বেশ কয়েকদিন থেকে মাথার মধ্যে বিষয়টা খোঁচাচ্ছে! গাড়িতে বসে বিশেষ একটা ধর্মীয় পুস্তকের অনুবাদে মাঝে মধ্যে চোখ বোলাই। কিছু অংশ ভাল লাগে কিছু অংশ সংশয় জাগায় কিছুটুকু গভীর চিন্তার খোরাক যোগায়। আমি আসলে জানার জন্য পড়ি- সোওয়াব হাসিলের জন্য নয়। আজ কোন মতেই মন বসাতে পারছি না। সেদিন আড্ডায় নাজিম ভাই(ছদ্ম নাম) এসেছিলেন। প্রায়শই আসেন- রাজনীতি করেন পাশাপাশি প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার। এলাকার এমপির সাথে সবসময় ওঠাবসা। বেশ শিক্ষিত জানাশোনা লোক- গিন্নী এমবিবিএস ডাক্তার। প্রচুর কথা বলেন- তবে ভীষণ কৃপন! আমরা বেশ শ্রদ্ধা- সহবত করি তাঁকে। কথায় কথায় তিনি বললেন, একসমুয় তিনি নাকি জাপানে চামড়া এক্সপোর্ট করতেন 'গুইসাপের চামড়া' কথাটা শুনে আমি কান খাড়া করলাম। গুইসাপের চামড়া বাংলাদেশ থেকে জাপানে। কবে কিভাবে সম্ভব?
আমি প্রশ্ন করলাম, লিগ্যালি?
- হ্যাঁ তাছাড়া কি একদম এল সি-মেল সি খুলে।
-জাপানে এসব নিতে কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না?
- না প্রথমে ছিল না পরে ব্যান করে দেয়।
- কত সাল পর্যত এই ব্যাবসা করেছেন?
-এরশাদের সময়- এই ছিয়াশি সালে মনে হয় শেষবার।
- মোট কতজন এক্সপোর্টার ছিল 'গুইসাপের চামড়ার'?
- আমি দিয়ে পাঁচজন।
- আপনি শেষবার কতগুলো এক্সপোর্ট করেছেন?
- আমার সবচেয়ে বেশী অর্ডার ছিল। আমার ছিল সাড়ে তের হাজার পিস। আর বাকি সবার দশ এগার হাজার।
ইয়া আল্লা বলে কি এক বছরে দেশ থেকে ষাট হাজার গুইসাপ সাবাড় হয়ে গেছে!! করেছে কি এই লোকেরা! পরিবেশের তো সারে সর্বনাশ করে ছেড়েছে!! গার্মেন্টস আমাদের বিশাল আশির্বাদ- গার্মেন্টস না থাকলে বৈদেশীক মুদ্রার জন্য ব্যাঙ গুইসাপের মত আর কি কি বেঁচে দিতাম কে জানে?
-এইগুলা কি গরু-খাসির চামড়ার মত লবন দিয়ে প্রিজার্ভ করতে হয়?
-না এইগুলা পিকেল(আচার) করতে হয়। এক ধরনের এসিড আর লবনে ভিজিয়ে রাখতে হয়।
- এক্সপোর্ট বন্ধ করল কারা?
-বাংলাদেশ সরকার- বাধ্য হয়ে, উপায় ছিল না। পরে গোপনে অনেক মাল পাচার হয়েছে - মুলত সেইসব মাল পাচার করে ধনী হয়েছে ' অমুক কোম্পানী' (সেই কোম্পানীর মালিক এখন সরকারের উচ্চপর্যায়ে অধিষ্ঠিত আছেন- কোন প্রমাণ নেই আমার কাছে, তাই নাম বলা সম্ভব নয়)
****
সেই থেকে আমার মাথায় ঘুরছে জাপান এই কাজ করেছে? এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষতি নয় এটা সারা বিশ্বের প্রকৃতির জন্য ক্ষতি। কমোডোর ড্রাগন প্রকৃতি পরিবেশের জন্য যতটা প্রয়োজন এই 'মনিটর লিজার্ড' বা 'ভানারাস বেঙ্গালিনসিস' পরিবেশ প্রকৃতির জন্য তাঁর থেকে শতগুন বেশী প্রয়োজন কেননা এদের প্রকৃতি চারন এরিয়া ও এদের সংখ্যাই বলে দেয় এদের প্রয়োজনীয়তা।
ছোট বেলা আমাদের যাদের গ্রাম বা মফস্বলে কেটেছে তারা হামেশাই গুইসাপের দেখা পেয়েছি। এই প্রজন্ম সম্ভবত শুধু বইপত্রেই গুইসাপ দেখেছে- সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য এদের হয়নি। ছোটবেলায় শুনতাম মুরগীর ডিম খাবার জন্য গুইসাপ মাঝেমধ্যেই খোয়াড়ে হানা দিত আর মাছ খাবার জন্য পুকুরে। বড়রা ভয় দেখাত; কক্ষনো গুইসাপের সামনে যাবিনা, ওরা নাকি থুতু ছেটায়। যেখানে থুতু ছেটাবে সেখানে নাকি পচে ঘা হয়ে যায়। নমশুদ্রদের দেখতাম মাঝে মধ্যে গুইসাপ মেরে মাঝে মধ্যে কাঁধে করে ঝুলিয়ে নিয়ে যেত। ওদের মাংস খেত ওরা।
পৃথিবীত যত গিরিগিটি জাতীয় প্রানী আছে তাঁর মধ্যে কমোডো ড্রাগনের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রানী হচ্ছে আমাদের এই গুইসাপ বা Monitor Lizard।
* আপনি জানেন কি; কোন কোন গুইসাপ লম্বায় ১০ ফুটের বেশী হতে পারে - যা লম্বায় প্রায় কমডো ড্রাগনের সমান পর্যায়ের।
কি দুর্ভাগ্য আমাদের; বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর তথ্য মতে, ১৯৭৮-১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫১ লাখ ৪৩ হাজার টাকার চামড়া রপ্তানি হয়।
ভাবা যায়; যে দেশে মাত্র সাত কোটি সাড়ে সাত কোটি লোক ছিল তখন সেখানে ৫০ ষাট লক্ষ গুইসাপ এক বছরে হত্যা!!!!
খাবার
কাঁকড়া, শামুক, ইঁদুর, হাঁস-মুরগির ডিম, পচা-গলা প্রাণীদেহ ,বড়রা মাছ, সাপ, ব্যাঙ ছোট কুমির, কুমিরের ডিম ও কচ্ছপসহ নানান পশু-পাখি ও উচ্ছিষ্ট খেয়ে এরা জীবন ধারন করে থাকে।
উপকারী
প্রকৃতি, পরিবেশের ও কৃষকের বন্ধু এই গুইসাপ ফসলের ক্ষেতের পোকাপতঙ্গ ও ধেনো ইঁদুর খেয়ে উপকার সাধিত করে।
বিলুপ্তির কারন
ক্রমশ: নগরায়নের বিস্তার, অন্য দিকে চোরাশিকার, দু’পায়ের দাপটে এই প্রাণীটি বিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রাণী সংরক্ষণ আইন উপেক্ষা করে অবাধে এদের হত্যা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ইউনিয়ন (আইইউসিএন) ২০০০ সালে প্রাণীটিকে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। গুইসাপের চামড়া রপ্তানির কারণে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবের বিবেচনায় ১৯৯০ সালে সরকারের পক্ষ থেকে এদের হত্যায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। (উইকি)
আমি নেট খুঁজতে থাকি। জানি জাপান এইসব তথ্য রাখবে না। কেননা জাপান তাদের সব কালিমা ঝেড়ে পুছে সাফ সুরোত পরিচ্ছন্ন চেহারা আধুনিক বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করতে চায়। যেন তাদের কোনদিন কোন পাপ স্পর্শ করেনি।
নেটে লাইন মত খুঁজলে কি না পাওয়া যায়। আমিও পেলাম;
ট্রাফিক
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে ইউরোপ দক্ষিন আমেরিকা জুড়ে যে শিল্পবিপ্লব শুরু হয়েছিল তাঁর কালো রূপ দেখেছিল এশিয়া আফ্রিকা আর ল্যাটিন আমেরিকা। মুলত বরাবরের মত শোষনের স্বীকার হয়েছিল এরা। শিল্প বিপ্লবের হাত ধরে বিপ্লব এসেছিল ফ্যাশন শিল্পেও। এই সব গুচি ফুচি লুই ভুটন, ম-ব্লার মুল উত্থান তখনই। চামড়া শিল্পের বিকাশের নামে ফ্যাশন ও শিল্পের দোহাই দিয়ে তারা ধনবানদের হাতে তুলে দেয় বিশ্বের বিরল সব প্রানীদের গা থেকে ছাড়িয়ে নেয়া ফার আর হাইড।
আর এদের যোগানদার হয় যুদ্ধে হেরে যাওয়া পঙ্গু বিদ্ধস্ত জাপানের মত চমৎকার নীতিপরায়ণ ভীষণ সৎ নিঃশ্বংস লোভী বনিক জাতি!
তারা মাত্র তিন ডলার দিয়ে কিনে নিয়ে যেত দশ ফুটের একটা আস্ত গুই সাপের চামড়া। সেই চামড়া তাদের হাত ঘুরে যখন প্যারিসের একটা দামী শপিং মলে চকচকে কাঁচের ঘরে ঝলমলে আলোর নীচে হাজার ডলারে বিক্রি হোত। সহস্র মুক্তোর দ্যুতি বেরুত তাঁর দেহ থেকে। জানা যায় এয় গুই সাপের চামড়ার একটা জ্যাকেট গায়ে দিয়ে মাইকেল জ্যকসন নাকি স্টেজ পারফর্ম করেছেন।
এবার দেখি ট্রাফিক কি বলে;
~Water Monitor Lizard -80s থাইল্যান্ডের চিড়িয়াখনার ছবি।
*****************
*(ভিঃ V. ভারানাস)
১৯৮৩-৮৯ সময়কালে, CITES( Convention on International Trade in Endangered Species of Wild Fauna and Flora) পরিসংখ্যান অনুসারে, জাপান V. bengalensis( গুইসাপ)-এর বছরে গড়ে ১৬০০০০ চামড়া আমদানি করেছিল, যা মোট বিশ্ব বাণিজ্যের ৯৫ ভাগ ( ভেবে দেখেন বিশ্বের ৯৫ ভাগ গুইসাপের চামরা জাপান একাই আমদানী করত)। কিন্তু এখানে একটা ব্যাপার লক্ষনীয় যে, ট্রাফিক এই রিপোর্টি জাপান থেকে পায়নি কেননা জাপান এই ধরনের আমদানী বিষয়ক রিপোর্ট সঠিকরূপে সংরক্ষন করে না যে কারনে এই পরিসংখ্যানগুলি তাই শুধুমাত্র রপ্তানিকারক ( বাংলাদেশ) দেশের রেকর্ডবুক থেকে নেয়া হয়েছে। জাপানি কাস্টমস পরিসংখ্যান প্রকাশ করে যে এগুলি জাপানের সাথে বাণিজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অবমূল্যায়ন। CITES তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের রপ্তানী পরিসঙ্খ্যানের সাথে জাপান-এর আমদানী পরিসংখ্যানের মধ্যে তফাত দেখা গেছে প্রায় অর্ধেকের কাছি কাছি ( জাপান ৫১%)শুল্ক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ দ্বারা প্রকাশিত বাণিজ্য.
বাংলাদেশ ব্যতীত অন্যান্য চামড়ার প্রধান সরবরাহকারী ছিল পাকিস্তান (যা ১৯৭৬ সালে CITES-এর পক্ষ হয়ে ওঠে এবং তাই এইগুলি অবৈধভাবে রপ্তানি করত) এবং সিঙ্গাপুর, একটি উদ্যোক্তা হিসাবে কাজ করে, যা ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত CITES-এ যোগ দেয়নি। এটা খুব সম্ভবত মনে হয় যে অনেকেই বাংলাদেশ কর্তৃক রপ্তানি করা চামড়া প্রকৃতপক্ষে ভি বেঙ্গালেনসিসের জাপানে আমদানি করা হয়নি ।বাংলাদেশ ব্যতীত অন্যান্য চামড়ার প্রধান সরবরাহকারী ছিল পাকিস্তান (যা ১৯৭৬ সালে CITES-এর পক্ষ হয়ে ওঠে এবং তাই এইগুলি অবৈধভাবে রপ্তানি করত) এবং সিঙ্গাপুর, একটি উদ্যোক্তা হিসাবে কাজ করে,
যা ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত CITES-এ যোগ দেয়নি। এটা খুব সম্ভবত মনে হয় যে অনেকেই বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত চামড়া প্রকৃতপক্ষে ভারতে উদ্ভূত এবং পুনরায় রপ্তানির জন্য বাংলাদেশে পাচার করা হয়।
১৯৮৬-এর পর CITES ঘোষণায় V. bengalensis-এর জাপানে কোনো আমদানি নথিভুক্ত করা হয়নি, ১৯৮৭-এর পর V. ফ্লেভেসেনস-এর কোনো উল্লেখ নেই।
V. flavescens (Yellow monitor) এবং V. bengalensis-( Monitor Lizard) এর আমদানী বিষয়ক CITES সংগ্রহ করা জাপানি কাস্টমস পরিসংখ্যান ।
১৯৮৩ সাল-৭৫৫০০০
১৯৮৪ সাল-৭৪৩,০০০
১৯৮৫ সাল -৭৭২,০০০
১৯৮৬ সাল- ৪৬৯০০০
১৯৮৭ সাল-৪৪২,০০০
গড় আমদানী ১৯৮৩ সাল থেকে ৮৭ সাল পর্যন্ত- ইয়েলো মনিটর লিজার্ড ও গুইসাপ ৬৩৬৩০০টি ( ছয় লক্ষ ছত্রিশ হাজার তিনিশ টি)। এটা জাপানে মুল আমদানীর একটা খণ্ডিত অংশের চিত্র মাত্র।
এর মধ্যে ধারনা করা যায় শুধু V. bengalensis (বেঙ্গল লিজার্ড) বা গুইসাপ যা বাংলাদেশ থেকে ( ৭৮/৭৯ সালে যদি ৫০লক্ষ গুইসাপের চামড়া রপ্তানী হয়ে থাকে তবে নিশ্চিতভাবে এর অর্ধেক চামড়া শুধু বাংলাদেশ থেকে রপ্তানী হয়েছে) ভাবতে একদিকে ভালই লাগে গুইসাপ রপ্তানীতে আমরা বিশ্বের প্রথম ছিলাম একদিন!
তবে CITES বলছে আমাদের পার্শ্ববর্তীদেশগুলো CITES-এ যোগ দেবার জন্য বাধ্যতাবাধকতার জন্য গুইসাপ রপ্তানী না করতে পারার জন্য অবৈধভাবে বাংলাদেশ দিয়ে নয়তো বাংলাদেশের ( অরিজিন ফ্রম বাংলাদেশ) নাম করে রপ্তানী করত যার মিডিয়া হিসেবে কাজ করত সিঙ্গাপুর।
বাংলাদেশ কম্বোডিয়া, চীন, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম। এটি সম্ভবত ব্রুনাই থেকেও রপ্তানী হয়েছে।।
১৯৮৩ থেকে ১৯৮৯ সময়কালে গিরগিটি জাতীয় প্রানীর মোট বাণিজ্য প্রতি বছর ১ থেকে ১.৯ মিলিয়ন চামড়ার মধ্যে ওঠানামা করেছে, যা গড়ে ১.৪ মিলিয়ন।।
এর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গিরগিটি জাতীয় প্রানী ছিল আমাদের গুইসাপ।
এই খবরটা দেখেও আপনি চমকে যাবেন;
CITES এর পরিসংখ্যান অনুসারে, এই গুইসাপ ও অন্যান্য গিরগিটি আমদানীর জন্য জাপান প্রায় ৩৪% দায়ী ছিল, ২৭% এর জন্য ইউরোপিয়ান কমিশন এবং নয় শতাংশের জন্য USA। উল্লেখযোগ্য আমদানি রেকর্ড করা অন্যান্য দেশগুলি হল: অস্ট্রিয়া, কানাডা, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এবং সুইজারল্যান্ড। রিপোর্ট করা বাণিজ্য এই সময়ের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে, ১৯৮৩-৮৬ এর জন্য গড়ে প্রায় ১.২ মিলিয়ন এবং ১৯৮৭-৮৯ এর জন্য ১.৮ মিলিয়ন। এই প্রবণতা ১৯৯০ সালে অব্যাহত ছিল, সেই বছর ও নথিভুক্তভাবে বিশ্ব বাণিজ্যে ২.৩ মিলিয়ন চামড়া পৌঁছেছে ( তাঁর মানে চোরাই পথে কত মিলিয়ন চামড়া গিয়েছে তাঁর ইয়ত্ত্বা নেই)। অন্তত এই বৃদ্ধির কিছুটা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভি.বেঙ্গালেসিস এবং ভি. ফ্লেভেসেনসের এর আপাত ভার্চুয়াল অন্তর্ধানের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
~ ভি. সালভেটর
ভি. সালভেটর চামড়া অন্য দুটি প্রজাতির তুলনায় (বা ছিল) যথেষ্ট দামী ১৯৮৭ সালে US$ ৬ ( ভি.বেঙ্গালেসিস-এর জন্য US$ ৩ ভি. ফ্লেভেসেনসের জন্য US$ ১.৬ এর তুলনায়). ঐতিহ্যগতভাবে, ভি. স্যালভেটরের চামড়াগুলো তাদের বড় আকার এবং আকর্ষণীয় ত্বকের পিগমেন্টেশনের কারণে সর্বোচ্চ মানের পণ্য তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
⚫ জাপান
CITES এর বার্ষিক প্রতিবেদনগুলি ১৯৮৬ সালের পর জাপানের ভি. সালভেটর স্কিন আমদানিতে উল্লেখযোগ্য পরিমান বৃদ্ধি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে (১৯৮৩-৮৬ সালের জন্য বার্ষিক প্রায় ৩২০০০০ স্কিন গড়, ১৯৮৯ এবং ১৯৯০ উভয় ক্ষেত্রেই ৯৫০০০০ স্কিন বেড়েছে)। এটি V. bengalensis এবং V. flavescens থেকে V. salvator-এ স্থানান্তরিত হতে পারে, অথবা সম্ভবত প্রথম দুটি প্রজাতির চামড়ার কিছু ভুল ঘোষণা থাকতে পারে।
~ V. flavescens
১৯৮৭ সাল থেকে দামের বিশ্লেষণ এটির কিছু সূত্র দিতে পারে। লাক্সমুর এবং গ্রুমব্রিজ (১৯৮৯) যেমন উল্লেখ করেছেন, ভি. সালভেটরের চামড়া অন্য দুটি প্রজাতির তুলনায় যথেষ্ট ব্যয়বহুল ছিল (১৯৮৭ সালে ইউ এস ডলার ৬, V. bengalensis- ইউএস ডলার ৩ এবং ভি ফ্লেভেসেনস ইউ এস ডলার ১.৬) ঐতিহ্যগতভাবে, V. স্যালভেটর স্কিনগুলি তাদের বড় আকার এবং আকর্ষণীয় ত্বকের পিগমেন্টেশনের কারণে সর্বোচ্চ মানের পণ্য তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, অন্য দুটি সরীসৃ্পের চামড়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্ব কম। ( V. bengalensis লেজ লম্বা হয় ভি. সালভেটরের দেহের আকৃতি বড় হয়)
****
মনিটর টিকটিকির চামড়ার বিশ্বব্যাপী ব্যবসা হয় -ইহা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে রপ্তানি করা সবচেয়ে সাধারণ ধরনের টিকটিকি, আন্তর্জাতিক চামড়া বাজারের জন্য ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ৮.১ মিলিয়ন রপ্তানি করা হয়েছে। এশিয়ান ওয়াটার মনিটর সবচেয়ে বেশি হত্যার স্বীকার গুইসাপগুলোর মধ্যে একটি; এর চামড়া ফ্যাশন আনুষাঙ্গিক যেমন জুতা, বেল্ট এবং হ্যান্ডব্যাগের জন্য ব্যবহৃত হয় যা বিশ্বব্যাপী পাঠানো হয়, বার্ষিক ১.৫ মিলিয়ন চামড়ার বানিজ্য হয়। অন্যান্য ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে চর্মরোগ এবং একজিমা, ইন্দোনেশিয়ার অভিনব খাবার ও পোষা প্রাণী হিসেবে।ভারত ও বাংলাদেশের বেশ কিছু উপজাতীয় সম্প্রদায় তাদের মাংস, চর্বি এবং চামড়ার জন্য এই গুইসাপ শিকার করে ও এর ডিমও সংগ্রহ করা হয়। এগুলিকে ক্ষতিকর ও অশুভ হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং তাদের আবাসস্থলের ক্ষতি ডিম নষ্ট করার কারণেও এদের বংশবৃদ্ধি মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।
গুইসাপ সেইসব বিরলতম প্রাণীর মধ্যে পড়ে যারা পার্থেনোজেনেসিসঃ(এককভাবে সন্তান উতপাদনে সক্ষম) মহিলারা শুক্রাণু ধরে রাখতে সক্ষম হতে পারে। বন্দী অবস্থায় থাকা মহিলারা উর্বর ডিম দিতে সক্ষম হয়েছে। কিছু প্রজাতির মনিটর টিকটিকি যেমন নীল মনিটর বেশ ভালভাবেই প্রমাণ করেছে যে এরা পার্থেনোজেনেসিস করতে সক্ষম ।
এই উভচর মনিটরকে পশ্চিম ভারতে 'বিস-কোবরা' , রাজস্থানে 'গয়রা' , বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে গুইশাপ বা গোশাপ , ভারতের পাঞ্জাব, পাকিস্তান ও বিহার উভয় ক্ষেত্রেই 'গোহ' , মহারাষ্ট্রে 'ঘোরপদ' এবং শ্রীতে 'থালাগোয়া' নামে পরিচিত । পুরাণে এই ধারণা রয়েছে যে এই টিকটিকিগুলি, যদিও প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিকারক নয় তবে বিষাক্ত এবং রাজস্থানে্র স্থানীয়রা বিশ্বাস করে যে টিকটিকি শুধুমাত্র বর্ষাকালে বিষাক্ত হয়ে ওঠে। গুইসাপ শিকার করে তাদের শরীরের চর্বি ফুটিয়ে নিস্কাশিত করে অনেকে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক সহ একটি বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহার করা হয়।
~ওয়াটার মনিটর বা কাবারগুয়া
শ্রীলঙ্কায়, ওয়াটার মনিটরকে (কাবারগোয়া) বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়, কিন্তু বেঙ্গল মনিটরকে (থালাগোয়া) ক্ষতিকারক ও প্রতিরক্ষাহীন বলে মনে করা হয়। ল্যান্ড মনিটর বা গুইসাপের মাংস- ভোজ্য বলে বিবেচিত হয় (বিশেষ করে আদিবাসী ভেদ্দা এবং রোদিয়ার লোকেরা) যদিও ওয়াটার মনিটরের মাংস তারা খায় না । তবে শ্রীলঙ্কায় গুইসাপকে হত্যা করা সাধারণত একটি কাপুরুষোচিত কাজ বলে বিবেচিত হয়। তাদের প্রচুর লোককাহিনীতে গুইসাপকে নিরিহ সরিসৃপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে (গারন্দিয়া)।
লিঙ্কঃ
https://biocyclopedia.com/index/monitor_lizards/uses_of_monitor_lizards_by_man.php
* তথ্যগত ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়। এ বিষয়ে যে কোন ভাষায় এটা সম্ভবত প্রথম নিবন্ধ (আমি অনলাইনে খুঁজে পাইনি) -তাই রেফারেন্সের অপ্রতুলতার জন্য অনেক ডেটা মিস হয়ে যেতে পারে কিংবা গড়মিল হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:০৯