somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“ভাল মুভি”------- দুই ক্যাডেটের গল্প।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চীফ অফিসার দুই ক্যাডেটকে ডেকে বলল “ফাকেন ক্যাডেটস!! আমাকে কিছু ভাল মুভি দিবা আজকে সন্ধ্যার আগে।না হলে খবর আছে। ইটস ওকে!!”
ক্যাডেট দুজন মাথা নাড়ার সাথে সাথে “ইয়েস স্যার” বলে চিৎকার করল।( ক্যাডেট রায়ান ইঞ্জিন ক্যাডেট এবং জায়ান ডেক ক্যাডেট। ভবিষ্যতের ইঞ্জিনিয়ার এবং অফিসার হবার স্বপ্নে বিভোর।তারা একই প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁশ করে সি টাইম করার জন্য আগে পরে এই জাহাজে জয়েন করেছে।)
তারা জাহজের এক চিপায় বসে আলাপ করছে চীফ অফিসারকে কি কি মুভি দেয়া যায়।
রায়ান বলল “শোন লেটেস্ট সব ইংলিশ মুভি দিয়া আসি”
ঠিকাছে বলে সম্মতি জানাল জায়ান।
সন্ধ্যায় জায়ান মুভি গুল চীফ অফিসারকে দিয়ে আসল। পরের দিন চীফ অফিসার সকালে ঘুম থেকে উঠে দুই জনকে ডেকে ঝাড়ি দিয়ে বলল “ এই সব তোমাদের কাছে ভাল মুভি ??? একটাও পুর দেখতে পারি নি। ভেরি পুওর চয়েস। লিসেন বয়েজ আজকের মধ্যে যদি ভাল মুভি নাই পাই !!! ইওর লাইফ উইল বি হেল!! নাউ গেট লস্ট!!”
দুই ক্যাডেট খুব চিন্তায় পরে গেল। ভাল মুভি বাছাই করা যে কি পেইন ফুল তা হাঁরে হাঁরে টের পাচ্ছে।
জায়ান “শোন দোস্ত স্যার মনে হয় বড় মুভি প্রেমিক। ইন্টেলেকচুয়াল টাইপের মুভি দ্যাখে। অস্কার বিজয়ী মুভি খুঁজে বের করে দিয়ে আসব???”
“ট্রাই করে দেখতে পারিস। সব চেয়ে ভাল হয় তুই একবার ডিটেইলস জিজ্ঞাসা কর। হিন্দি বাংলা তামিল ঠিক কোন ধরণের মুভি সে দ্যাখে”। -রায়ান
ডিউটি শেষ করে ক্যাডেটদ্বয় বিশাল সিডির আড়ত (অফিসার স্মোক রুম) থেকে খুঁজে খুঁজে এওয়ার্ড উইনার ছবি খুঁজে বের করল।
জায়ান “দোস্ত তুই তো অন্য ডিপার্টমেন্টের । আজকে তুই মুভি গুলো দিয়া আস আর জিজ্ঞাসা করিস আসলে কোন ধরনের মুভি স্যার লাইক করে”
রায়ান একটু বিরক্ত হল কিন্তু দোস্তের কথায় যুক্তি আছে ।সে চিল্লা পাল্লা করলেও তাকে পানিশমেন্ট দিতে পারবে না। বড় জোড় ফাস্ট ইঞ্জিনিয়ারকে কমপ্লেইন করবে। আর ফাস্ট ইঞ্জিনিয়ার এসবের ধার ধারে না।ওয়াইফ নিয়ে সেইল করছে । ডিউটি শেষে কেবিনে যাওয়ার তাগিদে থাকে।
ডিনার করে চীফ অফিসারের রুমে গেল সে।
“স্যার আসব”
“ইয়েস কাম ইন”
“স্যার কিছু মুভি নিয়ে এসেছি।জানিনা ভাল লাগবে কিনা।খুব ভাল হয় আপনার পছন্দ একটু ডিটেইলস বললে”
“ডিটেইলস কি বলব। ইউ নো গুড মুভি।এনি থিং। এন্টারটেইনিং, আন কমন।দেখে সময় পাস করা যায়”
“না মানে বাংলা-ইংরেজি-হিন্দি। আজকাল অনেকে তামিল মুভিও দেখে স্যার”
“আই ডোন্ট মাইন্ড বাংলা তামিল হোয়াট এভার।এনি গুড মুভি।মুভি গুল টেবিলের উপর রেখে হাওয়া হয়ে যাও”
পরের দিন সকালে ব্রেক ফাস্টের টেবিলে জায়ানকে দেখা গেল না।বোসানের কাছে থেকে রায়ান জানতে পারল খুব ভোর থেকে তার দোস্তের ডিউটি চলছে।নরমালি এমন হবার কথা না। কোন কারনে চীফ অফিসার তার উপর খেপেছে তাই পানিশমেন্ট চলছে।
তিন চারদিন পর দুই দোস্তের আলাপ চলছে।
“কিরে দোস্ত চীফ অফিসার তোর উপর খ্যাপল কেন?”
“আরে বলিস না।অনেক প্যাড়ার উপর আছি। সারা দিন দৌড়ের উপর রাখে। মনে হয়ে মাথায় একটা বারি দিয়ে দেই”
“আরে ক্ষ্যাপিস না। দুই চারদিন পর ঠিক হয়ে যাবে। কোন কারনে মেজাজ খারাপ তাই তোর উপর ঝারছে।ইদানিং আমাকেও সহ্য করতে পারে না। দেখলেও ঘেউ ঘেউ করে।দেখিস না এখন আর মুভিও দেখে না।আগে সব সময় ভাল মুভি চাইত। এখন আর চায় না।”
সন্ধ্যার সময় ডেক ক্যাডেটকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।অনেক খোঁজা খুঁজির পর তাকে এক ক্রুর রুমে পাওয়া গেল।
রায়ান “ কিরে ? তুই এখানে কি করিস।আমি সারা জাহাজ খুঁজে মরছি”
জায়ান খিল খিল করে হাসছে। “দোস্ত মেজাজ অনেক খারাপ।একটা আকাম করে আসছি। আজকে সকাল স্যার বলে আমরা নাকি কোন কামের না। কিছু ভাল মুভি চাইছে দিতে পারি নাই। ওনার ক্যাডেট লাইফে উনি নাকি সবাইকে ভাল মুভি সাপ্লাই দিতেন। আজকে কিছু দুই নম্বর সিডি দিয়া আসছি। ব্যাটার আচ্ছা শিক্ষা হবে।জীবনে আর ক্যাডেটদের কাছে ভাল মুভি চাইবে না। যে কোন সময় ডাকতে পারে। তাই এখানে লুকাইয়া আছি। তুই একটু খোজ খবর নে। বেশি বিপদ দেখলে জানাস। তবে যাই হোক অনেক শান্তি পাচ্ছি। অনেক দিন ধরে জ্বালাতন করছে”
চীফ অফিসারের ডাকের অপেক্ষা করতে করতে জায়ান ঘুমিয়ে গেল।ভোঁরেও চীফ অফিসারের ডাক এল না। নরমাল কল পেয়ে একটু অবাক হল সে। কাজের সময় চীফ অফিসারকে দেখা গেল খুব শান্ত মেজাজে। আজকে তেমন চিল্লাফেল্লা করছে না। সারাদিন ভয়ে ভয়ে কাটল। কোন দুর্ঘটনা ঘটল না। রায়ান সময় পেলেই আপডেট জানছে।কিছু হচ্ছে না দেখে সেও চিন্তিত।কোন বড় ধরণের একশন হবে কিনা ভাবছে।
রাতে দুই ক্যাডেট এর ডাক পড়ল। দুই জন আগে থেকেই প্লান করে রেখেছে কি কি বলবে। তারা আগে মুভি গুল দেখে নাই ,সিডির উপর কিছু লেখা ছিল না দেখে বুঝতে পারে নাই, নেক্সট টাইম নিজেরা কোন মুভি না দেখে তাকে দিবে না ইত্যাদি।
চীফ অফিসার “দেখেছ পানিশমেন্টের নাম বাবাজী। এখন ঠিকই ভাল মুভি পেয়েছ। আগেই দিয়ে দিলে কি আমি এরকম করতাম।আরো ভাল মুভি পেলে আমাকে দিয়ে যাবে।আবার যেন বলতে না হয়”

দুই মাস পরের ঘটনা। স্থান কাপ্তান সাহেবের কেবিন। দুই ক্যাডেটের বিচার চলছে।বিচার করবেন কাপ্তান সাহেব।বিবাদি ফাস্ট ইঞ্জিনিয়ার।আর উপস্থিত আছেন চীফ ইঞ্জিনিয়ার সাহেব এবং চীফ অফিসার সাহেব।
মামলার বিবরণ “ফাস্ট ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেটদের কাছে কিছু ভাল মুভি দিতে বলেছিল। তারা দাঁত কেলায় বেশ কিছু অশ্লীল সিডি দিয়ে আসছে। ভাগ্যিস বউকে নিয়ে দেখার আগে সে নিজে চেক করছিল। তা না হলে বউয়ের সামনে প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যেত”
কাপ্তান সাহেব “ ঘটনা কি সত্য!!”
ক্যাডেটদের কোন জবাব নেই।
“তোমারা কি ইচ্ছা করে এসব করছে”
“না স্যার”
“তাহলে এইসব মুভি কেন দিয়েছে?”
“জী মানে স্যার। স্যার কিছু ভাল মুভি চাইছিল”
“হোয়াট দা ফাঁক।চীফ ইঞ্জিনিয়ার সাহেব শুনছেন বেয়াদব দুইটা বলে কি?ভাল মুভি চাইছে আর উনারা অশ্লীল মুভি দিয়ে আসছে। উনাদের কাছে ভাল মুভি মানে ঐসব মুভি। আমাদের ক্যাডেট লাইফে আমরা জিবনেও এমুন মুভি দেখি নাই। আর এরকম বেয়াদবি করার সাহসও পাই না। কত্ত বড় সাহস । দুইটাকে আজকেই জাহাজ থেকে নামাই দিব।এই বেয়াদব । লুক এট মি। ভাল ছবি মানে এইসব কে শিখিয়েছে তোমাদের?”
দুই ক্যাডেট করুন চোখে চীফ অফিসারের দিকে তাকিয়ে আছে।
একটু কাশি দিয়ে চীফ অফিসার বলল “স্যার আমি আগে থেকেই জানতাম এই দুইটা বজ্জাতের হাড্ডি।নিজেরা সারাক্ষন এইসব মুভি দেখে তাই ভাবছে সবাই বুঝি তাদের মত বদ। ডোন্ট অরি স্যার এই দুইটা কে আমার হাতে ছাইরা দেন। দেখেন এক সপ্তাহের মধ্যে মানুষ বানায় দিব”
বিচারের রায় - চীফ অফিসার দুই ক্যাডেটকে “মানুষ” না হওয়া পর্যন্ত টেক কেয়ার করবে।টাইম টুঁ টাইম কাপ্তান সাহেবকে প্রগ্রেস রিপোর্ট দিবে।

দুই সপ্তাহ পর। রায়ান/জায়ান ভয়াবহ চিন্তায় নিমগ্ন????একটু আগে স্টুয়ার্ড জানিয়ে গেছেন “কাপ্তান সাহেব কিছু ভাল মুভি দিতে বলেছে”


১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×