somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি

০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




রাজনীতিকে যদি একটি হিংস্র পশুর সাথে তুলনা করা হয়, ছাত্র রাজনীতি তার একটি থাবা মাত্র।
একেকটা ছাত্র সংগঠনের নাম শুনলেই কেমন যেনো একটা হিংস্র গোষ্ঠির নামের মতো লাগে !
(সব ধরনের রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন)


আমাদের মূল ধারার রাজনীতিইতো দুর্নীতি আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের দায়ে অভিযুক্ত।
যেখানে ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেই দুর্নীতিবাজদের মাধ্যমেই, সেখানে ছাত্ররাজনীতি থেকে ভালো কিছু পাওয়ার আশা কীভাবে করা যায়!


এদেশে ছাত্র রাজনীতি মানেই রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা মজবুত করা। ছাত্র রাজনীতি মানেই পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। অকালে তরতাজা প্রান ঝরে যাওয়া।
ছাত্র রাজনীতি মানেই চরদখলের মতো হলদখলের মহড়া।

কথাগুলো কোনো রাজনৈতিক সমাবেশের নিয়মিত বক্তব্যের মতো মনে হলেও বাস্তবতা তো এটাই।

ছাত্র রাজনীতি মানেই হচ্ছে লেজুরবৃত্তি। স্বার্থের আশায় একে অন্যের পা চাটা। ছাত্র রাজনীতি মানেই ছাত্রীদের মধ্যে চুলাচুলি; দিগম্বর করে অপমান করা। ছাত্র রাজনীতি মানেই ন্যায্য প্রতিবাদের ভাষা রোধ করে দেয়া। ছাত্র রাজনীতি মানেই বোমাবাজি, লুটপাট, চাঁদাবাজি, কথায় কথায় দলবদ্ধ হয়ে গাড়ি ভাংচুর করা। আর এই ভাংচুরের দায়িত্বে থাকে গরীব নিরীহ সাধারন ছাত্ররা। সাধারন ছাত্ররা রাজনীতিতে জড়ালেও বিপদ, না জড়ালেও বিপদ।

হলে থাকতে হলে অবশ্যই জড়াতে হবে।কি অদ্ভুত !!
ছাত্রদের কাজ পড়াশোনা করা। কিন্ত পড়তে গিয়ে দলবাজি কেনো?


আমাদের দেশে ছাত্ররাজনীতি জিইয়ে রাখা কি খুবই জরুরী?


একটা স্বাধীন সার্বভৌম গনতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দেশে ছাত্রদের কেনো পড়াশোনার পরিবর্তে রাজনীতি করতে হবে? বর্তমানে পৃথিবীর কয়টা দেশে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি চালু আছে? আমাদের প্রতিবেশী কয়টা দেশে ছাত্ররা পড়াশোনা বাদ দিয়ে রাজনীতি করছে? ভারতের মতো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গনতান্ত্রিক দেশেও ছাত্র রাজনীতি বলে কিছু নেই। তাহলে আমাদের দেশে কেনো এখনো ছাত্র রাজনীতি এতোটা জরুরী? ছাত্র রাজনীতি আমাদেরকে ভালো কি দিচ্ছে? ছাত্র রাজনীতির কারনে আমাদের শিক্ষাঙ্গন গুলো পরিনত হয়েছে বড় বড় রাজনৈতিক দল গুলোর ছত্রছায়ায় পালিত ছাত্র নামধারী কিছু সন্ত্রাসী’র অভয়ারন্যে। খুন, ধর্ষন থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই, যা এই সন্ত্রাসী-রা করে না। এই সব সন্ত্রাসী তৈরী করে আসলে কার লাভ হচ্ছে?



আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি সেই বিশ্বজিতের কথা।


‘বিশ্বজিত দাস’ নামের যে যুবকটি প্রতিদিনের মতো বাসা থেকে নিজের কর্মস্থলে যাচ্ছিলো, সে কি ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করছিলো মৃত্যুদূত তাঁর সামনে অপেক্ষা করে আছে! আর সেই মৃত্যুদূত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একদল ছাত্র। ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় দুর্বৃত্ত তাঁকে পিটিয়ে, কুপিয়ে পুরো শরীর রক্তাক্ত করে হত্যা করেছে। রক্তে পুরো শরীর জামাকাপড় ভেসে যাচ্ছে, সে করজোড়ে ক্ষমা চাইছে, বারবার বলছে, ‘আমি রাজনীতি করি না, আমি ছাত্রদল বা শিবির করি না, আমি হিন্দু…. আমি দরজিখানায় কাজ করি। এতোদসত্ত্বেও ছাত্রলীগের বীর পুঙ্গবেরা তাঁকে ক্ষমা করেনি। তাঁর সব আবেদন-নিবেদন, আহাজারি নিষ্ফল হয়ে যায় আক্রমণকারীদের নৃশংসতা ও বর্বরতার মুখে। সর্বশক্তি নিয়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। যখন বিশ্বজিত তাদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে কাছের হাসপাতালে যেতে চাইলো, তাতেও তারা বাদ সাধলো। ওরা তাকে চিকিৎসাও নিতে দেবে না। এ কেমন ছাত্র রাজনীতি? এ কেমন অমানবিকতা?

ছাত্রদের মন থাকবে উদার, মানবিক। তারা কেনো হিংস্র হতে যাবে?

ছাত্ররা যদি আইনের তোয়াক্কা না করে দিনদুপুরে এভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নির্দ্বিধায় করে বেড়ায়, দেশে আইন, সরকার, প্রশাসন পুলিশের কি প্রয়োজন? বিশ্বজিত দাস যদি ছাত্রদল কিংবা শিবির করতো, তাহলেও কি তাকে হত্যার অধিকার রাখে ছাত্রলীগ? কিংবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রবিউল ইসলামকে একমাত্র ছাত্রলীগ করার দায়ে নৃশংসভাবে হত্যা করার কোনো অধিকার রাখে ছাত্রদল? শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করার দায়ে কাউকে মেরে ফেলতে হবে? রাষ্ট্রের কাছে জবাব চাই।

জবাব চাই রাজনীতির কাছে। ছাত্রদের হাতে কেনো মানুষ মরবে? ছাত্রদের হাতে থাকবে বই কলম। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র কেনো তুলে দেয়া হলো? মানুষ মারার অধিকার তাদের কে দিলো?



পঞ্চাশ-ষাটের দশকে কেউ ছাত্র রাজনীতি করছে শুনলে মনে ভেসে আসে একজন মেধাবী, ইতিহাস- অর্থনীতি-সমাজ সম্বন্ধে সচেতন, নিষ্ঠাবান কোনো তরুণ বা তরুণীর ছবি। আজকে কেউ ছাত্ররাজনীতি করছে শুনলে মনে হয় একজন সন্ত্রাসী, মেধাহীন, পাঠশূন্য, টেন্ডারবাজের চেহারা।

কেনো বিশ্বজিত দাসকে এভাবে মরতে হলো? সেতো রাজনীতি করতোনা। তার গরিব মা-বাবা তাকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন জীবিকা অন্বেষণে।

ভাইয়ের সঙ্গে থাকতো বিশ্বজিৎ। নিজের মতো করে সে জীবিকা খুঁজেও নিয়েছিলো। তার স্বপ্ন ছিলো একদিন মা-বাবার আশা পূরণ করবে। আয় বাড়বে, নিজের সংসার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্নকে হত্যা করেছে জটিল, কুটিল ও নিষ্ঠুর এই ছাত্ররাজনীতি। ওরা জানে না, একটি মানুষ তো কেবল একটি মানুষ নন। সেই মানুষটির সঙ্গে থাকে তার পরিবার, তার স্বজন, তার স্বপ্ন। সবকিছু গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছাত্র নামধারী কতিপয় দুর্বৃত্ত। বিরোধী দলের অবরোধ ঠেকানো আর একজন নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষকে সাতসকালে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে মারা ভিন্ন কথা।


২০১৩ সালের ১২-ই জানুয়ারী কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা শিক্ষক লাউঞ্জে হামলা চালায়। এতে ৩০/৩৫ জন শিক্ষক আহত হন।

ছাত্রদের হামলায় শিক্ষক আহত?

মানুষ গড়ার কারিগর যাঁরা। লাঞ্ছিত হন আরো ৪০ জন শিক্ষক। নিজেদের ছাত্রকতৃক আহত শিক্ষক মহোদয়। এই লজ্জা কার?

ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক হবে মধুময় এবং সম্মানজনক। একজন ছাত্র তার শিক্ষককে রাস্তায় দেখামাত্র যথাযথ সম্মান প্রদর্শনার্থে সালাম,আদাব, শ্রদ্ধা বিনিময় করে বিনয়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলবে। কিন্ত হচ্ছে তার উল্টোটা। শিক্ষকরা ছাত্রদের দেখলে আত্মসম্মান রক্ষার ভয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। ছাত্রদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন শিক্ষকরা। ভার্সিটির ম্যাডামরা ছাত্রদের সামনে একা চলতে ভয় পান।
এইসব কিছুই কিন্ত ছাত্ররাজনীতির কুফল।

এর দু'দিন আগে বৃহস্পতিবার রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এ ছাত্র সংগঠনটি। এ সময় তারা মারধর করেই ক্ষান্ত হননি, শিক্ষকদের ওপর এসিড পর্যন্ত ছুঁড়েছে ওই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এর আগের দিন বুধবার মধ্যরাতে ছাত্রী হোস্টেলে প্রবেশ করে ইন্টার্নি চিকিৎসক ও ছাত্রীদের মারধর এবং কয়েকজনের শ্লীলতাহানিও করে নেতাকর্মীরা। মানুষ ভুলে যায়নি বি এম কলেজের অধ্যক্ষ ড. শঙ্কর চন্দ্র দত্তকে নিমর্মভাবে পিটিয়েছিলো এই দলের কর্মীরাই।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠা একটি ছাত্রসংগঠনের কর্মীরা কেনো ঘাতক হবে?

আমি সকল ছাত্রলীগ কর্মীদের সমানভাবে দোষারোপ করছিনা। ‘ছাত্রলীগ’ মানেই একদল খুনি চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ আর ধর্ষক নয়।
ছাত্রলীগের আদর্শ উদ্দেশ্য বর্তমান ছাত্রলীগের অধিকাংশ কর্মীর কর্মকান্ডের সাথে মিল নেই।

আমার ঘনিষ্ট পরিচয়ের এক বন্ধু ছাত্রলীগের ইউনিয়ন সভাপতি। দল থেকে অনুদান এনে গরীব মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দিতে দেখেছি। নিজের পকেট থেকে খরচ করে দলের সুনাম করতে দেখেছি। কোনোদিন প্রতিপক্ষের সাথে মারামারি কাটাকাটি করতে দেখিনি। দলমত নির্বিশেষে সবাই তাকে ভালোবাসে, পছন্দ করে। তারমতো কয়জন কর্মী আছে ছাত্রলীগে?


অবাক লাগে, সারা দেশে ছাত্রশিবির কর্মীরা সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে যখন গাড়ি ভাংচুর করছিলো, ইট পাটকেল দিয়ে সাধারন পুলিশদের আহত করছিলো, নিরীহ মানুষদের দোকানপাট গুঁড়িয়ে দিচ্ছিলো, জ্বালাও পোড়াও করছিলো, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো আইনী ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তাদের মিছিল ঠেকাতে পারেনি। মিছিল ঠেকানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগকে। আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা কামরুল, হানিফ টুকু সাংবাদিক সম্মেলনে চিৎকার করে বলেছিলেন, বিরোধী দলের আন্দোলন ঠেকাতে নাকি ছাত্রলীগই যথেষ্ট। এখন ঠেলাটা বুঝুন !!

ছাত্রলীগকেই কেনো ব্যাবহার করতে হবে ! ওরাতো ছাত্র। ছাত্রদের কাজ পড়াশোনা করা। রাজনীতির মাঠে ছাত্রদের মারামারি করতে হবে কেনো?

ছাত্রশিবির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যতটা বদনাম কুড়িয়েছে, এই একটি ঘটনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নামধারী সৈনিকেরা তার চেয়ে বেশি কুখ্যাতি লাভ করেছে। তারা নিজেরা ডুবেছে, আওয়ামী লীগকে ডুবিয়েছে, এমনকি ডুবিয়েছে সরকারকেও। তাদের সেইসব কর্মকান্ডে দেশে আজ সরকারের প্রতি মানুষের এতোটা অসন্তষ্টি অনাগ্রহ। সরকারি দলের ওই নেতাদের মনে থাকার কথা, ক্ষমতায় থাকতে একবার খালেদা জিয়াও বলেছিলেন, বিরোধী দলকে মোকাবিলায় তাঁর ছাত্রদলই যথেষ্ট। কিন্তু ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর সেই ছাত্রদলের টিকিটিও পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগও ক্ষমতা হারালে ছাত্রলীগের অবস্থা তার চেয়েও খারাপ হতে পারে বিচিত্র কিছু না।
১৯৭৫ সালের পর ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতা গর্তে লুকিয়ে ছিলেন। গর্তে লুকিয়ে ছিলেন ২০০১ সালের বিপর্যয়ের পরও।


রাজপথের খেলা বড় ভয়ংকর। এই খেলায় কে জিতবে কে হারবে বলা কঠিন। ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয়। এই আত্মঘাতী পথ দুই পক্ষকেই পরিহার করতে হবে। রাজনীতির রোষানলে ছাত্রদের ব্যাবহার করা বন্ধ করতে হবে।

ছাত্রশিবিরের হরতাল অবরোধে দোকানপাট কিংবা গাড়ি ভাংচুর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই মোকাবেলা করা উচিত ছিলো। প্রয়োজনে বিজিবি মোতায়েন করুন, র‍্যাব মোতায়েন করুন। কিন্তু একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঠেকাতে আরেকটি সন্ত্রাসী ঘটনার জন্ম দেয়াতো ঠিক না। হত্যার জবাব হত্যা নয়। জবাব হলো বিচার, আইনি ব্যবস্থা।

একটি হিংসার ঘটনা আরও নতুন হিংসার জন্ম দেয়। একটি ঘৃণা নতুন ঘৃণার জন্ম দেয়। রাজনীতিতে কি কেবলই ঘৃণার চাষ হবে? রাজনীতি কি কেবলই মানুষ হত্যার কায়দাকানুন শেখাবে?

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের আন্দোলন কী, আইনের শাসন কী—সে কথা হয়তো বিশ্বজিত সেদিন রাস্তায় নামার আগে জানতো না। সে জানতো, বেঁচে থাকাই গণতন্ত্র, মানবাধিকার। কিন্তু এখন গণতন্ত্রের নামেই দলীয় মাস্তানেরা তাঁর সেই অধিকার কেড়ে নিলো। সেদিন যারা রাজপথে অবরোধ পালন করেছে, রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করেছে, তারাও বলেছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এটি করা হয়েছে। আর যারা অবরোধকারীদের ঠেকাতে শান্তি মিছিল করেছে, তারাও স্লোগান তুলেছে, গণতন্ত্র রক্ষা করতে চাই। কিন্তু একজন বিশ্বজিত দাস কিংবা বিমানবন্দরের মোড়ের একজন দিনমজুর গণতন্ত্র কী, তা জেনে গেলো নিজেদের জীবন দিয়ে।


যেই ছাত্ররা দেশের কর্নধার... যেই ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যত। যাদের নিয়ে দেশ গর্ব করে, সেই ছাত্রদের হাতেই মরছে দেশের নিরীহ মানুষ। এভাবে আমাদের আর কত প্রাণ দিতে হবে? আর কত সম্পদ ধ্বংস হবে? আর কত মায়ের বুক খালি হবে? আর কত স্বজনের কান্নায় বাতাস ভারী হবে?

যাদের হাতে থাকবে খাতা আর কলম, তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। তাদেরকে বানানো হচ্ছে সন্ত্রাসী। তাদেরকে বোঝানো হচ্ছে প্রতিপক্ষকে আঘাত করো, তোমার ভবিষ্যত উজ্জ্বল।


একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি,

আমার এক বাল্যবন্ধু (জগন্নাথ ভার্সিটিতে ইকোনমিক্স শেষ বর্ষের ছাত্র) তার ক্লাসমেইটদের সাথে পরিচয় করাতে আমাকে নিয়ে যায় তাদের হলরুমে। আমার মনে আছে সেদিন তাদের ব্যাচে মৌখিক পরীক্ষা ছিলো। এই পরীক্ষার রিজাল্টের সাথে যোগ হবে বাৎসরিক উপস্থিতির উপর নির্ভর করে আরো দশ নাম্বার। পরীক্ষার হলে গিয়ে নিজ চোখে দেখলাম ছাত্রলীগ কর্মীদের সব পৈশাচিক কর্মকান্ড। একজন ছাত্র এসে বলছে, ম্যাডাম অমুক আমার ছোটভাই, ওকে বরাবর নাম্বার দিয়ে দেবেন কিন্ত। ম্যাডাম বললেন, আমি কাউকে চিনিনা, সবাই আমার দৃষ্টিতে সমানমানের ছাত্র, উপস্থিতির উপর নির্ভর করে নাম্বার দেওয়া হবে ব্যস। চোখ বড় বড় করে ছেলেটি বলল, আমাকে চেনো? (ম্যাডামের কোমরের কাপড় ধরে একটা হ্যাচকা টান দিয়ে) আমি ছাত্রলীগের অমুক (!) শাখার সভাপতি। আরো শুনলাম সারা বছরে এই ব্যাচের ছাত্রদের সাথে ঘটে যাওয়া অবর্ননীয় সব কাহিনী। এরা নাকি ছাত্র… এরাই জাতির মেরুদন্ড !!

এই ভার্সিটির ছাত্রদল এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিমাসেই চাঁদাবাজির মামলা হতো। পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কসংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডের ছয়টি বাস কোম্পানি থেকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ফটকের সামনে অবৈধভাবে বসানো লেগুনা স্ট্যান্ডের তিনটি লেগুনা কোম্পানি থেকে পৃথকভাবে চাঁদা তুলতো এরা। বর্তমান অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে হয়তো।

চাঁদা না দিলে গাড়ি ভাঙচুরের হুমকি দেওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়ে তাদের টাকা দিতে হয় ওদের। থানায় মামলা করেও কোনো লাভ নেই। ওদের হাত নাকি অনেক লম্বা।
কত লম্বা কে জানে!


দেশে ছাত্র রাজনীতির আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কী?

আমি বলবো নেই।
হ্যাঁ আপনি যুক্তি দেখাতে পারেন তাহলে মুর্খরা দেশের রাজনীতির মসনদ দখল করে নেবে। দেশ চলবে মুর্খ অশিক্ষিতদের নেতৃত্বে।

আমি বলি কী,
ছাত্রজীবন শেষ করে রাজনীতিতে প্রবেশ করুন না। সমস্যা কোথায় !!

সব ছাত্রই কি রাজনীতি করে? নিশ্চয়ই না। রাজনীতি সবার জন্য আসেনি।
কেউ কেউ অজপাড়া গাঁ থেকে মেধার সনদ নিয়ে এসে ভর্তি হয় ঢাকা অথবা চট্টগ্রামের নামীদামি ভার্সিটিতে। হল ক্যান্টিন কিংবা গেটের পাশের ছাপড়া হোটেলে বন রুটি, কলা খেয়ে কোনোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যায়।
উদ্দেশ্য একটাই... পাশ করে বাবা মা’র মুখ উজ্জ্বল করা, সংসারের দায়িত্ব নেয়া।


এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা রাজনীতি করতে এসে নিজের ছাত্রত্বকে বলি দিয়ে সার্টিফিকেট না নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। আবার কেউ কেউ নিজের জীবন উৎসর্গ করে লাশ হয়ে ঘরে ফিরে পিতামাতার কোল ফাঁকা করেছে। ছাত্র রাজনীতি অনেকের জীবনেই হয়েছে অভিশাপ কিন্তু আশির্বাদ হয়েছে কয়জনের সেটা আমার জানা নেই। আর এই অভিশাপকে মুক্ত করতে ক্ষমতাসীন সরকারসহ সকল রাজনৈতিক দলকে ছাত্র রাজনীতির সুফল-কুফল বিশ্লেষণ সাপেক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এর প্রয়োগ নিয়ে সুবিবেচনার প্রয়োজন এসেছে। এমন সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তই বাঁচাতে পারে একজন অভিভাবকের স্বপ্ন, একজন শিক্ষার্থীর জীবন এবং সুন্দর স্বপ্নময় ভবিষ্যত।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে তখনকার পুলিশ বাহিনীর সহযোগিতায় ছাত্রলীগের ক্যাডাররা যেভাবে গনহারে সাধারণ ছাত্রদের পিটিয়ে হল ছাড়া করেছিল সেই আতংক এখনো জগন্নাথ হলের সাবেক সেই ছাত্ররা ভুলতে পারেনি। এখন সামান্য কারনেও সেই হলে পুলিশ গিয়েছে শুনলে অনেকেই সেদিনের স্মৃতিতে চলে যায়। হ্যাঁ, হল ছাত্রদের পিতৃসম্পত্তি নয়,সাময়িক ভাবে থাকার সূযোগ মাত্র।

সেই রাতে শত শত ছাত্রদেরকে পিটিয়ে হল ছাড়া করা হয়েছিলো। হল থেকে বিতাড়িত হয়ে ওরা কোথায় রাত কাটিয়েছিল?
তাদের পড়ার বইটুকু কি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে রাস্তায় বসেও পড়তে পেরেছিলো কিনা তা জননেত্রীর মনে উদয় হয়েছিলো?

সাধারণ ছাত্ররা পড়ে একাডেমিক পুস্তক, এমন দেহ কাঁপানো পুস্তক পড়ার জন্য তারা গ্রামের ভিটেমাটি বিক্রি করে শহরে আসেনা। জগন্নাথ হলে সেই রাতে সাধারন ছাত্রদের উপর হামলার পরদিন দেশে কয়টা হরতাল পালিত হয়েছিলো তা জানা নেই। তবে এখন অনেক ছাত্রের গায়ে সেই আঘাতের চিহ্ন প্রতিদিন হরতাল পালন করে মনে।

আমরা প্রচলিত ছাত্ররাজনীতি চাইনা। আমরা আমাদের ছাত্রদের হাতে কলমের বদলে আগ্নেয়াস্ত্র দেখতে চাইনা।
কলুষিত ছাত্ররাজনীতির বিষাক্ত ছোবলে আর কোনো ছাত্রের জীবন অকালে ঝরে পড়ুক আমরা চাইনা।
আমরা চাই একটি শিক্ষিত প্রজন্ম। যারা শিক্ষার আলোয় আলোকিত করবে সমাজ, পুরো দেশ।

কোনো পিতামাতা-ই একজন সন্ত্রাসীর পিতামাতার পরিচয় চান না। প্রত্যেক পিতামাতা তার সন্তানের জন্য গর্বিত হতে চান।

একজন মেধাবী ছাত্র সুন্দরভাবে পড়াশোনা শেষ করে মায়ের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দিয়ে মায়ের কাছে দোয়া চাইবে।
আনন্দ অশ্রুতে ছেলের কপালে চুমু খাবেন গর্ভধারিনী মা...
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৩৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×