মনের মধ্যে সবসময়ই বর্ণার একটা শঙ্কা কাজ করে। সবকিছুতেই তার মনে হয় যেন তার ভুল হচ্ছে। বারবার জিজ্ঞেস করে সবাইকে এটা কি ঠিক, ওটা কি করা ঠিক হচ্ছে? অন্যদের কাছ থেকে সাজেশান ছাড়া কোন কাজ করেছে বর্ণার মনে পড়ে না। ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে জিজ্ঞেস করতো বাবা এটা কি ওটা কি, বাবা আমি কি ভুল করছি। বাবার খুবই ভরসার সাথে জবাব থাকতো আমার মেয়ে কখনও ভুল করবে না। শুধু একটা ব্যাপারেই বর্ণা তার বাবার কাছে জিজ্ঞেস করে নি, আদনানের ব্যাপারটায়। ফ্রেন্ডরা বলেছে, আদনান ভাল ছেলে কাজেই ওকে না করার কোন মানে নেই। বর্ণার কয়েকবার মনেও হয়েছে বাবাকে বলি। কিন্তু আদনান বলেছে না এখন না। সময় আসুক তোমার-আমার বাসায় জানানো যাবে। এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেছে তাদের ভার্সিটি লাইফ।
এরই মাঝে বর্ণার বাবা মারা গেলেন হঠাৎ করেই, বর্ণার মা মেয়ের বিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। বর্ণা একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ঢুকেছে সবেমাত্র। আদনান একটা প্রাইভেট ব্যাংকে তাও খুব আহামারী কিছু না। কোনমতে নিজের চলে তবে বিয়ে করার মত অবস্থা আদনানের না। বর্ণা তারপরও আদনান কে বলল, বাসা থেকে লোক পাঠাতে বিয়ের ব্যাপারটা ঠিক করা থাক বিয়ে না হয় কিছুদিন পরেই হবে।
বর্ণাদের সাথে আদনানদের সামাজিক বা আর্থিক অবস্থানের বিশাল পার্থক্য। আদনানের বাবা একজন গ্রামের স্কুলের শিক্ষক। ওদিকে আদনানের চাকরিটাও ভাল না। বর্ণার মায়ের রাজী হবার কোন কারণ নেই। তিনি সরাসরি না বলে দিলেন আদনানের বাবাকে।
আদনানের প্রচন্ড আত্নসন্মানে লাগল। সে বর্ণাকে বলল, তাকে বিয়ে করলে কালই করতে হবে নয় তো সে যেন তার মায়ের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে ফেলে। বর্ণা কোনকিছু না ভেবেই বলল, ঠিকাছে। কালকে আমি বাসা থেকে চলে আসবো।
ফোন রাখার পর থেকে প্রতিটা মুহূর্ত বর্ণার বারবার মনে হচ্ছে বাবা তুমি কোথায়। আমি কি ভুল করছি? আমাকে একটি বার বলে যাও তোমার মেয়ে ভুল করতে পারে না। সারাটা সন্ধ্যা বর্ণা অন্ধকারে বারান্দায় বসে থাকল সেদিন। মা বাসায় নেই, মামার বাসায় গেছে কোন ছেলে জার্মানী থাকে তার পারেন্টসের সাথে কথা বলতে।
রাতে প্রতিটা সেকেন্ড তার কেবলই মনে হতে লাগল, আদনান যদি কালকে না আসে। আদনান কি মায়ের সাথে সহজ হতে পারবে....... মা কি কখনো আমাকে ক্ষমা করতে পারবে......... আমি কি মায়ের থেকে চিরদিনের মত দূরে চলে যাচ্ছি........আমি কি ভুল করছি.....আদনান যদি কাল না আসে......এক ফোঁটা ঘুমাতে পারল না বর্ণা রাতে।
সকাল ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হবার সময় মায়ের বিছানার উপর একটা চিঠি রেখে বাসা থেকে বের হয় গেল বর্ণা। পথে যেতে যেতে বারবার মনে হতে লাগল....ফিরে যাই...মা কি আমাকে ক্ষমা করবে.....
...........৫বছর পর....বিভিন্ন কারণে বর্ণাদের গত ৫বছরে দেশে আসা হয় নি।.... ওরা দেশে ফিরেছে ১সপ্তাহ। মায়ের বাসায় এসেছে ২দিন এরই মাঝে বর্ণার ছেলের সাথে মায়ের বেশ খাতির হয়ে গেছে। নানী আর নাতনী সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। নাহ বর্ণা ভুল করে নি।
( কি ভাবছেন? বর্ণা কি তবে আদনানকে বিয়ে করেনি? তাই না?? বর্ণা বিয়ে আদনানকেই করেছিল। বর্ণার মাও ব্যাপারটাকে মেনে নিয়েছিলো মাসখানেকের মধ্যে..... এরই মাঝে আদনান অস্ট্রেলিয়াতে একটা ভাল সুযোগ পায়....তারপর ওরা ওখানেই চলে যায়। )

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




