somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ে নিয়ে ইয়ে, কোথায় ঠেকবে গিয়ে?

৩১ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের প্রবৃত্তি কে নিয়ে বড় বেশী টানা হেঁচড়া খেলা হচ্ছে। এদিকে আমাদের কাছে বুড়ো জেনারেশনের আবদারের শেষ নেই। তাদের স্বপ্নের পুরোভাগেই নাকি আমরা যুবকরা। আমাদের জীবনাদর্শ ইসলাম বলছে “চল দক্ষিনে যাই, যেতেই হবে, এছাড়া কোন উপায়ও নেই”। এটা শুনে মুরুব্বিরা বলছেন “ঠিক ঠিক, একদম ঠিক”। আর এদিকে যারা আমাদের প্রবৃত্তিকে নিয়ে পুতুল খেলছেন তারা অর্থাৎ বিনোদন ও করপোরেট জগত বলছে “ধর্ম হল অন্ধ, তাই ওর কথা শুনতে নেই। আর মুরব্বীরা হলেন বার্ধ্যক্যের জ্বরায় জর্জরিত তাই তাদের প্রলাপও শুনতে নেই” অর্থাৎ “নগদ যা পাও হাত পেতে লও বাকীর খাতায় শুন্য থাক”। কোন কিছুই নাকি বাকীর খাতায় রেখে দেয়া ঠিক না। যখন যা পাবে হাত পেতে নিতে হবে। বাকীর নাম ফাঁকি।

সেজন্য নগদে ফ্রী টক টাইম, কিছু সেকেন্ড পালস, বোনাস টক টাইম, পিক ও অফ পিক আওয়ারের বৈচিত্রময় লোভনীয় অফার, ফ্যান্টাসি থেকে নন্দন পার্ক, ষ্টার সিনেপ্লেক্স থেকে ধানমন্ডি লেক ঘুরে আমাদের যুবকদের শুধুই বদলে যাওয়ার পালা, খোলস থেকে বেরিয়ে আসার পালা, বন্ধ্যাত্ব (!) থেকে মুক্ত হওয়ার পালা। বিনোদনের ঠিকাদাররা এবং করপোরেট জগতের সুযোগ সন্ধ্যানি লোভাতুর স্যুটরা কড়ায় গন্ডায় আমাদের এ বয়সের অভাবটা জানেন, যেটা জ্ঞানের সাগরে সাঁতরে কাটানো মাথায় টাক ফেলে দেয়া আমাদের মুরুব্বীরা জানেন না এবং জানতে চেষ্টাও করেন না। বিনোদনের ঠিকাদার রা এবং করপোরেট জগতের মানুষ গুলো আমাদের টিনেজ বয়সের ছেলেপেলেদের অভাবটা খুব ভালো করেই জানেন। তারা জানেন যে এই বয়সে আমাদের সাথে বাবা-মা এবং মুরুব্বীদের শাক্ষাত এবং কথা-বার্তার সিংহভাগ জুড়েই থাকে উপদেশ আর আদেশ নিষেধ মুলক বাক্যালাপ। যার কারনে আমরা স্বভাবতই মুরব্বীদের সাথে একটা দুরত্ব তৈরী করে নিজস্ব একটা জগত তৈরী করি। যেখানে সম্মান ও কৃতজ্ঞতার মাপ কাঠিতে বিবেচ্য বিষয়গুলোর মুল্য একেবারেই থাকে না। ঠিক এই সময়েই আমাদের প্রবৃত্তিগত চাহিদা আমাদের মৌলিক নীতি নৈতিকতাকে খুব সহজেই পরাজিত করে ফেলে। বিনোদন জগতের মানুষগুলো আমাদের এই সময়ের আবেগ, অনুভুতিকে নিয়ে তখন মেতে উঠেন, আর তাদেরকে পেছন থেকে টাকা দিয়ে পুষে যান করপরেট জগতের স্যুট-টাই পরিহিত কেতাদুরস্ত লোকগুলো। এতে তাদের প্রচার, প্রসার এবং মুনাফা তিনই বাড়ে। আর বিনোদন জগতের সভ্য দেহ ব্যবসায়িরা তাদের দৈহিক প্রদর্শন ও নাচন কুদনের বৈচিত্রতার শৈল্পিক প্রদর্শনী করে বনে যান আমাদের সেলিব্রেটি, আমাদের বেঞ্চমার্ক এবং আমাদের স্বপ্নলোকের নক্ষত্র। আমাদের মনজগতের পুরো অংশ জুড়েই তাদের দৌরাত্ব বজায় থাকে। আমাদের আকাংখ্যা জুড়ে তাদের সান্যিধ্যের চাহিদায় ভরপুর হয়ে থাকে।

এর পরবর্তী ফলাফল গুলো বড়ই নির্মম ও হতাশার। ডাষ্টবিন গুলো প্রায়শই আলোচিত হয়ে উঠে নবজাতকের মৃত লাশকে উপজিব্য করে, মুরুব্বীদের হৃদয় ভেঙ্গে-চুরে খান খান করে দিয়ে নেমে আসে বিচ্ছেদ ও পারিবারিক কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ ও পরকীয়া। হাসপাতালের এবরশন বা গর্ভপাত বিভাগ গুলোতে বেড়ে যায় ভীড়, আর অতি সচেতনদের নিক্ষিপ্ত বিশেষ বস্তুতে জ্যাম ধরে যায় সুয়ারেজের লাইনে। হত্যা ধর্ষন, আত্মহত্যা এবং সামাজিক কোন্দল। কোনটা ঘটে না?

এমনি এক সংকটাবর্তে ঘুর্নায়মান মুহুর্তে যারা আমাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, আমাদের কাছে যাদের পাহাড় সম আবদার, তারা কিছু ফালতু অজুহাত দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে পড়েন। এরাই হলেন আমাদের মুরব্বীরা, আমাদের সমাজ এবং আমাদের পিতা-মাতা। তারা তাদের যুবক বয়সের নিয়ন্ত্রনাতীত প্রবৃত্তির কথা বেমালুম ভুলে যান, তারা ভুলে বসে থাকেন তাদের সময়ের তুলনায় বর্তমানে যুবকদের প্রবৃত্তিনিয়ে লীলা খেলার প্রবলতার আধিক্যের কথা। অথচ তারাই কিন্তু সেকাল এবং একালের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। এর পরেও তারা বুঝতে চান না। তারা আমাদের এ বয়সের কঠিন সময় গুলো পার হয়ে এসেছেন, তারা জানেন এসময়ে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক/যুবতীর সাথে পরিবারের মুরব্বীদের দুরত্ব তৈরী হয়, তারা জানেন এসময়ে ছেলে মেয়েদের আলাদা একটা জগত তৈরী হয়, যেখানে পারিবারিক প্রভাব, মাতৃত্ব এবং পিতৃত্বের প্রভাব আলগা হয়ে যায়, এ সময় নীতি নৈতিকতামুলক তাত্বিক কথা গুলোর কোন ক্রিয়া থাকে না, এসময়ে সন্তানরা চরম একাকীত্ব এবং দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়, এসময়েই তারা একান্ত আপন কাউকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়ায়, এসময় তারা ভালোবাসতে চায় এবং ভালোবাসা পেতে চায়, এসময়েই তারা চায় অন্তরঙ্গতা। মানুষ মাত্রেই একজন ব্যাক্তি এই কঠিন সময় পার হয়ে আসেন। বিষয়টা অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক। তাই একজন সচেতন মানুষের জন্য এই পরিস্থিতিতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। নুন্যতম সচেতনতা যার মধ্যে আছে তিনি এই কঠিন পরিস্থিতি কে সামাল দিতে পারবেন। যেমনটি পেরেছেন আমাদের বাবা-মায়েরা, কারন তাদের সময়ে এগুলো স্বাভাবিক ছিলো কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আগেকার মতো এখনও কি এই বিষয় গুলো স্বাভাবিক আছে?

আগেই বলেছিলাম যে আমাদের প্রবৃত্তিকে নিয়ে বড় বেশী টানা হেঁচড়া খেলা হচ্ছে। আমাদের জীবনাদর্শ ইসলাম বলছে “খালওয়া” বা একান্তে নারী-পুরুষের মেলামেশা নিষিদ্ধ, ইসলাম বলেছে চরিত্রই সবচেয়ে বড় সম্পদ, ইসলাম বলেছে দৃষ্টিকে অবনত রাখতে, ইসলাম বলেছে ফ্রী মিক্সিং না করতে, ইসলাম বলেছে লজ্জা স্থানের হিফাজত করতে। আমাদের মুরব্বীরা, আমাদের সমাজও তাই বলছে। এদিকে আমাদের প্রবৃত্তি আমাদেরকে টানছে উল্টোদিকে। অনেক কষ্টে যখন আমরা আমাদের প্রবৃত্তিকে দমাচ্ছি ঠিক তখন আমাদের প্রবৃত্তিকে পুনরায় শতগুনে জাগিয়ে দিচ্ছে বিনোদন জগতের দেহ ব্যবসায়ীরা। তাদের নগ্ন দৈহিক প্রদর্শন যেমন লাক্স সাবানের গুনাবলীর কথা বলে, তেমনি ঐ অর্ধনগ্ন নারীর অসংলগ্ন দৈহিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে এমনই একটি নারীর সয্যা সঙ্গের বাতিক জাগিয়ে দেয়। একই ভাবে নাটক সিনেমার হৃদয়গ্রাহী কাহিনী এবং চরিত্র আমাদেরকে প্রতি মুহুর্তে একটি অন্তরঙ্গ সম্পর্কের চাহিদা শতগুনে বাড়িয়ে দেয়, ভালোবাসতে প্রবল বেগে উৎসাহিত করে, আপন কাউকে খুজে পেতে আরও তৃষ্ণার্ত করে তোলে। প্রতিদিন এ কাজটা একবার দুবার নয় বরং হাজারটা বার আমাদেরকে এটা আক্রমন করছে। এদিকে এই যৌনতাসংক্রামক নাটক-সিনেমা, গান, গল্প, সাহিত্য, কবিতা, বিজ্ঞাপন, খবর, পত্রিকা, বিল বোর্ড এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পাঠ্য-পুস্তক আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত হয়ে আছে। শুধু তাই নয়, সময়ের সাথে তাল মিলানোকে পুঁজি করে রাস্তা ঘাটে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমনকি নিজ পরিবারে আমাদের ছেলেমেয়েদের পোষাক আষাকের অস্বাভাবিকতা আমাদের একান্ত নিজস্ব সময়টাতেও একই চাহিদাকে প্রভাবিত করছে। অর্থাৎ আমাদের মুরব্বীদের সময়ে বিষয়গুলো যেমন স্বাভাবিক ছিলো এখন সেটা আর নেই মোটেও।

মন্ত্র বা তত্বকথা শুনিয়ে সাময়িক যাদুটোনা করা যেতে পারে কিন্তু চরম বাস্তব পরিস্থিতিকে পালটে দেয়া যায় না। ঠিক তেমনি এমন একটা মুহুর্তে আপনি একজন যুবককে কোরানের আয়াত ও তাফসির শুনালে সেটা যাদুর মতো সাময়িকভাবেও কাজ করবে না। যদি তাই করতো তাহলে কওমী ও হিফজ মাদ্রাসার ছাত্রদের মাঝে লেওয়াতাতের প্রবনতা থাকতো না। তারা সারাদিন কুরান হাদীস নিয়ে পড়ে থাকে, তার পরেও তারা তাদের প্রবৃত্তি থেকে রক্ষা পায় না। অথচ তারা মাদ্রাসার চার দেয়ালের ভেতর বন্দী থাকে, দুনিয়ার সব বিষয় আশয় থেকে তারা মুক্ত, এর পরেও তাদের অনেকেরই শেষ রক্ষা হয় না। এমন একটা নির্ঝঞ্ঝাট পরিস্থিতিতেও যে মানুষ নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে না সেখানে আমরা কি করে পারবো? এ জিনিসটা মোল্লা-ঠোল্লা নির্বিশেষে কেউই বুঝতে চান না।

এভাবে আমাদের যুবকদের একাকিত্বকে ঘুচানো, ভালোবাসার ও ভালোবাসা পাওয়ার চাহিদা, দ্বিধা-দ্বন্দ থেকে মুক্তি, পারিবারিক দুরত্ব, আপন কাউকে খুজে পাবার চেষ্টা, ও জৈবিক চাহিদাকে পুঁজি করে যে প্রবৃত্তিগত সমস্যা, সেটার দুইটি চুড়ান্ত সমাধান আছে। এ দুটি সমাধানের একটি বৈধ এবং অন্যটি অবৈধ। বৈধটি হল বিয়ে, আর অবৈধটি হল বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক। আমরা যতই নীতি নৈতিকতার কথা বলি মানুষ কিন্তু দুইটি পথের মধ্যে সবচেয়ে সহজ পথটাই বেছে নিবে। ধর্মিয় এবং ধর্ম বহির্ভুত (যদিও জীবনের কোন অংশই ইসলাম ধর্মের বাহিরে পড়ে না) যেকোন বিষয়ে এটা শ্বাস্বত সত্য। এর একটা বাস্তব উদাহরন হল, বাংলাদেশের সবাই দূর্নীতিকে অপছন্দ করে, সবাই এটাকে ঘৃনা করে আবার অধিকাংশই দুর্নীতির সাথে নিবিড় ভাবে যুক্ত। এর একমাত্র কারনই হল এদেশে নৈতিক ভাবে কোন কিছুই করা সহজ কাজ নয়। যেখানে নৈতিকতা অকার্যকর ও কঠিন সেখানে অনৈতিকতাই হল নৈতিকতা। এক্ষেত্রে আপনার বিশ্বাস ও আদর্শ নিতান্তই অপাংক্তেয়। তাই নৈতিকতাকে অনৈতিকতা অপেক্ষা সহজ করাটাই সবচেয়ে বড় ও প্রধান নৈতিকতা। সেদিক থেকে বিচার করলে আজকালকের ছেলে-পেলে দের পালিয়ে বিয়ে করাটা অনেক বড় নৈতিকতার একটি। কারন আমাদের সমাজ ও মুরব্বীরা বিয়েকে এত কঠিন করে ফেলেছেন যে “বিয়ে” এখন সোনার হরিনে পরিনত হয়েছে। আমার মনে হয় পালিয়ে বা গোপনে হাতে গোনা কয়জন শাক্ষি রেখে বিয়ে করা ছেলেদেরকে বাহবা না দিলেও দোষ দেয়া টা চরম অন্যায়। কারন তারা সমাজ ও ধর্মকে সম্মান করে বলেই বিয়ে করে, তা না হলে তারা কিন্তু দিব্যি চুটিয়ে প্রেম ও শারিরিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারতো। যেখানে মজাই মজা, কোন দায়িত্ববোধ নেই। অথচ পালিয়ে বিয়ে করে তারা মুলত সমাজ ও ধর্মের প্রতি সম্মান ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিচ্ছে। তাই বলে পালিয়ে বা গোপনে বিয়ে করাকে উৎসাহিত করার কিছু নেই। তবে এটা ভাবা নিশ্চই দোষের নয় যে আমাদের গোঁড়ামির কারনেই কিন্তু যুবকরা ঐ পথ বেছে নিচ্ছে। তাই এর জন্য যুবকরা যতটুকু দায়ী তার চেয়ে অনেক বেশীগুনে দায়ী হল সমাজ ও সমাজের নীতি নির্ধারকরা।

কিছু টাকা আর একটু সাহস হলেই একটা যুবক বা যুবতী অনায়াসে কোন এক হোটেলে বা নিষিদ্ধ পল্লীতে গিয়ে সকলের অজান্তে দিনের পর দিন তাদের জৈবিক চাহিদা মিটিয়ে আসতে পারে। এখানে কোন সামাজিক মুল্যবোধের চাপ নেই, দায়িত্ববোধের চাপ নেই, পিছুটান নেই বরং যা আছে তা হল নীরেট আনন্দ ও তৃপ্তি। অপর দিকে সমাজে সে সবচেয়ে ভালো ব্যাক্তি, সবার কাছে পছন্দনীয়, কারন সে বড় দের কে জী হুজুর জী হুজুর বলে তোয়াজ করে । কিন্তু এই একই ছেলে যখন সামাজিক মুল্যবোধের চাপ, দায়িত্ববোধের চাপ, পিছুটান এবং ধর্মীয় মুল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এবং এত বড় বড় দায়িত্বগুলো নিজের কাঁধে নিয়ে সেচ্ছায় বিয়ে করার জন্য নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করে তখন সবাই তাঁকে প্র্যত্যাক্ষ্যান করে বসেন, তারা তার দিকে তীক্ষ্ণ ও ঘৃনার দৃষ্টি হেনে বলেন “লজ্জা করে না?”, “কামাই করো?”, “বউরে খাওয়াইবা কি”, “বিয়ার অনুষ্ঠান করবা কেমনে পাত্তি আছে?” , “তুমারে মাইয়া/ পোলা দিবো কেডা?”, “সোজা গিয়ে টেবিলে বসে পড়ায় মন দাও”, “ক্যারিয়ার গঠন করো”, “আর যদি মুরুব্বীদের উপরে আস্থা না থাকে তাইলে নিজের পথে নিজে দেখো” এভাবে হাজারো আক্রমনাত্বক কথাবার্তা বলে এক ঘরে করে ফেলা হয়। মনে হয় যেন দুনিয়ার সবচেয়ে ঘৃনিত ও পাপ যুক্ত কাজটা সে করতে যাচ্ছে। এই প্রত্যেকটি কথার পিঠে যুক্তিযুক্ত উত্তর ও সমাধান আমাদের যুবকদের কাছে আছে। কিন্তু সেটাও কেউ শুনতে চাইবে না। কেউ সাহস করে বললেই হল, তেড়ে মেড়ে এসে বলবে “যতবড় মুখ নয় ততো বড় কথা!”, “ছোট মুখে বড় কথা!” (আসলে এই দুইটা কথাই দুনিয়ার সবচেয়ে ফালতু কথা, উচিৎ কথা বলতে আবার মুখের ছোট বড়’র ব্যপার আসে কোত্থেকে!) তারা আরও বলেন “বেশী পেকে গেছ তাই না!” , “বেয়াদপ কোথাকার! মুখে মুখে তর্ক করে” আরও কতো কি!!!

একটা বৈধ কাজের ক্ষেত্রে যদি আমাদের এই প্রতিক্রিয়া হয় তাহলে যুবকরা অবৈধ উপায়ে কাজ সারবে না কেন? কেন বিয়ে করতে হলে একজন যুবক কে লক্ষ লক্ষ টাকা মোহরানা দিয়েও আরও লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে দুনিয়ার মানুষকে খাওয়াতে হবে? কেন বিয়ে করতে হলেও এত বড় বড় কঠিন কঠিন শর্ত মানতে হবে? কেন দাম্পত্য জীবনের শুরুতেই বিয়ের আনুসাঙ্গিক খরচ মেটাতে গিয়ে এক জোড়া নব দম্পতিকে লক্ষ লক্ষ টাকার ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে তাদের সাংসারিক জীবন শুরু করে পরবর্তীতে অর্থনৈতিক টানপড়েনের জের ধরে পারিবারিক অশান্তিতে পড়তে হবে? কেন স্বপ্নের জীবনটা এভাবে ব্রেকাপ দিয়ে শেষ হবে? এটাই কি জীবনের উদ্দেশ্য ছিল? এটাই কি বিয়ের উদ্দেশ্য?

অনেকেই বলেন আর্লি এইজে বিয়ে করলে আয় কম থাকে, অনেক বেছে শুনে খরচ করতে হয়, এতে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু আমার জীবনে দেখা অসংখ্য সফল ও সুখী পরিবারের উদাহরন থেকে আমি দেখেছি, তারা সাংসারিক জীবনের প্রাথমিক সময়ে অনেক টেনে টুনে সংসার চালিয়েছেন। তবে তারা অযথা মোহরানার টাকা লোক দেখানোর জন্য বাড়িয়ে বাড়িয়ে ওয়াদা করেন নি, তারা বিয়েতে অযথা খরচ করে ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে সংসার শুরু করেন নি। আজ তারা কেউ দুঃখী নেই, বরং দিন দিন তাদের আয়ের উৎস আল্লাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন।তারা এটা করতে পেরেছিলেন কারন তাদের মাথার উপর ঋনের বোঝা ছিল না তাই তারা ঠান্ডা মাথায় এবং ধৈর্য সহকারে সকল পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছিলেন। যে মেয়ে বা ছেলে দুঃখ কষ্টের সময় একে অপরকে সমান ভাবে সাপোর্ট দিতে পারে না তারা কি করে একে অপরের প্রতি ভালোবাসার পরিক্ষা দিলো। কিভাবে তাদের ভালোবাসা পুড়ে খাটি সোনা হল? অর্থাৎ কেউ আমার দুঃখ ও কষ্টের সময়ে আমার ঘর করতে চাইবেন না, আমার সুখের সময়েই আমার সাথে ঘর করার জন্য রাজি হবেন, সেতো কখনই জীবন সঙ্গী নয়! সেতো বসন্তের কোকিল। যে প্রকৃত অর্থে জীবন সঙ্গী সে দুঃখ ও সুখ নির্বিশেষে সকল সময়েই জীবন সঙ্গী হতে চাইবে। এটাই বাস্তব সত্য।

আমাদের ইসলামিক শিক্ষার ক্ষেত্রে একটা স্পষ্ট একচোখা নীতি এবং সুবিধাবাদিতা আমি লক্ষ্য করেছি, হুজুর ও মুরুব্বীরা সুবিধা জনক আয়াত ও রেফারেন্স গুলো বেশী বেশী করে বলেন কিন্তু বেকায়দায় ফেলে দেয়া আয়াত গুলো চিকনে এড়িয়ে যান। যেমন বিয়ে-শাদীর কথা বললে সবাই ই রোজা রাখার কথা বলেন, অনেকেই বিজ্ঞের মতো ঐ হাদিসটি বলেন যেখানে রাসুল (সাঃ) বলেছেন “হে যুবকেরা তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে বিয়ে করবার, সে যেন বিয়ে করে। কেননা এটা দৃষ্টিকে নত রাখা ও গোপন অংগসমূহের হেফাযতের জন্য সবচাইতে কার্যকর। আর যে তা পারবে না, সে যেন সাওম পালন করে, কেননা এটা তার জন্য ঢাল স্বরুপ” [সহীহ বুখারী ৫০৬৫, সহীহ মুসলিম ১৪০০]

কিন্তু হযরত আবুহুরাইরা (রা) যখন রাসুল (সা) কে বললেন "হে আল্লাহর রাসুল, আমি একজন যুবক এবং আমি ভয় করি যে আমি হয়ত অবৈধ পথ বেছে নিতে বাধ্য হব কিন্তু আমার বিয়ে করার সামর্থ্যও নেই" তিনি [রাসুল (সাঃ)] চুপ থাকলেন। এই একই কথা চার বার বলার পর রাসুল (স) যে উত্তর দিলেন তা আমাদের হুজুর ও মুরব্বীরা ভুলেও বলেন না। রাসুল সাঃ বললেন "হে আবু হুরাইরা! তুমি কি করতে যাচ্ছ তা লিখে কলম শুকিয়ে গেছে। তুমি খাসি হয়ে যাও আর না যাও"[সহীহ বুখারী, ভলিউম ৭, অধ্যায় ৬২, হাদিস ১৩] । যখন রোজা রাখার কথা বলা হয় তখন পুরো দায়ভার ও ভোগান্তিটা আমাদের যুবকদের ঘাড়েই পড়ে। আমাদেরকেই চক্ষু বন্ধ করে হাটতে হবে, আমাদেরকেই রোজা রাখতে হবে, আমাদেরকেই যত ঝামেলা সইতে হবে, হুজুর ও মুরুব্বীরা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে মৌজ করে বেড়াবেন। কিন্তু যখনি হযরত আবুহুরাইরা (রা) এর কথা বলা হবে তখনতো তাদের ঘাড়েই বিশাল দায়িত্ব চেপে যায়। কি দরকার এত ঝামেলায় জড়ানোর?

এদিকে তারা সুরা নুরের এই আয়াতটি বলেন না “তোমাদের মধ্যে যারা একা ও নিসঙ্গ এবং তোমাদের গোলাম ও বাঁদীদের মধ্যে যারা সৎ ও বিয়ের যোগ্য তাদের বিয়ে দাও ৷ যদি তারা গরীব হয়ে থাকে , তাহলে আল্লাহ আপন মেহেরবানীতে তাদেরকে ধনী করে দেবেন, আল্লাহর বড়ই প্রাচুর্যময় ও সবজ্ঞ” হুজুর রা ও মুরব্বীরা প্রায়শই যুবকদেরকে ইমান তথা বিশ্বাস ও কর্মের তাফসীর শুনিয়ে কাহিল করে ফেলেন, কিন্তু তারা যুবসমাজকে অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজেরা কোন দায়িত্ব নেন না। এই হাদিসটাতে তাদের নিজেদের কতটুকু বিশ্বাস আছে তা হল এখন একটি গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন, যেখানে বলা হয়েছে তিন ব্যক্তিতে আল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন, ১ মুজাহিদ; ২ মুকাতিব ; ৩ আর পবিত্রতা রক্ষার জন্যে যে ব্যক্তি বিয়ে করতে চায়। ( দ্র তিরমিযি ১৬৫৫, সহীহ)

এদিকে ইব্রাহীম ইবন মায়সারা বলেনঃ তাউস আমাকে বলেছেন, “ হয় বিয়ে করো, নইলে আমি তোমাকে সেই কথাই বলবো যা উমার বলেছিলেন আবুল যাওয়ায়িদ কে, ‘দুইটা কারণ ছাড়া তোমার অবিবাহিত থাকার আর কোন কারণ দেখি না। হয় তুমি অক্ষম, নইলে অসচ্চরিত্র লোক”। এই কথা গুলো কেউ আমাদের বলেন না। কারন এগুলো বললে দায়-দায়িত্ব মুরুব্বীদের ঘাড়ে গিয়ে বর্তায়, কারন কুরান ও হাদীসের এই আয়াতগুলোর প্রায়োগিক দিকে গেলেই মুরব্বীরা ধরা খেয়ে যান। তখন যুবসমাজকে অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করতে তাদের দায়িত্বটাই প্রথমে আসে। যুবকদেরকে তাদের চরিত্র রক্ষায় সহযোগীতা করতে তাদের সঠিক সময়ে বিয়ের ব্যবস্থা করতে মুরব্বীদেরকেই কিছু ছাড় দিয়ে এগিয়ে আসতে হয়। যেহেতু এই ছাড়টা বেশ বড় ধরনের তাই তারা এগুলো ভুলেও উচ্চারন করেন না। এছাড়াও সাহাবীদের জীবনে একজন অপরজনকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছেন যেন অর্থিক টানপড়েনের অজুহাতে তাদের বিয়ে না ঠেকে যায়। কেউ অর্থ দিয়ে কেউ ছাড় দিয়ে সুযোগ সুবিধা দিয়ে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছেন। তাই তারা তাদের প্রজন্মের যুবকদের চারিত্রিক ধ্বশ কে ঠেকিয়ে সমাজে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পেরেছিলেন। আজ অনেকেই আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা, সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার স্লোগান দিয়ে রাজপথ কাঁপিয়ে হয়রান, তারা নাকি সমাজকে, দেশকে তথা গোটা বিশ্বকে বদলে দেবেন। অথচ তারা তাদের সেই যুবসমাজকেই রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন যারা যুগে যুগে প্রতিটি বিপ্লবের মাঝে প্রানসঞ্চার করে একেকটি নক্ষত্রোজ্জল ইতিহাস রচনা করেছে। এর চেয়ে কৌতুকপুর্ন কথন আর কি হতে পারে?
এইখানে আমি :)
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×