somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার বিভাজন – সরল অঙ্ক কি আসলেই সোজা ?

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুক্তিযুদ্ধে জামাতের ভুমিকার কোন স্পস্ট জবাবদিহি জামাত তার নিজের জনশক্তির কাছে বা জাতির কাছে আজ পর্জন্ত করে নাই। বরং “ষড়যন্ত্র তত্ব” দিয়েই সে মোটামুটি পার গেয়ে গেছে, অন্তত নিজের দলের নতুন প্রজন্মের কাছে। এই ষড়যন্ত্র তত্ব এর একটি প্রধান পয়েন্ট হল, যুদ্ধপরাধীদের বিচার মুলত জাতিকে বিভাজনের মাধ্যমে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধা আর রজাকারের বিভাজন, যার ফলে আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হয়। দেশের, জাতির উচিত এই বিভাজনের রাজনীতি বাদ দিয়ে ভবিস্যতের দিকে তাকানো। জামাতের পক্ষ থেকে এই “বিভাজনের রাজনীতির” প্রসংগটি তোলা নিছক মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবস্থান এবং অপরাধের সাথে সংশ্লিস্টতার অভিজোগকে এড়িয়ে যাওয়ার বাহানা মাত্র। কিন্তু, জামাতের পক্ষ থেকে তোলা বলেই যে এই পয়েন্ট এর আর কোনো অর্থ থাকবে না, বা আর কেউ এর সদর্থাক ব্যখ্যায় গিয়ে একই প্রশ্ন তুলতে পারবেন না, এমন কোনো কথা নাই নিশ্চয়ই।

তো, আমরা যারা জামাতের রাজনীতিকে “ও রাজাকারের দল” বলে বাতিল করে দেই না, বরং “পলিটিকাল ইসলাম” এর বৈশ্বিক কাঠামোতে জামাতের রাজনীতিকে বিচার বিশ্লেষন করতে আগ্রহী, তারা একই সাথে “বিভাজনের রাজনীতির” বাইরে থাকতে চাই, আবার “যুদ্ধপরাধীর বিচার” এর জেনুইন দাবীকেও ন্যয়বিচার এর শর্তে ( আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচার কে নয়) গুরুত্বপুর্ন বলে বিবেচনা করি।
এখন, বিভাজনের বাইরে গিয়ে কিভাবে এই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়, কিংবা যুদ্ধপরাধীদের চলমান বিচারের প্যারালাল প্রচার কে বিভাজনের রাজনীতির বাইরে রাখা যায় এইটা নিয়া খুব একটা আলোচনা/সচেতনতা নাই বললেই চলে। বরং, আশ্চর্যের বিশয় হলো, জামাত যে বিভাজনের অভিজোগ তোলে, কিছু উগ্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারিরা একই কাজ করেন। নিচের নিউজটি খেয়াল করুন –“কুসিক নির্বাচন আজ ॥ মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার লড়াই হবে নারী ভোটাররাই ফ্যাক্টর, সহিংসতার আশঙ্কা”

হেডলাইনটি দৈনিক জনকন্ঠ এর, কুমিল্লা সিটি কর্পরোশানের নির্বাচনের আগের দিনের। নিউজ এ বলা হচ্ছে, “আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অধ্যৰ আফজল খান একজন মুক্তিযোদ্ধা। অন্যদিকে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও নাগরিক কমিটির প্রার্থী মনিরম্নল হক সাক্কু পরীৰিত রাজাকারের ছেলে। কুসিক নির্বাচনে তারা দু'জনেই হেভিওয়েট প্রার্থী। মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার প্রশ্নে ভোটাররা নগরপিতা হিসেবে কাকে বেছে নেবেন?”

নির্বাচনের ফলাফল এখন আমাদের সবার জানা। জনকন্ঠ এর ভাষ্যেই , “২৯ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে কুমিলস্না সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রথম বেসরকারীভাবে নগরপিতা নির্বাচিত হলেন বিএনপির অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতা ও নাগরিক কমিটির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু।“ জনকন্ঠ এখন আর আমাদের স্পস্টভাবে জানাছে না, যে একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে একজন রাজাকারের সন্তান কেই জনগন নগরপিতা হিশাবে বেছে নিয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলের নিঊজে তাই সাক্কুর “রাজাকারের সন্তান” পরিচয় অনুক্ত থেকে যায়।

আমরা জনকন্ঠের বক্তব্যে একমত নই, কাজেই এইটা মনে করার কোনো কারন নাই যে, মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে রাজাকারের সন্তান বেশী জনগ্রহনীয় হয়ে উঠছে। কিন্তু জনকন্ঠ এই প্রচারনাটা করে এই রঙ কনক্লুশানের সুজোগটা করে দিল। জামাতের “বিভাজন তত্ব” কে একধরনের প্রায়োগিক যৌক্তিকতা দিয়ে দিল। জামাতের রাজনীতি আর জনকন্ঠের রাজনীতি এই জায়গায় একাকার হয়ে ঊঠে।

৭১ প্রশ্নে জামাতের আরেকটি বহুল ব্যবহ্রিত পয়েন্ট হল, পাকিস্তান আর ইসলাম সমার্থক, ৭১ এ তারা ইস্লামের জন্য পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। পাঠক, আবার নিচের ভিডিও টি দেখেন। এইবার একুশে টিভি, জনকন্ঠের চাইতে অনেক জনপ্রিয় চ্যানেল, কেমন করে, ইসলাম কে (বাংলাদেশি মুসলমানের পোশাক, সিম্বল যা অধিকাংশ মানুশের কাছে ইস্লামের সমার্থক ) মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে দাড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে।


এই প্রচারনা কি জামাতের পাকিস্তান=ইসলাম তত্বকেই এক ধরনের ন্যয্যতা দিচ্ছে না?

কুমিল্লা নির্বাচনে একটা বিশয় খুব স্পস্ট যে
১। হয় জনগন মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার এর এই ক্লাসিফিকেশান বিশ্বাস করে না
২। অথবা, বিশ্বাস করলেও এইটা তাদের প্রাইম কন্সার্ন না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একুশে, জনকন্ঠের এবং ক্ষেত্রবিশেষের আওয়ামীলীগের ( ইদানিং সবকিছুতে যুদ্ধপরাধীদের বিচার বাতিলের ষড়যন্ত্র তত্ব দ্রস্টব্য) এই বিভাজনের রাজনীতির ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া বা প্রতিবাদ করার প্রয়োজন আছে কি না? জামাত বিরধিতার প্রক্রিয়াকে প্রায়োগিক বাস্তবতার আলোকে চিন্তা করার দরকার আছে কি না ?

আজকের প্রথম আলোতে প্রকাশিত জনমত জরিপ অনুজায়ী “ আওয়ামী লীগের জনসমর্থন ৩৮ শতাংশ আর জাতীয় পার্টির ৮ শতাংশ, সম্মিলিতভাবে ৪৬ শতাংশ। বিপরীতে বিরোধী দল বিএনপির জনসমর্থন ৪৩ শতাংশ আর জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর ৪ শতাংশ, সম্মিলিতভাবে ৪৭ শতাংশ।“ খুব সহজ হিশাব অঙ্কের হিশাব বলে, জামাতের ৪ শতাংশ ভোট বি এন পি র জন্য গুরুত্বপুর্ন, মাহাজোটের বিপক্ষে তাদের জোটগত ভাবে জয়লাভের জন্য।
কাজেই, বি এন পি সহসা জামাত কে ছেড়ে একক রাজনীতি করতে যাবে না। এখন বি এন পি এবং জামাতের ৪৭ শতাংশ ভোটার মুক্তিযোদ্ধা/রাজাকারের সরল অঙ্কের হিশাবে বিশ্বাস করে না, কুমিল্লা নির্বাচন কে স্যাম্পল হিশাবে যদি আমরা বিবেচনা করি, এই বিভাজন আর প্রাচারনা সত্বেও তারা জোটকেই ভোট দিবেন। তাহলে, একটি দেশের ৪৭ শতাংশ জনগোস্টিকে রাজাকার বানিয়ে সত্যিকার অর্থে কোনো লাভ আছে কি?

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ভোটের অঙ্কের হিশাবের কারনেই কি জামাতের ৭১ ইস্যু জবাব্দিহিতার বাইরে থেকে যাবে? অবশ্যই না। আমার মতে এই জায়গায় আমাদের এবং জামাতের নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব নিতে হবে। বিশেষ করে কয়েকটি ইস্যুতে,
১। ৭১ এর রাজনৈতিক বিরোধিতার জন্য প্রকাশ্যে জামাতের ক্ষমা চাওয়া
২। যুদ্ধপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় অন্তত বি এন পি কে আস্থায় এনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা
৩। সিম্বলিক কিছু লোকের বিচার করে বাকিদের ক্ষেত্রে ট্রুথ কমিশান বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় রিকন্সিলিয়েশানে যাওয়া।


আমার এই প্রস্তাব যাদের কাছে কিছুটা আপোশকামী মনে হবে, যাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অসাধারন শ্রদ্ধাবোধকে আহত করবে, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েই বিনিত প্রশ্ন করব, আগামী নির্বাচনে বি এন পি জামাত জোট জিতে গেলে এই বিচার প্রক্রিয়ার কি পরিনতি হবে একটু ভেবে তারপর উত্তর দিবেন প্লিজ। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অভিজুক্তরা বের হয়ে আসবে, রাজাকারের গাড়ীতে পতাকা দেখে আবার অক্ষম আক্রোশ জেগে উঠবে অনেকের আর পৌনুপুনিক এই রাজনীতিএর মাঝে মানুষের মুক্তির জন্য আরাধ্য স্বপ্ন আরো দুরে চলে যাবে, এই তো ?





সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:২৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×