রাত তখন তিনটার কিছু বেশী হবে চিটাগাং ঢাকা হাইওয়ে।আমি ঢাকা অভিমুখে দুরন্ত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছি রাস্তার পাশের বাজার সব ঘুমিয়ে গেছে- উল্টো দিক থেকে মাঝে মধ্যে অন্ধকার ফুড়ে হেডলাইটের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে বড় বড় বাস আর লরি। আমার পেছন দিক থেকে অতিক্রম করে যবার সাধ্যি কারো নেই। আমি আলতো হাতে স্টীয়ারিং ধরে গাড়ি্র এক্সেলেটর চেপে ধরে আছি- গাড়ির গতির মিটার ১৪০ কিলোমিটার ছুঁয়ে যাচ্ছে মাঝে মধ্যে। এ রাস্তায় এত গতি বিপদজনক! আমার হাতে সদ্য আমদানী করা নম্বরপ্লেট বিহীন জাপানিজ সিডান কার। পোর্ট থেকে বেরিয়ে এই প্রথম ভেজাল ‘অকটেন’ গিলেছে বেচারা। তারপরেও এক্সেলেটরে পা ছোঁয়ালেই ছুটছে বুনো ষাড়ের মত।
****
আমার বাল্যবন্ধু ফিরোজ। তখন সে সদ্য যুবক ইন্টারমিডিয়েট পড়া অবস্থায় পারিবারিক অস্বচ্ছলতার জন্য বাংলাদেশ আর্মিতে নন কমিশন্ডে সৈনিক পদে চাকুরি পেয়েছিল। কয়েক বছরের পদোন্নতিতে এখন তাঁর পদবী সার্জেন্ট। ঢাকা ক্যন্টনমেন্টে পোস্টিং।
হঠৎ করে ফোনে জানাল ও নাকি হুট করে বিয়ে করে ফেলেছে। পাত্রিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বরন করতে হলে আমার সাহায্যের প্রয়োজন। তাঁর ঢাকায় তেমন ঘনিষ্ঠ কেউ নেই ।
এখন আমিই নাকি অন্ধের ষস্টি। তখন গাড়ির ব্যাবসা করি রমরমা অবস্থা। গাড়ি হাঁকিয়ে গেলাম তার সাথে মানিকদী পাত্রীর ওখানে। ও আমাকে যেভাবে ওদের সামনে পরিচয় করিয়ে দিল তাতে আমি লজ্জায় মরে যাই। আর ওফ সে কি আপ্যায়ন !
একসাথে মার্কেটে গিয়ে বিয়ের বাজার করল। ফিরোজ ওর সামর্থের মধ্যেই কিনতে চাইল। কিন্তু এসব জিনিস কিনতে অধমর কেমন যেন রুচিতে বাধল-ওই বয়সে বাইরের চাকচিক্যময় ইজ্জতের বিরাট দাম ছিল । ভাল জিনিস কিনতে গিয়ে পকেট থেকে কয়েক হাজার টাকা খসে গেল । খরচের বহর দেখে ও যেন মরমে মরে যায় । কথা নিয়ে রাখল এটাকা যেন আমি ভবিষ্যতে ফিরিয়ে নেই ।
বিয়ের পরে একমাসের ব্যাবধানে আরো বারদুয়েক ওখানে গেছি। ওদের উপরতলায় যে ভাড়াটিয়া থাকে সে বাড়িতে ফিরোজের বউ এর সমবয়েসী এক সুন্দরী কন্যা ছিল – চঞ্চলআ হরিণীর ন্যায় চটপটে দুরন্ত সেই অষ্টাদশী সুযোগ পেলেই নাকি ওদের বাড়িতে এসে গল্পে হাসিতে মাতিয়ে রাখে। সেই মেয়ের গুণের গল্প শুনতে শুনতে আমি অস্থির! গুনগান সবসময়ই শুনতাম । দেখতে যেমন দারুন বাকপটুও তেমনি। ভাল গাইতেও জানে । একবার চোখের দেখা দেখেছি তবে অনেক লোকের ভিড়ে কথা হয়নি। আজ পরিচয় হল তারসাথে দুচার কথাতেই বুঝলাম বলতে জানে মেয়েটা। ঘরেব লোক ডাকে মনি বলে – বাইরের নাম মনিকা অথবা মেরীর সাথে পরিচয়পর্বটা ছিল অম্লমধুর।
সেদিন ফিরোজ ল্যান্ডলাইনে জানাল ওর বউ নাকি আজ পোলাও মাংস রান্না করেছে। সখ হয়েছে আমাকে খাওয়ানোর। দুপুরের মধ্যেই যেন চলে আসি। ওদের উদ্দেশ্য যে অন্য কিছু ছিল সেটা আমি বুঝিনি। খাবার শেষ হতেই ওর বউ গিয়ে মনিকাকে ধরে আনল।– মেয়েটা আসলে আমি ব্যাপক ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকি তাচ্ছিল্যের সুরে কথা বলছিলাম- ভাবটা যে এ আর কি, এই মেয়েকে নিয়ে এত গল্প করার কি আছে? পরিচয় পর্বটা ঝগড়া দিয়ে শুরু যেন দুপক্ষই প্রস্তুত হয়ে এসেছি ঝগড়া করব বলে। আমি কতটা ভাব নিয়ে তাঁকে তাচ্ছিল্য করতে পারি আর সে কিভাবে আমাকে সেটাই তখন মুখ্য। ফিরোজ আর তাঁর বউ কোন পক্ষ না নিয়ে হাসতে লাগল। কিন্তু কথা বলতে বলতে ভাল লেগে গেল ।
দুপুরে খাবার পরে বেয়াইন হিসেবে তার সাথে একটু গ্রাম্য ধরনের ঠাট্রা মস্করা করতে গিয়ে ফেঁসে গেলাম।
পান খেতে চাইলে সে হাসিমুখে তার দাদীর ডাবর থেকে কাচাসুপারী দিয়ে এনে দিল সেটা খেয়ে দুমিনিটের মাথায় আমি মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম আমার করুন অবস্থা দেখে তার কি হাসি .. । তবে সে হাসি মুগ্ধ করার মত।
কথা বলতে বলতে কখন যে সন্ধ্যে হয়ে গেল টেরই পাইনি। বাইরে আধারের ছায়া দেখে যেমনি এসেছিল ঠিক তেমনটি ফুরুৎ করে চড়াই পাখির মত উড়ে গেল।
যব আঁচল রাত কা ল্যাহেরায়ে অর সারা আলম সো যায়ে
তুম মুঝসে মিলনে শাম্মা জ্বালাকে তাজমহল মে আ জানা …
জাপানী পাইওনিয়ার সেটে গজল বাজছে। এক্সেলেটরে পা চেপে আছি। চারিদিকে ভীষণ অন্ধকার যেন চেপে ধরতে চাইছে। শুধু গাড়ির হাই বিম অন্ধকার ফুঁড়ে কালো পিচের রাস্তায় গিয়ে আছড়ে পড়ছে। দু-পাশের গাছগুলো যেন ভুতের মত যুবুথুবু হয়ে দাড়িতে আছে। হেডলাইটের আলো যতটুকু গিয়ে চোখের আড়াল হয়ে যাচ্ছে- তাঁর পর মনে হচ্ছে কিছু নেই! পৃথিবীর শেষ প্রান্তটা মনে হয় ওখানেই আর একটু এগুলেই হয়তো দেখতে পাব রাস্তা শেষ।
পাশের সিটে বসে পরম গজল ভক্ত বন্ধু ছোট( ওর নাম ছোট নয়- আড্ডার সবথেকে সাইজে ছোট দেখে ওর নাম দিয়েছি ছোট) চোখ বন্ধ করে গান শুনতে শুনতে ত্নদ্রায় ঢুলছে। আমার প্রতি তাঁর ভীষণ আস্থা। আমার হাতে নাকি স্টিয়ারিং থাকলে সে গাড়ি এক্সিডেন্ট হবার সম্ভাবনা নেই। ওই বয়সটাতে বন্ধুর উপরে বন্ধুদের যে আস্থা বিশ্বাস থাকে সেটা হারিয়ে যায় বা ফিকে হয়ে আসে একসময় ধীরে ধীরে।
বহু দূরে সিঙ্গেল একটা হেডলাইটের আলো দেখা যাচ্ছে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। অবাক হলাম একটু-এত রাতে স্কুটার বা মটর সাইকেলে চলার কথা নয় এই হাইওয়েতে। শীতকাল নয় –তবুও চারিদেকে কুয়াশার মত ধোঁয়াটে, আমি নিশ্চিন্তে রাস্তার মাঝ বরাবর টানা সাদা দাগের উপর দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। আচমকে মিটার পঞ্চাশেক দুরুত্বে শক্তিশালী দুটো হেডলাটের বিম আমার চোখ ঝলসে দিল!সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে বা দিকে ঘুরিয়ে নিলাম। গাড়ির গতি তখন ১৩০ এর কম নয়। স্টেয়ারিং বাঁয়ে ঘুরিয়েই সজোরে ডানে টার্ন নিয়ে কোন মতে রাস্তার পাশের বিশাল গাছে ধাক্কা খাওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেলাম, আর পাশ দিয়ে যেন শিস কেটে বেড়িয়ে গেল দৈত্যের মত কন্টেইনার লরি! গাড়ির প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে ছোট সিট থেকে উড়ে গিয়ে ড্যাস বোর্ডের উপরে উঠে বসেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় বিমুঢ় হয়ে সদ্য ঘুম ভাঙ্গা সে চোখে আশে-পাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে বিষয় কি!
৩রা অক্টোবর ১৯৯৭। ফিরোজ ও ওর বউয়ের সাথে গ্রামের বাড়ি যাবার কথা । সকালে ওখানে গেলাম। প্রচুর লোক তার মাঝে ওর সাথে দেখা হল । ইচ্ছে করেই হয়তো দুরে দুরে থাকছিল। আমাদের সাথে ওকে একটা ছবি তুলতে বললাম সে রাজী হল না। ফিরে আসার সময় এমন ভাব দেখাল যে সে আমাকে চেনে না।
এরপর ও বাসায় আর দেখা হয়নি। গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে আসার পরেই সে ফোন করল। অনেক কথা হোল ।ওর সাথে যখন কথা বলি তখন কিভাবে যে সময় কেটে যায় জানিনা। কতরকমের দুস্টুমি করি দুজন আমার অনুরোধে একদিন রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে শোনাল।
দুজনেই কথা দিয়েছিলাম আমরা সারাজীবন শুধু বন্ধুই থাকব সর্ম্পর্কটা যেন বন্ধুত্ব ভেঙ্গে অন্যদিকে না গড়ায়। ও বলত ওর অনেক গোপন কথা। আমি বলতাম রয়ে সয়ে। সুযোগ পেলেই ক্ষেপাতাম । ঘন্টা দুঘন্টা তিনঘন্টা কাটিয়ে দিতাম স্রেফ গল্প করে।
গাম কা খাজানা তেরা ভি হ্যায় মেরা ভি
ইয়ে নাজরানা তেরা ভি হ্যায় মেরা ভি’
কুমিল্লা শহরের উপকন্ঠে সাদা চক করা তেতলা হাইওয়ে ইন রেস্টুরেন্ট। চাঁটগা থেকে ঢাকা আসার সময়ে রাস্তার ডান দিকে পড়ে। গাড়ি ঘুরিয়ে ঢুকতে হয়। সারা রাত খোলা থাকলেও এই গভীর রাতে খদ্দের নেহায়েত কম! নাইট কোচ মাঝে মধ্যে দাড়ালে ভীড় থাকে। দোতালায় উঠে ম্যানেজারের কাউন্টারে গিয়ে নিখিলদার খোঁজ করলাম। নিখিলদা এখন ঘুমাচ্ছে নাকি। তাঁকে ডেকে দিতে বলতেই এক ওয়েটার দৌড়ে গেল! মিনিট দশেক বাদে নিখিলদা চোখে মুখে পানি দিয়ে হাসি মুখে এসে নমস্কার দিলেন। এই হাইওয়েতে নিখিলদার প্রায় রেগুলার কাস্টমার আমরা। যাওয়া আসার সময়ে হোটেলে না খেয়ে গেলে আমাদের শান্তি নেই। নিখিলদা আমাদের বেশ খাতির করেন- যা খেতে চাইব তাই সংগ্রহের চেষ্টা তাঁর। রান্না ঘরে গিয়ে নিজে তদারকি করে আমাদের কাছে দাঁড়িয়ে আপনজনের মত পরিবেশন করে।
এই গভীর রাতে আমরা আবদার করলাম, ইলিশ মাছের ডিম খাব। আস্ত ডিম ডুবো তেলে ভেজে লেবুর রস দিয়ে খাব। সাথে থাকবে ভাজা শুকনা মরিচ, ডোম ডোম করে পেয়াজ ভাজি। এর সাথে অটো টিউনিং লাল করে ঝাল করে আলু ভর্তা আর ঘন ডাল।
কোয়ী বাত নেহি’ নিখিল দা তাঁর বিশাল ডিপ ফ্রিজের ঢাকনা খুলে যেন ভেতরে সেঁধিয়ে গেলেন। বহু ফ্রোজেন মাছে মাংস সরিয়ে আমাদের কাঙ্খিত ইলিশের আস্ত ডিম বের করে আনলেন। আহ সে কি স্বাদের খাবার- ভাবলে এখনো জীভে জল আসে।
( ১৯৯৮ সালের পরে আর ওভাবে ওপথে যাওয়া হয়নি- নিখিলদার আর খোঁজ খবর নেয়া হয়নি। করোনার ঠিক আগে মানে ২০২০ এর ফেব্রুয়ারিতে গিয়েছিলাম হাইওয়ে ইন এ। হাই ওয়ে ইন এখন একটা নয় বেশ কয়েকটা শাখা কিংবা কুমিল্লার মতৃভান্ডারের মত ভিন্ন ভিন্ন মালিকের তত্ত্ববধানে চলে। রাস্তার বাঁয়ের অনুমানে সেই লোকেশনে যেই হাইওয়ে ইন পেলাম সেটার খোল নলচে একেবারে পালটে গেছে। ভিতরে ঢুকে প্রথমেই নিখিলদার খোঁজ করলাম। আজব ব্যাপার এখানে নিখিল নামে কোন লোককেই কেউ চেনেনা। বাকি হোটেলগুলোতেও নিখিলদার খোঁজ করলাম। আশ্চর্য ভোজবাজীর মত মানুষটা বেমালুম হারিয়ে গেল!!)
৩০শে অক্টোবর ছিল ওর জন্মদিন। উইশ করেছিলাম তবে পরিস্থিতি গিফট দেয়ার অনুকুলে ছিলনা । টেলিফোনে ওর কন্ঠস্বর শুনে অনেকেই বিমেহিত হত । এমনকি একদিন আমার আব্বাও দারুন প্রশংসা করেছিলেন । মাঝে মাঝে ওর একটু একটু দুর্বলতা টের পেতাম তখন ইচ্ছে করে দিন কতকের জন্য এড়িয়ে
চলতাম । ফিলিংস যে ওর প্রতিও আমার হয়নি বা দচার রাত যে ওকে নিয়ে সপ্ন দেখিনি তা নয় তবে আমার কমিটমেন্টের ব্যাপারে আমি ভীষন কনসাস ছিলাম ।
দিনক্ষন মনে নেই অনেক আগে থেকেই সে দেখা করার জন্য পীড়াপীড়ি করছিল ইচ্ছে করে এড়িয়ে গেছি কিন্তু ও যেদিন ক্যান্টর্মেন্ট শাহীন কলেজে প্রথম অনার্স ক্লাস করেছিল সেদিন বারংবার অনুরোধে দেখা করতে প্রায় বাধ্য হয়েছিলাম ।
নির্দিস্ট সময়ে কালো ইডি গাড়িটা নিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম কলেজ থেকে একটু দুরে একটা কনফেকশনারীর(এখন ক্যাপ্টেইন্স) সামনে । কিছুক্ষন বাদে সে এল একটা শাড়ী পরে। দরজা খুলে যখন তাকে ভিতরে আসতে আমন্ত্রন করলাম তখন সে কেন যেন বিচলিত হয়ে পড়ল । আরো দুবার বলার পরে যখন এসে আমার পাশে বসল তখন দেখি ঘেমে নেয়ে একাকার। তার এই অদ্ভুদ ব্যাবহারের তাৎপর্য পরে উদ্ধার করেছিলাম। প্রথমত সে নাকি আমাকে চিনতে পারেনি এ কয়েক মাসে আমার চেহারায় আমুল পরিবর্তন হয়েছে সেজন্য দ্বীধাগ্রস্ত ছিল ।
আর দ্বীতিয়ত এই প্রথম কারো সাথে বাইরে ঘুরতে বেড়িয়েছে । কেউ যদি দেখে ফেলে সেই ভয়ে।
আর তৃতিয়ত পরে বলেছিল কানে কানে(টেলিফোনে) ভয়ঙ্কর পুরুষ আমি একলা পেয়ে তাকি যদি ..
গাড়ি চালালাম সোজা এয়ারপোর্টের দিকে। তার মুখের ভাষা ফুটতে একটু সময লাগল। সহজ হতে আরো কিছুক্ষন। একসময় সেই বলতে শুরু করল আমি চুপসে গেলাম।
অনেকদুর গিয়ে ফেরার মুখে একখানে গাড়ি থামাতে বলল।রাস্তার পাশে একটু পাহাড়ের মত উচু জায়গাটা সামনে ছোট পুকুর দারুন নিরিবিলি। গাছের ছায়ায় খুব নিকটে বসে গল্প শুরু করে দিল। আমি ছটফট করছিলাম ফিরে আসার জন্য । তার সঙ্গ যে ভাললাগছিল না তা নয় তবেপ্রতিজ্ঞাচ্যুত হওয়ার আশংকায়। তাকে ক্যান্টমেন্টের অনেকখানি ভিতরে নামিয়ে দিলাম। যাবার সময় বলল এদিনটার কথা তার নাকি সারাজীবন মনে থাকবে ।সাধুবাদ জানাল আমার চারিত্রিক সততার জন্য।
ছেলেদের সন্মন্ধে এতদিন একটা ভুল ধারনা মনে পুষে রেখেছিল নাকি।
এদিনের পরে ঘনিষ্ঠতা হল আরেকটু বেশী । কথা হত কখনও গভীর রাতে চুপি চুপি। কখনও আপিসে অলস দুপুরে কিংবা স্নিগ্ধ ভোরে ।
কথা বলতে বলতে তার কাছে কেউ এসে গেলে তখন বান্ধবীর ভঙ্গীতে কথা বলত। সে তো আমার সাথে অবশ্যই এমনকি সে আমার থেকে
অনেক অনেক ছোট হওয়া সত্বেও আমি কষনও তাকে তুমি বলিনি। ইচ্ছে করেই এই দুরুত্বটুকু রেখেছিলাম টেলিফোনে কথা বলতে বলতে মাঝে মধ্যে কেন যেন আমার বুক চিরে বেরিয়ে আসত দীর্ঘশ্বাস আর সেটাই নাকি ছিল ওর সবচেয়ে প্রিয় । আমার সেই দীর্ঘশ্বাসের শব্দ সে বার বার শুনতে চাইত । বলত ও আমার সুখের দিনের বন্ধু নয় শুধু দুখের দিনের…
শাম্মা জ্বালাকে রাখ না যব তাক ম্যায় না আয়উ
হাম তুম মিলেংগী এয়সে যেয়সে যুদা নেহী থে
শ্বাসে বাঁচায়ে রাখনা যাব তাক ম্যায় না আয়উ …
মেঘনা সেতু পার হবার পর ঢাকা-টা যেন ঝুপ করে সামনে চলে আসে। ঢাকা ঢোকার আগে কাঁধ সমান সারিবদ্ধ কংক্রিটের আইল্যান্ডে হেডলাইটের আলো রিফ্লেক্ট করে চোখে আঘাত করে। আচমকা এই পরিবর্তনটা বেশ বিরক্তিকর। টিকাটুলি জয়কালি মন্দিরের কাছাকাছি আসতেই প্রত্যুষের একটা ফ্যাকাসে আলোয় সব চিত্র যেন পালটে গেল। একপাশে ইত্তেফাক অফিস আর অন্যদিকে দেশবন্ধু হোটেল রেখে সাঁই করে ঘুড়ে ঘুরে এগিয়ে গেলাম। অতিপ্রত্যুষের এই ঢাকাকে চেনা বড় দায় –আমরা যেন কোন রূপকথার শহরে হাওয়ায় ভাসছি। শহরের মধ্যেই ১২০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি। শাপলা চত্ত্বরটা পার হয়ে নটরডেম কলেজের সামনে যেতেই হঠাৎ আজানের সুরে আমরা বাস্তব পৃথিবীতে ফিরে এসে সহজাত অভ্যাসবশত-বা হাতের অনামিকায় আলতো করে পস বাটন চেপে ধরলাম। থেমে গেল গজল এর সাথে কৈশরের আড়মোড় ভেঙ্গে সদ্য যৌবনে পদার্পন সেই কিন্নরী কন্ঠের, দুরন্ত চঞ্চলা যৌবন তারুন্যে ভরপুর মনিকা নামের মেয়েটি হারিয়ে গেল!
ঝিরি ঝিরি বাতাসে ভুল করে এ পথে
এসে যদি ফিরে যায় আমায় না পেয়ে
তাই আমি বসে আছি দরজার ওপাশে..
* বিশেষ কারনে ব্লগিং না করতে পেরে খুব বিরক্ত লাগছে। কেউ মন্তব্য করলে ঠিকঠাক সময়মত উত্তর না পেলে কষ্ট পাবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০১