গত কয়েক বছর আগের কথা। আমরা অল্প কিছু মানুষ অল্প কিছু সামর্থ নিয়ে রাতের রাস্তায়ে নেমেছিলাম। সর্বসাকুল্লে ৪০ টি পাঞ্জাবি আর ২০ টি ফ্রক ছিলো। শেষ রাতের দিকে ৩-৪ টি পাঞ্জাবি বাকি ছিলো। শহীদ মিনারে গিয়ে থামলাম চা খেতে। ভাবলাম ভিতর তা দেখেই যাই কাউকে যদি পাওয়া যায় দেয়ার মত। বাচ্চাটার বয়স বেশি হবেনা। ৯ কি ১০। ঘুমিয়ে ছিল। গরীবের ক্লান্তির ঘুম। ডাকাডাকি করছি। কোন সাড়া নেই। ঝাড়া ৫ মিনিট পর ঘুম চোখ অল্প খুললো। ভয়ঙ্কর বিরক্ত ঘুম ভাঙ্গার জন্য। অনেক টা ঝাড়ির সুরেই “ কি হইসে?”। আমাদের মাঝেই কেউ একজন বলল “ কিরে পিচ্চি, কালকে তো ঈদ, পাঞ্জাবি কিনছস নতুন?” । প্রশ্ন টার পর তার চোখের দৃষ্টি তে যেই জবাব টা ছিল তা অনেক টা এরকম “ রাইত বিরাইতে নয়া ফাইজলামি র জায়েগা পাওনা”। ভাবলাম একটু মজা নিই। প্যাকেট থেকে একটা পাঞ্জাবি বের করে তার গায়ে মেলে ধরলো আমাদের এক বড় ভাইয়া। পিচ্চির দিকে তাকিয়ে আছি সবাই । সে তখনো বুঝেনি যে সেই এখন এই পাঞ্জাবির মালিক। অবাক দৃস্টি, আর আমরা ভাবছি এখনি হাসবে হয়তো। তারপর এর ৫ মিনিট ছিল আমাদের জীবনের দেখা শ্রেষ্ট কিছু সময়ের একটি। সে আমাদের একজনের পা জড়িয়ে ধরলো র চিতকার করে কান্না।আমরা হতভম্ব। তার মুখ থেকে কিছু শোনা হইনি আর। তার চোখের পানিতেই কিছু শব্দ ছিল। ঈদ র আগের দিন যখন আমরা আমাদের টেক্সমার্ট, আড়ং অথবা লংলার পাঞ্জাবি গুলো আলমারি তে সজত্নে রেখে ঘুমাতে যাচ্ছিলাম তার হইতো চিন্তাতেই আসে নি ঈদ র ঠিক ৬ ঘন্টা আগে তার গায়ে উঠবে নতুন পাঞ্জাবি। আবেগহীন মানুষ হয়ে গেছি আমরা তবুও নিরাবেগ মন থেকেই সেইদিন একটা বেপার অনুভব করেছিলাম। পিচ্চির চোখের জলে ফিকে হয়ে গেছে আমার হাজার টাকার টেক্সমার্ট। কিন্তু এমন একটি মুহুর্ত আমি দেখেছি যার মূল্য কোটি টাকাতেও মাপা যায়না। বিশ্বাস করুন, তার চোখের পানিতে এমন কিছু ছিল যা দেখে নিজের সার্থপর স্বত্তায় চাপা পড়ে যাওয়া মনটা বলছিল “ তোকে নিজের সবটুকু দিয়ে দেবরে ভাইয়া , সবটুকু, এই মুহুর্ত টার জন্য”। তাকে সেখানে রেখে হেটে আসতে আসতে যতবার পিছন ফিরে দেখেছি তার চোখে পানি ছিল আর ছিল সন্দেহ (হয়তো ভাবছিলো আবার গিয়ে না ফেরত চাই পাঞ্জাবিটা)।
বিশ্বাস করুন, আমরা মহামানব নই। আমরা এমন আহামরি কিছু করিনি।নিজেদের পাঞ্জাবিটা যতদুর মনে পড়ে কোন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিপনি বিতান থেকে হাজার টাকা দিয়েই কিনেছিলাম। পিচ্চিটার টা বঙ্গবাজার থেকেই কেনা। খুব বেশি কিছু করিনি। আতিক ফোনে ১০০ টাকার কম কথা বলেছিল, ঈদ এ ফেসিয়াল করে মুহিত মনে হয় টিপস টা র দেয় নি , সায়েম ভাই এর পারফিউম টা ব্র্যান্ড র হয়নি, সজীব র স্যান্ডেল টা বাটা সেল র দোকান থেকে কেনা, হিমেল র ঈদ কালেকশন এ ২ টা ডিভিডি কম পরেছিল। এই সব ছোটোখাটো সঞ্চয় কিছু মানুষের জীবনে কোটি টাকার খুশি দিয়েছে। হয়ত কোটি অঙ্ক টাও অনেক ছোট , আমার শব্দ ভান্ডারে ওই অনুভুতি বোঝানোর শব্দ নেই বলে দুঃখিত।

আশা করি এবারের ঈদ এ আমাদের কারো কারো অনুভুতির ভান্ডারে এমন কিছু মুহুর্ত যুক্ত হবে। খুব অল্প কিছু savings, বিশ্বাস করুন এমন কিছু পাবেন যা অন্তত এইটুকু কথা গর্ব করেই আপনাকে বলতে দেবে যে “আমিও মানুষ”।
গত বছর আমরা ১৪ হাজার টাকা collect করেছিলাম। এবারের পরিকল্পনা আছে ৩০ হাজার টাকার মতো collect করা।

Face book group : Click This Link