somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অথৈ সাগরে জাহাজে ভুত : :-B

১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চীফ কুকের আতঙ্ক
জাহাজের কাপ্তান আর চীফ ইঞ্জিনিয়ার ব্রেক ফাস্টের জন্য অফিসার মেষ রুমে ঢুকল। কোন এক বিষয় নিয়ে মজাদার আলাপ হচ্ছিল। দুজনেই হাসছে । নাস্তার টেবিলে বসার পর স্টুয়ার্ড নাস্তার অর্ডার নিচ্ছে।'
ঠিক এই সময় চীফ কুকু কাচু মাচু করে টেবিলের পাশে এসে দাড়াল। "স্যার আসসালামু-আলাইকুম"
অলাইকুমুসসালাম চীফ কুক। কেমন আছেন? চোখ লাল কেন ? ঘুম হয় নি !!! নাকি রাতে ড্রিঙ্ক করেছেন?"
"না স্যার। কি যে বলেন ।আমি কখন ওইসব খাই না। তবে রাতে স্যার ঘুমাইতে পারি না।"
"বাসায় কোন সমস্যা কিংবা কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত !!?"
"স্যার সেরাম কিছু না। তবে একটা সমস্যা আছে । কিন্তু ক্যামনে বলি বুঝতে পারছি।"
চীফ ইঞ্জিনিয়ার হেসে বলে"আরে মিয়া চোখ বন্ধ করে বলে ফেলেন। কোথাও প্রেমে ট্রেমে পড়েন নি তোঁ "?
চীফ ইঞ্জিনিয়ার ক্যাপ্টেন দুজনেই হেসে ফেললেও চীফ কুকের দুহচিন্তার কোন কমতি দেখা গেল না।
অতপর ক্যাপ্টেন তাকে নাস্তার পর তার অফিসে দেখা করতে বলল। কোম্পানিতে কিছু এক্সিডেন্ট হবার পর থেকে ফেটিগ, ক্রু অয়েল ফেয়ার নিয়ে অনেক জল ঘোলা হচ্ছে। কোন কিছুকেই তুচ্ছ করা ঠিক না।
ক্যাপ্টেন সাহেবের অফিসে চীফ কুক আসল । সাথে এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আনল। কফি ক্যাপ্টেন সাহেবের মেজাজ ঠান্ডা করে। এই তথ্য চিফ কুক আর স্টুয়ার্ড ভাল করেই জানে।
ক্যাপ্টেন ফোন করে চীফ ইঞ্জিনিয়ারকেও ডেকে নিল।
"হুম এবার বলেন আপনার ঘটনা"
চীফ কুক খুব লজ্জিত ভাবে শুরু করল। মাথা নিচু করে বলতে থাকে "স্যার জাহাজে ভুত আছে!!!"
বছর দুই আগে জাহাজে একজন ক্রু মারা গিয়েছিল। তারপর থেকে ভূতের অনেক কল্পকাহিনী শোনা যায়। কিন্তু এটা কেউ প্রশ্রয় দেয় না। তাহলে জাহাজ চালানোই লাটে উঠবে।
ধমকের শুরে ক্যাপ্টেন বলে উঠল" এই সাত সকালে আপনার ফাইজলামো ভাল লাগল না। বাচ্ছা পোলাপানের মত কথা বলেন না। আপনার অনেক বয়স হয়েছে। আপনি জানেন ভূত বলতে কিছু নেই"
"স্যার বিশ্বাস করেন অনেক দিন ধরে খেয়াল করছি। কিন্তু আপনারা ভুল বুঝবেন বলে বলি নাই। কিন্তু আসলেই কিছু একটা আছে।" বলেই চীফ কুক তাকে মোবাইলে একটা ছবি দেখাল। আস্ত খাসীর রান বেসিনে
ডি ফ্রস্ট করার জন্য রাখা। এবং খাসীর রানের এক পাশের অনেক খানি মাংস নেই। মনে হচ্ছে কেউ কামড়ে কামড়ে খেয়েছে।"
"স্যার আমি রাতে ঘুমানোর আগে পরের দিনের মাছ মাংস ডীপ ফ্রিজ থেকে বের করে রাখি। আস্তে আস্তে বরফ গললে মাংসটার স্বাদ ভাল হয়। কিন্তু প্রতিদিন সকালে যেয়ে দেখি এমন করে মাংস খাওয়া। এক দুই দিন না স্যার।
প্রায়ই এরকম হয়। রাতেও কেউ রান্না করে না । আমি সবাইকে জিজ্ঞাসা করেছি। তাছাড়া প্রতিদিন তোঁ কেউ রান্না করে না। করলেও মাঝে মধ্যে করে। এমনকি লবিতেও রেখে তালা মেরে দেখেছি। ঐখানেও এরকম হয়"

ইমার্জেন্সি এক্সিট অন্ধকার
জয়েনিং এর প্রথম দিনেই দেখলাম ইঞ্জিন রুমের ইমার্জেন্সি এক্সিটের একটা ভাল্ব ফিউজ। ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ারকে বললাম " থার্ড ইঞ্জিনিয়ারকে বোলো নতুন একটা ভাল্ব লাগিয়ে দিতে" । কিছুদিন পরে
আবার দেখলাম লাইট টা জ্বলছে না। বিরক্ত হয়ে বললাম "ব্যাপার কি ? লাইট চেঞ্জ করা হয় নি কেন?" ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ার কাচুমাচু করছে। আমি তাকে অভয় দিলাম । "কি হয়েছে আমাকে বল। সার্কিটে সমস্যা নাকি
হোল্ডারে সমস্যা। যদি কোন কাজ না পার আমাকে জানাবে। আমি সব সময় হেল্প করার জন্য রেডি।" জবাবে ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ার যা জানাল তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।
সে জানালে ঐ লাইট টা লাগালেই একদিনে ফিউজ হয়ে যায়। আর ঐ স্পেসে ক্যামন জানি একটা হিস হিস শব্দ আসে। একা কেউ যেতে ভয় পায়। একটু বিরক্ত হলেও হেসে দিলাম। আজকাল
তোমরাও ভুতের ভয় পাও। জাহাজিদের থেকে বড় ভুত পৃথিবীতে আছে নাকি?" পরের দিন সব লোকবল নিয়ে ঐ স্পেসে ঢুকলাম। সব ফায়ার ডোরের সিল চেঞ্জ কয়ালাম। আমার ধারণা ডোরের কোথাও লিক আছে।
তাই বাতাস আসা যাওয়ার হিস হিস শব্দ পাওয়া যায়। শব্দটা আমিও প্রায় শুনেছি। লাইটের পুর সার্কিট চেঞ্জ করে দিলাম। সাপর্টের উপর নতুন আরেকটা পাত ওয়েল্ডিং করে দিলাম, যেন ভাইব্রেশনে
লাইট ফিউজ না হয়ে যায়। সারা দিনের খাটুনীর পর নতুন লাইট জ্বেলে ইমার্জেন্সি এক্সিটের দরজায় দাঁড়িয়ে আছি। ঠিক এই সময় একটা দমকা হিম শীতল বাতাসের ঝাঁপটা আমাদের ছুঁয়ে গেল।
সেই সাথে পুর ইমার্জেন্সি এক্সিটের সব লাইট গুলো নিভে গেল।


মিষ্টি ভুত

আশিকের দিন এখন ভালই যাচ্ছে । ব্যস্ততার মাঝে প্রতিদিন নতুন বিয়ে করা বউয়ের ৪/৫ টা ইমেল অনেকটা চাতক পাখীর প্রতিদিনের বৃষ্টিপাতের মত। প্রথম দিকে এমন ছিল না।
দু তিনটা মেইল করলে একটা মেইলের উত্তর দিত তাও এক লাইনের। হঠাত করে সে সুন্দর সুন্দর মেইল দেয়া শুরু করল। এর মধ্যে একটা মেইল এত ভাল লেগেছে যে সে প্রিন্ট করে
রুমে টানিয়ে রেখেছে। প্রতিদিন অসংখ্য বার সেই মেইল পরে। একদিন ক্যাপ্টেন তাকে জানাল -ওর বাসা থেকে খবর এসেছে জরুরী ভাবে ফোন করার জন্য। আশিক একটু ভয় পেয়ে
গেল । বাসায় তারাতারি ফোন করল। ফোন ধরেই মা অনেক কান্নাকাটি করল । কতদিন তার ছেলের কোন খোঁজ খবর নাই। ঘরে নতুন বউ তাকেও তোঁ একটা খবর দিতে পারত। কিছুই
বুজল না আশিক। সে বউকে চাইল। বউ খুব অভিমান করে আছে। "কেমন মানুষ তুমি ?!! একটা ফোন না কর মেইল তোঁ দিত পার। " আশিক বলে " তুমি আমার মেইল পাও না ?"
উত্তর শুনে বউ রেগে বলে" আমাকে করলে তোঁ আমি পেতাম। কি জানি তুমি কাকে মেইল কর ?!! " আশিক ফোন রেখে মেইল বক্স খুলে। অবাক কান্ড মেইল বক্সে কোন মেইল নাই।
তারাতারি কেবিনে গেল । সেখানে তার বউ এর সেই মেইল টা টানিয়ে রেখেছে। টানানো কাগজটা পূর ফাঁকা। শুধু এক কোনে প্রিন্ট করে লেখা "মিষ্টি ভুত" !!!!

অপরিচিত


পরপর কয়েকটি ঘুর্ণিঝড় এবং খারাপ আবাহাওয়ার কারনে কানাডার ভেঙ্কুবার থেকে আসতে দিন পাঁচেক দেরি হয়েছে । কোরিয়া পৌছানোর আগের দিনও সমুদ্রের উত্তাল ভাব বেশ ভুগিয়েছে। পোর্টে পৌছে সবাই যারযার মত ব্যস্ত।
বার্থিং এবং ডিসচাআর্জ ফরমালিটি ছাড়াও স্টোর, স্পেয়ার ,খাবার দাবার , বিভিন্ন ধরনের বার্তষারিক সোর বেজড ইন্সপেকশন এর কারনে অনেক লোকের আনাগোনা চলছে । আইএসপিএস এর বদৌলতে সকল বহিরাগতের গলায় ঝুলছে
ভিজিটর আইডি কার্ড । ঠিক এমনি সময় নজরে এল বৃদ্ধ শীর্নকায় এক দর্শানার্থীর । রংহীন ধূসর কাপড়ের উপর পাতলা এক জ্যাকেট গায়ে উদ্দ্যেশ্যহীন ভাবে ইঞ্জিন রুমে ঘুরে বেড়াচ্ছে । সাধারণত আগতরা ইঞ্জিনরুমে এসে কন্ট্রল রুমে চলে
আসে এবং তার আগমনের কারন ব্যাখ্যা করে অনুমতি চায় । কিন্তু এই লোকের মধ্যে সে রকম কোন আগ্রহ দেখা গেল না। ধীরস্থির ভাবে ইঞ্জিন রুমের বিভিন্ন ফ্লোরে ঘুরে বেড়াচ্ছে । আসে পাশের কাউকেই সে গ্রাহ্য করছে না।
তাকে কন্ট্রল রুমে ডেকে নিয়ে আসা হল। খেয়াল করে দেখা গেল তার গলায় নেই কোন ভিজিটর আইডি।
"এক্সকিউজ মি !! আপনি কি কাউকে খুঁজছেন ?"
একটি দুর্বল ক্ষীন কণ্ঠস্বর ভেসে এল দূর থেকে "বতস আমি তোমাকেই খুঁজছি।"
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৫২
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×