সামান্য কিছু হারালে তার বেদনা বেশীদিন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ছোট স্বপ্নগুলো স্বার্থক না হলে ব্যর্থ মন বেশীদিন দুঃখ ভারাক্রান্ত থাকে না। আমার একটা বৃহৎ স্বপ্ন হাতুড়ি, রড, আর চাপাতির আঘাতে চুপসে গেল। এ স্বপ্নটা আমি একা দেখি নাই। আমাকে দেখার সাধ জাগিয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আমার ডিজিটাল সে স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে গত ৪ মে রাত চারটায়। টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান ভিশন এর মিশনে আমিও ছিলাম পথযাত্রী। সে চলার পথে সাথী ছিল আমার কম্পিউটারটি। ইন্টারনেট লাইন ছিল চব্বিশ ঘন্টা। অনলাইনে পার করতাম অনেকটা সময়। আমার মত এরকম ত্রিশটি কম্পিউটার হাতুড়ি, রড, আর চাপাতি দিয়ে ভেঙ্গে চূর্ন বিচূর্ন করল বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল আবাসিক হলের কিছু উগ্র ছাত্র। ত্রিশটি কম্পিউটার মানে ত্রিশটি ডিজিটাল স্বপ্ন। ওরা ছাত্র লীগের কর্মী হয়ে কীভাবে গলাটিপে হত্যা করল তা আমার মত অনেক মেধাবীদের মাথায় আসে না। জননেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আত্মপ্রত্যয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সেখানে ছাত্রলীগ নামধারী উন্মত্ত কিছু কর্মী এ দুঃসাহস পেল কীভাবে। ওরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সময়কে পিছিয়ে দিল। ত্রিশটি স্বপ্নের অপমৃত্যুর অংশীদার তারা। নির্জীব কম্পিউটার গুলো কী দোষে দুষ্ট তা সবার ধারনার বাইরে। বাবার শ্রম আর ঘামে ভেজা সামান্য টাকা আর টিউশনির জমানো টাকা দিয়ে ছেলেগুলো কত সাধ করে কম্পিউটারে ডিজিটাল স্বপ্ন দেখত। সরকারের ডিজিটাল স্বপ্ন তরুন মেধাবীদের নিয়ে দেখত। অমন করে হাতুড়ি আর রডের কঠিন আঘাতে কাঁচের দেয়ালের মত মসৃন দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল ৪ মে রাত চারটা থেকে সাতটার মধ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ঐতিহ্যে ডিজিটাল স্বপ্ন ভাঙ্গার কালো ইতিহাস রচনা হল আজ। ভাবতেই মনটা মোচড় দিয়ে উঠে। কম্পিউটারে মনিটরের বর্ণিল লেখার মধ্য দিয়ে বিশ্বকে দেখার প্রচেষ্টাকে ওরা বন্ধ করে দিল। ইন্টারনেটের কল্যানে বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয় নয় বরং আঙ্গুলের মাথায়। মাউসের ছ্ট্টো একটি কিক এর কল্যাণে কী না পাচ্ছি। জ্ঞানের মহাসাগরে মুক্তা আহরনের মাধ্যম এ কম্পিউটার। নিষ্ঠুর ভয়াল থাবায় করুন মৃত্যু হল ত্রিশটি সার্থক স্বপ্নের। এ অপমৃত্যুর দায়-ভার কাদের? প্রতিটি স্বপ্নভঙ্গের তিপূরণ কে দিবে? কে আশা জাগানিয়া জাগাবে ডিজিটাল বাংলাদেশের? যাদের স্বপ্ন সার্থক হওয়ার পথে সহসাই রাতের আঁধারে মেরে ফেলা হল রড, চাপাতি দিয়ে। এর একটা বিহিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে করতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এগিয়ে আসতে হবে স্বপ্ন ভাঙ্গায় আশাহত মেধাবীদের সুন্দর সম্ভাবনার নতুন ডিডিটাল স্বপ্ন দেখার তাগিদ দিতে। না হলে সত্যিকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার এ সকল নবীন উদ্যোক্তারা উদ্যোগ নিতে দ্বিধাদ্বন্দের দোটানায় ভুগবে।
যারা ডিজিটাল স্বপ্নগুলোকে ভাঙ্গল তাদের জবাবদীহিতা করতে হবে। ছাত্রলীগ কর্মী হলে তারা এ কাজ কীভাবে করল। নিজেদের দলীয় নেত্রীর লালিত স্বপ্নকে হাতুড়ি, লাঠি, রড দিয়ে নষ্ট করে দিল। শিা জীবনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়–য়া মেধাবীদের আচরণে দেশবাসী হতবাক, নির্বাক। সাধারণত জনসাধারণ ব্যথাতুর হৃদয়ে, দুঃখভরাক্রান্ত মন নিয়ে সংবাদপত্রে ছাপানো সংবাদ পড়ছেন। ডিজিটাল স্বপ্ন সার্থক হলেই কেবল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। জননেত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নির্বাচনী ওয়াদা “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার অন্তরায় সৃষ্টি হল ত্রিশটি কম্পিউটার ভাঙ্গার মাধ্যমে।
এতো কম্পিউটার ভাঙ্গা নয়, ডিজিটাল স্বপ্ন ভাঙ্গা। কে তাদের ভাঙ্গা স্বপ্নকে জোড়া লাগাবে অথবা নতুন স্বপ্ন দেখার সাহস জোগাবে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, নাকি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন জাগানিয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার তা অজানা। আমার মত হাজী মহসিন হলের মেধাবী ছাত্রদের ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১০ রাত ১১:৫৪