ছবি সুত্রঃ সমকাল
বাংলাদেশে বর্তমানে গণতন্ত্র / ধর্ম / সাংস্কৃতির যে সংকট চলছে, তাঁকে সংকট হিসাবে স্বিকার করারও একটি সংকট বিদ্যমান। আপনি যদি ক্ষমতাসীনদের বা তাদের সুবিধাভোগী শ্রেনীর চোখ (ল্যান্স) দিয়ে দেখেন তাহলে আপনি তেমন কোন সংকট দেখবেন না। আবার বিরোধী দলের চোখ দিয়ে দেখলে আপনার মনে হবে এটি শুধুমাত্র একটি স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংকট। নিচে আমি আমার নির্মোহ দৃষ্টিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সঙ্কটের কারণ সমূহ সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখের চেষ্টা করেছিঃ
বাংলাদেশে বর্তমানে গণতন্ত্রের (রাজনৈতিক) যে সংকট চলছে, তাঁর কয়েকটি প্রেক্ষাপট রয়েছেঃ
১) সাংস্কৃতিক বিরোধ এবং বিভাজন - ইসলামিক সংস্কৃতি বনাম স্যাকুলার সংস্কৃতি। মুসলিম সমাজের বড় অংশই ধর্ম এবং সাংস্কৃতির এই বিরোধ বিভাজনে অসচেতন।
২) শ্রেণি সংকট - সমাজের শোষিত পশ্চাদপদ অংশের অন্যতম আশ্রয় ধর্ম। সমাজতন্ত্রের পতনের পর ধর্মীয় সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক গোষ্টি এদেরকে প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ।
৩) আদর্শিক দীনতার বা নৈতিকতার বিরোধ - সমাজের একটি বড় অংশই যে কোন ভাবেই অর্থশালী হওয়াকেই জীবনের সার্থকতা হিসাবে ধরে নিয়েছে।
৪) জমিদারি প্রথার ইতিহাসঃ বাংলাদেশের ক্ষমতাশালী অংশ সামন্তপ্রভুদের মত আচরণ করেন এবং এটিকে তাদের অধিকার মনে করেন। এটিকে তারা গ্রহণযোগ্য আচরণ বলে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।
৫) ভারত বিরোধিতা - প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিযোগিতামূলক বিরোধ থাকবে, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু ভারতের সাথে বাংলাদেশে মানুষের মনস্তত্ত্বে এক ধরণের শোষক এবং শাসিতের আচরণ দৃশ্যমান। ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে অংশীভূত হওয়ায় এ সংকটটি জটিলতর হয়েছে।
৬) মুক্তিযুদ্ধ - মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের নামে রাজনীতির মধ্যে বিপরীত অবস্থান বিদ্যমান। যে কোন ভাবেই হোক ক্ষমতা কুক্ষিগত করা এটি মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানী শাসকদের বৈশিষ্ট্য ছিল। বর্তমান রাজনীতিবিদরা একই আদর্শ ধারণ করছেন।
৭) প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিগত একতা - মানুষের কাছে প্রধান দুই দলের আচরণ এবং শাসনগত পার্থক্য পরিষ্কার নয়।
সর্বোপরি, রাস্ট্রের প্রধান ৩টি বিভাগ (প্রশাসন, বিচার বিভাগ, এবং আইন বিভাগ) যখন তাঁর স্বাধীন চরিত্র হারিয়ে পেলে তখন এই সংকট উত্তরণে এক সামগ্রিক আন্দোলন অনিবার্য হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:০১