somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাবলীগ জামাতের চিল্লা কি বিদআত?

০৮ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্ন :- তাবলীগ জামাতওয়ালারা তাবলীগে যাওয়ার জন্য চল্লিশ দিনের চিল্লার যে দিন নির্দিষ্ট করেছে এর কোন প্রমাণ নেই। এটি একটি বিদআত। এই বিদআতকে তাবলীগওয়ালারা তাদের মাঝে প্রচলন ঘটিয়েছে।
উত্তর :- আসলে তাবলীগ জামাতে চিল্লাকে কোন শরয়ী বিধান বলা হয় না। একথাও বলা হয় না যে, এটি রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত কোন সুন্নত। বরং এটি দ্বীনভোলা সাধারণ মুসলমানদের প্রশিক্ষণের জন্য নির্ধারিত একটি কোর্স মাত্র। যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্বীন বা দুনিয়াবী শিক্ষা অর্জনের জন্য ১২বছর বা ১৪বছর এমন কোর্স চালু করা হয়েছে। এমনকি মাদরাসায়ও এমন পদ্ধতি প্রচলিত। গোটা বিশ্বের দ্বীনী প্রতিষ্ঠানেই এমন সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হয়। সুনির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করা বা অবস্থান নেয়া বা প্রশিক্ষণ নেয়ার দ্বারা ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছার সার্টিফিকেট দেয়া হয়।
এসব কোনটিই রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত বিষয় নয়। আবার বিদআতও নয়। কারণ এসব পদ্ধতিকে কেউ সুন্নতও বলে না। সেই সাথে এই সংখ্যাটিতে সওয়াব জড়িতও বলা হয় না। বরং প্রশিক্ষণের সুবিধার্তে তা নির্ধারণ করা হয়েছে।
যদি তাবলীগের চিল্লা পদ্ধতি বিদআত হয়, তাহলে মক্কা মদীনা ভার্সিটিসহ পৃথিবীর সকল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দ্বীনী কোর্স সম্পন্ন করার সময়সীমাও বিদআত হবে। কিন্তু কোন ব্যক্তি কি এমন আহমকী প্রশ্ন করে? যদি না করে তাহলে তাবলীগের চিল্লা নিয়ে কেন এ অহেতুক প্রশ্ন?
ইসলামী দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ যোগ্যতা অর্জনের জন্য যে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এর কোন দূরতম প্রমাণও কুরআনও হাদীসের কোথাও নেই। অথচ তাবলীগের চিল্লার খানিক হলেও প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে।

তাবলীগ জামাতের চিল্লার হিকমত
চল্লিশ দিন পর্যন্ত লাগাতার কোন আমল করলে এর দ্বারা মানুষের আত্মিক অনেক পরিবর্তন সাধিত হয় মর্মে জানা যায়। সেই সাথে এই চল্লিশ সংখ্যাটিও ইসলামী শরীয়তে আলাদা বৈষিষ্টমন্ডিত। এ কারণে কোন সাধনার জন্য এ চল্লিশ সংখ্যাটি আলাদা বৈষিষ্টে রাখে। কয়েকটি দলীল-

الَ عَبْدُ اللَّهِ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِقُ المَصْدُوقُ، قَالَ: ” إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَبْعَثُ اللَّهُ مَلَكًا فَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ،
হযরত যায়দ বিন ওহাব রাঃ থেকে বর্ণিত। হযরত আব্দুল্লাহ রাঃ বলেন, সত্যবাদীরূপে স্বীকৃত রাসূল সাঃ আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপকরণ নিজ নিজ মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, এরপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। অনুরূপভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। এরপর তা মাংসপিন্ডে পরিণত হয়ে [আগের মত চল্লিশ দিন] থাকে। এরপর আল্লাহ তাআলা ফিরিশতা প্রেরণ করেন। আর তাকে চারটি বিষয় নির্দেশ দেয়া হয়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩২০৮, ৩০৩৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৪৩}
উক্ত হাদীসটিতে লক্ষ্য করুন। মানুষের শারিরিক গঠনপ্রণালীর এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় পরিবর্তিত হতে সময় নির্দিষ্ট হল ৪০দিন। অর্থাৎ এক সূরত থেকে আরেক সূরতে পরিবর্তন হয় ৪০দিনে। এভাবে তিনটি স্তর পেরোতে হয় ৪০দিন করে করে।
এর দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, ৪০দিনে একটি ব্যক্তির মানসিক পরিবর্তন হতে পারে। যেমন জন্মলগ্নের স্তরগুলোতে পরিবর্তিত হয়েছিল।
এমনিভাবে আরেক হাদীসে এসেছে-
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ أَسِيدٍ الْغِفَارِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَوْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” يَدْخُلُ الْمَلَكُ عَلَى النُّطْفَةِ بَعْدَمَا تَسْتَقِرُّ فِي الرَّحِمِ بِأَرْبَعِينَ لَيْلَةً – وَقَالَ سُفْيَانُ مَرَّةً: أَوْ خَمْسٍ وَأَرْبَعِينَ لَيْلَةً – فَيَقُولُ: يَا رَبِّ، مَاذَا أَشَقِيٌّ أَمْ سَعِيدٌ؟ أَذَكَرٌ أَمْ أُنْثَى؟ فَيَقُولُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى، فَيَكْتُبَانِ، فَيَقُولَانِ: مَاذَا؟ أَذَكَرٌ أَمْ أُنْثَى؟ فَيَقُولُ
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬১৪২, মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-৮৪৮, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩০৩৯}

আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা আঃ থেকে ৪০দিনের ওয়াদা নিয়েছিলে। ইরশাদ হচ্ছে-
وَإِذْ وَاعَدْنَا مُوسَى أَرْبَعِينَ لَيْلَةً
আর যখন তিনি মুসা থেকে চল্লিশ দিনের ওয়াদা নিলেন। {সূরা বাকারা-৫১}
ইমাম কুরতুবী রহঃ বলেন,
وبهذا استدل الصوفية على الوصال وان أفضله أربعون يوما الخ ((تفسيرالقرطبي ج ۱ ص ۳۹۶))
3
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الأُولَى كُتِبَ لَهُ بَرَاءَتَانِ: بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ، وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ.
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি লাগাতার চল্লিশ দিন জামাতের সাথে তাকবীর উলার সাথে নামায পড়বে। তার জন্য দু’টি মুক্তির খোশখবরী রয়েছে। একটি হল জাহান্নাম থেকে মুক্তি আরেকটি হল মুনাফিকী থেকে মুক্তি। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৪১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২০২৫৩}
কাছাকাছি বক্তব্য নির্ভর আরেক হাদীসে এসেছে-
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: «مَنْ صَلَّى فِي مَسْجِدٍ جَمَاعَةً أَرْبَعِينَ لَيْلَةً، لَا تَفُوتُهُ الرَّكْعَةُ الْأُولَى مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ، كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِهَا عِتْقًا مِنَ النَّارِ»
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৭৯৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-২৬১৬।
উল্লেখিত হাদীসের আলোকে একতা স্পষ্ট যে, চল্লিশ দিনের একটি আলাদা বৈশিষ্ট আছে মানুষের মন-মানসিকতা পরিবর্তনের উপর। যেহেতু দ্বীনভোলা মানুষগুলোর মন বিগড়ে গেছে। দিনের পর দিন গোনাহ করতে করতে মন গোনাহে নাপাক হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর ইবাদতের মজা মানুষের মন থেকে ধীরে ধীরে উঠে যেতে বসেছে।
এ কারণে এসব আত্মভোলা দ্বীনভোলা মানুষকে চল্লিশ দিনের চিল্লায় পাঠিয়ে লাগাতার চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার সাথে নামায পড়ানোর মাধ্যমে যেন তাদের মাঝে আত্মিক পরিবর্তন আসে। তাদের মাঝে যেন মানসিক পরিবর্তন আসে, এ কারণে চল্লিশ দিনের চিল্লা দেয়া হয়। এটিকে শরয়ী কোন দলীল মনে করে করা হয় না। কেবলি হাদীসে বর্ণিত বৈশিষ্টের কারণে ওসীলা হিসেবে তা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আর নেক বিষয়ের উসীলা বৈধতার প্রমাণ স্বতসিদ্ধ।
তাবলীগের চল্লিশ দিনের চিল্লা বিদআত হলে প্রথমে বিদআত হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোর্সের দলীলহীন সময়সীমা নির্ধারণ। সেসব যদি বিদআত না হয়, তাহলে চল্লিশ দিনের আলাদা বৈশিষ্ট সম্বলিত হাদীসে পাকে দলীল থাকা সত্বেও চিল্লা কি করে বিদআত হয়?

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×