somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারিকেল জিঞ্জিরার দেশে - প্রস্তুতি ও যাত্রা হল শুরু

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সালটা ২০১৪। সেবার দেশে গিয়ে অন্তরার সাথে এক সুতায় গিট্টুটা লেগেই গেল। গিট্টুটা লেগে যাওয়ার পর ভাবছি, কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়? কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেসের দেশে ঘুরে এসেছে। আমিও ভাবলাম - হ্যাপিনেসের দেশ ভুটানে গিয়ে সুখ-শান্তির ছোঁয়াটা একটু নিয়েই আসি। এক এজেন্টকে ফোন দিলাম। তার প্রকৃত নামটি ব্যবহার করতে চাচ্ছি না, তাই কাল্পনিক একটা নাম দিই। এজেন্টকে ফোন দিলাম।

- কালাম ভাই, ভুটান যেতে চাই।
--- ভুটান তো খুবই সুন্দর দেশ! অবশ্যই যাওয়া উচিত। ভাই, আমার নাম কোথা থেকে পেলেন?
- আমার এক বন্ধু আপনার মাধ্যমেই ভুটান ঘুরে এসেছে। তার কাছ থেকেই আপনার নাম পেলাম।

তারপর কিছুক্ষণ সেই বন্ধু, তাদের ভুটান টিম নিয়ে কথা-বার্তা হল।

--- আপনি কি একাই যাবেন?
- নাহ, সস্ত্রীক যাব।
--- কোন সমস্যা নেই। আমাদের বিভিন্ন রকমের প্যাকেজ আছে। আমি আপনাকে ডিটেইলস দিয়ে একটা ইমেইল করছি।

ইমেইল থেকে ৪ দিন ৩ রাতের প্যাকেজ টা পছন্দ হল কারণ এর চেয়ে বেশি সময় আমার হাতে নেই। ৪ দিন ৩ রাতের প্যাকেজে চারতারা হোটেলে একজন বাংলাদেশী নাগরিকের প্রতিরাত খরচ হবে ৮৫ ইউএস ডলার করে। এর মধ্যে তিন-বেলা খাওয়া, আভ্যন্তরীণ যাতায়াত অন্তর্ভুক্ত। প্লেন ভাড়া প্রতি জন ২২,৭০০ টাকা।

- কালাম ভাই, ভিসা কি আগে নিতে হবে?
--- আপনাদের দুজনেরই কি বাংলাদেশি পাসপোর্ট?
- না, একজনের বাংলাদেশি, আরেকজনের বিদেশী পাসপোর্ট।
--- ওহ, তবে তো একটু ঝামেলা হয়ে গেল। যে প্যাকেজটা পাঠিয়েছি, সেটা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য। বিদেশিদের জন্য আলাদা প্যাকেজ।
- সেটা আবার কেমন?
--- ঠিক আছে, ডিটেইলস ইমেইল করছি।

কালাম ভাইয়ের দ্বিতীয় ইমেইল খুললাম। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য জন্য যে খরচ, সেটিই তিনগুণ হয়ে যায় একজন বিদেশী পাসপোর্টধারীর ক্ষেত্রে। বিদেশী পাসপোর্টধারীর ক্ষেত্রে প্রতিরাতের খরচ হবে ২৮০ ইউএস ডলার। প্লেন ভাড়া হয়ে যাবে ৩৮০ ইউএস ডলার ও বাংলাদেশী টাকায় ৫,৬০০ টাকা ট্যাক্স। এছাড়া আছে ৪ পার্সেন্ট এজেন্ট কমিশন। আবার একজন বিদেশী পাসপোর্টধারীর ক্ষেত্রে নাকি ভুটানে পোর্ট অফ এন্ট্রিতে ভিসা পাওয়া যায় না। ভিসা আগে নিতে হবে এবং এতে সময় লাগবে প্রায় এক সপ্তাহ।

মহাঝামেলায় পড়া গেল। খরচ নাহয় বেশি দিলাম, কিন্তু ভিসা পেতে লাগবে এক সপ্তাহ। অথচ, এতো সময় আমার হাতে নেই।এতসব ঝক্কিঝামেলা দেখে শেষ পর্যন্ত ভুটান যাওয়ার চিন্তা বাদ দিলাম।

সিদ্ধান্ত নিলাম - নীল সমুদ্র দেখে আসি। এটি আমার দেশ বাংলাদেশেই। আমার ইদানীং স্বভাব হয়েছে, কোথাও যাওয়ার আগে সেই জায়গা সম্পর্কে কিছুটা/ব্যাপক জ্ঞানলাভ করা। ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি শুরু করে দিলাম। কিন্তু দেশে নেট স্পিডের এত করুণ অবস্থা যে, কোন সাইটে যেতে হলে কার্সারের গোলচক্কর ঘুরতেই থাকে। ঘুরতে ঘুরতে একসময় সেশন টাইম আউট হয়ে যায়, সাইট ওপেন হয় না। আবার সাইটে গিয়ে ব্রাউজ করছি, হঠাৎ করেই মোডেমে লাল বাত্ত্বি জ্বলা শুরু হয়ে যাবে, তারপর নেট ডিসকানেক্ট হয়ে যাবে। নেটে খুব বেশি তথ্য পেলাম না। বন্ধুবান্ধব, পরিচিত আত্মীয়-স্বজনই শেষ ভরসা।

১২ই ফেব্রুয়ারি দুপুরে বের হলাম ফকিরাপুলের উদ্দেশ্যে। প্রথমে ঢাকা থেকে টেকনাফ যেতে হবে, তারপরে সেখান থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন। কেউ যদি সেন্টমার্টিন যেতে চান, এভাবেই যেতে হবে। আমরা ফকিরাপুল গিয়ে বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে শেষ পর্যন্ত শ্যামলী পরিবহনে সেদিনই টিকিট পেলাম। টিকিটের দাম এসি বাসে ১২০০ টাকা করে। বাসের টিকিটের কাজ শেষ। বাস ছাড়বে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। টেকনাফ গিয়ে পৌঁছাবে পরেরদিন সকাল ৮ টার মধ্যে। এবার জাহাজের টিকিট কিনতে হবে। কয়েকটি জাহাজ থাকলেও আমি তখন শুধু কেয়ারী সিন্দবাদের কথাই জানি। ফকিরাপুল থেকে রিক্সা নিলাম কেয়ারী সিন্দবাদের অফিস ধানমন্ডি ৮/এ তে। ওখানে গিয়ে দেখলাম, দুই ধরণের জাহাজ আছে। একটা হল নন এসি কেয়ারি সিন্দবাদ (Keari Sindbad), আরেকটি হল এসি কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন (Keari Cruise and Dine)। আমরা যাওয়ার টিকেট নন এসি কেয়ারি সিন্দবাদের দোতলায় ব্রিজ ডেকে করলাম। টিকেটের দাম প্রতিজন ৪৫০ টাকা। ফিরে আসার টিকিট করলাম এসি কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইনের দোতলায় পার্ল লাউঞ্জে। এখানে টিকেটের দাম প্রতিজন ৬৫০ টাকা করে। আমাদের সেন্টমার্টিনে যাওয়ার জাহাজ ছাড়বে টেকনাফ থেকে আগামীকাল ১৩ তারিখ সকাল ৯ টায়। সবকিছু শেষ, এবার কিছু শপিং-য়ের পালা। মনের ভেতরে একটা উৎফুল্লু ভাব চলে এল। আর মাত্র কয়েকঘণ্টা। অন্তরা বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে যা কিছুই কিনতে চাইল, কোন কিছুতেই আপত্তি জানালাম না। তারপরেও সেন্টমার্টিনে গিয়ে আবিষ্কার করেছিলাম যে, সাথে কার্নিশওয়ালা হ্যাট নাই, সান প্রোটেকশন সানস্ক্রিণ লোশন নাই। সেন্টমার্টিনে গেলে ফেরার সময় গায়ের রং কেনিয়া টিমের খেলোয়াড়দের মতো হবেই, তারপরেও হ্যাট, লোশন থাকলে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়।

বাসায় গিয়ে ব্যাগ রেডি করা শুরু করে দিলাম। ঘড়ির কাটা ক্রমেই বাড়ছে। আমরা সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। দুজনের সাথে ছোট দুটি লাগেজ। সাধারণতঃ মেয়েদের ব্যাগের সাইজ বড় হয় কিন্তু আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে, অন্তরার ব্যাগের সাইজটি মোটেও বড় নয়। ভ্রমণ করার সময় বোঝা যত কম হয়, ভ্রমণ ততই আনন্দদায়ক হয়। স্বস্তি পেলাম যে, আমি সত্যিই একজন ট্রাভেলার জীবনসংগী পেয়েছি। আমাদেরকে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে দিয়ে গেলেন আমার মামা। মামা আমাদের জন্য নাস্তা আর পথে খাবার জন্য নিয়ে এসেছে আনন্দ বেকারীর রুটি, নসিলা, জেলী ইত্যাদি। আমরা সবকিছু নিয়ে বাসে উঠলাম। বাঙ্গালী সময় অনুযায়ী বাস রাত ৮ টার দিকে ছেড়ে দিল।

বাসে ড্রাইভার ছাড়াও আরো একজন আছেন যাত্রীদেরকে সেবা করার জন্য। বাস ছাড়ার পর তিনি সবাইকে একটি করে মিনারেল ওয়াটারের বোতল দিয়ে গেলেন। চেক করলেন, সবার কাছে কম্বল আছে কিনা? বাসে বসার ব্যবস্থা অনেক ভালো না হলেও মন্দ নয়। আমেরিকাতেও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট (বাসযাত্রা) খুব একটা সুবিধার নয়। গ্রেহাউন্ডে জার্নি করেছি কিন্তু কম্বল, মিনারেল ওয়াটার কিছুই পাইনি। বাস এগিয়ে চলছে। বাসের লাইট নিভিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে যাত্রীরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারে।

আমরা ঘুমাচ্ছিলাম না। অন্তরার সব জমানো কথাগুলো হঠাৎ একজন চমৎকার শ্রোতা খুঁজে পেয়েছে। মনের মধ্যে একটা ফুরফুরে ভাব। কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ কানে এলো, ধুম মাচালে ধুম… । আমরা দুজনেই অবাক! কোন হিন্দি গায়ককে বাসে উঠতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। বাসে পেছনের দিকে কেউ একজন তার মোবাইল ফোনে ফুল ভল্যুয়মে হিন্দি গান ছেড়ে দিয়েছে। আমি ভাবছিলাম, সবাই হয়তবা চেঁচামেচি শুরু করে দিবে। অবাক হলাম, কেউ কিছু বলল না। বুঝতে পারলাম, দেশে হিন্দি গানের এখনও যথেষ্ট কদর আছে, হিন্দি গানে বাংলাদেশিদের ঘুম নষ্ট হয় না।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×