২০০৮ সাল ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বছর। ওই বছরই প্রথমবারের মতো মার্কিন জনগণের ইচ্ছার বর্হিপ্রকাশ হিসেবে একজন আফ্রো-আমেরিকান নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৮৫০ সালের আশেপাশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্ণবৈষম্য আইন করে নিষিদ্ধ করা হলেও ২০০৮ সালে এসে বারাক ওবামা নামের একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনের ঠিক আট বছর পর অর্থাৎ আগামী ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে উন্মোচিত হতে পারে নতুন আরেক অধ্যায়। কারণ ইতোমধ্যে বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, এবারের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবদিক থেকেই এগিয়ে আছেন একজন নারী অথবা একজন ল্যাটিন।
কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও খ্রিস্টান নয় এমন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হবেন এটা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কল্পনার বাইরে। কারণ এযাবৎ যতগুলো প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সবাই মূলত খ্রিস্টান। এদের মধ্যে একটু ব্যাতিক্রম ছিলেন থমাস জেফারসন। তিনি অর্থোডক্স খ্রিস্টধর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন, কিন্তু এটা নিয়ে তৎকালীন সময়ে কোনো হাঙ্গামা হয়নি। এমনকি আব্রাহাম লিঙ্কন যিনি প্রায়ই কথার মাঝে ঈশ্বরকে টেনে আনতেন, তিনিও কোনোদিন কোনো চার্চে যাননি। তারপরেও শুদ্ধ খ্রিস্টান হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের একটা অবস্থান আছে সাধারণ মার্কিনীদের মনে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিনশ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। যাদের মধ্যে ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষই মূলত খ্রিস্টান। কিন্তু গত সাত বছরে এই সংখ্যা ৭ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। আর বর্তমানে খ্রিস্টান নয় এমন ১০০ মিলিয়ন মানুষ বাস করছে দেশটিতে। বিশ্লেষকরা এই পরিসংখ্যানকে দেশটির মুখপাত্র পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। কিন্তু কথা হলো, আমেরিকার রাজনীতির একেবারে শীর্ষস্থানগুলো দখল করে আছে সব খ্রিস্টানরা, তারা কি এত সহজেই খ্রিস্টান নয় এমন একজনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বানাবে?
জো লিবারম্যান হলেন ইহুদি ডেমোক্র্যাট এবং আরলান স্পেকটার হলেন ইহুদি রিপাবলিকান। এই দুইজনই ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পদপ্রার্থী কিন্তু এই দুইজনের একজনও পার্টির নমিনেশন পাননি। লিবারম্যান ২০০০ সালে ছিলেন আল গোরের সহকর্মী এবং এই আল গোরই একমাত্র ইহুদি যিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নমিনেশন পেয়েছিলেন। যদিও তাকে হেরে যেতে হয়েছিল তৎকালীন সময়ে। ওদিকে বার্ণি স্যান্ডারস আগামী নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিলেও হিলারি ক্লিনটনের উপর নির্ভর করছে তার টিকিট।
অন্যান্য ধর্মগুলো হলো আমেরিকার শরীরের সৌন্দর্য্যবর্ধনকারী মোজাইক। কিন্তু মূল কেন্দ্রে সেই খ্রিস্টানদেরই রাজত্ব। যেমন ধরা যাক, একমাত্র হিন্দু কংগ্রেস ম্যান তুলসি গাব্বার্ডের কথাই কিংবা দুই মুসলিম রাজনীতিবিদ কেইথ এলিসন এবং অ্যান্ড্রি কার্সন। এছাড়াও হ্যাঙ্ক জনসন এবং মেইজ হিরোনো নামের দুই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীও আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাদের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং অবস্থান থাকার পরেও আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে তাদের কখনোই দেখা যায়নি, কারণ স্থানীয় পর্যায়ে সাধারণের দ্বারা জনপ্রিয়তা অর্জন এক ব্যাপার, আর কংগ্রেসের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করা আরেক ব্যাপার।
ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৬৬ সালে। গোল্ডা মেইর ১৯৬৯ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৭৯ সালে। যদি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের গণতান্ত্রিক মডেলের মধ্যে অন্যতম ধরা হলেও, আজ অবধি এই দেশটির ইতিহাসে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নেই। এক্ষেত্রে অবশ্য ভারতের জুরি নেই। দেশটির মুসলিম ও শিখ জনগোষ্ঠি সংখ্যালঘু হওয়া স্বত্ত্বেও মনমোহন সিং এবং আবদুল কালামকে প্রেসিডেন্ট করা হয়েছিল। যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে কল্পনাই করা যায় না।
সামনের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন হিলারি ক্লিনটন। যদিও মার্কিন নির্বাচন বিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেষ মুহূর্তে হয়তো হিলারি ক্লিনটনকে পিছিয়ে যেতে হতে পারে। কারণ বিশেষত ইরাক যুদ্ধকালীন সময়ের হিলারির বিতর্কিত ভূমিকা এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ ভোল পাল্টে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন এর কোনোটাই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না মার্কিন জনগণ। আর এখানেই উভয় সঙ্কটে পরেছে মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা। কারণ হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে তিনি হবেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, আবার তিনি যদি না হন তাহলে ইহুদি লবি থেকে যেকোনো একজন প্রার্থী অনায়াসেই প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন। তাই এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, মার্কিনীরা কি তাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজন নারী কিংবা একজন ইহুদিকে জায়গা করে দেবে?
অনলাইন সংবাদপত্র বাংলামেইল২৪ ডট কম থেকে হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৩