somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন জ্যোতিষী-কবির গল্প!

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ছুটির দিনে-তে সাপ্তাহিক রাশিফল ‘আপনার রাশি’ দেখেছেন? এই রাশিফল যেই ভদ্রলোক লিখতেন তিনি কিন্তু প্রথাগত কোনো জ্যোতিষী ছিলেন না। নিজের লেখা রাশিফলের শুরুতেই তিনি লিখতেন, ‘নিজের ভাগ্য নিজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় শতকরা ৯০ থেকে ৯৬ ভাগ। বাকিটা ফেট বা নিয়তি।’ রাশিচক্রে ‘নিউমারলজি’ বা ‘সংখ্যা-জ্যোতিষ’ পদ্ধতি প্রয়োগ করতেন তিনি।
সৃজনশীল মানুষ হিসেবে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর রাশিফল শুধু ভাগ্যগণনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সংগীত, কবিতার লাইন, রম্য—নানা কিছু মিলিয়ে একেকটা রাশির কথায় থাকত সাহিত্যগুণ। ১৯৯৯ সালে ছুটির দিনে ক্রোড়পত্রে ‘আপনার রাশিফল’ প্রকাশের পরই পাঠক এটি লুফে নেন।

সর্বশেষ গত বছরের ১ জানুয়ারি প্রকাশিত হয় ‘দৃষ্টিতে কেমন যাবে ২০২২’ পর্যন্ত তাঁর রাশিফলের জনপ্রিয়তা শুধুই বেড়েছে। কোনো শনিবার ‘আপনার রাশিফল’ প্রকাশিত না হলে অসংখ্য পাঠকের ফোন, ই-মেইল, ফেসবুক পেজের মন্তব্যে একটাই প্রশ্ন, ‘আজ আপনার রাশিফল কেন প্রকাশিত হলো না?’



কেন হল না? কেন না তিনি চলে গেলেন এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে নিঃসীমের পানে। রেখে গেলেন তার অমর গানের বাণী; আমায় ডেকোনা ফেরানো যাবেনা, ফেরারি পাখিরা কুলায় ফেরে না কিংবা এই পুরনো গিটার ফেলে একদিন চলে যাব দূরে বহুদুরে …
কজন জ্যোতিষী যখন গান লেখেন তখন বিষয়টা বেশ আজব লাগে। জানেন তার মৃত্যুর পরে; ক্লিনিকে ছুটে আসা সংগীত পরিচালক ফুয়াদ নাসের বাবু বলেন, ‘আমি জীবনে যে কটা গান গেয়েছি, সবই তাঁর লেখা। তাঁর মৃত্যু অপূরণীয় এক ক্ষতি।’ সংগীতায়োজক এজাজ খান স্বপন বলেন, ‘তিনি অনেক কালজয়ী গান লিখেছেন। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। কখনো পুরস্কারের পেছনে ছোটেননি।’
প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘ভাগ্য জানার উপায়’ বইটি লিখেছেন তিনি। এ ছাড়া ‘ঘুম কিনে খাই’ নামে তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।
এতক্ষনে বুঝতে পেরেছেন কে তিনি? তিনি আমাদের কাওসার আহমেদ চৌধুরী।
১৯৪৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর সিলেটে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর জন্ম। তাঁর বাবা মোসাহেদ চৌধুরী। কাওসার আহমেদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। চারুকলায় পড়াশোনা করলেও সম্পন্ন করেননি। চলচ্চিত্রে নির্মাণে তাঁর আগ্রহ ছিল। পেশাজীবনে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকরি করেছেন। পরিবার পরিকল্পনার ওপর বাংলা ও ইংরেজিতে বিভিন্ন তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন তিনি। কিছু বিজ্ঞাপন নির্মাণেও কাজ করেন তিনি। বিটিভিতে একসময়ের প্রচারিত জনপ্রিয় হাসির নাটক ‘ত্রিরত্ন’র চিত্রনাট্য লেখেন তিনি।

জ্যোতিষী নিয়ে লেখার পেছনের গল্পঃ
আমি যে কীভাবে প্রথম আলোতে লিখতে শুরু করলাম, তার পেছনে কিছু মজার ইতিহাস আছে। শুনতে চাইলে বলতে পারি। যাগ্গে, ধরে নিচ্ছি আপনি শুনতে চান। তাহলে এবার বলি, ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম আলো আত্মপ্রকাশ করল। ১৯৯৯-এর কোনো এক সময়ে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান অর্থাৎ আমাদের মতি ভাই আমাকে ডেকে পাঠালেন। আপনি তো জ্যোতিষ চর্চা করেন; তাহলে আমাদের পত্রিকায় রাশিফল লিখতে শুরু করুন। আমি একটু ভয় পেলাম। মতি ভাই বললেন—কেন, আপত্তি আছে? আমি আমতা আমতা করে বললাম, আপনি তো বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ, আপনি কেন এসব বিশ্বাস করেন? তিনি বললেন, এটা একটা বিশ্বজনীন আগ্রহের বস্তুতে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর সব দেশের পত্রপত্রিকায় নিয়মিত রাশিফল ছাপানো হয় পাঠকের মানসিক চাহিদা পূরণের জন্য। তারপর তিনি একটু বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, যা দেখতে পাচ্ছি, আপনি তো একজন একগুঁয়ে ধরনের লোক। আমি নিচু কণ্ঠে বললাম, আপনিও তো কম যান না। মতি ভাই ফাইল থেকে চোখ তুললেন, কী বললেন? আমি বললাম, না, কিছু না। এই তো মোটামুটি আমার রাশিফল লেখা শুরু হয়ে গেল। আমি ভাবলাম, রাশিফল যখন লিখতেই হবে, তাহলে এখানে অঙ্কের কিছু যুক্তি আনা যাক। একটি কিশোরকে নিয়ে সারা রাত জেগে প্রতিটি রাশির ভর বের করলাম। অর্থাৎ, গ্রহ–নক্ষত্রের অবস্থান দিয়ে যে রাশি, তার সঙ্গে পিথাগোরাসের নিউমারলোজি মিশিয়ে নিলাম। এর সঙ্গে মিশ্রণ ঘটালাম আমার সিক্সথ সেন্স বা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের।
প্রথম দিকে তেমন ফিডব্যাক আসত না। আস্তে আস্তে লোকে আমার ট্যাং ফং নং বা টেলিফোন নম্বর জোগাড় করে আমাকে ফোন করতে লাগল, বিশেষ করে শনিবার সকালে। প্রথম দিকের একটা ঘটনা মনে পড়ল।
এক মহিলা শনিবার সকালে আমাকে ফোন করে বলতেন, আপনে এই সব কী লেখেন? আমার কিচ্ছু মেলে না, কেডা আপনাকে রাশিফল লেখায়? আমি আপনার সব ফাইজলামি বন্ধ করব। প্রথম আলোতে ফোন করব, যেন তারা আপনার এই সব আবোলতাবোল লেখা ইস্টপ করে। যে শনিবারে মহিলা আমাকে ফোন করতেন না, সেই শনিবারে আমি বুঝতাম তিনি আমার রাশিফলে মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবে, আজ এই পনেরো বছর পরও ওই মহিলার কর্কশ কণ্ঠ আমি মিস করি।
একবার এক পাঠক আমাকে টেলিফোনে বললেন, আপনার রাং ফং (রাশিফল) অং বং চং কখনো স্লগ ওভারের ব্যাটিংয়ের মতো ছক্কা হয়ে উড়ে যায়, আবার কখনো উইকেটটা চলে যায় আপনার ধনু রাশির চালক গ্রহ বৃহস্পতির দিকে। এভাবে আর কত দিন চালাবেন? তখনি আমার মনে পড়ল মতি ভাইসহ অন্যদের মুখ। আমার একগাল দাড়িভর্তি মুখটাও মনে পড়ে গেল। আর মনের চক্ষু ক্যামেরার একটা প্যান শটে কল্পনা করলাম, লাখ লাখ পাঠকের বিরক্তি এবং একই সঙ্গে কৌতুকপূর্ণ চেহারা। আরে, এই সব কী লিখে যাচ্ছি আমি! তবু প্রথম আলো এবং ‘ছুটির দিনে’ যে পথে যায়, আমিও সেই পথেই যাই। পেছনে তাকিয়ে দেখি, কবে যেন একে একে পনেরোটি বছর চলে গেছে। আর দেখি, আমি কোনো নিঃস্ব মানুষ নই; যদিও আমার কথা ওয়ান ওয়ে চ্যানেলে অনেকের কাছে পৌঁছে যায় এবং নানাভাবে আমার কাছে ফিরে আসে।
পাঠক, জানিয়ে রাখি, আমার রাশিফলের কোথাও কোনো শাখা নেই। একমাত্র প্রথম আলোর ‘ছুটির দিনে’ই রাং ফং লিখি। অন্য কোথাও নয়, অন্য কোনো মাধ্যমেও নয়। যদি কেউ ভাবেন, আমি অন্যত্র রাশিফল লিখছি, তো সেই ভুল ধারণার দায়িত্ব আমি নেব না। নাই–বা হলো বিজ্ঞান, নাই–বা হলো কাজের কিছু। আমি রাশিশাস্ত্র তথা জ্যোতিষশাস্ত্রের মধ্য দিয়ে এক কিম্ভূত চরিত্রে পরিণত হলাম। ঠিক বললাম কি না জানি না। আমার ছোট্ট একটা বই আছে জ্যোতিষশাস্ত্র শেখার। বইয়ের এক জায়গায় আমি ছোট্ট কয়েক লাইন কবিতায় যুক্তি রেখেছি, কেন আমি কিশোর বয়স থেকে আজ অবধি জ্যোতিষচর্চা ছাড়তে পারলাম না। কবিতাটি এ রকম—
আমি শুধু এক দরিদ্র জ্যোতিষী
ধরে আছি গাঢ় অন্ধকারে
তোমার দক্ষিণ হাত
ভয় কি, তুমি পার হয়ে যাবে এই
তুফানি ঝড়ের রাত।


১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অধীনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি গোয়েন্দা হিসেবে তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছেন।
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যান্ড ও সঙ্গীতশিল্পীর দারুণ শ্রোতাপ্রিয় কিছু গানের স্রষ্টা এই জনপ্রিয় রাশিফল লেখক। লাকী আখান্দ, এলআরবি, নগরবাউল, ফিডব্যাক, সুবীর নন্দী, সামিনা চৌধুরী, নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, শুভ্র দেবের কণ্ঠে গাওয়া বেশকিছু গানের গীতিকার তিনি। তবে শৈশব থেকেই কবি হওয়ার অনুরাগ যার, এসব শ্রোতাপ্রিয় গানের অনেক আগে থেকেই গান লিখে গেছেন তিনি। সিলেট বেতারে কাওসার আহমেদের লেখা প্রথম গান প্রচারিত হয়। তবে অনেক গান তারও পূর্বে লিখেছিলেন তিনি সেই গানটি প্রচারিত হওয়ার আগেই। কেবল বয়স কম হওয়ার কারণে সেসব প্রচারিত হতো বেনামে।
এরপর টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত হন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। তবে লাকী আখান্দের সাথে পরিচয় হওয়াটা ছিল তার জন্য বিশেষ এক পর্ব। ১৯৭২ সালের দিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ঘটে এই সংযোগ, যার প্রতি ঋণী থাকতে পারে অগণিত সঙ্গীতপ্রেমী।
মাঝে একবার অভিনেতা হওয়ার ঝোঁক পেয়ে বসল। পরিচয় হয়েছিল ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে। ঋত্বিক ঘটকের শেষ ছবি ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’তে একটি চরিত্রে অভিনয় করার জন্য প্রস্তাব করেন কাওসার আহমেদকে। অভিনয়ের সুযোগ পেয়েও করা হয়ে ওঠেনি ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে। তবে এদেশের সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে কাওসার আহমেদ চৌধুরী হয়ে উঠেছিলেন এক অনবদ্য গীতিকার। যার গানের কথামালার কারণে ভক্তরা দীর্ঘ সময় মনে রাখবে এই মানুষটিকে।



এরপর গান লেখার প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায় কাওসার আহমেদের। প্রথম পরিচয়েই লাকী আখান্দ কিছু গান চেয়ে বসলেন তার কাছে। আর গানগুলোতে অসাধারণ সুরারোপ করলেন লাকী আখান্দ। ফলশ্রুতিতে, দুজনের মধ্যে তৈরি হয় বন্ধুত্ব। জেমসের গাওয়া বিখ্যাত গান ‘লিখতে পারি না কোনো গান আজ তুমি ছাড়া’ লিখেছেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী; আর সুর দিয়েছেন লাকী আখান্দ। শোনা যায়, লাকী আখান্দ ছাড়া অনেক লম্বা সময় আর কাউকে গান দিতেন না তিনি। পরবর্তীতে কাওসার আহমেদের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র, জ্যোতিষশাস্ত্র এসবের প্রতি ঝুঁকে পড়া মোটেও পছন্দ ছিল না লাকী আখন্দের। লাকীর কথা ছিল, কাওসার আহমেদের জন্মই হয়েছে গান লেখার জন্যে। লাকী আখান্দের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অটুট ছিল তাদের বন্ধুত্ব।
কাওসার আহমেদ কবি, লেখক, গীতিকার, চিত্রশিল্পী এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বয়স যখন ১১ বছর, তখন থেকেই কবিতা আর জ্যোতিশাস্ত্রের প্রতি অনুরাগ তৈরি হয় কাওসার আহমেদ চৌধুরীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তির পর স্বপ্ন দেখেন চিত্রশিল্পী হওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন বেশিদিন স্থির হয়নি।

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে ‘এই রুপালি গিটার ফেলে’, লাকী আখান্দের কণ্ঠে ‘আমায় ডেকো না ফেরানো যাবে না’, কুমার বিশ্বজিতের কণ্ঠে ‘যেখানে সীমান্ত তোমার সেখানেই বসন্ত আমার’, সামিনা চৌধুরীর কণ্ঠে ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে’ লাকী আকন্দের সুরে নন্দিত শিল্পী নিয়াজ মুহাম্মদ চৌধুরীর কণ্ঠে ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়ল তোমায়’ বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্লাসিক্যাল গীতের খেতাব পাওয়া এই গানের কথাতো গেঁথে দিয়েছিলেন কাওসার আহমেদ চৌধুরীই।
ফিডব্যাকের মাকসুদের কণ্ঠে ‘মৌসুমি কারে ভালোবাসো তুমি’, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে প্রচারিত নাফিস কামালের কণ্ঠে ‘এই দেশে এক শহর ছিল’।
কবিবন্ধু নির্মলেন্দু গুণের অনুরোধে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’-এর প্রচ্ছদের নকশা করেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। এরপরে আরো অনেকগুলো বইয়ের প্রচ্ছদে কাজ করেন তিনি। বেশ কিছু টিভি নাটক রচনা ও পরিচালনাও করেছেন এই বহু গুণে গুণান্বিত মানুষ। শ্রীমঙ্গলের এক পাহাড়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর অতর্কীতে হাজারও জোনাকি পরিবেষ্টিত হয়ে ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’র মতো কালজয়ী গানের এই স্রষ্টা সীমান্ত পেরিয়ে বিদায় নিলেন বসন্তে, রাতের নির্জনে।
কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক ও আধুনিক গানে অন্যতম সফল ও কালজয়ী গীতিকার বললে অত্যুক্তি হবে না মোটেই। তার রচিত বহু গান শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। অতিক্রম করেছে কালের সীমানা।
আমায় ডেকো না, ফেরানো যাবে না....’। এটি গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা কালজয়ী একটি গান। গানের কথার মতোই বাস্তবে অনেক ডাকলেও আর কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনা যাবে না।

একসময় চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন তিনি। ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএর অর্থায়নে চলচ্চিত্রের ওপর প্রশিক্ষণের জন্যে বিদেশ যান। ভিডিও ফিল্ম তৈরি কীভাবে করতে হয় তা শেখার জন্য তিনি ফিলিপাইনে পাড়ি জমা্ন। বিশ্ববিখ্যাত প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা পিটার কিংয়ের সংস্পর্ষে এসে চলচ্চিত্র তৈরির বিভিন্ন কৌশল শিখেছেন*। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া সহ অন্য দেশে গিয়েছেন চলচ্চিত্র তৈরির উপর নিজের জ্ঞান বাড়ানোর জন্যে। শিখেছেন নিজের আনন্দের জন্য; এর থেকে অর্থ আয় করার কোন চিন্তা তার ছিল না।
(* সম্ভবত পিটার কিং নয় পিটার এডাম হবে।)



তার এই ঘটনাবহুল জীবনে অনেক বিখ্যাত মানুষের সংস্পর্ষ তিনি পেয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন অসাধারণ সংগীত প্রতিভা, প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম। মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম পরিচয় হয় আরেক বিখ্যাত সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খানের সঙ্গে। এই শেখ সাদী খানের বাসাতেই আবার দেখা হয় ছোটবেলায় সিলেটে একই স্কুলে পড়া সুজেয় শ্যামের সঙ্গে। সেই থেকে দীর্ঘদিন একসাথে গানবাজনা করেন। কাওসার আহমেদ লিখতেন, সুজেয় শ্যাম সুর করতেন আর তাদের আরেক বন্ধু মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন সেই সুরে কন্ঠ দিতেন। জমে উঠত গান নিয়ে আড্ডা, আলোচনা আর বিতর্ক। সেই আড্ডা-গানে যোগ দিতেন শিল্পী আসাদুজ্জামান নূর, কবি নির্মলেন্দু গুণসহ খ্যাতনামা আরো অনেকেই। গান লেখার পাশাপাশি চলতে থাকে ছবি আঁকাও।

দেশভাগের সময় বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে হয়েছিল বলে সেই ক্ষোভ আর দুঃখ কখনো ভুলতে পারেননি ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। তাই বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ছিল তার অন্যরকম টান। বাংলাদেশে এলেই কাওসার আহমেদের সাথে ঘুরে বেড়াতেন চেনা অচেনা অলি গলি গ্রাম আর মফঃসস্বল। ঘন্টার পর ঘন্টা চলত তাদের গল্প আর আড্ডা! অসাধারণ প্রতিভাধর, সৃজনশীল এবং জ্ঞানী মানুষটির কাছ থেকে অনেক কিছু জেনেছেন, শিখেছেন তিনি। তার কাছ থেকেই মূলত চিত্রনাট্য লেখার প্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি। একবার নিজের গাড়িতে করে প্রায় সাড়ে ৪০০ মাইল পেরিয়ে কলকাতায় পৌঁছে দিয়ে আসেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। তার একমাত্র কবিতার বই ‘ঘুম কিনে খাই’-তে একটি কবিতা ‘ঋত্বিকের সঙ্গে কলকাতা যাত্রা ১৯৭২’ এ সেই ভ্রমণের কথা উল্লেখ আছে।
চলচ্চিত্রে যুক্ত হতে না পারলেও সাহিত্যাঙ্গন থেকে কখনোই দূরে ছিলেন না তিনি। ছোটবেলা থেকেই কবিতা লিখতেন। তার কবিতা পড়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। কলকাতার জনপ্রিয় দেশ পত্রিকায় তার কবিতা প্রকাশিত হয়।

***
সুত্রঃ
কালের কন্ঠ
প্রথম আলো/ডেইলি স্টার
রোর মিডিয়া সহ আরো অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৩০
৩৫টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×