somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহ

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১৮ সালটি বাংলাদেশের জন্য স্মরনীয় হয়ে থাকবে তার কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপনের জন্য।

কৃত্রিম উপগ্রহ সাধারনত উৎক্ষেপন করা হয় মনুষ্য বিহীন রকেটের মাধ্যমে। মনুষ্য বিহীন রকেট মূলত একটি বিশাল জ্বালানির আধার। রকেটের নিচের ইন্জিনটি, তরল জ্বালানিসমূহ-অক্সিজেনের উপস্হিতিতে জ্বালিয়ে রকেটকে মুক্তিবেগে ধাবিত করে।

কয়েক মিনিটেই রকেটটি বায়ুস্তর পার হয়ে পৃথিবীর ভুমির সমান্তরিত হয়, এবং পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করা শুরু করে।

এখানে জরুরি বিষয় হলো মুক্তিবেগ। উচ্চতা কোন বিষয় নয়। মুক্তিবেগ পেলে যেকোন বস্তু ১ মিটার উপর দিয়েও পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করতে পারবে। কিন্ত যেহেতু বায়ুমন্ডল নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতি বাধাগ্রস্হ করে তাই রকেটকে বায়ুমন্ডলকে ছাড়িয়ে যেতে হয়।

বলছিলাম 'মনুষ্য বিহীন রকেট মূলত একটি বিশাল তেলের আধার'। বটে! তবে মানব যাত্রিযুক্ত রকেট কেমন?

মানব যাত্রি যুক্ত হলেই রকটে একটি অতিরিক্ত মডিউল যুক্ত করতে হয়। যা কিনা যাত্রীদের চেম্বার। শুধুই কি চেম্বার? সেটা যে পৃথিবীতে যে নিরাপদে ফেরত আসতেও সক্ষম!

বিশ্ববাসী যাত্রী মডিউল দুই রকমের দেখেছে। প্রথমতই রাশিয়ান (রসকসমস) ক্যাপসুল মডিউল যা 'সয়ুজ' নামে পরিচিত অন্যটি আমেরিকান (নাসা) মডিউল যা স্পেস সাটল নামে পরিচিত।

সয়ুজ রকেটের উপরিভাগে কোনের আকৃতির হয়, যা পৃথিবীতে (ইউক্রেনের মাটিতে) পতিত হয় সর্বশেষ প্যরাসুটের মাধ্যমে।

অন্যদিকের স্পেস সাটল রকেটের পাশে সমান্তরাল ভাবে লাগানো অবস্থায় থাকে। স্পেস সাটল দেখতে অবিকল একটি উড়োজাহাজের মতো, উড়োজাহাজই বটে। স্পেস সাটল অ্যামেরিকার বিভিন্ন বিমানবন্দরে অবতরণ করতো।

উল্লেখ্য স্পেস সাটল প্রোগ্রাম স্থগিত হয়েছে। এবং আশ্চর্য হলেও সত্য যে আমেরিকার নভোচারীরা এখন সম্পূর্ণই রাশিয়ান সয়ুজের উপর নির্ভরশীল। রাশিয়া-আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কে যাই হোক না কেন, তাঁদের মহাকাশ বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক খুবই আশাব্যাঞ্জক।

আমেরিকার রাষ্ট্রায়ত্ত মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসাতে বিগত এক দশকে এসেছে বিশাল পরিবর্তন। তাঁরা মহাকাশযান প্রেরণ প্রায় বাদ দিয়েছেন, মনুষ্য মহাকাশযান তাঁদের আর একটিও নেই। নাসা ঝুঁকেছেন বিশাল টেলিস্কোপ নির্মাণে এবং পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক মহাজাগতিক গবেষণায়।

অন্যদিকের আমেরিকান সরকার ব্যক্তিগত খাত উন্মুক্ত করে দিয়েছেন মহাকাশ যান মহাশূন্যে পাঠানর জন্য।

এই নীতির ধারাবাহিকতায় আমেরিকায় ভার্জিন গ্যালাকটিক, নিউ হরাইজোন, বোইং , স্পেস এক্স নামক মহাকাশ কোম্পানির সৃষ্টি হয়েছে।

যখনই ব্যক্তিগত কোম্পানি এই খাতে এল, তখনই তাঁরা উঠেপড়ে লাগলেন কিভাবে খরচ কমানো যায়।

জ্বালানী খরচ তো আর কমানো যাবে না, তাই তাঁরা মূল রকেট, যা কিনা জ্বালানীর আধারও বটে, সেটাকে ফেরত আনতে সচেষ্ট হলেন।

উল্লেখ্য যে অন্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো আমেরিকার নাসা বা রাশিয়ার রসকসমস কেউই কখনোই চেষ্টা করেননি মূল রকেটকে পৃথিবীতে পুনরায় ফেরত আনার, এবং একটি পুনঃব্যবহার্য রকেট বানানোর। ব্যাপারটি, একটি এয়ারবাস এ৩৮০ বিমান মাত্র একবার ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেবার মতোই ব্যয়বহুল।

প্রতিবার রকেট উৎক্ষেপণের পরেই তা মহাশূন্যে জঞ্জালের মত ফেলে আসা হয়েছে। এইসকল অব্যবহার্য রকেট গুলো ঘণ্টায় ৪০০০০ কিমি বেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষন করছে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায়। যা কিনা স্পেস জাঙ্ক এর উচ্চতা নামে পরিচিত।

বহু বিজ্ঞানীর মতে, এইসকল স্পেস জাঙ্ক একদা খুব সমস্যা বয়ে আনবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে, তাঁদের মহাকাশ যানের জন্য।

অন্য সবগুলো ব্যক্তিগত মহাকাশ কোম্পানির চেয়ে একটি কোম্পানি অনেকধাপ এগিয়ে এই আসরে। তা হল, স্পেস এক্স। এর অন্যতম কারণ এর উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক। তিনি নমস্য।

১০ বছর পুরনো মহাকাশ কোম্পানি স্পেস এক্স এখন নিজেদের পুনঃব্যবহার্য রকেট দিয়ে নাসার পক্ষে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন মিরে নিয়মিত রসদ পৌঁছে দিচ্ছে। যদিও তাঁরা এখনো মনুষ্য যান চালু করেন নাই।

ইলন মাস্ক এ-ও ঘোষণা দিয়েছেন যে, ২০২৫ সাল নাগাদ তাঁর মনুষ্য রকেট মঙ্গলে পৌছবে। অবশ্য এর আগেই তাঁর কোম্পানির মনুষ্য বিহীন রকেট মঙ্গলে রসদপাতি গিয়ে হাজির ও তৈরি থাকবে।

উল্লেখ্য যে তিনি বলেছেন যে খুব সম্ভব তিনিও মঙ্গলে যাবেন যা কিনা এক মুখী যাত্রা। তিনি সফল হলে বা পড়ুন বেঁচে থাকলে, মঙ্গল-কে মানুষের বাসযোগ্য করার আমৃত্যু চেষ্টা করবেন, এবং পৃথিবীতে তাঁর চলমান কোম্পানিগুলোকে (স্পেস এক্স, টেসলা মোটরস, সোলার সিটি) তিনি মঙ্গলে বসেই পরিচালিত করবেন।

-----

ফিরে আসি বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ এর কথায়। বাংলাদেশের পক্ষে তাঁর কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের দুইটি সংস্থা সম্ভবত খোলা ছিল, প্রথমতই রাশিয়ার রসকসমস এবং অন্যটি স্পেস এক্স।

স্বভাবতই রাশিয়ান সমাধান হত অত্যন্ত অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অন্যদিকে স্পেস এক্স যেহেতু পুনঃব্যবহার্য রকেট ব্যবহার করে, তাই তাঁদের সমাধান অবশ্যই হবে কম বায়বহুল।

বাংলাদেশ ঠিক পথেই গিয়েছে। বাংলাদেশ নিয়োগ করেছে স্পেস এক্স কে।

স্পেস এক্স ফ্যলকন-৯ মডেলের একখানা ঝকঝকে নতুন রকেট প্রায় প্রস্তুত করেছে বঙ্গবন্ধু-১ কে কক্ষপথে পাঠানোর জন্য।

অবশ্যই প্রতিটি রকেট উৎক্ষেপণই খুব-ই ঝুঁকিপূর্ণ, প্রতিটি রকেটের সফল উৎক্ষেপনে জিতে যায় মানব-সম্প্রদায়।

সৃষ্টিকর্তা বাংলাদেশ-কে ভালবাসেন। বাংলাদেশ-কে মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন।

তিনি অবশ্যই সাহায্য করবেন যেন বঙ্গবন্ধু-১ কে স্পেস এক্স সফল-ভাবে কক্ষপথে আবিষ্ট করতে পারে।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৫১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×