somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এরশাদ সাহেবের কবিতা ও তার চুরি

১১ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মরহুম হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সাহেবকে চিনে না এমন কেউ এই ভূ-বাংলাদেশে আছে বলে মনে হয় না । ১৯৮১ থেকে অদ্যাবধি তার কর্ম ও তার ফল আমরা আজও ভোগ করছি। তাই অনেকেই তাকে পছন্দ বা অপছন্দ করে । আমি অপছন্দই করি । তবে আমার মুল অপছন্দের কারণ অবশ্যই রাজনীতি নয় । সেটা হল তার কবিতা চুরি ।

এরশাদ সাহেব ক্ষমতা দখল করার পর যেই তার মনে হয়েছে উনি ঠিকঠাক দাড়াতে পেরেছেন , সাথে সাথেই তার ভিতরে এক কবিসত্তার জন্ম নিল , তারপর থেকে উনি কেজির দরে কবিতা লিখা শুরু করলেন । তখনকার সময় তার কবিতা বেশ ঘটা করে দেশের সবকটি দৈনিকের প্রথম পাতায় বাধ্যতামূলকভাবে ছাপা হতো । যদি বাই চান্স কোন সম্পাদক তার কবিতা না ছাপাতো সাথে সাথে সেই পত্রিকা তার ব্ল্যাক লিষ্টে চলে যেতো । আর ফলাফল ? মাত্রই অনুমেয়


এই বিষয়ে কেউ টু শব্দ না করলেও একজন সাহসী সাংবাদিক জাহাঙ্গীর হোসেন একটা প্রশ্ন করে ফেলেন। তাদের এই প্রশ্নোত্তর পর্ব বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় আজো প্রবাদতুল্য হয়ে আছে। এক সংবাদ সম্মেলনে সবাই জেনারেল এরশাদকে রাজনীতিক প্রশ্ন করতে করতে বিরক্ত বানিয়ে ফেলছিল । এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর হোসেন উঠে দাঁড়িয়ে জেনারেল এরশাদকে বললেন,

"মে আই আস্ক ইউ এ নন-পলিটিক্যাল কোয়েশ্চেন"?
.
তিনি মাথা ঝাকালেন।
.
"আপনি ক্ষমতায় আসার আগে কেউ জানতো না আপনি একজন কবি। এখন সব পত্রিকার প্রথম পাতায় আপনার কবিতা ছাপা হয়। পত্রিকার প্রথম পাতা তো খবরের জন্য, কবিতার জন্য নয়। বাংলাদেশের প্রধানতম কবি শামসুর রাহমানেরও তো এই ভাগ্য হয়নি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনার কবিতা প্রথম পাতায় ছাপানোর জন্য কী কোন নির্দেশ জারি করা হয়েছে?"
.
জেনারেল এরশাদের পাশে বসা তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আর এস দোহা বললেন, 'শামসুর রাহমান ইজ নট দ্য সিএমএলএ (প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক)।
.
জেনারেল এরশাদ তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে থামিয়ে দিয়েন বললেন, আমি দেশের জন্য এত করি, এটুকু কি আপনি দেবেন না আমাকে?
.
সাংবাদিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন - প্রশ্ন করার অধিকার আমার, উত্তর দেয়ার অধিকার আপনার। কিন্তু আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেননি। আমার প্রশ্নটি হচ্ছে..(প্রশ্নটি আবার করলেন)
.
এবার জেনারেল এরশাদ বললেন, "আপনি যদি চান, আর ছাপা হবে না।"
.
এরপর পত্রিকার প্রথম পাতায় জেনারেল এরশাদের কবিতা ছাপা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে কবিতা লেখা ছাড়েননি। তার কবিতা প্রথম পাতা থেকে চলে গিয়েছিল ভেতরের পাতায়। তবে এর পরিণাম ভোগ করতে হয়েছিল জাহাঙ্গীর হোসেনকে।


তার কবিতা ছাপানোর ঘটনা এখানেই শেষ না । এরশাদ সাহেব কবিদের নিয়েও আর একটা কবিতার ক্লাবও বানিয়ে ছিলেন । রোজ বঙ্গভবনে তার কবিতা পাঠের আসর বসতো । সেখানে এরশাদ সাহেব স্বরচিত কবিতা পাঠ করতেন এবং জ্বী হুজুর কবিরা মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে তাকে সাধুবাদ জানাতেন । বলতেন আপনার কবিতা বাংলা কাব্যে নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে । আপনি হেন তেন । তার মানে আপনি বহুত কিছু ।


কোথা থেকে এক সামরিক শাসক এসে কবিদের সম্রাট বনে গেল তা কবি মোহাম্মদ রফিকের সহ্য হলো না। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তিনি লিখলেন 'খোলা কবিতা'। টনক নড়লো নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। ডাকা হয় তাকে সামরিক সদর দপ্তরে। মোহাম্মদ রফিকের নামে জারি হয় হুলিয়া ।

একদিন প্রয়াত আহাম্মদ ছফাকে বাংলা একাডেমীর এক তৎকালীন কর্মকর্তা একটা গান দেখালেন। গানটির লেখক ছিলেন সুরেন্দ্রলাল ত্রিপুরা। এই ভদ্রলোক রাঙ্গামাটিতে উপজাতীয় একাডেমির একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি একটি কবিতা লিখেছিলেন যা পরে গানে রুপান্তর করা হয় , সে গানটির প্রথম পংক্তি ছিলো
.
নতুন বাংলাদেশ গড়বো মোরা নতুন করে আজ শপথ নিলাম।
.
এই গানটি উপজাতীয় একাডেমি থেকে প্রকাশিত বার্ষিক সংকলনটিতে ছাপা হয়েছিল ।
.
ছাপা হতেই পারে ? তো ? তো হচ্ছে কি , এই গানটি প্রতিদিনই রেডিও টেলিভিশনে গাওয়া হতো এবং এর রচয়িতা হিসেবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম দেখানো হত ! আহাম্মদ ছফা ভাবলেন বেটারে জুতা পিটা করা উচিত । কিন্তু মার্শাল ল যুগে কাজটা এত সহজ ছিল না। তিনি প্রচলিত পদ্ধতির বাহিরে হাঁটলেন। তার কথাটি তিনি কাগজে ভিন্ন আঙ্গিকে ছাপান।
.
"সুরেন্দ্রলাল ত্রিপুরা দেশের রাষ্ট্রপতি গীতিকার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গান চুরি করে উপজাতীয় একাডেমির বার্ষিক সংকলনে ছেপেছে। সুতরাং সুরেন্দ্রলাল ত্রিপুরার শাস্তি হওয়া উচিত"
.
আর এটাই স্বাভাবিক । যদি লিখা হত , এরশাদ সুরেন্দ্রলাল ত্রিপুরার গান চুরি করেছে। তাহলে আহমদ ছফা পত্রিকাটি তার শেষ প্রকাশিত সংখ্যা হত আর আর পেনাল কোডের কোনো না কোনো ধারায় তাঁকে চৌদ্দ শিকের আড়ালে যেতে হতে পারতো ।
.
আমার সংগ্রহীত তথ্য এতটুকু। এরপরে কি হয়েছিল এ ব্যাপারে কেউ জানলে জানাবেন।
.


সময়ের নির্মম পরিহাসে খুব স্বাভাবিকভাবে উনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। কিন্তু তার কর্ম/অপকর্ম সবই স্থায়ী। এগুলো কেউ ভুলে যায় না । যাবে না।
.
শান্তনু চৌধুরী শান্তু. এডভোকেট
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:৫৭
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×