somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Léon : The Professional - প্লেটোনিক প্রেম নিয়ে Luc Besson এর শিল্পকর্ম

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন দিনরাত শুধু একটা জিনিস ভাবতাম, মানুষ মরে কেনো? কেনো তারা অমর হতে পারে না? এখন আমি জানি কিছু মানুষ কখনোই মরে না। তারা বেঁচে থাকে তাদের কাজে।
আজ হরতালের কারণে অফিস না গিয়ে সারাদিন বাসায় বসে মুভি দেখেছি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে Léon: The Professional. এই মুভিটি দেখতে গিয়েই মনে হচ্ছিলো Jean Reno একদিন ঠিক-ই চলে যাবেন কিন্তু বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজে। তিনি এই মুভিতে যা করেছেন সেটির মূল্যায়ন করা আমার মত ক্ষূদ্র মানুষের সাজে না। কিন্তু তিনি যে অমর হয়ে যাবেন এটি আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি।
কাহিনি সংক্ষেপঃ Mathilda এমন এক পরিবারের সন্তান যার বাব ড্রাগ ব্যাবসার সাথে জড়িত। সৎ মা, সৎ বোন আর ছোট একটি ভাই নিয়ে তাদের সংসার। মাদক ব্যাবসায়ী বাবা, উশৃস্খল মা আর খামখেয়ালী বোনের কারণে মাঝে মাঝে জীবন তার জন্য দীর্ঘ মনে হলেও ভাইয়ের সাথে তার সখ্য বন্ধুর মত। হঠাৎ একদিন পুলিশ ড্রাগ ব্যবাসার সাথে সম্পৃক্ততার জন্য তার বাবা, সৎ মা আর বোন এমনকি তার নিষ্পাপ ছোট ভাইটিকেও মেরে ফেলে। ঘরের বাইরে থাকার কারণে বেঁচে যায় Mathilda । আশ্রয় নেয় তার প্রতিবেশী Leon এর ঘরে। স্বল্পবাসী Léon পেশায় একজন গুপ্ত হত্যাকারী আর শুরু থেকেই দুরত্ব রেখে চলতে চায় কিন্তু Mathilda এর নিষ্পাপ মনের কাছে হার মেনে নেয়। স্বীকার না করলে Mathilda এর প্রেমে পরে, স্পষ্ট করে বললে প্লেটোনিক ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার জন্যই একদিন তুলে নেয় অস্ত্র Mathilda এর পরিবারের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে। যুদ্ধ শেষে শেষ হাসিটা কার হয়? জানতে হলে এখনি দেখতে বসে যান Léon: The Professional.



আলোচনা/সমালোচনা/রিভিউ/নিজ অনুভূতি : নির্লিপ্ততা মানব জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ বলে মানি। অভিনয়ের ক্ষেত্রেও কথাটি সমানভাবে সত্য। Jean Reno, Léon চরিত্রটির মাঝে সেই জিনিসটি অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। Mathilda এর শুরু থেকেই নাছোরবান্দা আবদার বা আক্রমণে নিজেকে রেখেছিলেন ঘুটিয়ে। নির্লিপ্ত ছিলেন সবকিছু থেকে। একসময় মনে মনে আত্মসমর্পণ করলেও Mathilda কে বুঝতে দেননি একদম শেষ পর্যন্ত। পুরো ছবিতে তাকে হাসতে দেখেছি শুধু একবার। মুখের চামড়া না কুচকে সবসময় একই এক্সপ্রেশানে মানুষ কিভাবে পুরা ছবি করতে পারে আমি সেটা ভেবে অবাক হয়। Natalie Portman এর কথা আর কি বলবো? ১৩ বছরের মেয়ে যদি এইরকম অভিনয় করে তাহলে তো খোদ ভারতমাতার অসামাণ্য সুন্দরী নায়িকাদের তো তা মা ধুয়ে পানি খাওয়া উচিত। সেখানে আমাদের দেশের নায়িকাদের তো কথা না হয় নাই বললাম।
সিনেমাটির সবচেয়ে সুন্দর অংশঃ এইখানে আলাদা করে বলার কিছু নাই, থাকতে পারে না। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর সুন্দর দৃশ্য ছিলো যখন Léon তার ভালোবাসার মানুষটির কথা বলতে থাকে আর দুফোটা জল দু’চোখের পাতায় পানি জমে। Mathilda এর চোখ বেয়েও গড়িয়ে পড়ে জল। দুজনেই জানে তাদের ভালোবাসার মানুষকে তারা কখনোই পাবেনা। স্বপ্ন হচ্ছে মানুষের বেঁচে থাকার টনিক। সেই স্বপ্ন-ই যদি দেখার আগেই মরে যায় তখন মনকে কি বলে বোঝানো যায়। উফ এই দৃশ্য নির্লিপ্ত থাকার জন্য সাধনার দরকার বলে আমার ধারণা।



সিনেমার কোন জিনিসটি সবচেয়ে বেশি খারাপ লেগেছে : এই ব্যাপারে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে, কিন্তু আমার যেতা একদম ভালো লাগেনি সেটি হচ্ছে Mathilda এর Léon কে সেক্সুয়ালি সিডুয়স করার চেষ্টা, তার কাছে আত্মসমর্পণ করার চেষ্টা। মানছি বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের পুরা সিস্টেম পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্তু Léon আর Mathilda দুই তরফ থেকেই যদি প্রেম জিনিসটাকে প্লেটোনিক দেখানো হলে মনে হয় আরো বেশি ভালো হতো।

টেকনিক্যাল ত্রুটি : এই ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণরুপে ব্‌ক্‌ল্‌ম্‌ । তবু যদ্দুর বুঝলাম তাতে তেমন কোন ভুল চোখে পড়েনি। ১৯৯৪ সালের মুভি হয়েও কেনোজানি মুভি দেখে চোখে বেশ আরাম লেগেছে। সে হিসেবে বলতে হয় সিনেমেটোগ্রাফী অসাধারণ পর্যায়ের। ডায়লগ ও বেশ ভালো লেগেছে তবে ঐ যে হিন্দি সিনেমার কারণে কিনা জানি না, যদি কিছু জায়গায় ডায়লগ আরো একটু রোমান্টিক হতো আরো বেশি ভালো লাগতো।



পরিশিষ্ট : যদ্দুর মনে পরে ববি দেউল আর রানী মুখার্জীর এইরকম একটি সিনেমা ছিলো “বিচ্ছু” নামে। ঐটি কিছু লেখা মানে এই পোস্টটিকে নোংরা করে ফেলা। তবুও কিছু মনের কথা বলি। Léon: The Professional. দেখার আগে থেকেই জানতাম এটি থেকেই “বিচ্ছু” মুভিটি নকল করা হয়েছে। সে হিসেবে সম্পূর্ণ ঘটনা জানার পরেও মুভিটি দেখে যেই আনন্দ পেয়েছি সেটির সম্পূর্ণ দাবীদার ডিরেক্টর সাহেব আর কলাকুশলীরা। দেখতে দেখতে এমনো সময় হয়েছে যে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম এই মুভির কাহিনি আমি আগে দেখেই জানি। একবারো মনে হয়নি মুভিটির চিত্রায়ন অনেক দীর্ঘ হয়েছে। ববি দেউলের অভিনয়কে যদিও কোনরকম চালিয়ে নেওয়া বলা যায় গ্রেস মার্ক দিয়ে কিন্তু Mathilda এর জায়গায় রানীকে কোনভাবে মেনে নিতে পারলাম না। না অভিনয়ে না লুকে। অরিজিনাল মুভিকে নষ্ট করাটা ভারতীয়রা রীতিমত পান্তাভাত করে ফেলেছে। কিন্তু বিচ্ছুতে যা করেছে সেটিকে ভাষায় সংজ্ঞায়িত করার মত শব্দ আমার জানা নেই। যাই হোক অনেক লিখে ফেলেছি। এইবার মনে হয় কীবোর্ডকে একটু শান্তি দেওয়া দরকার। তবে যেতে যেতে এইটূকু বলি উপরে যিনি থাকেন তিনি অদ্ভূত সুন্দর জিনিস সহ্য করার ক্ষমতা মানুষকে দেন নি।
এই মুভি শেষ করার পরে আমার বারবার মনে হচ্ছিলো উফ্‌ কেনো যে পৃথিবীটা এতো সুন্দর। কতবার মরতে চেয়েছি। কাপুরুষ বলে নিজের মনকে ধর্মের দোহাই দিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েও করিনি। এখন মনে হচ্ছে বেঁচে থাকাতা আসলে তো মন্দের না। কত কিছু এখনো দেখার বাকি, পৃথিবীতা কত সুন্দর। জীবনের প্রত্যেকটি মুহুর্তকে উপভোগ করুন। নিজের জন্য বাচুন। যখন নিজেকে ভালোবাসতে শিখবেন তখন পৃথিবীর সবকিছুই ভালোলাগবে অথবা যখন কাউকে ভালোবাসবেন তখন পৃথিবীর সবকিছুই আপনার ভালো লাগতে শুরু করবে।
পুনশ্চ : এই দীর্ঘ পোস্টে অনেক ভুল ভ্রান্তি থাকতে পারে, সেটি বানানগত অথবা পক্ষপাত দুষ্ট কিংবা অপরিপক্ক লেখা বা অতি আগেব জনিত। তাই সবশেষে সবার কাছে এইজন্য করজোড়ে ক্ষমা চাইছি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, জীবনে প্রতিটি মূহুর্ত উপভোগ করতে শিখুন এই কামনা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:১৭
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×