somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণ

০৮ ই মে, ২০২৩ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অবশেষে চলে গেলেন আমাদের ঘোর লাগা দুরন্ত কিশোর বেলায় ডুয়ার্সের চা বাগানের আবলুস কাঠের গড়নের দুর্দান্ত দেহবল্লভীর মদেশিয়া মেয়েদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া আর দুই বাংলার তাবৎ নারীদের সপ্নের চরিত্র ‘দীপাবলী’ সৃষ্টির নায়ক সমরেশ মজুমদার। দীপাবলী চা বাগান আর জঙ্গলের কত গল্প শুনেছি আপনার কাছে। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়ে কিংবা হবেওনা কোনদিন আপনার চোখে দেখেছি তা কৈশোর আর যৌবনে। আরো গোয়েন্দা কাহিনী আর কিশোর উপন্যাসে সপ্নের ঘোরে বুঁদ হয়ে থেকেছি আমরা। একে একে হারিয়ে ফেলছি বন্ধু প্রিয়জন আর সপ্নের সব মানুষদের। না সপ্নের মানুষ নয় সপ্ন দেখানো এই সব মানুষদের। ওপার বাংলার যে তিন মহারথী আমাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল; সুনীল,শির্ষেন্দু আর সমরেশ তাঁদের দু’জন আজ চির প্রয়াণে। সশ্রদ্ধা প্রিয় লেখক। আপনি চিরদিন আমাদের অন্তরে থাকবেন...।
***
(এক প্রগতিশীল সংস্কারমুক্ত নারী চরিত্রের নাম দীপাবলি। তিনিই সমরেশ মজুমদার রচিত সাতকাহন উপন্যাসের কালজয়ী চরিত্র। কি করুণ ট্র্যাজেডি থেকে উঠে এসে দীর্ঘকাল ধরে একাকিনী পাখির মতো সংগ্রাম করে যেতে হয়েছিল তাকে!)
প্রয়াত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। গত কয়েক দিন ধরেই অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে চলেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই লড়াইয়ে জিততে পারলেন না ‘কালপুরুষ’। সোমবার বিকেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।
ফুসফুস ও শ্বাসনালীর সংক্রমণ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই ভুগছিলেন তিনি। ২৫ এপ্রিল কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল। তবু চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন কখনও কখনও। রবিবার পরিবারের সূত্রে জানানোও হয়, কিছুটা ভালো আছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও শেষরক্ষা হল না।
গত দশ বছরের বেশি সময় ধরেই নাকি ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) সমস্যা ছিল তাঁর। সেই সমস্যার চিকিৎসাও হত। কখনও কখনও বাড়াবাড়িও হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় সমরেশ মজুমদারের মেয়ে দোয়েল সংবাদমাধ্যমকে জানান, তার আগের দু’দিন কেবিনে রাখা হয়েছিল প্রখ্যাত সাহিত্যিককে। কিন্তু শনিবারই বিকেলে তাঁকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা পরের ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখবেন বলেছিলেন। তার মধ্যেই ঘটে গেল অঘটন।
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, বেশ কয়েকটি স্ট্রোক (multiple right-sided embolic infarcts) হয়েছিল তাঁর। এছাড়াও বালবার পালসি (speech and swallowing impairment)-তে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। এর কারণেই ফুসফুস বিকল হয়ে যায় তাঁর। দীর্ঘ দিন সিওপিডি, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং myasthenia gravis-এর মতো সমস্যাও ছিল তাঁর। সব ক’টি সমস্যা একসঙ্গে এই কঠিন পরিস্থিতি ডেকে আনে।
সোমবার বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে তাঁর জীবনাবসান হয়।
৭৯ বছর বয়সি এই সাহিত্যিকের অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই বাংলার সাহিত্যিক মহলে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত উদ্বেগই ঠিক প্রমাণিত হল। ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’, ‘সূর্য ঢলে গেল’র শ্রষ্টা পাড়ি দিলেন অনন্তের পথে।


জি নিউজ থেকে জানা যায়, সমরেশ মজুমদারের ২০১২ সালেও একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেসময়ও তাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছিল। এই মুহূর্তে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

১৯৪২ সালে উত্তরবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্ম এই বিখ্যাত লেখকেরা প্রাথমিক শিক্ষা জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। তাই হয়তো তাঁর লেখায় ঘুরে ফিরে এসেছে জলপাইগুড়ির কথা।
ষাটের দশকের গোড়ায় তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) স্নাতক বিভাগে। এর পর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷
সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে সাতকাহন ( বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান নারীচরিত্র দীপাবলীর জন্ম হয় এখানেই), তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
তার ট্রিলজি 'উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ বাংলা সাহিত্য জগতে তাঁকে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী করেছে সেই সাথে বাংলা সাহিত্যকে করেছে দারুনভাবে সমৃদ্ধ। এই 'কালবেলা' নিয়ে সিনেমা তৈরি করেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। সাহিত্যকৃতির জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার-স একাধিক সম্মান পেয়েছেন তিনি৷
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৮ সালে সমরেশ মজুমদারকে 'বঙ্গবিভূষণ' সম্মান প্রদান করে। এছাড়া তিনি সাহিত্য অকাদেমি অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ পুরস্কার বিএফজেএ পুরস্কারসহ অজস্র সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে সাহিত্য জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল।
***
সুত্রঃ হিন্দুস্থান টাইমস, কালের কন্ঠ, আজ তক বাংলা, উইকি সহ অন্যান্য মিডিয়া।

* তাড়াহুড়োয় কিছু ভুল ভ্রান্তি রয়ে গেল পরে এডিট করে দিব।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২৩ রাত ১১:০১
২৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×