সভা-সেমিনারে নীতিবাক্য আওড়াতে অভ্যস- কতিপয় বাংলাদেশী কর্তৃক ফেডারেল আইন লঙ্ঘন করে একত্রে একাধিক স্ত্রী ও স্বামী রাখার ব্যাপারে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম ধর্মকে মেনে চলার ব্যাপারে প্রচণ্ড অনীহা পরিলক্ষিত হওয়া এসব বাংলাদেশী যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন লঙ্ঘনের সময় ইসলামের দোহাই দিয়ে চলেছেন বছরের পর বছর ধরে। কেউ কেউ একই সঙ্গে একাধিক স্ত্রী নিয়ে সংসার করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সিটিতে, আবার অনেকে এক স্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রে এবং অপর স্ত্রীকে রেখেছেন বাংলাদেশে। ফেডারেল প্রশাসনকে ফাঁকি দেয়ার অভিপ্রায়ে এরা ইসলাম ধর্মমতে বিয়ে করা স্ত্রীকে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে দেখিয়ে ট্যাক্স রিটার্নের সময় তেমন স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেয়া সন-ানের মাকে একক অভিভাবক হিসেবে তুলে ধরছেন। ফেডারেল আইনে যুক্তরাষ্ট্রে সন-ানের মা’র পরিচয়ই যথেষ্ট বিধায় অনৈতিক কাজে লিপ্ত পুরুষদের হয়েছে পোয়াবারো। অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ওয়াশিংটন মেট্রো, ক্যালিফোর্নিয়া এবং মিশিগানসহ বিভিন্ন স’ানে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন প্রতিনিয়ত বিবেকের সঙ্গে প্রতারণারত এসব ব্যক্তি। এদের স্বরূপ উন্মোচিত হয় ট্যাক্স রিটার্নের সময়। সিপিএ এবং ট্যাক্স রিটার্ন প্রস’তকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিব্রতবোধ করেন অনেক সময়।
আইন লঙ্ঘনের এহেন তৎপরতায় যোগ হয়েছে আরেক দল বাংলাদেশী- যারা নিজ স্ত্রীকে অন্যের বউ হিসেবে ভিসা করিয়ে আনেন। এ শ্রেণীর মহিলারা গ্রীনকার্ড পাওয়ার পর সাজানো স্বামীকে তালাক দেন এবং আগের স্বামীকে আমেরিকার আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা স্টেট ডিপার্টমেন্ট তথা ইমিগ্রেশন বিভাগের নজরে আসায় সত্যিকার অর্থে যারা স্বামী-স্ত্রীর জন্য সপন্সর করছেন তাদেরকে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা উল্লেখ করেছেন, শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে-রেজিস্ট্রি করার ডক্যুমেন্ট প্রদানের পরও ভিসা ইস্যুতে নানা টালবাহানা করা হচ্ছে। বিয়ের প্রথম রাতে বউ কি পোশাক পরেছিলেন, কি রঙ, কি কথা হয়েছে ইত্যাদি জানতে চাওয়া হয় ইন্টারভিউ’র সময়। একইভাবে স্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয় স্বামীর কথা। পরস্পরের কথায় গরমিল হলে ভিসা ইস্যু করা হয় না। সত্যিকারের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ স্বামী-স্ত্রী কি কখনও এসব মনে রাখতে পারেন- এ কথাও বলেছেন ভিসাবঞ্চিতদের কয়েকজন। অথচ যারা ভুয়া বিয়ের ডক্যুমেন্ট পেশ করেন তারা আগেই রিহার্সাল করে সবকিছু গুছিয়ে রাখেন।
এহেন পরিসি’তি সম্পর্কে নিউ ইয়র্কের কয়েকজন এটর্নির সঙ্গে কথা বললে তারা উল্লেখ করেছেন, ইউটাহ স্টেট ব্যতীত অন্য সব স্টেটেই একত্রে একাধিক স্ত্রী রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ। এটর্নি এম এ আজিজ জানান, একত্রে একাধিক স্ত্রী রাখার কোন বিধান যুক্তরাষ্ট্রে নেই। বিয়ের আগে সিটি প্রশাসন থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। সে সময়ই যাচাই করা হয় বিষয়টি। দ্বিতীয় বিয়ের জন্যে রেজিস্ট্রেশন করা যায় না। এটর্নি অশোক কর্মকার বলেছেন, কেউ যদি ধর্মের দোহাই দিয়ে একত্রে একাধিক স্ত্রী রাখেন তাহলে সেটি হবে গুরুতর অপরাধের শামিল। এক স্ত্রী আমেরিকা এবং অপর স্ত্রীকে বাংলাদেশেও রাখা যাবে না ওই একই কারণে। কখনও ঘটনা ফাঁস হলে তার দায় বহন করতেই হবে আমেরিকার নাগরিকদেরকে। তবে কেউ যদি গার্লফ্রেন্ড হিসেবে কাউকে স্ত্রীর পাশাপাশি রাখেন তাহলে সেটিও ঘোষণা দিতে হবে। এটর্নি মইন চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অবশ্যই স্টেট ও ফেডারেল আইন মেনে চলতে হবে। তাই একত্রে একাধিক স্ত্রী রাখা কোনভাবেই সমীচীন নয়। এটর্নি আজিজ বলেন, নৈতিকতার প্রশ্নেও গোপনে একাধিক স্ত্রী রাখা সমীচীন নয়।
ফেডারেল আইন ফাঁকি দিয়ে একাধিক স্ত্রী রাখা নিউ ইয়র্ক স্টেট প্যানেল কোড ২৫৫.১৫ এর পরিপনি’ এবং তা ক্লাস ই ফেলোনির শামিল। এজন্য সংশিস্নষ্ট ব্যক্তির সর্বোচ্চ ৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এ তথ্য জানিয়েছেন এটর্নি মইন চৌধুরী অ্যান্ড এসোসিয়েট্স, পিসির এটর্নি অস্টিন ম্যানগ্রাম। এটর্নি মইন চৌধুরী আরও বলেছেন, একটি অপরাধের অভিযোগ উঠলে তার সঙ্গে আরও কিছু জড়িয়ে পড়ে। এমনকি এক বছরের অধিক দণ্ডপ্রাপ্ত যদি গ্রীনকার্ডধারী হন তাহলে তার গ্রীনকার্ড বাতিল হয়ে যাবে এমনকি সিটিজেনশিপও কেড়ে নেয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।
একইভাবে মহিলাদেরকেও স্বামীর অজ্ঞতায় একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা উচিত নয়। আইনজীবীরা আরও বলেছেন, অনেক মহিলা গোপনে একাধিক বিয়ে (ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী) করেন বলে মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে মাঝেমধ্যে জানা যায়। এটিও অন্যায়। নৈতিকতা এবং আইনগত-উভয় ভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে কাউকে প্রতারণার সুযোগ নেই। অভিযোগ রয়েছে, কম্যুনিটির, নেতৃস’ানীয় অনেকেই একাধিক স্ত্রী নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। একজনকে বাংলাদেশে এবং আরেকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে রেখে দিব্যি সংসার করছেন অনেক পুরুষ। আবার কেউ কেউ নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে একই বাসায় রাখছেন এবং উভয়ের সঙ্গে রাত যাপন করছেন- এ ঘটনা ফাঁস হলে ফেডারেল আইনে শাসি-র পাশাপাশি সিটিজেনশিপও বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।-
খবর:বিডিন্যাশনাল নিউজ ডটকম – Click This Link