somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেবল বোরখা দিয়ে ঈভটিজিং দূর হবে কি ?

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১। বোরখা বা নারীর পোষাকের পর্দাই কি ঈভটিজিং এর সমাধান?
ইসলাম পন্থীদের অনেকেই চোখ বন্ধ করে মনে করেন মেয়েরা সব বোরখা পড়লেই ইভটিজিং বন্ধ হয়ে যাবে।তাতেও যদি বন্ধ না হয় তাহলে মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিলেই হয়। তাহলে আর ইভটিজিং বলে কিছু থাকবে না। কিন্তু আসলেই কি তাই????? কয়েকটা দৃশ্য কল্পনা করি।
১। মনে করি কোন একটা এলাকায় ৫০ ভাগ মেয়ে বোরখা পরে, বাকী ৫০ ভাগ পড়ে না। ওই এলাকার ৫০ ভাগ ছেলে বাউন্ডেলে বখাটে। কোন সন্দেহ নাই যে ৫০ ভাগ বোরখা না পড়া মেয়েরাই বেশী ইভটিজিং এর স্বীকার হবে।
২। এইবার ধরে নেই, ৫০ ভাগ বখাটে ছেলে ঠিক আছে, কিন্তু সকল মেয়েই বোরখা পড়ে। কি হবে তখন?বখাটে ছেলেরা ইভটিজিং করা ছেড়ে দিবে ? কোন সন্দেহ নেই যে বখাটেরা বোরখা পরা মেয়েদেরই উত্তক্ত করা শুরু করবে।
৩। ধরে নেই, ১০০ ভাগ ছেলেই ভাল, আর কোন মেয়েই বোরখা পড়ে না, হয়তো ১০ ভাগ ছেলে মেয়েদের কারনে খারাপ হয়ে যাবে, কিন্তু ইভটিজিং এর পরিমান ১ নং দৃশ্যের চাইতে কম হবে।
অর্থাত, ইভটিজিং যতটা না নারীর, তার চাইতে অনেক বেশী পুরুষের সমস্যা। নারীর প্রতি পুরুষের চিন্তাধারা আর দৃস্টিভঙ্গী যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে বখাটেরা রাস্তাঘাটে পর্দা ছাড়া মেয়েদের না পেলে ঘরে ঢুকে পর্দা করা মেয়েদের ও নির্যাতন করবে, কেবল বোরখা দিয়ে ঈভটিজিং দূর হবে না।

২। ইসলাম কি পুরুষকে পর্দা করতে বলে নাই?

পর্দা সম্পর্কিত পবিত্র কোরআনের সুরা নুর (২৪ নং সুরা) তে আলোচনা করা হয়েছে। মজার বিশয় হল এই সুরার ৩০ নম্বর আয়াতে পুরুশের পর্দা সম্পর্কে আর ৩১ নম্বর আয়াতে নারীর পর্দা সম্পর্কে বক্তব্য এসেছে। অর্থাৎ নারির পর্দার আগে পুরুষের পর্দার আদেশ দেয়া হয়েছে। পুরুষকে তার চোখ ও লজ্জাস্থান নিয়ন্ত্রনে রাখতে বলা হয়েছে।বুখারী ও মুস্লিম শ্রীফের একটি হাদীসেও বলা হয়েছে রাস্তায় থাকা অবস্থায় তোমরা তোমাদের চোখকে নিয়ন্ত্রন কর। এখন নারীকে একতরফা পর্দা করতে বা বোরখা বলতে বলে যারা তাদের নিজেদের চোখ আর লজ্জাস্থানের লালায়িত হওয়াকে বৈধতা দিতে চায় তারা নিসন্দেহে ইসলামের মুল শিক্ষাকে লংঘন করে এক ধরনের পুরুষতান্ত্রিক নস্টামির সামজিকিকরন করে।

৩।ইসলাম নারীর জন্য নিরাপদ সমাজ চায়

একটি হাদিস জানা ছিল আমার। এই মুহুর্তে রেফারেন্স পাচ্ছি না। রাসুল (স) ভবিস্যত বানী করছিলেন যে এমন একটি সময় আসবে যখন একজন একাকী মহিলা অলঙ্কার সজ্জিত হয়ে অনেক দুরের রাস্তা একাই ভ্রমন করতে পারবেন, কেউ তাকে বিন্দু মাত্র ডিস্টার্ব করবে না। অর্থাৎ নারীর স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরার মত একটি সমাজ তৈরি হবে।
এই হাদীসের অন্তর্নিহিত ভাব হচ্ছে ইসলামের মুল কন্সার্ন নারীর নিরাপত্বা। নিরাপত্বা নিশ্চিত হলে তার সামজিক আচরনের আর চলাফেরার উপর নিসেধাজ্ঞা আরপের কিছু নাই।সামজিক নিরাপত্বা দিতে অক্ষম মুসলিম সমাজ নারীকে অবরুদ্ধ করে , তার কর্মক্ষেত্র কে সঙ্কুচিত করে দিয়ে নিজের ব্যর্থতা ঢাকার চেস্টা করে মাত্র।

৪। শালীন পোশাক আর পর্দার কি কোনো প্রয়োজন নাই?

প্রানীজগতের একজন হিশাবে মানুশকে যদি আমরা অবাধ স্বেচ্ছাচারের সুজোগ না দেই, যদি নৈতিকতাকে ধরে রাখতে চাই সমাজে, তাহলে নারি পুরুষ উভয়েরই শালীন পোশাক এর প্রয়োজনীয়তা আছে।নারী পুরুষের যৌনতার ক্ষেত্রে ধর্মীয় রক্ষনশীলতা বাদে পরিবার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা অসম্ভবই মনে হয় আমার কাছে।

৫। পাশ্চাত্যের খোলামেলা সংস্কৃতি দিয়েই কি নারীর মুক্তি হবে? যারা মনে করেন, যৌনতার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের খোলামেলা সংস্কৃতি দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে, তাদের জন্য ছোট্ট এক্টা তথ্য, আমেরিকায় প্রতি দুই মিনিটে একজন যৌন নির্যাতনের স্বীকার হন।অর্থনৈতিক ভাবে উপরের সারির এই দেশগুলোর সংস্কৃতি আমাদের মত ৩য় বিশ্বের ভাঙ্গাচোরা অর্থনীতির সাথে মেলালে যা হবে সেইটা জাহান্নামের কাছাকাছি কিছু এক্টাই মনে হয়। পাশচাত্যের সমাজ নারী-পুরুষ উভয়কেই ভোগ্য পন্য বানিয়ে ফেলেছে। মানুষকেই যে সম্মান করতে ভুলে গেছে, নারীকে নিয়ে সে ব্যবসা ছাড়া আর কিছু করবে না এইটাঈ স্বাভাবিক।নারী তার কাছে শরীর মাত্র।

ইসলাম যখন একইসাথে নারীর প্রতি পুরুষের সম্মান আর নারীর শালীন পোশাক দুইটার কথাই বলে তখন সেইটা পারফেক্ট হয়। আর আমরা যখন আমাদের দায়িত্বশীলতার অংশটুকু বাদ দিয়ে কেবল নারীর উপর বোরখা চাপিয়ে দিতে চাই,তখন ঘুরে ফিরে যেন নারীকে পন্য হিশাবে দেখার জায়গায়ই ফিরে যাই। যে পুরুষের চোখ নারীকে দেখলেই কামনা তাড়িত পশু হয়ে যায়, তার পুরুষতান্ত্রিক অধিকার বোধ থেকে নারীর পর্দার প্রশ্ন তোলা কেবল পরিহাস। নারীর প্রতি সম্মানে যে সমাজের পুরষের চোখ নত হয়, নারীর জন্য শালীন পোশাকের প্রশ্ন কেবল সেই তুলতে পারে।




৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×