অনেকদিন ব্লগ থেকে দূরে আছি এর পিছনে বেশকিছু কারনও আছে। প্রিয় ল্যাপটপটা নষ্ট হয়ে যাওয়াটা আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। এছাড়া সময়টা একই সাথে ভাল মন্দ দুয়ের ভিতর থেকেই যাচ্ছে। লেখালেখির প্রতি মনযোগ হারিয়ে ফেলেছি। এতদিন অনুপস্থিতির মাঝে অনেক কিছুই ঘটে গেছে। আমি সময়ের একজন আলোচিত পরিচালকের ছবিতে সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করার সূযোগ পেলাম, বেশ কিছুদিন কাজও করে গেলাম, এরই মাঝে আক্রান্ত হলাম হেপাটাইটিস বি নামক একটি রোগে। আক্রান্ত হবার পরেও নিজের খামখেয়ালিপনাতে অসুস্থতা আরো বেড়ে চলল। কিছুদিনের ভিতরই শুনতে পেলাম আমি চলচিত্র থেকে বাদ পরে গেছি। আবারও হতাশা। ভাল লাগছে না কিছুই। কিন্তু কয়েক দিনের মাঝেই আবার ঈদ নাটকের চিত্রনাট্য করার দ্বায়িত্ব পেলাম। লিখলাম, না গল্পটা আমার একটুও পছন্দ না জাস্ট ফরমাশ খাটা। অসুস্থতা দিন দিন বেড়ে চলল, হাসপাতাল ডাক্তার এসবের মাঝেই থাকলাম আর চলচিত্রের ব্যাপার ভুলতে চাইলাম। মনে হতে থাকল আমি একটি গর্ধব। ঈদ এক রকম বিছানায় শুয়েই কাটিয়ে দিলাম। গতকাল বাসার টবে বসে আবোল তাবোল ভাবলাম, এর মাঝে দুইটা নাটকের গল্প লিখলাম, পরিচালকও পছন্দ করলেন। হতাশা না কাটলেও আজ হুট করে স্বীদ্ধান্ত নিলাম আবার নতুন করে শুরু করব। নিজের একটা গল্প বলব আপনাদের কে, ঠিক বলা নয় লিখা। আপনারা পড়বেন, কেউ প্রকান্ড সমালোচনা করবেন কেউ বা লাইক বাটনে ক্লিক করবেন। ঠিক তাই ব্লগে প্রবেশের পুর্বে একজন মেয়েকে আনফ্রেন্ড করলাম, এক তরফা প্রেম বলতে পারেন, বহুদিন চেষ্টা করলাম বাট হল না, প্রেমিক হিসেবেও আমি ব্যর্থ। অতএব অতীতের কিছু আবর্জনা ফেলে দিলাম। নতুন করে সব শুরু করতে হবে যে, সময় খুব একটা বাকী নাই। এখন তবে এসব আবোল তাবোল কথাবার্তা বাদ দিয়ে গল্পে চলে যাই।
মরিচিকা
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে আজ প্রায় ১ বছর হল, ব্রিটিশ ভারতে শাষক শ্রেনীর ভিতর মহা উল্লাস, কিন্তু তার মাঝেও আছে দুঃশ্চিন্তার ভাজ। এই ভারত কি তাদের ছেড়ে যেতে হবে? সব রাজ্যে মানুষ ক্ষেপে উঠেছে, দিন দিন আন্দোলন আরো শক্তিশালী হচ্ছে, এদিকে বাংলার অবস্থা সবথেকে খারাপ, এখানকার মানুষগুলিই সব নষ্টের গোড়া, মনে হয় যেন এই জাতি জন্মের লগ্ন থেকে আন্দোলন শিখে এসেছে। ইতিহাসেও দেখেছে প্রতিটা শতাব্দিতেই বাঙ্গালীরা কোন শাষকবর্গকে শান্তি দেয় নিই, সেই পাল আমলেও দেয় নিই, সুলতানি আমলে তো আলাদা সালতানাতই গঠন করেছে , আর মুঘল সম্রাজ্যকেও কম ঘোল হজম করতে হয় নিই এই বাংলার কাছে। হুইস্কির গ্লাসে এসব ভাবতে ভাবতেই চুমুক বসালেন উইলিয়াম। ইদানিং ঢাকাতে আবার নতুন একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে প্রায়ই সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারীগুলি নিখোজ হচ্ছে তা হলেও চলত এর উপর ইংরেজ মেমসাহেবের সংখ্যাও কম নয়। যেভাবেই হোক খুজে বের করতে হবে অপরাধীদের। উইলিয়াম নিশ্চিৎ এটা বিদ্রোহিদেরই কাজ। এদেরকে খুজে পেলে আস্ত রাখা যাবে না। আজকে নাকি আবার নবাব পরিবারের এক মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে বুড়িগঙ্গায় একদম ক্ষত বিক্ষত লাশ। কিন্তু উইলিয়াম ভেবে পাচ্ছে না শুধু মেয়ে কেন?
আজ রাতে আবার যেতে হবে থিয়েটারে। এই শহরের সবথেকে বিখ্যাত অপেরা দলের শো আজ। বিউটি বেগম নামের এক সুকন্ঠি নারী আছে নাকি এখানে। যার সুরের মুর্ছনায় সবকিছু ভুলে যেতে হয় কিন্তু আফসোস কেউ নাকি তার চেহাড়া দেখে নিই।
আজ উইলিয়াম যাবে বিউটি বেগমের কন্ঠের যাদুতে আত্বহারা হতে। মটর গাড়ি রেডি হলেও আজ সে ঘোড়ার গাড়ি ঠিক করেছে। রোলস রয়েছের যান্ত্রিক শব্দ আজ শুনতে ইচ্ছে করছে না। গারোয়ান গৌতম প্রস্তুত। কিছুক্ষন আগেই বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারনে এই জায়গাটার সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। এই শহরে আসার পরই এই শহরের প্রেমে পরে গিয়েছে উইলিয়াম। কলকাতার মত অত ব্যস্ত না কিন্তু প্রান চঞ্চল, কেমন যেন একটা মাদকতা আছে এই শহরের কৃষ্ণচুড়ার গন্ধে, বুড়িগঙ্গা, ত্রিবেনী নদীর কলতানে বারবার তার লন্ডনের টেমসের কথাই মনে পরে যায়। বৃষ্টির পরে আকাশে চাঁদ উঠেছে, এমন পরিবেশ লন্ডনে পাওয়া যায় না। কলকাতার থেকেও পুরাতন শহর এই ঢাকা, কয়েকবারই পেয়েছে রাজধানীর মর্যাদা, সর্বশেষ বার রাজধানী হল তাও খুব বেশীদিন হয় নিই। এমন ভাবতে ভাবতেই থিয়েটারে চলে এসেছেন তার জন্য অপেক্ষা করছে নবাবজাদা। তিনি নামতেই তাকে জাকজমকের সাথে অভিবাদন জানানো হল। থিয়েটারের পরিবেশটাও মাদকতাময়। কিছুক্ষনের মাঝেই আসবে সকল কুশিলবরা। আজকে তার সন্মানে পাশ্চাত্যের সঙ্গীত আয়োজন করতে চাইলেও উইলিয়ামের সোজা উত্তর সে উপমহাদেশের সঙ্গীত শুনতেই এসেছেন।
উইলিয়াম বসে আছেন সামনে, পাশেই নবাব, এরই মাঝে একটি পর্দা সরে গেল, কিন্তু মঞ্চের মেঝেতে ছোট একটি ঘরের মত, তার মাঝেই নাকি বসে আছেন বিখ্যাত শিল্পী বিউটি বেগম। শুরু হল সেতারা, তানপুরার তালে তালে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত। আহা! কি মধুর সুর? যার কন্ঠে এমন সূর তার মুখচ্ছবিও নিশ্চয়ই তেমনই হবে। সঙ্গীতের সুরের মুর্ছনায় উইলিয়াম হারিয়ে গেল এক অন্য জগতে, সে রাতারাতি তার মনের অবয়েবে একে ফেলল বিউটির একটি সুন্দর ছবি। নাহ আজ এই সুন্দরী ললনার মুখ সে দেখবেই দেখবে।
আজকের মত সঙ্গীত রজনী শেষ। উইলিয়াম সবার অগোচরের হেটে গেলেন শিল্পীদের কক্ষে। একজনকে ভাঙ্গা বাংলায় জিজ্ঞেস করতেই তার মুখে রহস্যময় হাসি দেখা দিল, নির্দ্বিধায়ই তাকে দেখিয়ে দিলেন বিউটির কক্ষ। ধীরে ধীরে বিউটির কক্ষে যেতেই মন যেন আরো উতলা হয়ে উঠল। কক্ষের এক কোনে টেমস নদীর একটি অসাধারন ছবি টাঙ্গানো। ধীরে ধীরে ছবিটার দিকে এগিয়ে গেলেন উইলিয়াম। আহা এতো অসাধারন। হঠাৎ করেই নারীকন্ঠে বিড় বিড় শব্দে একটি বাংলা গান, মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষেরও সনে।
বিউটির দিকে তাকিয়েই যেন ভরকে গেলেন উইলিয়াম, পিছাতে শুরু করলেন তিনি, এ কোন বিউটি?
পরদিন সকালে রেসকোর্সের পাশে উইলিয়ামের ক্ষতবিক্ষত লাশ পরে রইল।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩২