somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ কেন অনন্য~৫ঃ কাব্য,বাদ্য ও সুর? **আপনার ভাবনা কি?**

২৪ শে জুলাই, ২০২৩ সকাল ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


*ব্লগার মিরোরডডলকে খুব মিস করছি- এই পোষ্টটি তাঁকে নিবেদিত।
সতর্কীকরন; পুরো লেখাটা ভালভাবে অনুধাবন করে পড়তে/শুনতে ঘন্টার বেশী সময় লেগে যেতে পারে। খুব বেশী তাড়া থাকলে পরে পড়ুন।
লোচনাটা শুরু করার আগে আসুন একটু মুডটা তৈরি করে নিই। হালের বেশ জনপ্রিয় গান কিন্তু সেভাবে ভাইরাল হয়নি কেন জানেন; 'জীবন নিয়ে যারা গভীর চিন্তা করে, ইট কাঠ পাথরের নির্জীব এ শহুরে জীবনে যারা হাঁপিয়ে উঠেছেন- এ গান তাদের জন্য'।

শুনলেন? মাত্র একবার!! ফের শুনুন- শরিরটাকে হালকা করে চোখ বন্ধ করে শুনুন। কোথাও কি হারালেন? কোন মেঘেঢাকা বৃষ্টিভেজা পাহাড়ের জুম-ঘর কি কল্পনায় ভাসছে? কেন ভাসছে? এই শহুরে ব্যাস্ত ক্লান্ত জীবনটাকে কি খুব বেশী অসার মনে হচ্ছে? কেন মনে হচ্ছে?
সামান্য একটা গান,বাদ্য ও তাঁর সুর কেন আমাদের অন্য এক ভুবনে নিয়ে যাচ্ছে? এই গানটাই পৃথিবী যে কোন প্রাণীকে শোনান তাদের কোন ভাবাবেগের সৃষ্টি হবে না। ভাষাটাকে একপাশে সরিয়ে রাখি, শুধু সুর ও বাদ্যের কথা ভাবি; কেন সামান্য আন্দোলিত হয় না অন্যেরা?

এবার পুরো লিরিক্স গুলো সরিয়ে রাখি। শুধু বাদ্য আর সুর শুনি; (লিও রজার্সের 'দ্যা লোনলি শিপার্ড';)

উঁহু আসুন মনের সব চিন্তা দুঃশ্চিন্তাকে দূরে সরিয়ে পুরো মনযোগ নিবদ্ধ করে মিউজিকটার আরেকটা ভার্সান বড় পর্দায় দেখি আর শুনি;
The Lonely Shepheard
বলুনতো স্টেজশুদ্ধ প্রত্যেকটা মানুষ কিসের মোহে বা মায়ায় আবেগার্ত হয়ে পড়েছে?

রাসপুটিন গানটা শুনেননি এমনমানুষ কম আছে। তুর্কীর আদি 'কাতিবিমে'র গান থেকে বিশ্বের বহু ভাষায় মিউজিশিয়ানেরা এই সুর ধার নিয়েছেন। ধারনা করা হয় এই সুরটা পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় সুর;

মস্কোর 'আভতো রাইও'তে বনি এম এর 'রাসপুতিন' লাইভ।
এই গানটা শোনার সময়ে আপনি নিশ্চল বা স্থির হয়ে বসে থাকলেও আপনার অজান্তে শরিরের কোন অংশ আন্দোলিত হবার সম্ভবনা ৯০%

এইবার আরেকখানা গান শুনুন; মুল গানটা ম্যাডোনার

বড় পর্দায়ঃ
La Isla Bonita-The beautiful island by Alizée
এই গানটার কি কি বিষয় আপনাকে আকর্ষন করল? সৌন্দর্য ( এ বিষয়ে অন্য একদিন আলাপ হবে),সুর,তাল নাকি গানের কথা? দ্বীধায় ফেলার মত প্রশ্নটা- নয় কি? এজন্যইতো আমরা মানুষ আমরা ভিন্ন- অনন্য।

এবার আসুন ভালবাসার আবেগের ভেলায় একটু ভাসি;
(ওয়েটিং ফর ইউ -রিচার্ড মার্ক্স)

বড় পর্দায়ঃ Waiting for you...
এই গানটা একবার নয় বহুবার শুনতে হয়। কখনো নির্জন-নিশুতি রাতে, কখনো বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় কখনো কুয়াশা মাখানো হিমেল সকালে।
গান আপনাকে পরিবেশ পরিস্থিতি, বিশেষ মুহুর্ত ও বয়সের সাথে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রভাবিত করবে।


খন কথা হচ্ছে বাদ্য, সুর ও কাব্য মানুষকে কেন এত প্রভাবিত করে? কেন কাব্য, বাদ্য ও সুরে মানুষ ডুবে যায় কিংবা অন্যলোক হারিয়ে যায়?
কেন 'কেউ কথা রাখেনি' বা 'বনলতা সেন' এর মত কবিতা এত বেশী জনপ্রিয় হল? কেন প্রতিটা মানুষ 'কবর' কবিতায় মুষড়ে পড়ে আর কেনই বা 'বিদ্রোহী'র মত কবিতায় শরিরের লোম দাঁড়িয়ে যায়?
এমনকি মাত্র এক দেড় লাইনের একটা কবিতা মানুষকে আবেগার্ত করতে পারে, বিমোহিত করতে পারে কিংবা রক্তে আগুন জ্বালাতে পারে;
'নিউটন বোমা বোঝ, মানুষ বোঝ না?'~ হেলাল হাফিজ
'ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র খাব'~ রফিক আজাদ।
'অদ্ভুত উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ' ~ শামসুর রহমান
'এখন যৌবন যার- যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়' ~ হেলাল হাফিজ

কিংবা কোন বিজ্ঞাপনের একটা মাত্র কাব্যিক কথা কিভাবে মানুষকে টানতে পারে;
'জন্মই সৃষ্টির লক্ষ্যে'
'তামাক আর ফিল্টার-দুজনে দুজনার'

কবিতা আর সুর কিভাবে সৃষ্টি হল? কেনইবা আধুনিক মানুষ বা হোমোসেপিয়েন্স মানসিক বিকাশের অন্যতম অবলম্বনের জন্য কাব্য ও সুরের প্রয়োজন পড়ল?
বাকিটুকু ব্লগারদের কাছে জানার ইচ্ছে রইল- এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক মতবাদ কিংবা আপনার যুক্তি কি বলে?


মানুষের সবচেয়ে অনন্য গুণ কি এখানেই? এবিষয়গুলোই কি মহাবিশ্বের অন্য সব প্রানী থেকে ভিন্ন বা অনন্য করেছে? আপনার ভাবনা কি?

*আপনি হয়তো মিউজিকের সুরে বিমোহিত হওয়া বা মনযোগ দিয়ে গান শোনা কোন বানর কিংবা কুকুর অথবা অন্য কোন প্রাণীর রেফারেন্স দিবেন। মনে রাখবেন এরা সবাই প্রশিক্ষিত বা মানুষের সাথে থেকে মানুষকে নকল করার চেষ্টা করে।

বার শুধু আমার নয় সারা বিশ্বের অতীব জনপ্রিয় একজন শিল্পী ক্রিস রিয়ার এই গানটা শুনুনঃ


গানের কথাগুলো বাংলায় ভাবানুবাদ করার চেষ্টা করেছি;
গানের কথা মুলঃ ক্রিস রিয়া, ভাবানুবাদঃ শেরজা তপন

জ রাতে আমার ঘুম আসে নি
আসবেও না কোনদিন
অতীতের ভুলগুলো এসেছে
দেখ কিভাবে তারা একসাথে বসে আছে
আমার জানালার পাশে
আমার দরজার পাশে
আমি জানি আমি জানি
কেন তারা সবাই এখানে
তুমি, তোমার জন্য আমার প্রিয়তমা
আমার মিষ্টি, আমার মধুরতম প্রিয়া
কেন তারা এসেছে আমি জানি আমি জানি
ছাড় দেওয়া কতই না সহজ
তাইতো তুমি আমায় কখনো কষ্ট দাও নি
কিন্তু তোমার নিস্পাপতা আমাকে কষ্ট দেয়
যা ছিল তুলনাহীন তবে কষ্টদায়ক
ওহ, আমি নিশ্চিত কিছু ভুল করেছি
অন্ধকারে ঢাকা সেই দিনগুলোতে
আমি আজ রাতে সম্পূর্ণ উপলব্ধি করতে পারছি
এভাবেই রাতের পর রাত জেগে আমার ভুলের মাশুল দিতে হবে
তুমি, তোমার জন্য আমার প্রিয়তমা
আমার মিষ্টি, আমার মধুরতম প্রিয়া
আমি জানি আমি জানি
কেন তারা সবাই এখানে
তুমি, তোমার জন্য আমার প্রিয়তমা
আমার মিষ্টি, আমার মধুরতম প্রিয়া
কেন তারা এসেছে আমি জানি আমি জানি...

ক্রিস্টোফার এন্টন রিয়া বা ক্রিস রিয়ার এই গানটার একটা ভার্সান ৭৪ মিলিয়নবার দেখা হয়েছে- যেখানে আবেগঘন মন্তব্য আছে ৯০০০ এর উপরে। এর প্রায় প্রতিটা মন্তব্যই নোট করার মত। যা থেকে আমি অল্প কিছু মন্তব্য কোট করছি ( দুঃখিত যে মন্তব্যকারীদের সত্যিকারের আবেগকে আমি বাংলা ভাষায় সেভাবে ধরতে পারিনি)

১.আজ আমার প্রিয়তমার প্রয়ানের ৬৫ দিন পূর্ণ হয়েছে। যখন তার বয়স সবে ১৮ তখন তাঁর হাত ছুঁয়ে ছিলাম- আমার সেই হাত ধরেই সে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল। আজ ৩৭ বছর পরে, মনে হয় আমাদের ভালবাসা যৌবনের চেয়ে অতুলনীয়ভাবে শক্তিশালী। যখন আমি এই গানটি শুনি তখন নির্নিমেষে তাঁর ছবির দিকে তাকিয়ে থাকি- আমার সব গ্লানি ক্লান্তি ধুয়ে মুছে যায় অশ্রুধারায়। তাঁর বিচ্ছেদের প্রতিটা দিন প্রতিটাক্ষণ আমার কেটে যাচ্ছে এমনি করে…
২.ক্যান্সার তাকে না নেওয়া পর্যন্ত আমি আমার স্ত্রীর সাথে ৩৫টি চমৎকার বসন্ত কাটিয়েছি। আমি হাতে হুইস্কির গ্লাস নিয়ে এই গানটা শুনি তখন তাঁর সাথে আমার সেই সুখময় আনন্দের সময়গুলির কথা মনে পড়ে আর চোখের দুকোল বেয়ে অশ্রু ঝড়ে।
৩.আমি ছোটবেলা থেকেই এই গানটি পছন্দ করি। এই গানটি রিলিজ হওয়ার ২০ বছর পরে আমার জন্ম হয়েছিল এবং আমি এখন ২৫ বছর বয়সী। এই গানটি একটি মাস্টারপিস।
৪.এই গানটা রিলিজের সময়ে আমি আমার প্রিয়তমার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম। মহাপ্রভু ভালবেসে তাঁর কাছে তাঁকে ডেকে নিয়ে গেছেন। এখন আমি ভীষণ একা- কিন্তু যখন আমি এই গানটি শুনি, আমি আমার চোখ বন্ধ করে ওয়াইনের প্রতিটা চুমুকে তাঁকে বিস্ময়করভাবে অনুভব করি। সারারাত সে আমার পাশেই থাকে, হারিয়ে যায় না একবারও।
৫.আমি আমার বিষণ্নতার কারণে প্রতিটা সকালে প্রতিদিন এই গান শুনি। এই প্রশান্তিদায়ক সঙ্গীত আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমি কঠিন সময়কালে নিজেকে না হারিয়ে ফেলে ফের আমাকে ফিরে পাওয়ার জন্য শিল্পীকে ধন্যবাদ জানাই। আপনি যদি এ গানটা শোনেন তবে আমি আশা করি আপনি শান্তিতে ঘুমাবেন দারুণ এক সুখসপ্ন নিয়ে সতেজভাবে জেগে উঠবেন!
একটা গানের কথা সুর ও গায়কী মানুষের আবেগকে কিভাবেন না নাড়া দেয় তাঁর ক্ষুদ্রতম একটা উদাহরণ ক্রিস রিয়ার গানটা।

***
ব্লগারদের ভাবনার ও তথ্যের সাথে আমার ভাবনা ও তথ্য মিলিয়ে দ্বীতিয় পর্বে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৯
৩৯টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×