়।
দ্বিতীয়ত, এই বিচার কতটুকু ন্যায়বিচার হবে, তা নিয়েও আমি ব্যক্তিগতভাবে আস্থাহীনতায় ভুগছি। জামাত-শিবিরের প্রতি আওয়ামীলীগ ও প্রগতিশীলদের ফ্যসিবাদী আচরনের অনেক উধাহরন একেবারে হাতের কাছেই পাওয়া যায়। ২৮ শে অক্টবর বা সাম্প্রতিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা তো এখনো পুরনো হয় নাই। যারা সুজোগ পেলেই জামাত শিবিরকে নির্মুল করার জন্য সব করতে পারে, তাদের ব্যবস্থাপনায় ন্যায়বিচার নিয়ে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে করা আশংকাকে যৌক্তিক মনে করার যথেস্ট যুক্তি রয়েছে।
তৃ্তীয়ত, যে আইনে বিচার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার ব্যাপারে দেশে বিদেশে অনেকেই আপত্তি করেছেন। এই আইনের অধীনে ন্যায় বিচার যথেস্ট বিঘ্নিত হবে।ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশান এই আইন সংশোধন করার জন্য মতামত দিয়েছে।

এই বিষয়গুলো যথেস্ট গুরুত্ব এবং বিবেচনার দাবী রাখলেও, তা কোনোক্রমেই যুদ্ধপরাধীদের বিচারের উদ্যোগকে বাতিল করে দেয় না। কারন, অপরাধের বিচার হতেই হবে, নৈতিক ও ধর্মীয় মানদন্ডে তা না চাওয়ার কোনো কারন থাকতে পারে না।দ্বিতীয়ত, আওয়ামীলীগের রাজনোইতিক বলয়ের বাইরেও একটি বিরাট অংশ এই বিচার মনে প্রানে চান।তৃ্তীয়ত, মুক্তিযুদ্ধে যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তাদের ইমোশন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন এবং চতুর্থত, মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধপরাধী প্রসংগ নিয়ে যে বিভাজন, তার একটি উপসংহার প্রয়োজন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য।
কাজেই, এই বিচার যত তারাতারি হবে ততই ভাল, এমন কি জামাত-শিবিরের ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য ও।যদি সত্যিকার অর্থেই ন্যায়বিচার হয় (ন্যুরেম্বার্গ সহ বিশ্বের অধিকাংশ যুদ্ধপরাধীদের বিচারই ন্যায়বিচার হয় নাই), তাহলে সব পক্ষই সাধুবাদ জানাবে।যারা অভিযুক্ত হবে তাদেরকে বাদ দিয়ে কালিমা মুক্ত হয়ে জামাত শিবির নতুন করে তাদের রাজনীতি শুরু করবে, তুরস্ক এর একেপির মত দলের নাম বদলে পরের সারির নেতারা এগিয়ে আসলে খুব তারাতারি জনপ্রিয়তা পাবে এই নতুন দলটি। একসাথে মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে পুজি করে আওয়ামী চেতনার ব্যবসা বন্ধ হবে, বন্ধ হবে যৌবনজ্বালার গায়ে মুক্তিযুদ্ধের ছাপ মারার নোংরা প্রগতিশীলতার ও।
আর যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে বিচারের নামে প্রহসন হয়, তাহলে জামাতের ৭১ এর ভুলের বড় রকমের প্রায়শ্চিত্য হবে। সেটিও তাদের রাজনীতির ক্যাপিটাল হয়ে থাকবে, কিছুটা সহানুভুতিও হয়তো পাবে তারা।তবে, সংগোপনে জামাত শিবিরের নিজস্ব বলয়ে একটা প্রতিহিংসাও জন্ম নিবে, বিভাজন ও হয়তো থামবে না।ন্যায়বিচার না হলে, আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা সমালোচিত হব, আভ্যন্তরিন বিভাজন বাড়বে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি কিছুটা হলেও কলঙ্কিত হবে।
সরকারের প্রতি আহবানঃ
১। বিচারকে প্রলম্বিত করে আগামী নির্বাচন পর্জন্ত নিবেন না।
২।যুদ্ধপরাধীদের বিচার আর ইস্লামী রাজনীতিকে নির্মুল – এই দুইকে সরলীকরন না করাই ভাল হবে।
৩।অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধী প্রমানিত না হওয়ার আগ পর্জন্ত অন্তত সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সংযত বক্তব্য দিবেন।
৪।মহাজোট ও আওয়ামীলীগের মদ্ধ্যে যে সকল ব্যক্তির বিপক্ষে অভিযোগ আছে তাদের ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

পুনশ্চঃ বিচার প্রক্রিয়া শেষ করেই আমরা যেন এদেশের দুখী দরিদ্র মানুষ আর সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি একটু নজর দেই। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। কেবল বিচারের মধ্য দিয়েই তাদের প্রতি আমাদের দায়বোধ শেষ হবে না।গতবারের আইলা বিদ্ধস্ত মানুষগুলো এখনও কস্টে আছে।
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×