somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্থহীন এবং নতুন মাত্রা

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সচরাচর আমি লিখতে পছন্দ করিনা। যেদিন লিখতে বসি সেদিন আর কিছুই করি না। আজকে অনেকদিন পর লিখতে বসেছি। কারণ ইদানিং কিছুই ভালো লাগছে না। শুধুই নিজেকে অকৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে। এলআরবি খ্যাত আইয়ুব বাচ্চু ইদানিং একটা কমেন্ট করেছেন। কমেন্টটি ছিল এইরকম,

"ব্যান্ড মিউজিকে নতুন মাত্রা যোগ করেছি আমরা- এলআরবি, মাইলস, নগর বাউল, সোলস, ফিডব্যাক, ওয়ারফেইস, রেনেসাঁসহ কয়েকটি ব্যান্ড। এখন যোগ করছে আর্টসেল, ব্ল্যাক- অর্থহীন না। হতে পারে অর্থহীন ভাল ব্যান্ড।" - আইয়ুব বাচ্চু

আমি উনাকে হেয় করে কিছু লিখতে বসি নাই। অথবা, কাঁদা-ছোঁড়াছুড়িও করতে আসিনি।
আমি শুধু মনে করিয়ে দিতে এসেছি, শুধু আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে এসেছি, অর্থহীন কিভাবে ব্যান্ড মিউজিক দ্বারা এদেশে একটি নতুন প্রজন্ম তৈরিতে সাহায্য করছে।

বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল কথায় যাওয়া যাক। অর্থহীনের সর্বশেষ অ্যালবাম অসমাপ্ত-২ এর গানগুলো কি পরিমাণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেটা সবারই জানা। কিন্তু প্রত্যেকটা গানের ভাবার্থ যে স্বকীয়ভাবে অর্থহীনকে-ই/আমাকে-ই/আপনাকে-ই/সবাইকে-ই প্রকাশ করছে সেটা কি সবার জানা? এখানে আমার প্রশ্ন, “আমার মত এই প্রজন্মের একজন যুবক দেশের একটি প্রথম সারির ব্যান্ডদলের কাছ থেকে তাদের সদ্য রিলিজ পাওয়া এ্যালবাম থেকে সর্বোচ্চ কি আশা করতে পারে? যে কিনা মেটালিকা, মেগাডেথ এর গানও মাঝে মাঝে শুনে।”
আমি জাস্ট চেয়েছিলাম আমার সময়/মুহূর্তগুলো যেন আমি গানের মত করে শুনতে পারি।

আমি আমার আশার থেকেও শত, সহস্র, অজুত গুণ বেশি কিছু পেয়েছি এই এ্যালবাম থেকে। আমার সবচেয়ে দুঃসময়, অফুরন্ত সুসময়, চিলিং টাইমে অথবা ফুরফুরে মেজাজে, রোমান্টিসিজমে, এলোমেলো মুহূর্তগুলোতে, ভাবুক সময়গুলোতে, এবং প্রচণ্ড রাগ-জমাটবাঁধা সময়ে, এমনকি যখন উৎসাহ-সাহস দেওয়ার কত কেউ পাশে থাকে না তখনও আমি পাশে পাই এই অসমাপ্ত-২ কে! সর্বোপরি অর্থহীনকে!
কোন ফিলিংসে কোন গানটি সবচেয়ে পারফেক্ট লাগে সেটা যারা অর্থহীনের গান শুনে তারা সহজেই বুঝতে পারবে!

সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছে? বাজে সময়ের সম্মুখীন? দুঃসময়ে যখন আমি ক্লান্তপ্রায় তখন আমায় ছায়া দেয়, আমায় শক্তি দেয়, আমার মধ্যে পুনরায় উদ্যম ফিরিয়ে দেয় – “যাক না”
যদি ভাবো কখন হবে শেষ আঁধার এই দিনের
যদি ভাবো কখন শুনবে সুর নতুন এক গানের
যদি হারাও স্বপ্নগুলো সব আকাশের নীলে
যদি ঝরে বৃষ্টি এই চোখে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে

রাফা’র কণ্ঠে “আবার” শুনলেই আমার দুঃখরা পালিয়ে যায়, অন্ধকার পথগুলো সব আলোকিত হয়ে যায়, নতুন নতুন স্বপ্ন আমায় বাঁচার উৎসাহ দেয়! আর শরীরের রক্তকণিকা-গুলোতে নাচন শুরু হয়ে যায়। উইদাউট এনিথিংস আই গট ফিলিংস, চিলিং, হাইনেস এন্ড এভ্রিথিং!
জানি ছিলো অতীতটা তোমার
চারিদিক ছড়ানো অন্ধকার
ছিলোনা কেউ পাশে এসে, হাতটা তোমার ধরার

কিন্তু চলে যাবে সব কিছু আজ
যখন ভাঙ্গবে ঘুমটা আজ তোমার
দেখবে তুমি আজ আমায়, হাসছি আমি দাঁড়িয়ে

মাঝে মাঝে বসন্তের, ফাগুনের অথবা, বর্ষার বিকেলে যখন হঠাৎ করে রোমান্টিকতা হৃদয়ে আছড়ে পড়ে তখন আমরা সফট/রোমান্টিক গান-ই শুনি বা শুনতে পছন্দ করি। “আকাশের তারা”র লিরিক্সটা একবার মন দিয়ে শুনলে রোমা-আন্টি (রোমান্টিক-ভাবনা) আমার মন-মাথা-শরীরে ভর করে অথবা বলতে পারেন আছর করে! আমি তখন শুধুমাত্র-ই প্রেমিক, প্রেম-ই যার ধর্ম। প্রেম কর, নতুবা ছেঁকা খাও! ছেঁকা খাইছ, আবার প্রেম কর!

শেষ বিকেলের আলো যখন চলে যাবে
যখন ছুটি নিবে গোঁধূলী, তুমি কোথায় রবে?
দিক ভ্রান্ত যখন কেউ নেই পাশে
তখন যদি হাতটা বাড়াই
তুমি কি তা ছুঁবে?

যদিও পিওর ভালবাসার ফিলিংস নিতে চাইলে অর্থহীনের অন্য এ্যালবামের কিছু গানের স্বাদ নিতে হবে।
“আমার প্রতিচ্ছবি”, “তুমি” বিবর্তন এ্যালবামের এই গানগুলোকি বাংলা ভাষায়(শুধু-ই ব্যান্ড সংগীতে না) কোনো নতুন মাত্রা যোগ করেনি?

রাতের আকাশ ভরা তারা
হয়তো বা চলে যাবে
থাকবো হয়ে আমি শুকতারা
শীতের সকাল গাছের পাতা
হয়তো বা ঝরে যাবে
থাকবো হয়ে আমি নীল আকাশ।
“আমার প্রতিচ্ছবি”- বিবর্তন

আমার এ গান শুধু তোমায় নিয়ে
আমার এ মন শুধু তোমায় ভাবে
তবু কেন তুমি কাঁদো
এইতো আমি চেয়ে দেখো
তুমি আসলে আবার অন্যরূপে
তুমি বাসলে ভালো আমারে।
“তুমি”- বিবর্তন
সহজ বাংলা-য় এরচেয়ে সুন্দর প্রেম নিবেদন আর কি হতে পারে? মন যখন আরও কঠিন রোমান্সে যেতে চায় তখন শুনতে হয় অসমাপ্ত-১ এর “যদি কোন দিন”
যদি কোন দিন হঠাৎ করে পড়ে মনে
আমার লেখা গানগুলো যা ছিল তোমার জন্যে,
যদি ভুলের বশে শুনতে ইচ্ছে করে
আমার গাওয়া গানগুলো যা ছিল তোমায় নিয়ে।

নিঝুম রাতে যখন পৃথিবী ঘুমিয়ে
তুমি মনের ভেতর শুনো গান চুপটি করে,
কেউ জানবে না যে ঘুমন্ত শহরে
তুমি ভাবছো বসে আমার কথা প্রতিটি মূর্হুতে।
“যদি কোন দিন”- অসমাপ্ত ১
আমি এক অধ্যায় থেকে আরেক অধায়ে চলে যাচ্ছি! অর্থহীন একটা বিষয়, একটা ধারা, নিজেই নতুন একটা মাত্রা। আমি এখানে জাস্ট “অসমাপ্ত-২” অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করছি।

মাঝে মাঝে যখন আমার প্রচণ্ড মন খারাপ থাকে, উড়তে ইচ্ছে করে, কোনো কিছুতেই মন বসে না তখন শুনি “উড়ু উড়ু মন”। রাফা’র ব্যাকআপ ভয়েজ আমায় আন্দোলিত করে। এক কথায় অসাধারণ একটা গান। স্পিকারে লাউডলি শুনলে বেশি ভালো লাগে।

আজ আকাশের মন খারাপ ফিরবে না বাড়ী
কাঁদছে সে সকাল থেকে সব নিয়েছে আড়ি
সময় আর অসময়ে কাঁদে সারাক্ষন
আমি উড়ে বেড়াই নিয়ে উড়ু উড়ু মন

এই গানটা স্পিকারে কয়েকবার লাউডলি শুনলে একটা সময় একটা নেশার মতন লাগবে, একটা সময়ে মগজে বারে বারে রিপিট হতে থাকবে “আমি উড়ে বেড়াই নিয়ে উড়ু উড়ু মন” “আমি উড়ে বেড়াই নিয়ে উড়ু উড়ু মন” “আমি উড়ে বেড়াই নিয়ে উড়ু উড়ু মন”!

“আনমনে” গান দিয়ে অর্থহীন আরেকটা নতুন মাত্রা যোগ করেছে বাংলা গানে। আমার মত যারা অর্থহীন ভক্ত তারা “আনমনে-২” গানটা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারে নাই। কারণ হতে পারে “আনমনে” গানটার অসম্ভব শ্রোতাপ্রিয়তা। এরপরেও “আনমনে” বাংলা গানে নতুন একটা ধারা। অস্বীকার করা যায়?

মেঘের ঐ দেশে কি হারাও
আনমনে আজও
বৃষ্টির ঐ ছোঁয়াতে কি আমায়
খোঁজো এখনো

“সূর্য-২”, “ক্যান্সার”, “নিকৃষ্ট-২” এই গানগুলি কি বাংলা ব্যান্ড-সংগীতে নতুন মাত্রা এনে দেই নি? আমরা যারা মেটালিকা, মেগাডেথ, গান্স এন্ড রোজেস এর বেজের তালে মাতাল হয়ে কিছুই না বুঝে সব-বুঝার স্বাদ পায় তারা জানি বেস/বেজ-বাবা নামটার মমার্থ।

“গল্পের শুরু (অদ্ভূত সেই ছেলেটি)”, অথবা, “অদ্ভূত সেই ছেলেটি”, “অদ্ভূত সেই ছেলেটি ২” এই সিরিজের গানগুলির কথা আমি কিছুই বলবো না। শুধু গাইবো
জোঁছনায় অজানা পথে চলা
এখানে আছে যে মোর ভালোবাসা…

আমার পার্সোনালি মনে হয় এভাবে স্পেসেফিকলি ভ্যারাইটি দিয়ে কোন বাংলাদেশি ব্যান্ড কোনো নতুন কমিউনিটি তৈরি করতে পারে নাই। একমাত্র অর্থহীন'ই এই মাত্রা/ক্রাউড/ক্রেজিনেস নতুনভাবে যুক্ত করেছে বাংলা ব্যান্ড মিউজিকে।

সো “কিপ কালম এন্ড লাভ অর্থহীন” B-)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×