somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্যার এর কাছে আমার ইমেইল এবং কিছু আক্ষেপ। আপনারা কেউ পারলে আমাকে সাহায্য করুন

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্যার,
সালাম নিবেন। জানিনা মেইলটা আপনার কাছে গিয়ে পৌঁছুবে কিনা। নেটে সার্চ করে আপনার এই মেইল আইডি পেলাম, সঠিক কিনা জানিনা। স্যার, প্লিজ মেইলটা কষ্ট করে হলেও একটু সময় বের করে নিয়ে পড়বেন। আপনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা’ই আপানার কাছে লেখার সাহস যোগাল।
স্যার, আমি এই বছর (২০১২-’১৩) ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। বেশ কয়েক জায়গায় পরীক্ষা দিলাম কিন্তু কোথাও চান্স হয়নি। বেশ কয়েক মাস আগে পত্রিকায় ভার্সিটি/মেডিকেল ভর্তি বিষয়ে আপনার লেখা পড়েছিলাম যা আমার ভাবনা এবং বাস্তবতার সাথে হুবহু মিলে গিয়েছিল। সেই থেকেই আপনার কাছে লিখব লিখব ভাবছি। আজব হলেও সত্যি, পত্র-পত্রিকায় ভর্তিকে ‘ভর্তি’ না বলে ‘ভর্তিযুদ্ধ’ বলা হয়! আর বলবে না’ই বা কেন, যেখানে ১টা আসনের বিপরীতে ৩০-৫০ জন লড়ে তার ক্ষেত্রে ‘যুদ্ধ’ শব্দটাই খাটে। ভর্তি পরীক্ষায় কে মেধাবী সেটা তেমন দেখা হয়না, দেখা হয় দুই মাসে কে বেশি প্রেসার সহ্য করতে পারে। কার ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা আছে তা নির্ভর করে কার কতটুকু জ্ঞান আছে তার ওপর। আজব হল, দুই মাসে সবাই জ্ঞান অর্জনের যুদ্ধে নেমে পরে! ভর্তি পরীক্ষার পরে যে তালিকা তৈরি হয় তাকে ‘মেধা তালিকা’ বালা যায়না। এটা হল ‘যুদ্ধা তালিকা’। আর এই যুদ্ধাদের হাতে কলমে ট্রেনিং দেয়ার জন্য পাড়ার মোড়ে মোড়ে বন্য মাশরুম এর মত গড়ে ওঠেছে কোচিং সেন্টারগুলো। আমি এই কোচিং জিনিষটার মারাত্মক বিরোধী। কোচিং! এ এক বিরাট অরাজকতা। ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যাওয়া আসা করে। অভিভাবগণ কষ্টের টাকা নির্দ্বিধায়, অনায়াসে দিয়ে দেন ওইসব আনাড়ি কোচিংএ! যত টাকা তারা হাতিয়ে নেয় তার কতটুকুইবা আউটপুট হিসেবে দেয়? ভর্তির সময় রসিদের নিচে ছোট করে লেখা থাকে,’ভর্তি বাতিল করা যাবেনা’। অর্থাৎ টাকা দিয়ে সদিচ্ছায় জেলে ঢুকে গেছ! বের হওয়ার সুযোগ নাই। বছরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কোচিংগুলু। এই ইনকাম এর কতটুকু হালাল? যারা হারাম খায় তারা আবার ছাত্রদের কি শিক্ষা দেবে? কোচিং এর দোষ নাই, আমাদের আনকোরা শিক্ষা ব্যাবস্থার জন্যই কোচিং ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়েছে। ইন্টার পরীক্ষা দিয়েই ছাত্ররা ভর্তি হয়ে যায় কোচিংএ। যেন কোচিং করাটা ফরয, নাহলে মেডিকেল আর ভার্সিটিওয়ালারা ভর্তি ফর্ম দিবেনা! ভর্তি হয়েই চলে কোচিংএ যাওয়া আসা আর পড়া পড়া পড়া পড়া পড়া...... সবাই সমান তালে পড়তে থাকে। সে যে কি কষ্ট, যারা এই সময়টার ভেতর দিয়ে যায় তারাই টের পায়। ঘুম, খাওয়া, আরাম আয়েশ বাদ দিয়ে শুধু পড়া আর পড়া নিয়ে থাকতে হয়। কোচিং এই দিক থেকে একটু সাপোর্ট দেয়। সেজন্য যারা কোচিং করেনা তারা কোচিং পড়ুয়াদের থেকে স্বাভাবিকভাবেই একটু পিছিয়ে থাকে। তাছাড়া এক-দুই দিন ক্লাস মিস দিলেই হয়ে যায় ব্যাপক ক্ষতি। অন্যরা এগিয়ে যায় অনেক দূর কারন এক দিনেই কোচিংএ ৪-৫ অধ্যায় পড়িয়ে ফেলা হয়, পরের ক্লাসে থাকে আগের ক্লাসের ওপর পরীক্ষা। এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়া মানে একেবারে ছিটকে যাওয়া। কোচিং না করে যতটুকু আগানো সম্ভব, কোচিং করে তার থেকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া যায়। আর ভর্তি যুদ্ধে তারাই জয়ী হয় যারা এগিয়ে থাকে। যারা দিনরাত খাটুনি করতে পারবে তারাই কেবল ওই তালিকায় নিজের নাম দেখতে পায়। সেই বিচারে কোচিং করাটা ফরয না হলেও অন্তত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। কতক ব্যাতিক্রম বাদে যারা ভার্সিটি/মেডিকেলে চান্স পায় তারা সবাই এক বা একাধিক কোচিং এর স্টুডেন্ট। ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা ও নরমাল ক্লাসের পড়ার অনেক তফাৎ। ক্লাসের পড়া কোচিং না করেও ভালভাবে শেষ করা যায়। আর ভর্তি পরীক্ষা ব্যাতিক্রম এই কারনে যে এখানে ‘প্রতিযোগিতা’ শব্দটা জড়িত। এক্ষেত্রে সামান্য পিছানো মানে একেবারে লাইন এর শেষের দিকে চলে যাওয়া। তাই সবাই চায় সেরা প্রস্তুতি, আর সেজন্যই কোচিং। শাহজালাল ভার্সিটির VC স্যার একদিন হবিগঞ্জে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, “যারা কোচিং না করে, নিজের মেধার বলে পরীক্ষায় ভাল করে তারাই প্রকৃত মেধাবী ছাত্র।” আমার তখন দাঁড়িয়ে বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, “স্যার, আমরা কোচিং বিমুখি ছাত্ররা কোচিং পড়ুয়াদের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারিনা। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। স্যার, সম্ভব হলে ভর্তি কোচিংগুলু সব বন্ধ করে দেন, আপনার কাছে আকুল আবেদন।” স্যার, আপনিও ওইদিন অতিথি ছিলেন। ওটা ছিল আমার এসএসসি এর পরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সাল টা ২০০৯। স্যার, আমার অভিমত হল, ভর্তি কোচিংগুলু বন্ধ করতে পারলে পরীক্ষার্থীদের হয়রানি অনেক কমে যাবে, যার যা নিজস্ব অর্জন আছে তা দিয়েই ভর্তি পরীক্ষা দিবে, প্রশ্নকর্তাকেও খুঁজে খুঁজে কঠিন প্রশ্নগুলো বের করতে হবেনা। কোচিংএ অনেক টিপস এবং শর্টকাট টেকনিক শিখানো হয় যা নরমালি টেক্সট বইএ নাই। তাই প্রশ্নকর্তারাও ছাত্রদের ঠেকানোর জন্য যত পারেন গবেষণা করে বুদ্ধিদীপ্ত এবং কঠিন প্রশ্নগুলো তৈরি করেন। এই বছরের SUST এর এ ইউনিটের এবং ঢাবির ঘ ইউনিটের প্রশ্ন দেখলেই বোঝা যায় প্রশ্নকর্তা কীভাবে ছাত্রদের ঠেকাতে চেষ্টা করেছেন। যত দিন যাচ্ছে প্রশ্ন তত আজগুবি টাইপ এর করা হচ্ছে যেন উদ্দেশ্য মেধা যাচাই নয়, ভাগ্য যাচাই। এই তুমুল হযবরল প্রতিযোগিতার মাঝে যাদের ভাগ্য প্রসন্ন তারাই সুযোগ পায়। ভার্সিটি ভর্তির ক্ষেত্রে ভাগ্য অনেক বড় ফ্যাক্টর। পুরোটা পড়লে ক্লিয়ার হওয়া যাবে। স্যার, আমি এই বছরের প্রশ্নের pdf কপি attachment এ দিয়েছি যাতে আপনার মিলিয়ে দেখতে সুবিধা হয়। এমন প্রশ্ন করা হয়েছে যাতে ছাত্ররা সঠিক উত্তর না করতে পারে। General Knowledge থেকে যে প্রশ্ন করা হয়েছে তা সত্যিই আজগুবি। গত বছরের প্রশ্ন অনেক ভাল মানের হয়েছিল। সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন হয়েছিল। স্যার, এক ঘণ্টার এর MCQ পরীক্ষায় একজন ছাত্র সম্পর্কে কতটুকুই বা ধারনা পাওয়া সম্ভব? MCQ দিয়ে কাজ হত যদি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সীমিত হত। আমার মতে ভর্তি পরীক্ষা BCS এর সিস্টেমে হলে নিখুঁত ফল পাওয়া যেত। BCS এর সিস্টেমে মানে ধাপে ধাপে। প্রথমে MCQ , পরে লিখিত, পরে VIVA. অথবা লিখিত এবং MCQ উভয় পদ্ধতির সমন্বয়ে প্রশ্ন করা যেতে পারে। নরমাল MCQ পরীক্ষা দ্বারা কারো মেধা কিমবা Stability সুচারুরূপে পরিমাপ করা যায়না। ধরলাম একটা ভার্সিটিতে ৫০০ আসন। ১টা সিট এর বিপরীতে পরীক্ষার্থী ৪৫ জন, এর মানে ওই ৪৫ জন থেকে ১জন ভর্তির সুযোগ পাবে। তার মানে কি এই যে, বাকি ৪৪ জন পরীক্ষার্থী বাজে? তাদের কোন যোগ্যতা নেই? যোগ্যতা আছে বলেই তো তারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছে। কেননা পরীক্ষা দিতে হলে পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট এর উপর ভিত্তি করে একটা Range দেওয়া থাকে। যারা Range এর আওতায় তারা ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে। ধরলাম দুই বন্ধু সামি এবং সামিয়া উভয়েই ঢাবি এবং বুয়েট এ পরীক্ষা দিল। সামির ঢাবি তে সিরিয়াল ৪৩০ আর বুয়েট এ ২২০। সামিয়া ঢাবি তে চান্স পেলনা কিন্তু বুয়েট এ ২য় হয়ে গেল। এরকম কিন্তু অহরহ ঘটে। তাহলে কোনটাকে সঠিক মেধা তালিকা বলব? ঢাবি নাকি বুয়েট? নাকি দুইটাই? আমার এই যুক্তি হয়ত অনেকেই মানবেন না। আসলে এরকম যুক্তি কখনো আসতো না যদি এই হযবরল ভর্তি প্রক্রিয়া না থাকত। বিশ্বের অনেক দেশেই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভার্সিটি ভর্তি চলে, কিন্তু এই দেশে এটা হয়ে গেছে একটা অভিসাপ এর নাম। আমি মেডিকেল আর বুয়েট এর কথা বলছিনা। কারন ওখানটায় কাহিনি আরও চরম। ভর্তি প্রক্রিয়া হযবরল হওয়ার প্রধান কারন হল অনিয়ন্ত্রিত SSC এবং HSC এর ফলাফল। প্রতি বছর পাশের হার এবং GPA এর হার হু হু করে বাড়ছে। গতবারের চেয়ে এইবার SSC এবং HSC দুটোতেই GPA বেড়েছে দ্বিগুনের চেয়েও বেশি। দেশের এসব Asset জায়গা দিবে কই তা না ভেবেই চক্রবৃদ্ধি হারে চলছে A+ Production. তাদের মেইন উদ্দেশ্য পকেট ভারী করা অর্থাৎ আকামা কিছু Private ভার্সিটির সিট ফিলাপ করা। বড় ভাইয়েরা তামাশা করে বলে, তোমরা কি রে ভাই? ভার্সিটি চান্স পাওয়া তেমন কঠিন কিছু নাকি? কিন্তু ভাইসব, তোমাদের সময় আর আমাদের সময় এখন আর এক না। সময় অনেক বদলেছে। এখন Private ভার্সিটিতেও পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়ে তবেই ভর্তি হতে হয়। সেখানেও এই Golden A+ দের রাজত্ব। আর লাখ লাখ টাকার অংক তো আছেই। A+ দের ভিড়ে A Grade পাওয়া ছেলেটা যখন কোথাও চান্স পেলনা তখন আশাবাদী বাবার মুখ মলিন হতে বেশিক্ষণ লাগেনা। ছেলের মুখের দিকে চেয়ে বাবা শেষপর্যন্ত বলেন, চিন্তা করিস না। ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে। private এ ভর্তি করিয়ে দিব। কিন্তু ছেলে তো জানে, বাবার সে সামর্থ্য নেই। আছে বটে, কিন্তু পেছনে আরেকটা ভাই। ওর পড়াশুনার জন্য তো আরও বেশি টাকা লাগতে পারে।এখনি যে অবস্থা, ক’বছর পর কি অবস্থা হয় কে জানে। শেষমেশ জাতীয় ভার্সিটিতেই তার জায়গা করে নিতে হয়। সেশান জটের কারনে জাতীয় ভার্সিটির কি অবস্থা তা তো আর বলা লাগেনা। আর নোংরা রাজনীতির আখড়া সেই জাতীয় ভার্সিটি। অনার্স শেষ করতে করতেই মাথায় টাক পরে যায়, মাস্টার্স শেষ করতে করতে সরকারি চাকরির বয়স শেষ! শেষ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন। এর নাম পড়ালেখা? এর নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ? এ কোন দেশে বাস করছি আমরা? যেখানে মানুষের স্বপ্নকে অংকুরেই মেরে ফেলা হয়? HSC পরীক্ষার পরেই শিক্ষার্থীদেরকে দৌড়ের মাঠে এনে হাজির করা হয়। লম্বা দুই মাস পরীক্ষা দেওয়ার পর সবাই রেস্ট নিতে চায়। তা না, খিদের জ্বালায় অস্থির ছেলেমেয়েদেরকে যুদ্ধের ময়দানে এনে হাজির করানো হয়। এক ফুঁটা পানি পর্যন্ত দেওয়া হয়না। যতক্ষণ সমর প্রস্তুতি এবং চূড়ান্ত যুদ্ধ শেষ না হবে ততক্ষন তাদের নিস্তার নেই। ফাইট চালিয়ে যেতে হবে। তাও আবার বাঘা বাঘা Golden A+ দের সাথে। ভর্তির ক্ষেত্রে ভাগ্যের একটা প্রভাবের কথা বলেছিলাম। আমার এক ভাই বলেছিলেন, ‘ভাগ্য কি? ভাগ্যকে তুমি দেখতে পাও?’ উনার বন্ধু উঠে বলেছিলেন, ‘ তরে তুই দেখতে পাস? তোর আত্মা দেখসস কোনদিন?’ ভর্তি পরীক্ষায় SSC এবং HSC এর ফলাফল এর আলাদা যে মার্ক থাকে তাতে যারা এগিয়ে থাকে তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চান্স পায় তার মানে যাদের ফলাফল যত ভাল তাদের চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি কেননা অন্যরা তাকে টপকিয়ে যেতে হলে MCQ তে অনেক ভাল করতে হবে। HSC ও SSC এর মার্কের প্রভাবটা তখনই প্রয়োগ করা যেত যখন ওই পাবলিক পরীক্ষাগুলো স্ট্রিক্টলি নেওয়া হত, যদি পেপার জলদি জলদি দেখার জন্য পরীক্ষককে প্রেসার দেওয়া হত না। এখন যে কেউ A+ পেয়ে যায়। যে কেউ না, যারা ভাল ছাত্র তারাই পায় কিন্তু মূল কথা হল এই A+ এর গুনগত মান কতটা ভাল? বাংলাদেশে টাকার মূল্যমান যেমন দিনদিন কমছে, তেমনি ওই A+ এরও। এই দেশে খারাপ জিনিসগুলো দিনদিন বাড়ে আর ভাল জিনিস কমে! যারা A+ পায় তারা আসলেই কি সবাই A+ পাওয়ার যোগ্য? বর্তমান সময়ে A+ এর যে মান সে দিক থেকে তারা সবাই যোগ্য। কিন্তু গ্রেডিং সিস্টেম যখন শুরু হয়েছিল তখনকার সময়ের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। A+ জিনিষটা ছিল সোনার হরিণ আর গোল্ডেন এ+ ছিল প্লাটিনামের হরিণ। গোল্ডেন এ+ জিনিসটা এখন প্লাটিনাম না থাকলেও সোনার হরিণ পর্যায়ে ঠিকই আছে। তখনকার সময় কেউ একজন এ+ পেলে সারা থানার মানুষ তার নাম জানতো, মাসের পর মাস তাকে নিয়ে আলোচনা হত। আর এখন পাশের ফ্ল্যাটের খবরও ওই ফ্ল্যাট এর ভেতরেই থেকে যায়। ফ্ল্যাট এর বাইরে গেলেও আন্টিদের অনেকে ভ্রু কুঁচকে বলেন, “ ও মা! সেকি, গোল্ডেন পাওনি?” নীতি নির্ধারকেরা যে বছরে বছরে এতসব এ+ প্রোডাকশন করাচ্ছেন, তাদের মথায় কি এই চিন্তা নেই যে এসব প্রডাক্ট এর জায়গা দিবেন কোন গুদামে? শুধু এ+ না, পাশের হারও হু হু করে বাড়ছে প্রতি বছর। টিভি, পত্রিকায় প্রতি বছর কমন হেডলাইন আসে, ‘ এবার রেকর্ড পাশের হার!’ প্রতি বছরে বছরে রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছে ! কি আজগুবি কথা, তাহলে এর নাম রেকর্ড কেন? রেকর্ড হবে রেকর্ড এর মত, যা কিনা ভাঙ্গা অত সহজ হবেনা। পেপার দেখার ক্ষেত্রে এমন কিছু কিছু নীতিমালা দেওয়া হয়েছে যেগুলো নিতান্তই হাস্যকর। আমার মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মায়ের কাছ থেকে PSC পরীক্ষার পেপার দেখার কয়েকটি নীতিমালা শুনে তো আমি হাসতে হাসতে শেষ! ইংলিশ ছড়ায় ১০ মার্ক। প্রতি ছয়টা বানান কাটা গেলে নাকি ১ মার্ক কাটা, ৫টা কাটা গেলেও কোন মার্ক কাটা যাবেনা! ১২টা বানানে ২ মার্ক কাটা, ১১ টা ভুল গেলেও সেই ১ মার্ক’ই কাটা যাবে! তার মানে যে ছেলে একটা বানানও ভুল করলনা সে পেল ১০ আর যে ৫ টা ভুল করল সেও পেল ১০! আমাদের সময় মনে আছে, প্রতি বানানে স্যার এক মার্ক করে কাটতেন। প্যারাগ্রাফ, লেটার, ডায়লগ এসবের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাকি সব শিক্ষককে বলে দিয়েছেন কলম খুলে ধুমছে মার্ক দেওয়ার জন্য। শুধু PSC না, সব পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রেই এসব আজগুবি কিছু নিয়ম থাকে। পেপার দেখার জন্য পরীক্ষককে মাত্র কয়েকদিন সময় দেওয়া হয়। কম সময়ের ভেতরে পেপার দেখতে গিয়ে টিচাররা তারাহুরা করেন, কেউ কেউ ভাই ভাতিজা কে দিয়ে পেপার দেখিয়ে নেন। আর সেই প্রভাব গিয়ে পড়ে ছাত্রদের ওপর। পরে রিএক্সামিন করেও লাভ হয়না কারন ওগুলো নিতান্তই লোক দেখানো। বোর্ড এর খবর কে জানে, তারা আসলেই রিএক্সামিন করেছে কিনা। স্যার, পাবলিক পরীক্ষাগুলো যত স্ট্রিক্টলি নেওয়া যায়, এ+ এর হার যতই কমানো যায় ততই মঙ্গল। ভার্সিটি ভর্তির এই চাপটা অন্তত অনেক কমবে। আরেকটা কথা হল সরকার থেকে ভার্সিটিগুলোর সিট বাড়ানোর কোন উদ্যোগই নেওয়া হয়না। ভর্তি পরীক্ষা সব জায়গায় অনেক সুন্দরমত স্ট্রিক্টলি নেওয়া হয়, কিন্তু গোঁড়ায়’ই যে গলদ! SSC আর HSC তে যে অনিয়ম হয়ে এসেছে! ভর্তি পরীক্ষায় এসে নিয়মানুবর্তিতা দেখিয়ে এখন কি ফায়দা? তাছাড়া এক ঘণ্টার এক পরীক্ষায় কি করে নির্ধারণ করা সম্ভব কে ভাল আর কে মন্দ যেখানে হাজার হাজার প্রতিযোগী? ভর্তি পরীক্ষাটা হয়ে গেছে টি২০ ম্যাচ এর মত, কার ভাগ্যে কি আছে বলা যায়না। সচীন টেন্ডুলকারও তো অনেকগুলো শুন্য মেরেছে, তার মানে সে খারাপ খেলোয়াড়? ভার্সিটি তে চান্স পেলনা বলে সে খারাপ ছাত্র?
স্যার, এবার আমার নিজের কথায় আসি। আমি সিলেট এমসি কলেজ থেকে ২০১১ তে HSC দিয়েছি। ২০০৯ এ SSC তে ভাল ফল করার পর আমার পড়াশোনার প্রতি উৎসাহ দ্বিগুণ পরিমান বেড়ে যায়। আর্থিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও নিজের ইচ্ছা এবং উৎসাহের কারনে এমসি কলেজে এসে ভর্তি হই কারন মফঃস্বলে তেমন ভাল টিচার নাই, তাছাড়া সাথের বন্ধুরা অনেকেই সিলেটে এসেছে পড়তে, স্যাররাও সিলেট আসার পরামর্শ দিলেন। রাজনীতির আখড়া হোস্টেল ছাড়া স্বল্প টাকায় থাকার আর কোন জায়গা পাইনি। অখানেই থাকা শুরু করি। প্রথম দিকে ভালই যাচ্ছিল সময়। HSC তে উঠার আগে আমি জানতাম না যে পড়ার এত প্রেসার। ছোটবেলা থেকেই আদরে বড় হয়েছি তাই নতুন জায়গায় এসে নিজেকে কেমন অসহায় লাগত। আমি ওই পরিস্থিতি মোকাবেলায় একেবারেই ম্যাচুরড ছিলাম না। পাশাপাশি পড়ার প্রচুর চাপ। আমি মানুষটা এমন যে আমার মুখস্তবিদ্যা একদম নাই। কোন একটা বিষয় একবার মনোযোগ দিয়ে পড়লে বুঝতাম কিন্তু ওই বিষয় কিমবা প্রশ্নটা আয়ত্ত করে মুখস্ত করার ধৈর্য আমার একদম নাই। অনেকেই সেটা পারে, কিন্তু আমি পারিনা। ক্লাস 5 ও 8 এ ট্যালেন্টপুল বৃত্তি, SSC তে গোল্ডেন এ+ এগুলুর কোনটাতেই আমি মুখস্ত করিনি কোনকিছু। কিন্তু HSC তে এসে ঘটল বিপত্তি। এখানে সবকিছু সাবজেক্টিভ, মুখস্তনির্ভর। এখন অবশ্য সেই সিস্টেম নেই, সৃজনশীল পদ্ধতি হয়েছে। প্রথম তিন মাস চট করে কেটে গেল চোখের পলকে। চলে আসল first term পরীক্ষা। আমার প্রস্তুতির অবস্থা তেমন ভালনা, সময়ই পাইনি তেমন। আমার সহপাঠীদের দেখে হিংসা হত যারা নিজের বাসায় থেকে পড়তে পারত। বাড়ির প্রতি গভীর একটা টান সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। ঠিকমত পড়তে পারতাম না। স্যার এর বাসায় প্রাইভেট পড়তে যেতে ভাললাগতনা। বোরিং। কলেজে ক্লাস হয়না ঠিকমত, তাই স্যারদের বাসাই ছিল সব ছাত্রের ভরসা। কলেজের স্যাররাই নিজের বাসায় পড়ান। স্যার, সরকারি কলেজগুলোর অবস্থা চরম খারাপ। প্রতি বছর এমসি কলেজে ৩০০ শুধু গোল্ডেন এ+ ভর্তি হয়। আর এই ৩০০ এর ৪০%-৫০% HSC তে এ+ পায়, বাকি ৩০-৪০% এর রেজাল্ট খুব খারাপ মানের হয়, আর ৫-৮% ফেল করে। কিন্তু এদের সবাই ছিল গোল্ডেন এ+। অন্যদিকে বেসরকারি কলেজগুলোতে তুলনামূলক ভাল পড়া হয়। ফলে SSC ফল যেমনই থাকুক, HSC তে ছাত্ররা ভাল করে।
আমার পড়ার চাপ আর সহ্য হলনা। একদিকে মুখস্ত তেমন করতে পারিনা, অন্য দিকে এত এত পড়া। তাছাড়া সময় ও কম। হতাশা বাড়তে লাগল। বাড়ির প্রতি টান বেড়ে গেল অনেক। first term এর দুটো পরীক্ষা ভালই দিলাম, কিন্তু প্রস্তুতি ভাল না থাকায় পরের পরীক্ষা ভাল হলনা। মন অনেক খারাপ হয়ে গেল। খুব অসহায় লাগল নিজেকে। রাতের বেলা পরবর্তী পরীক্ষার জন্য পড়ব দূরের কথা, হাতাসায় আমার বুক ফেটে গেল। সান্ত্বনা দেওয়ার মত কেউ ছিলনা। তখনই ঠিক করলাম পরের দিন পরীক্ষা না দিয়ে বাড়িতে চলে যাব। করলামও তাই। বাকি তিনটা পরীক্ষা দেওয়া হলনা। রেজাল্ট আসল ফেল। সারা জীবন এত ভাল রেজাল্ট করে এই ফেল আমার পক্ষে মেনে নেওয়া অনেক কষ্টের ছিল। পড়ার প্রতি একটা ভিতি জন্ম নিতে লাগল। উদাসীন হয়ে গেলাম। বাড়িতে কয়েক সপ্তাহ কাটিয়ে শহরে গিয়ে আর মন বসছিল না। স্যারদের বাসায় বেস কয়েকদিন ধরে যাওয়া হয়নি। সহপাঠীরা অনেক এগিয়ে গেছে। স্যার এর বাসায় গিয়ে পড়ার তাল মিলাতে পারলেম না। হতাশা বাড়তে লাগল। দিনদিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে লাগল। সব বিষয়ে অন্যদের থেকে পিছিয়ে। এর মাঝে ঘটল আরেক বিপত্তি। হোস্টেলে না জেনে রাজনৈতিক দলের নেতা এক বড় ভাই এর সাথে অভদ্রভাবে কথা বলায় আমাকে হোস্টেল থাকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হল। একদিকে মানসিক যন্ত্রণায় আছি এর ওপর ওই ঘটনা। আমার অবস্থা তখন চরম খারাপ। সন্ধ্যায় মিটিং ডেকে আমাকে ওই বড় ভাই সহ আরও কয়েকজনের পা ধরে মাফ চাওয়ানো হল। অপমানে জ্বলতে জ্বলতে আমি হোস্টেল থেকে নিজ ইচ্ছায় বের হয়ে আসি। চলে যাই বাড়িতে। ১ মাস অতি বিষণ্ণতায় কাটানোর পর সিলেটে একটি মেসে উঠি। তখনকার সময়টা আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সময়। কি জ কষ্টে গেছে প্রতিটি মুহূর্ত আমি জানি। মেসে থাকতে পারিনি এক মাসের বেশি। পড়িনা তো মেসে থেকে টাকা নষ্ট করার কি দরকার? পড়াশুনার আগ্রহ এবং উৎসাহ আমার থেকে চলে গেল। বই এর দিকে তাকালে আমার ভয় করত। কীভাবে গ্যাপ পরা জিনিসগুলো কভার দিব এই চিন্তা সারাক্ষন আমাকে কাঁদাত। হু হু করে জোরে জোরে কাঁদতাম। এক দিকে গ্যাপ হওয়া পড়া, অন্যদিকে সামনের অনেক পড়ার বাকি। কিভাব কি করব বুঝতে পারছিলাম না। আম্মা আমার এই পরিস্থিতি দেখে শত বাধা সত্ত্বেও সিলেট বাসা ভাড়া নিয়ে আসতে বাধ্য হলেন। কিন্তু ফল কিছুই হলনা। আমার হতাশা দিনদিন বাড়তেই লাগল। পাগলামি শুরু করতে লাগলাম। জেদি হয়ে গেলাম। বাসন-কোসন ভাংতাম, যা ইচ্ছা করতাম। পড়াশোনা থেকে অনেক দূরে সরে গেলাম। কয়েকজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখালেন আব্বু আমাকে জোর করে। কলেজের টার্ম পরীক্ষা, ইয়ার চ্যাঞ্জ এসব দেওয়া হলনা। টেস্ট পরীক্ষায় কোনমতে পশ করলাম। মূল পরীক্ষায় গ্রেড আসল 4.00। এর বেশি আশাও করিনি। ওটাই আমার জন্য তখন সোনার হরিণ। ওই খারাপ পরিস্থিতিতে 4 যে পেয়েছি সেটাই সান্ত্বনা। রেজাল্ট এর দিন আগের কথা সব মনে করে সারা দিন কাঁদলাম।
আসল ভার্সিটি ভর্তির কোচিং পর্যায়। বন্ধুরা সবাই কোচিং করছে, মনের সুখে এ+ পাওয়ার আনন্দে পড়ছে। আমি রেজাল্ট এর পর একদিন বড়জোর ক্লাসে গিয়েছিলাম। সবাই ভর্তি বিষয়ে অনেক সচেতন। আমি উদাসীন। কোথায় কোথায় ফর্ম কাটতে হবে তাও ঠিক করিনি। শুধু শাবির ফর্ম কাটলাম। আমার প্রস্তুতি ‘শুন্য’। এক অক্ষরও পড়তে পারিনি। পরীক্ষার পর ২,৩ মাস কিভাবে কেটে গেল বুঝেই উঠলাম না, সেই সাথে শুরু হয়ে গেল ভর্তি পরীক্ষার সিজন। পরীক্ষা দিয়ে waiting এ টিকলাম কিন্তু শেষপর্যন্ত ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলাম না। ২য় বার পরীক্ষা দেওয়ার কথা ভাবলাম। সারা বছর পড়লাম ভাল করে। আশাবাদি ছিলাম এবার কোথাও হবে। কিন্তু উল্টাটা হল। এবার পরীক্ষার্থী গতবারের চেয়ে অনেক অনেক বেশি, তাছাড়া এ+ এর হারও দ্বিগুণ। আমার তো মাত্র 4.00 point. তাছাড়া ২য় বারের পরীক্ষার্থী হিসেবে মার্কের পরিমান নিয়মিতদের থেকে গেল আরও অনেক কমে। এক সিটের পেছনে যেখানে ৩০ জনের লাইন যাদের ৯০% এ+ এবং নিয়মিত সেখানে আমার খারাপ রেজাল্ট নিয়ে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? এবারও কোথাও হলনা। মন গেল ভেঙে। আমার সান্ত্বনা একটাই, আমার রেজাল্ট খারাপ তাই হয়নি। তাছাড়া এই বছরের প্রশ্নও তেমন ভাল মানের হয়নি ( শাবি এ-ইউনিট )। আর ঢাকা, জাহাঙ্গিরনগরে তো প্রতিযোগিতা আরও বেশি, রেজাল্ট এর মার্ক এর হিসাব আরও বেশি। ওখানটায় চান্স পাবনা আগেই জানতাম। আর্টস এর ছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা অনেক কম, তাদের চান্স পাওয়াও অত কঠিন না। স্যার, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যেবস্থা কাঁচা ডিম জোর করে খাওয়ানোর মত। কেউ খেতে চায় না তবুও জোর করে খাওয়ানোর মহড়া চলে। আমি তো অবাক হই যখন দেখি এই আনকোরা শিক্ষা ব্যাবস্থার ক্লাস টেন এর বাংলা বই এ প্রমথ চৌধুরি এর ‘বই পড়া’ প্রবান্ধটি অন্তর্ভুক্ত! এই প্রবন্ধে আনকোরা শিক্ষা ব্যাবস্থারই খারাপ দিক তুলে ধরেছেন লেখক। স্যার, আমার বন্ধুরা অনেকেই বুয়েট, মেডিকেলে পড়ছে। আমারও স্বপ্ন ছিল, আমার মা বাবারও স্বপ্ন ছিল তেমনই। আমিও তাদের মতই এমসি কলেজেরই ছাত্র। তাই আমার মা বাবার স্বপ্ন দেখাটা ভুল ছিলনা। আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে দিছি। আমি অন্য অনেকের মত পড়তে পারিনি, রেজাল্ট খারাপ তাই চান্স পাইনি। কিন্তু যারা আমার চেয়ে ভাল রেজাল্ট করেও চান্স পায়নি তারা কিভাবে সান্ত্বনা পাবে? হাজার হাজার এ+ জন্ম দিয়ে তাদেরকে যদি ভাল যায়গায় পড়ার সুযোগ না দেওয়া হল তাহলে কি মূল্য থাকল এই এ+ এর? কি দরকার তাদের এই মিছিমিছি স্বপ্ন দেখানোর? একটা নরমাল মানের ছাত্র যখন ভাল ফল করে তখন তার প্রত্যাশা অনেক গুন বেড়ে যায়। স্যার, আমার স্থান হয়েছে সেই এমসি কলেজেই। গত বছর ফিজিক্স এ ভর্তি হয়েছিলাম। জাতীয় ভার্সিটি এক আজব চিজ। এখানে সিট খালি থাকা সত্ত্বেও মাইগ্রেশন করা যায়না। আমার ইংলিশ পড়ার ইচ্ছা ছিল। ইংলিশ এ সিট এখন খালিও আছে। ভর্তির সময় ছিলনা। মা বাবা বলতেছেন জাতীয় ভার্সিটিতে অনেক সময় লাগে, প্রাইভেটে ভর্তি করে দিবেন। কিন্তু সিলেট এর প্রাইভেট ভার্সিটিগুলো তো তেমন মানসম্পন্ন না। আর ঢাকায় থাকা খাওয়ার অনেক টাকা যাবে যা বাহন করা সম্ভব না। তাছাড়া পেছনে ছোট একটা ভাই আছে। জানিনা কি হবে, কি পড়ব। ওসব নিয়ে এখন আর ভাবিনা। ভাল্লাগেনা ভাবতে। গ্রামে গেলে লোকেরা যখন জিজ্ঞেস করে, ‘ কই ভর্তি হইছ ? মেডিকেল না বুয়েট? ‘ তখন মুখ মলিন করে চলে আসা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। তাছাড়া এমসিতে ইন্টার পড়ে আবার এমসিতে ফিরে যাওয়া কি যে অপমানকর, তা আমি টের পাচ্ছি ভালভাবেই। স্যার, এখনই ভর্তির এই করুন অবস্থা, দুই চার বছর পরে কি হবে কে জানে। স্যার, আমার তো যা হওয়ার হল, ছোট ভাইটার যেন এরকম কিছু না হয়। স্যার, আপনারা কিছু একটা করুন, প্লিজ।। ছেলেমেয়েদের এই কষ্টের হাত থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করুন। স্যার, লেখায় কোন বেয়াদবি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার এবং আমার বন্ধুরা সবার জন্য দোয়া করবেন।



ভাইয়েরা, এই স্যার হলেন আমাদের সবার প্রিয় জাফর ইকবাল স্যার। স্যার এর মেইল আইডি নেট থেকে পেয়েছি। জানিনা কতটুকু সঠিক। আর মনে হয় এটা ভার্সিটির অফিস এর মেইল। পারসনাল না। যাই হোক, আপনারা কেউ পারলে আমার কথাগুল স্যার পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যাবস্থা করেন। আমি চাই এই পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ আসুক। আমার লেখায় ভুল থাকতে পারে, না জেনে ভুল কিছু লিখে ফেলতে পারি, আমি সরল ভাষায় শুধু আমার মনের কথাটুকু বলার চেষ্টা করেছি। কেউ নেগেটিভ কমেন্ট করবেন না প্লিজ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:৩১
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×