somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেসকল কারনে কুমিল্লা নামেই কুমিল্লা বিভাগের নামকরন করা উচিৎ-পর্ব-০১ঃ কুমিল্লার নামকরনের ইতিহাস ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব

১০ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কুমিল্লা জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভৌগলিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে কুমিল্লা জেলার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রকাশিত হচ্ছে আমার ধারাবাহিক প্রতিবেদন।
আজ থাকছে ১ম পর্ব।


কুমিল্লা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। যার আদিনাম কমলাঙ্ক এর অপভ্রংশ, যার অর্থ পদ্মফুলের দীঘি। উপজেলার সংখ্যানুসারে কুমিল্লা বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণিভুক্ত জেলা।

কুমিল্লা প্রাচীনকালে সমতট জনপদের অংশ ছিল। ১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন খান ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে এর সমতল অংশ সুবাহ বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ত্রিপুরা দখল করে। ১৭৬৯ সালে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে কোম্পানী একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। তখন ঢাকা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল কুমিল্লা। কুমিল্লাকে ১৭৭৬ সালে কালেক্টরের অধীনস্থ করা হয়। ১৭৯০ সালে কোম্পানী শাসনামলে ত্রিপুরা নামের জেলার সৃষ্টি হয় করা হয়। তৎকালে বর্তমান কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, শাহবাজপুর, হাতিয়া, ত্রিপুরার কিছু অংশ, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও মীরসরাই নিয়ে সমতল অঞ্চল নিয়ে ত্রিপুরা জেলা ও পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে পার্বত্য ত্রিপুরা নামে ভাগ করা হয়, এই জেলার সদর দপ্তর স্থাপিত হয় কুমিল্লায়। ১৮২১ সালে ত্রিপুরা জেলাকে ভাগ করে বর্তমান নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর নিয়ে ভূলুয়া জেলা গঠিত হয়, যা পরবর্তীতে নোয়াখালী নামকরন করা হয়। ১৯৬০ সালে সদর দপ্তরের নামানুসারে ত্রিপুরা জেলার নামকরণ করা হয় কুমিল্লা এবং তখন থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর পদটির নামকরণ জেলা প্রশাসক করা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লার দু'টি মহকুমা চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পৃথক জেলা হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়।

কুমিল্লা নামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত মত রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযাগ্য চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত থেকে। তার বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া নামক যে স্থানের বিবরণ রয়েছে সেটি থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শন‍াদি থেকে জানা যায় খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা গুপ্ত সম্রাটদের অধিকারভুক্ত ছিল।

ত্রিপুরা কিভাবে কুমিল্লা হলো সে বিষয়ে নানারূপ গালগল্প এবং কিংবদন্তির প্রচলন রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে দুর্বল-সবল সবরকমই রয়েছে। তাকে মানা-নামানার ক্ষেত্রে তর্ক-বিতর্কের যথেষ্ট ফোকর ও ভিত্তিও রয়েছে। কথিত আছে যে, চৌদ্দশ শতকের কথা, আহমেদ কবির-এর ভাগ্নে হযরত শাহ্ জামাল। এই শাহ্ জামাল ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এতদঞ্চলে আসেন। তিনি যখন যাত্রা করেন, তখন তার মামা আহমেদ কবির তাকে একমুঠো মাটি দিয়ে আদেশ করেন, যেথাকার মাটির রং, গন্ধ এবং স্বাদ এই মাটির সাথে হুবহু মিলে যাবে; সেই স্থানটিকেই যেন শাহ্ জামাল তার ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র হিসাবে গ্ৰহণ করেন। এই আজ্ঞাত্ৰত নিয়ে তিনি বহু বন, পাহাড়, সমভূমি অতিক্রম করেন এবং স্থানে স্থানে মামার দেয়া মুষ্টিমৃত্তিকার সাথে মাটির রং, গন্ধ, স্বাদ মেলাতে থাকেন। শেষপর্যন্ত বর্তমান কুমিল্লা শহরের পূর্বনিকটস্থ গাজীপুর মহল্লার খিলাতলী নামক স্থানে উপস্থিত হন। ভাগ্যবশত এখানকার মাটির-রং-গন্ধ-স্বাদের সাথে তার মামার দেয়া মাটির ঐ ত্ৰিবিধ গুণের মিল লক্ষ্য করা যায়। বহু কষ্টে এই এলাকা পাওয়া মাত্ৰই অনেকটা আবিষ্কারের প্রচেষ্টায় সফল হবার আনন্দে হযরত শাহ জামাল ‘কোহ মিলা-কোহ মিলা’ বলে আনন্দে চিৎকার করে ওঠেন। যার অর্থ ‘কাজিখত পাহাড় (বা উচ্চভূমি) পাওয়া গেছে’। এই “কোহমিলা’ থেকেই নাকি এলাকার নাম রাখা হয় “কোহমিলা’। আর কোহমিলা হতেই কালপরম্পরায় কুমিল্লা” শব্দটির উৎপত্তি ঘটে। কোহমিলা > ক্যোমিলা > কোমিলা >কুমিলা > কুমিল্লা।
অন্য কিংবদন্তি অনুসারে কুমিল্ল নামক একজন শাসকের নামানুসারে এ এলাকার নাম কুমিল্লা হয়। তিনি ষোল শতকে হােসেন শাহ-এর গৌরাধিপতি আমলে, যখন ত্রিপুরার শাসনকর্তা ছিলেন ধনমনিক্য, এই সময় উক্ত কুমিল্ল শাসক হিসাবে এঅঞ্চলে বসতি গড়ে তোলেন। এমনও জানা যায় যে, এই কুমিল্ল’ শাসক নয়, সেনাপতি ছিলেন।
এ ধরনের আরো কিংবদন্তির প্রচলন আছে যে, দেব ও চন্দ্ৰবংশীয় রাজা পূৰ্ণচন্দ্র লালমাই পাহাড়ে একটি রাজ্যের পত্তন করেছিলেন। যা বর্তমান কুমিল্লার নিকটবর্তী। এইভাবে দ্রুপিয়ান কলিংসও একদা কামালঙ্ক’ নামে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই হেতুতে ধারণা হলো এই কামালঙ্ক’ থেকেই ‘কুমিল্লা” নামটির উৎপত্তি হয়ে থাকবে। আরো একটি উপকথার মাধ্যমে জানা যায়, এ অঞ্চলে টিপরা (পরে উচ্চারণ পরম্পরায় ত্রিপুরা’ হয়) রাজার স্ত্রীর নাম ছিল “কমলা’। কুমিল্লা” শব্দটি উৎপত্তির মূল বা মা-শব্দ এই ‘কমলা’।


এমনও লোককথা আছে যে, জনৈক ‘করিমুল্লা” নামে এক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি তৎকালের এই পাড়াগ্রাম-এ বাস করতেন। তিনি ছিলেন পাড়াগ্রামটির অধিনায়ক। তৎকালীন শাসন কাঠামোয় পদসোপানপ্রণালীতে এটি ছিল সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও সম্মানজনক পদ।। ধারণা করা হয় তিনি তার নামানুসারে উক্ত পাড়াগ্রামের নামকরণ
করেন ‘কুমিল্লা”।
আরো কিছু তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। সেগুলো হলো : বাংলাদেশের পূর্ব অঞ্চলের প্রাচীনকালীন নাম ছিল “কিয়াতস’। কুমিল্লা নামটির প্রাচীনত্বের দিক দিয়ে গৌরবসমৃদ্ধ মনে করার স্পষ্ট ঐতিহাসিক সামাজবাস্তবতা রয়েছে। কমলাঙ্ক নামটির উৎপত্তি বিষয়ে প্রত্নতাত্বিক ও ভাষাতাত্বিক পণ্ডিতেরা কেউ কেউ এমনও মনে করেন যে, কুমিল্লা জেলার দক্ষিণাংশের সাথে প্রাচীনকালে কলিঙ্ক রাজ্যের সংশ্ৰব ঘটেছিল। এখানে দ্রাবিড়ভাষীর কলিঙ্গরা একটি রাজ্যের গোড়াপত্তন করে নিজেদের গোষ্ঠীগত নামে তারই নাম দিয়েছিল “কমলিঙ্ক’ । এই নামটি পরে ‘কমলাঙ্ক’ এবং আরো পরে কুমিল্লা’র রূপ ধারণ করে।


কুমিল্লা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম একটি জেলা।
যার আছে সমৃদ্ধ ইতিহাস।
ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন এই জেলার নাম।
যে নামের সাথে মিশে আছে হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
তাই এই নামটিকে চাইলেই ঐতিহাসিক কারনে কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এই গৌরবান্বিত কুমিল্লার নামেই তাই বিভাগের নামকরন বাঞ্চণীয়।
কথায় আছে, "কুমিল্লা এগোলে এগোবে বাংলাদেশ।"
বাংলাদেশের অগ্রসরমান এই জেলার নাম বাদ দিয়ে অন্য নামে বিভাগের নামকরন করা হলে তা শুধুমাত্র ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও ঐতিহ্যকে অস্বীকার হবেনা বরঞ্চ জাতি হিসেবে আমাদের সংস্কৃতি ও নিজস্বতাকেই অস্বীকার করা হবে।
তাই কুমিল্লার আপামর জনসাধারনের প্রাণের দাবির সাথে আমিও একমত হয়ে কুমিল্লা নামে কুমিল্লা বিভাগের নামকরনের জোর দাবি জানাচ্ছি।

একে একে বিভিন্ন পর্বে তুলে ধরা হবে কুমিল্লার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ভৌগলিক ও যোগাযোগ সম্পর্কিত গুরুত্ব।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন ইতিহাস বিষয়ক জার্নাল
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×