somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিশাল শাহরিয়ার
ভালোবাসা কেমন আমার জানা নেই, জানা নেই কিভাবে কি হলে ছোঁয়া যায়। আমি শুধু জানি আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় নি। আরো অনেকটা পথ একা একা হেটে যেতে হবে। ক্লান্ত হয়ে থেমে যাবার আগে শেষবারের মত ছুঁতে চাই, তোমার অনামিকা জুড়ে একটা অভ্যাস হয়ে থাকতে চাই, ব্যাস।

অবসান

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"এক"

অনু পাশের ঘরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে, মাঝে সাঁঝে ফোঁপানর মৃদু শব্দ বারান্দা পর্যন্তও আসছে । রিভলিং চেয়ারটা ছেড়ে খুব সাবধানে ওঠার চেষ্টা করলাম, হলো না । বরাবরের মত বৃদ্ধ চেয়ার তার করুন দশা জানিয়ে ক্যাঁচক্যাঁচ করে উঠল । বিরক্ত হলাম, তবে সেই বিরক্তি অনুর ওপর পড়ে যাওয়া বিরক্তির থেকে বেশি কিনা বুঝতে পারলাম না । প্যাকেটের শেষ সিগারেটটা ঠেঁটে চেপে শেষবারের মত ভাবতে বসলাম । বিয়ের দুমাসের মাথায় এরকমটা ঠিক মানায় না, সত্যিই না ।

অনুর সাথে আমার পরিচয় বিয়ের ঠিক ছ মাস আগে । ইন্টারভিউ বোর্ড, এম.ডি সাহেবের বিশেষ অনুরোধে প্রথমবারের মত বোর্ডে বসতে হল । পাশে ইন্টারভিউ এসপেশালিস্ট ফরিদ সাহেব আর গম্ভীর জামান সাহেবকে বসিয়ে মনে মনে একচোট হেসেই নিলাম। কতই না নাকাল হতে হয়েছে এই যমদূতগুলোর কাছে । কতশত আজব আজব প্রশ্নেরই না জবাব দিতে হয়েছিল আমাকে । রংপুরের ইন্টারভিউটাতো আমার আজীবন মনে থাকবে । এল.জি.আই.ডি এর চমৎকার অফিসটায় সকাল দশটায় হাজির হয়ে চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার যোগাড় । যতদূর জানি এই দশটা পোষ্টের ইন্টারভিউ এর জন্যে একশ জনকে ডাকা হয়েছিল । অথচ এখানে কারো টিকিটির ছায়া নেই । অবাক হওয়ার সাথে একটু স্বস্তি বোধ ও কাজ করছিলো । এই ফাঁকে চাকুরীটা হয়ে গেলে নিজের একটা গতি হয় । ঘণ্টা খানেক অপেক্ষার পরও যখন কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না, অগত্যা আমকেই এগুতে হল রিসিপসন এর দিকে । একজন পিয়নের পিছন পিছন হাজির হলাম ইন্টারভিউ বোর্ডে । বেশ হাশিখুশি এবং একই সাথে অপ্রস্তুত পেটমোটা একজন মানুষ বসে আছেন, থেকে থেকে পানের পিকও ফেলছেন । একদেখাতেই সার্কাসের ভাঁড় হিসেবে অনায়াসে উতরে যেতে পারবেন । কেন যেন মনে হচ্ছিল ভাঁড় হলেই হইচই ফেলে দিতেন সারা দেশে ।

‘জাহিদ মাহমুদ?’

‘ইয়েস স্যার’

‘বসুন’

‘বয়স ছাব্বিশ, বিয়ে করেছেন ?’

‘না স্যার’

‘কটা বাচ্চা নেয়ার প্লান ?’

‘জি স্যার ?!’

‘বাচ্চা বোঝেন না, বাবু বাবু, কটা নেবেন ?’

‘ঠিক করিনি স্যার’

‘ঠিক করে রাখবেন বুঝেছেন । খুব দরকার । দেখেন না বিয়ে করেছি মাত্র দশ বছর, পাঁচটা নিয়ে হুলুস্থুল কারবার । ঠিকমত কিছু গুছিয়ে করে উঠতে পারি না বুঝলেন । হা কপাল’

ভদ্রলোক এমনভাবে কথা বলছেন যেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এর এই পোষ্টটার সর্বপ্রথম যোগ্যতাই হল হালি দুয়েক হাউমাউ করতে থাকা বাচ্চাকাচ্চা ।

‘আমি আসি স্যার’

‘আসবেন ? হ্যাঁ আসুন, আর যা বললাম খেয়াল রাখবেন । দরকার হলে আমার পরিচিত এক ডাক্তার আছে, নাম্বারটা নিয়ে যান’

আমি পেছন ফিরে চলে আসলাম । দরজায় দাড়িয়ে পিয়নটা ফিকফিক করে হাসছে ।
‘ভাইজান কিছু বোঝেন নাই ?’

‘কি ?’

‘সত্যই কিছু বোঝেন নাই ?’

‘আরে ! কি বুঝব ?’

‘আরে ভাইজান সব এইটা এইটা’ বলে হাতের বৃদ্ধাআঙ্গুলি আর তরজনি ঘষে দেখালও পিয়ন ।

না দেখালেও হয়ত চলত । এসব ব্যাপার বেশ পরিষ্কার বোঝা যায় । তারপরই সরকারি চাকুরীর মায়া ঠেলে প্রাইভেটে ঢুকেছি । বেশ আছিও । আর এখন তো সেই যমদূতগুলোর একজন । কতজনকে যে নাকাল হতে হবে এই হাতে তাই ভেবে আরেকচোট হেসে নিলাম । এরকম সময়ে অনুর নক । নাহ, তাকে দেখে আহামরি কিছু মনে হয় নি, সাধারণ ক্যান্ডিডেট । ইন্টার্ভিউ এ মোটামুটি উতরে চাকুরীটা পেয়ে গেল, লাকি মেয়ে । এবং লাকিলি আমার আন্ডারে ইন্টার্নিতে যোগ দিলো । ছমাসের ইন্টার্ন, কাজটা ঠিকমত শিখে নেবে আর কি ।

জয়েন করার দু মাস খানেক পর হবে হয়ত । সারা রাত নিরার সাথে প্রচণ্ড ঝগড়া করে লাল লাল চোখ নিয়ে কেবিনে ঢুকছি । এরকম ন্যাকু ন্যাকু মেয়ের সাথে ক্যান যে প্রেম হল, কে জানে ! হ্যাঁ বললে না ভাবে, না বললে হ্যাঁ । আজিব তো !

কেবিনে ঢুকতেই সিনেমাটিকভাবে অনুর সাথে ধাক্কা লেগে গেল, পড়তে পড়তে ওকে ধরে সামলে নিলাম । পেছন ফিরতেই দেখি নিরা দাড়িয়ে । ঠুস লেগে গেছে, হাইহিলের খটাখট শব্দ তুলে সটান বেড়িয়ে গেল, আহা আপদ বিদায় । যা ভাবছে ভাবুক গে, জান বাঁচল আমার ।

"দুই"

নিরার পিছু ছাড়াতেই কয়েকদিন অনুকে নিয়ে নিরার ভার্সিটির সামনে অযথাই ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম । নিরার বৈকালিক আড্ডার টঙটায় প্রায়শই দেখা যেতে লাগল আমাকে আর অনুকে । নিরা সরে গেল, দুদিন পর স্বভাব মেনে সিক্স এইট প্যাক বানানো হুলুস্থুল বড়লোক টাইপের ছেলের বাইকের পেছনে ঘুরে বেরাতে লাগল । আমি খুশিই হলাম, সেই খুশিতে অনুকে একটা শাড়ি গিফট করে ফেললাম । শাড়ি দেখে ওর পরিবার কি ভাবল কে জানে, সরাসরি বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো ।

এ কদিনে মেয়েটাকে কেমন যেন ভাললেগে গেছিল। মেয়েটার আনমনা হয়ে থাকা, ইতস্তত বোধগুলো আর মায়া মায়া চোখদুটো মনের এক কোনে বাসা বেধেছিল। শেষমেষ বিয়েটা করেই বসলাম। আমার আপন বলতে ছোট থেকে বড় করা ওই মামাই আছে। তার সায়ে অনেকটা তড়িঘড়ি করে বিয়ের যাবতীয় কাজ শেষ হল।
তবে শুধু বিয়েটাই, আর কিছু নয়।

বাসরটা হতে পারে নি আমাদের। সবে ঢুকে দরজাটা লাগিয়েছি, পেছনে মৃদু চিৎকার করে ঙান হারাল অনু। সারারাত নতুন বউকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে কাটল আমার। প্রতি রাতে এমনটাই হত। ভুল করে ওর ঘরে আমার অস্তিত্ব টের পেলেই ঙান হারাত। সে ঙান ফিরত পরদিন সকালে। আমিও মেনেই নিয়েছিলাম, থাকুক না ও ওর মত। সারাটা দিন তো কাছেই থাকে, লক্ষি বউ এর মত টিফিন করে দেয়, ফিরে আসার অপেক্ষায় দরজায় কান পাতে, শুধু রাত হলেই পাল্টে যায়। অদ্ভুত একটা ভয়ের ছায়া খেলা করে ওর চোখেমুখে।
আমি কখনোই জিঙ্গেস করি নি, কি হয়েছে তোমার? বল আমায়?
জানতাম একদিন ঠিকই নিজ থেকে এসে বলবে। আমি সে সময়টার অপেক্ষায় ছিলাম। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দিনটা এসেছিল কাল। প্রস্তুত ছিলাম তবুও ভেতরটা ভেঙেচুড়ে একাকার করে দিল ওর প্রতিটা শব্দ।

শুন্য গলায় প্রতিটা শব্দ বলে গেল অনু। কিভাবে একা রাতে সবার অজান্তে সুযোগ নিয়েছিল ওর খালাতো ভাই। কিভাবে পরিবারের সবাই মিলে ওকেই দায়ী করেছে। কিভাবে দিনের পর দিন, হায়েনাটার হাসি দেখে ভয়ে কুকড়ে যেতে হয়েছে। রাতের ঘুম হারাম হয়েছে।
বলেই পাশের রুমে চলে গেল, শুন্যতা খানখান হয়ে ভেঙে পড়ল ওর বাধভাঙা কষ্টের জোয়ারে।

তখন থেকেই ভাবছি, ভাবছি বললে ভুল হবে। মাথায় কিছু ঢুকলে তবে না ভাবব। শেষমেষ উঠে দাড়ালাম, খুব কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। আমি অসহায়, এ ছাড়া কিছু করার ছিল না আমার।

"তিন"

রাত দুটো আড়াইটে হবে

পেছন থেকে অনুকে জড়িয়ে ধরলাম, অনু সামনে ফিরে বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে উঠল। অদ্ভুত ব্যাপার, "অনু আজ আর মুর্ছা যায় নি"। আমি কানে মুখ রেখে আলতো করে বলে উঠলাম, "আমি হায়েনা নই অনু, আমি মানুষ, স্রেফ মানুষ। আর এই মানুষটা তোমায় বড্ড ভালবাসে"।
অনু আবারো কেদে উঠল। আমি সেই মূহুর্তে প্রতিঙ্গা করলাম, "আজই শেষ, আর কখনো এই চোখে জল ঝড়বে না, কখনো না"।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×