somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে সারা পৃথিবী জুড়ে এরা সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আমি কোনদিনও কোন মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীকে অর্থাভাবে পড়তে দেখিনি। এরা যেমন ধূর্ত ব্যবসায়ী তেমন কঞ্জুস ও ধার্মিক।
আমাদের দেশেও এমন একটা ব্যবসায়িক সম্প্রদায় আছে তারা ঠিক মারওয়াড়ি সম্প্রদায়ের মতো নয় কিন্তু অনেকটা কাছাকাছি; তাদের বসবাস বৃহত্তর বিক্রমপুর অঞ্চলে। এখন দিন পাল্টে গেলেও একসময় এরাও পরিযায়ী ব্যবসায়ী ছিল -বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক ব্যস্ত অঞ্চলগুলো তো বটেই এমনকি ভারতের কলিকাতা আসাম বিহার মণিপুর (কেউ বলে দিল্লি-করাচি) পর্যন্ত এদের ব্যবসার গণ্ডি ছড়িয়েছিল!
এদের ব্যবসায়িক ধ্যান ধারণা আমাদের ব্যবসায়িক ধ্যান ধারণার একেবারে বাহিরে - ব্যাবসা করতে গিয়ে কিভাবে যে সাধারণ মানুষের সাথে স্থানীয় মানুষের সাথে একেবারে মিশে যেত সেটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল।
(দুর্ভাগ্যজনকভাবে সোনারগাঁও রাজধানী পত্তনের আগে সেন শাসনামলে বিজয় সেনের সময়ে বাংলার এতদ্‌ অঞ্চলেরে রাজধানী ছিল বিক্রমপুর, চন্দ্রযুগে ছিল প্রসাশনিক রাজধানী। খিলজি বাংলা জয় করে লক্ষণ সেনকে পরাজিত করলে তাঁর দুই ছেলে এই বিক্রমপুরে এসেই আশ্রয় নেয়। সম্ভবত তাঁর উত্তরসুরী বল্লাল সেনের নদীবিধৌত বাংলা পছন্দ না হওয়ায় তিনি রাজধানী পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় স্থানন্তর করেন। এবং ধারনা করা হয় সেন বংশের পতনের মুল কারন ছিল এটা -বিক্রমপুরের মত খাল বিল নদী বিধৌত এলাকায় তারা থাকলে তুর্কী খিলজী এত সহজে তাদের পরাজিত করতে পারত না।)
যাই হোক 'অতীশ দীপঙ্করে'র বিক্রমপুর এখন বাংলার মানচিত্র থেকে হারিয়েই গেছে- তাঁর স্থান দখল করেছে দখল মুন্সীগঞ্জ নামক এক জেলা। আদি মাতৃভান্ডারের রস মালাই আর মিষ্টি না থাকলে মানুষ হয়তো বিক্রমপুরের কথা বিস্মৃতই হয়ে যেত।
আমি এখানে ইতিহাস বলতে আসি নাই। বলতে এসেছি অন্য একটা গল্প;
মাদের বিখ্যাত ঘাট এলাকায় বেশ কিছু এমন আদি বিক্রম পুরের ব্যাবসায়ী পরিবার ছিল। এদের অনেকেই খাঁটি ব্যাবসায়ী ছিল, কেউবা ভাগ্যন্বেষনে এসেছিল একসময়। এদের পেশা খুব উঁচুমানের ছিল তা নয় কিন্তু সেটাকে এমন পরিপাটি করে পরিবেশন করত যে মনে হত মানুষ তাদের শ্রদ্ধা করতে বাধ্য হত। তাদের ভাষা সংস্কৃতি খাবার সবকিছুতে ছিল ভিন্নতা। বাইরের মানুষদের সাথে নিজেদের পরিবারকে খুব সযতনে একটু দুরে রাখতেন। অশিক্ষিত মানুষদের সাথে, বাজে পরিবেশে মিশতে দিতেন না- পোশাক আশাকে থাকত সর্বদা পরিপাটি।আত্মীয়-স্বজন আর বিশাল পরিবার নিয়ে বাড়ির মধ্যে সবসময় একটা হুলস্থুল লেগেই থাকত। বাইরের মানুষের সেই নিয়ে ছিল চরম কৌতুহল! শুধু অল্প কিছু মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল অন্দরমহলে। এলাকার সংস্কৃতিঙ্গনে তাদের ছেলেমেয়েদের ছিল সরব উপস্থিতি।
আমাদের ওখানে যিনি দর্জীর কাজ করতেন তাঁকে সবাই সম্মান করে বলত খলিফা! মফস্বলে শুধু কাপড়ের দোকান আর দর্জীর কাজ করে দশ মেয়ে আত্মীয়স্বজনের বিশাল সংসার নিয়ে হুলস্থুল জীবন যাপন করত তাঁর পরিবার। আরেকজনের ছিল জুতার ব্যাবসা- একনামে সবাই জুতাওয়ালা বলে চিনত। এরপরেও সে-কি দাপট তাঁর। ছেলে মেয়েরা সবচেয়ে আধুনিক পোশাক পড়ত- ভাষা কথায় চলনে বলে ছিল শহুরে কেতা। এলাকার সাধারণ লোকেরা সমীহ করে চলত।

মার যে বাল্যবন্ধু ও সহপাঠী রিন্টু তাঁর বাবা ছিল উত্তরাধিকার সুত্রে পাশ না করা শুধু অভিজ্ঞতায় মুলধনে বেশ নামী ডাক্তার। সে এটা পেয়েছিল শ্বশুরের সুত্রে। রিন্টুরা পাঁচ ভাই চার বোনের বেশ বড় এক পরিবার -সে যদিও পরিবারের প্রথম সন্তান নয় তবুও, এ পাশায় তাঁর ঝোঁক ছিল ছেলেবেলাতেই। হাঁফ প্যান্ট পড়ার সময় থেকেই সে বাপের সাথে সেঁটে থেকে শিশিতে কাগজ কেটে ডোজের মার্কিং করা, ট্যাব্লেট গুড়ো করে পুরিয়া বানানো সহ বেশ কিছু কাজ শিখে ফেলেছিল। এই কাজের প্রতি তাঁর ভয়ানক আগ্রহ একসময় নেশায় পরিনত হয়। তবে প্রথাগত কিছু বিদ্যা তাঁর থাকলে ডাক্তারি বিদ্যা তাঁর ছিল না। তাঁর বাবা ছিল মুলত গরিবদের ডাক্তার- অল্প পয়সার রোগীরা সব তাঁর কাছে এসে ভীড় করত।রোগীর অভাব তাঁর কোনদিন হয়নি। বাবা মারা যাবার পরে ধারাটা তেমনি বজায় ছিল। কিন্তু দোকানের চেহারাটা আগে খানিকটা ফিটিফাট থাকলেও রোগী বাড়ার সাথে সাথে দিনে রূগ্ন বিবর্ন রা জরাজীর্ন হতে থাকল। চায়ারের হাতল খসে পড়ে, দেয়ালে মাকড়াসার জাল ঝোলে, আলমিরার দরজা একদিকে হেলে পড়ে; কখনো দেখা যায় দু চারখানা কাঁচই উধাও। কেচির এক ডান্ডি ভাঙ্গা, স্টেথিস্কোপের নল দুমড়ে মুচড়ে আছে, প্রেসার মাপার যন্ত্রের পাম্পে চাপ দিলে আঠার মত লেগে থাকে। চারিদিকে ধুলা বালি, ঔষুধের খোসা- বাক্স, কাগজের টুকরো ছড়ানো, যেন এক ভাগারের অবস্থা নিল এক সময়। । মাথার উপরে ফ্যান কোন মতে পিন পিন করে ঘোরে কি ঘোরে না। সল্প পাওয়ারের বাতিতে একটু অন্ধকারে ভাল করে কিছুই ঠাহর হয় না। এর মধ্যের সে দিব্যি ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একবার গিয়ে দেখি তাঁর চশমার এক ডান্ডি ভাঙ্গা- সেটাই কোনমতে মাথা কাত করে বিশেষ ভঙ্গীতে কাজ চালাচ্ছে। আমি বললাম, পাওয়ার কত?
সে চশমা খুলে তাঁর সামনে লাগানো একটা স্টিকার দেখে বলল - একশ পঁচিশ।
-এই মাল কত দিয়ে কিনছ?
সে হেসে বল, ৮০ টাকা।
-তা ডান্ডি ভাঙ্গার পরে আরেকটা কিনতে পারলা না?
সে এবার আরেকটা হাসি দিতে বলল,-এইটাই তো চলে যাচ্ছে সমস্যা হয় না।

তাঁর ওখানে বসার মত অবস্থা নেই, তবুও আমি বসি- আমি কেন অনেকেই এসে বসে। ধুলো বালি ঝেড়ে ঝুড়ে গ্যাট হয়ে খানিক বসে ওর কর্মকাণ্ড দেখি। বহুবছর আগে দেশের বাড়িতে গিয়ে প্রতিবার তাঁকে দোকানের এই পরিবেশ পাল্টাতে অনুরোধ করতাম। সে আমাকে চমৎকার আশ্বাস দিত; তুমি নিশ্চিত থাক পরেরবার এসে দেখবে সব ফিটফাট। সেই সাথে আমার কাছ থেকে কিছু মুফতে পরামর্শও নিত
পরের বার গিয়ে আরো হতাশ হয়ে লক্ষ্য করতাম অবস্থার ভয়াবহ অবনতি হয়েছে।
আগের থার্মোমিটার ভেঙ্গে গেছে- রোগীর জ্বর মাপতে হলে পাশের দোকান থেকে থার্মোমিটার ধার করে আনতে হচ্ছে- কিংবা প্রেশার মাপার মেশিনের সেই পাম্পের যন্ত্রটা পাইপ থেকে খুলে গেছে , সে দুহাত দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে যতবার পাম্প করছে ততবারই বেশীরভাগ হাওয়া আশপাশ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। ভুলভাল প্রেশার মাপা হচ্ছে সবার। সবকিছু চলছে আন্দাজে।
এখনো সে কিছু ওষুধ গুড়ো করে পুরিয়া বানায়। যে পাথর খন্ডের উপরে ট্যাবলেট গুড়ো করে সেটা তাঁর বাবার সময়েই এককোনা ভাঙ্গা দেখেছি। সেই ভাঙ্গা পাথরটা এখন ভাঙতে ভাঙতে দুই আড়াই ইঞ্চি অবশিষ্ঠ আছে- তাঁর উপরেই সে অসামান্য দক্ষতায় এখনো ট্যাবলেট গুড়ো করে যায়।
***
ত ত্রিশ বছরের অধিককাল ধরে আমরা সবাই বলতে বলতে ক্লান্ত! তাঁর আশেপাশের সব ঔষধের দোকানে যখন আধুনিক সাজসজ্জা হচ্ছে তখন সে সেদিকে তাকিয়ে কোন মোটেই হতাশ না হয়ে আরো যেন উজ্জীবিত হচ্ছে - কদিন আগে দেয়ালে ভাঙ্গা কাঁচের একটা ঘড়ি দেখেছিলাম টিক টিক করে চলছে এবার দেখি সেটারও দম বন্ধ!
বসতে সংকোচ হয় গা ঘিন ঘিন করে তবুও দেশের বাড়িতে বেড়াতে গেলে বন্ধুদের সাথে ওখানে বসেই আড্ডা দেই।মাছ বেপারি, ঘাটের দালাল, রিক্সা চালক, স্থানীয় বিখ্যাত সুনীল পাগল থেকে শুরু করে মেয়র, এমনকি মহিলা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পর্যন্ত সেই ধুলো পড়া বেঞ্চি চেয়ারে মাঝে মধ্যে দু'য়েক মিনিট বসে গল্প করে যায়।
রিন্টু বিয়ে করেনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর চার বোনের মধ্যে তিন বোন অকালে বিধবা হয়ে সন্তান সমেত তাঁর ঘাড়ে সওয়ার। বড় ভাইতো বটে ছোট ভাইয়েরাও বিয়ে -থা করে সংসার করছে। মা এখনো জীবিত। বিশাল এক পরিবারের দায়িত্ব তাঁর ঘাড়ে। এই ভাঙ্গা-চোড়া দোকান থেকে কিভাবে আয় রোজগার করে তাঁর সংসার চালায় সেই ভেবেই সবাই ঘেমে নেয়ে অস্থির হয়!
অথচ জানলাম, এই ঈদে তাঁর বড়িতে সব মিলিয়ে ৩২জন খোরাকি। একটা খাসি জবেহ করেছে, দশ হাজার করে ভাগে গরুর মাংস নিয়েছে। মাছ, ফল সব মিলিয়ে ঈদের তিন দিনে পঞ্চাশ হাজার নেমে যাবে! কিভাবে সম্ভব??
রিন্টু জাত ব্যাবসায়ী- সে জানে কেমনে টাকা কামাইতে হয়। অনেক ভেবে আমি বের করেছু এর গোপন রহস্য; এই ধুলি ধূসরিত ভাঙ্গা দোকানটাই তাঁর মুল পুঁজি। সবার টার্গেট থাকে পয়সাওয়ালা রোগী- ধনবান রোগীরা সাফ-সুরোত জায়গা খোঁজে, ভাল ডাক্তার চায়, ঔষধ নিয়ে বহুত কেচ্ছা কাহিনী করে। মফস্বলের ডাক্তারদের পাত্তা দেয় না- একটু এদিক ওদিক হলেই হাইকোর্ট দেখায়।
আর গবিব রোগীরা চায়, একটু কমফোর্ট জোন, সিমপ্যাথি, তাদের কথা শোনার মত ডাক্তার, তাদের অর্থ সামর্থের মধ্যে ঔষধ। তাদের মাথায় বিল্ট ইন থাকে ভদ্রস্থ পরিবেশ মানে তাদের জন্য নন কম্ফোর্ট এরিয়া, বেশী পয়সা খরচ।

রিন্টুর এখানে কারা আসে; চড়ের মধ্যবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্ত থেকে অতি গরিব, পতিতা এমন কি ফকির মিসকিন পর্যন্ত। সবাই তাঁর কাছে সম সমাদর পায়। কাউকে সে দাড় করিয়ে রাখে না। তাঁর পাশের চেয়ারটা সবার বসার জন্য উন্মুক্ত। কখনোই রোগীর সে স্টাটাস দেখে না-কাউকে সে অবমুল্যায়ন করে না। রোগী দেখেই সে বুঝে ফেলে তাঁর ক্ষমতা কতদুর- আমি ওখানে বসে দেখিনি যে একটা রোগী টাকা দিতে না পেরে ঔষন না নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
সে পথ্য দেবার আগেই জিজ্ঞেস করে নেয়; এত টাকার ঔষধ দেই- দিব, নাকি কম দিব? আপনি চাইলে তিন দিনের নিতে পারেন, চাইলে আজকেরটা নিয়ে যান- বাকিটা পরে নিয়েন। এত টাকা নাই? দেখি কত আছে দেন- ওর মধ্যেই সাইর‍্যা দেই।
আর নারী রোগীদের ব্যাপারে সে স্পেশাল কেয়ার নেয়; পেছনের ঘরের পর্দা নেই। স্টেথিস্কোপ, থার্মোমিটার নিজের হাতে কখনো দেয় না; রোগিণীকে বলে দেয় কোথায় সেট করতে হবে। কিশোরি থেকে মহিলা তাঁর এখানে চরম কম্ফোর্ট ফিল করে। বিয়ের ব্যাপারটা সে সযতনে গোপন করে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলে, দুই বাচ্চার বাপ সে।
ওর ওখানে বসে অনেক কিছু দেখার আছে; তবে আমি ভীত আতঙ্কিত হই এই দেখে যে, মানুষ ইদানিং ভয়ানক অসুস্থ হচ্ছে আর মুড়ি মুড়কীর মত ঔষধ খাচ্ছে।
****
য়লা সবুজ শাড়ি পড়া মাথাভর্তি পাকা চুল- একটু স্থুলদেহী গাঢ় শ্যামবর্নের মুখভর্তি বয়সের বলিরেখা। হাতে একটা বাঁকানো লাঠি। খালিপায়ে ভিক্ষা করতে করতে বয়স্ক মহিলাটি রিন্টুর দোকানের সামনে এসে ভিক্ষা না চেয়ে সেই লাঠিতে ভর করেই মুখ চোখ বিকৃত করে বেশ কষ্ট করে এক ধাপ নেমে রিন্টুর দোকানের ভেতরে আসতেই, রিন্টু বলল, আপনি আসার আর সময় পাইলেন না। এখন যে রোগীর ভীড়। ঠিক আছে আসছেন যখন বসেন।

মহিলা তাঁর সামনের বেঞ্চিতে বসল।
রিন্টু সামনে উবু হয়ে জিজ্ঞেস করল, -আবার কি সমস্যা?
মহিলা ঘ্যাড় ঘ্যাড়ে ভাঙ্গা অথচ তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল, -ভাইরে কিচ্ছু ভাল্লাগে না। পরানের ভিতরে খালি অস্থির লাগে।
রিন্টু তাঁকে আস্বস্ত করে বলল,-সব ঠিক হয়ে যাবেনে। ফের ঔষধ দিতেছি।
-ঔষধ তো দিছিলা- কাম তো হয় না। পরাণের ভিত্রে খালি অস্থির ঠ্যাহে।
রিন্টু খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, -সব অস্থিরতা-মস্থিরতা কাইট্যা যাবে। কিস্যু থাকবে না । অপেক্ষা করেন- মইর‍্যা গেলে সব ফিনিস।
(সে কথাটা এমনভাবে বলল, আমি হেসে ফেললাম।)
-মরি তো নারে ভাই। তুমি দোয়া কর য্যান তাড়াতাড়ি মইর‍্যা যাই। আল্লাতো নেয় ও না। তিন তিন্ড্যা জোয়ান ছাওয়ালরে মাটির নিচে শোয়ায় রাখলাম- আল্লা আমার মরন দিল না। ক্যান দিল না? কত মইরব্যার চাই, মরি তো না।
রিন্টু তখন কথা ঘোরাল, -কয় টাকা আনছেন দেখি?
মহিলা মুঠো থেকে কিছু কুঁচকানো খুচরো টাকা বের করে তাঁর হাতে দিল।
-এই টাকায় তো হবে না। পঞ্চাশ টাকার নোট গুলা কই? দেখি আঁচলের খুতি খোলেন।
আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম ঠিকই আচলের খুতি খুলে মহিলা দুটো পঞ্চাশ টাকার নোট তাঁর হাতে দিল।
-উঁহু এতেও কাম হবে না। ঔষধের দাম হবে, দুই'শ চল্লিশ- আপনি দিচ্ছেন একশ চল্লিশ! বাকি একশ টাকার কি ব্যাবস্থা হবে?
-দেরে ভাই আল্লাহ তোর ভাল করবে।
রিন্টু হাসল। আল্লা আমার আর কি ভাল করবে? আপনি কি এমন আকাম করছিলেন যে, আল্লায় আপনারে দিয়া ভিক্ষা করাচ্ছে? ঠিক আছে - পরে মনে থাকলে দিয়েন।
তখন আমি বললাম, বাকি টাকাটা আমি দিই?

রিন্টু আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল। না থাক এইটা আমিই দিছি। সে আর পয়সা কড়ি দিবে না। তুমি যদি দিতে চাও তো ভাল কিছু ঔষধ দিব তারে। এইগুলা মন ভুলানো ঔষধ। খুব একটা কামে লাগবে না।
***


যাবার সময়ে মহিলা আমার মাথায় হাত বোলাতে চাইলে আমি হাতটা এগিয়ে দিলাম। তাঁর অশক্ত জীর্ন হাতখানা আমার হাত ধরে বললেন, বাবারে তোমার জন্য দোয়া করি আল্লায় তোমারে হায়াতদারাজ করুক। আর তুমি আমার জন্য দোয়া কইরো 'আল্লায় য্যান আমারে তাড়াতাড়ি পরপারে নিয়ে যায়, এ জীবন আর সহ্য হয় না রে ভাই।'
বলতে বলতে তাঁর দু'চোখ বেয়ে দু-ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল ...
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঘ আর কুকুরের গল্প......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৩২

বাঘ আর কুকুর দুটোই হিংস্র এবং সাহসী প্রাণী। বাঘ, কুকুর যতই হিস্র হোক মানুষের কাছে ওরা নেহায়েতই পোষ মেনে যায়। আমাদের সমাজে, রাজনীতিতে অনেক নেতাদের 'বাঘের বাচ্চা' বলে বিরাটত্ব জাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলা কাকতালীয় না কি পরিকল্পিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২

গতকাল (২ ডিসেম্বর) ভোরে আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ করে। বিভিন্ন তথ্যে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের সাথে যুদ্ধ করে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করি না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০



আমাদের দেশে অনেক মুসলিম থাকে আর ভারতে থাকে অনেক হিন্দু। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধে মুসলিমদের সাফল্য হতাশা জনক নয়। সেজন্য মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশ সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছে।মুসলিমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূস গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড - শেখ হাসিনা।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩৬


৫ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পলায়নের পর বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করা নতুন সরকার কে বিপদে ফেলতে একের পর এক রেকর্ড ফোন কল ফাঁস করতে থাকেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×